হযরত দাউদ(আঃ)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:৫৬:১১ রাত
-------------------
দাউদ(আঃ)কে খ্রিষ্টানরা ডেভিড বলে। ওল্ড টেস্টামেন্টে তার কথা উল্লেখ আছে,যদিও সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত। সেদিকে যাব না।
অল্লাহ তায়ালা বলেন:
‘আমি দাঊদকে ‘যবূর’ প্রদান করেছিলাম’ (নিসা ৪/১৬৩)
হযরত দাউদ(আঃ) একজন নবী ও রসূল ছিলেন। আল্লাহর অত্যন্ত সম্মানিত বান্দা ছিলেন তিনি। তার ইবাদত আল্লাহর কাছে এতটাই পছন্দনীয় ছিলো যে, শেষ রসূল মুহাম্মদ(সাঃ) একাধিকবার সে কথা উল্লেখ করে সাহাবীদের সেরকম করতে আদেশ,উপদেশ দিয়েছেন। এবং দাউদ(আঃ)এর রোজা রাখার স্টাইলকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে ঘোষনা করেছেন। তার নামাজ এবং তার রেজা ছিলো অসাধারণ বিনম্রতার নিদর্শন। আল্লাহ সেটা পছন্দ করতেন।
আল্লাহ তাকে এক বিশাল সাম্রাজ্য দান করেন। তিনি ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ন শাসক। আর তিনি ছিলেন একজন বীরযোদ্ধা। রাতের একটা বড় অংশ নিয়মিত ইবাদতে কাটাতেন এবং একদিন পর পর রোজা রাখতেন। কিন্তু জিহাদের ময়দানে তিনি ছিলেন অনন্যসাধারন,অকূতভয় সৈনিক।
‘হে দাঊদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গত ফায়ছালা কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর না। তাহ’লে তা তোমাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়’ (ছোয়াদ ৩৮/২৬)।
দাউদ(আঃ)কে আল্লাহ কিছু মুযিজা দান করেছিলেন যা তার সময়ে প্রচন্ড দরকার ছিলো। আল্লাহ তার জন্যে লোহা বা স্টিলকে নরম করেছিলেন এবং তাকে তিনি কৌশল শিখিয়েছিলেন পরিপূর্ণ বর্ম কিভাবে তৈরী করতে হয়। এটা যুদ্ধের জন্যে প্রয়োজন ছিলো। আর আল্লাহ তাকে শারিরীকভাবেও অনেক শক্তি দান করেছিলেন। যার কারনে তিনি একদিন পরপর রোজা রেখেও স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতেন এমনকি ওই অবস্থায় জিহাদেও তিনি শক্তিশালী থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা পাহাড় ও পাখিকূলকে আদেশ করেছিলেন,তারা যেন দাউদের সাথে সাথে ইবাদত করে,জিকির আসগার করে।
অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, পাহাড় পার্বত,পাখিকূলকে তার সাথে ইবাদতে শরীক হবার আদেশ করার দরকার কি ? মনে রাখা দরকার , আল্লাহ কারো কাছে তার কাজের কৈফিয়ৎ দেননা এবং কেউ নেই তার কাছে কৈফিয়ৎ চাওয়ার। তিনি কখনও কখনও এমন কিছু করেন, যার মর্ম আমাদের মাথায় প্রবেশ করেনা। উত্তর হচ্ছে, তিনি ওটা ওভাবে চেয়েছেন,তাই আদেশ করেছেন। মুযিজার পুরো বিষয়টাই আল্লাহর ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। নবী-রসূলের ক্ষেত্রে যদিও সেটা ঘটে কিন্তু তারা এটাতে ক্ষমতাশালী নয়, বরং সকল ক্ষমতার উৎস্য হলেন আল্লাহ তায়ালা।
"আমি আমার পক্ষ থেকে দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষনা কর আর পাখিদেরকেও(আদেশ করেছিলাম)। আমি লোহাকে তার জন্যে নরম করেছিলাম। যাতে তুমি পূর্ণ পরিমাপের বর্ম তৈরী করতে পারো। কড়ামূহ সঠিকভাবে সংযুক্ত করতে পারো,আর তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা করো আমি তার প্রত্যক্ষদর্শী। (সূরা সাবা, আয়াত: ১০,১১)
আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধের সময় তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে ? (আম্বিয়া ২১:৮০)।
‘স্মরণ কর, আমার বান্দা দাঊদকে। সে ছিল শক্তিশালী এবং আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮:১৭)
হযরত দাউদ(আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা মনোমুগ্ধকর কন্ঠস্বর প্রদান করেছিলেন এবং অগাধ পান্ডিত্ব দান করেছিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে এমনভাবে বক্তব্য প্রদান করতেন যে মানুষ তা পছন্দ করত। এটা তার বিশাল সাম্রাজ্যের জন্যে দরকার ছিলো। তিনি সত্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত রেখেছিলেন। আল্লাহ তাকে একটি উৎকৃষ্ট সন্তান দান করেন, যার নাম হল সুলাইমান। পরবর্তীতে তিনিও আল্লাহর নবী হন।
‘আমরা তার সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফায়ছালাকারী বাগ্মিতা’ (ছোয়াদ ৩৮:২০)।
হযরত দাউদ(আঃ)সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য রয়েছে, কিন্তু আমি কেবল সংক্ষেপে আলকুরআন থেকেই আপনাদের সামনে কিছু প্রাসঙ্গিক আয়াত তুলে ধরলাম। তার সন্তান সুলাইমান সম্পর্কে অত্যন্ত চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে আলকুরআনে।
সুমহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে আল্লাহর রসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন ! আমরা যেন সুন্নাহ মেনে হযরত দাউদ(আঃ)এর মত অনুগত বান্দা হতে পারি। তার মত বিশুদ্ধচিত্তের অধিকারী হয়ে আমরা যেন আল্লাহর ইবাদতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারি !
বিষয়: বিবিধ
৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন