আপনি সত্যই বলেছেন, তবে !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৬:৪৯:৩২ সকাল
---------------------------------
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বি.এন.পি। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সে সময়ে বাংলাদেশে টিএন্ডটির টেলিফোন ছিলো,তাও খুব বেশী সংখ্যক মানুষের নয়। ফোনে যোগাযোগ সহজলভ্য ছিলোনা। তখন বিশাল সংখ্যক মানুষ ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে অথবা কারো বাড়ি থেকে দেশে বিদেশে থাকা প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করত। আমাদের এলাকায় ১৯৯০ সালের আগে মাত্র ৩/৪ টি বাড়িতে টেলিফোন ছিলো যদিও সেটা মফস্বল এলাকা। অনেক গ্রাম দেখেছি যেখানে কোনো টেলিফোনই ছিলোনা। যখন টেলিফোন কি তা বুঝতাম না, তখন আশপাশের লোকেরা আমাদের বাড়িতে আসতো কারো কাছে জরুরী টেলিফোন করার জন্যে। স্পষ্ট মনে আছে এলাকার এক বাড়িতে(ইদ্রীস-ইনসানদের বাড়ি) আগুন লেগেছিলো, ওদের একজন দৌড়ে আমাদের বাড়ির কাছে আসলো। আমি খুবই ছোট। আমাকে বলল ফায়ার সার্ভিসে ফোন করতে,কিন্তু ফায়ার সার্ভিস কি তা আমি জানতাম না। তখন বলল আগুন লেগেছে দমকলে ফোন করলে ওরা আগুন নিভাতে আসবে। টেলিফোনের পাশেই একটা ফোন বুক ছিলো। ওটার উপরে ৩ সংখ্যার একটা নাম্বার লেখা ছিলো দমকলের। আমি ফোন করলাম। অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার আগেই বললাম....আসেন, আগুন লেগেছে। বার বার বলার পর লোকটােলোকেশন জানতে চাইলো। বললাম। খানিক পরই দেখি তারা হাজির। আমি তখন লজ্জায় পালালাম,কারন মানুষকে আমার খুব লজ্জা ছিলো। মনে হচ্ছিলো ওরা আমাকে খুজবে। তাই করল, কে ফোন করেছিলো সেটা জানতে চাইলে রিয়া নামের ইদ্রীস চাচার মেয়ে আমাকে দেখিয়ে দিল। আমি দূর থেকে একবার দেখেই দৌড়।
এলাকার কিছু লোক তখনও জানত না টেলিফোনে কিভাবে কথা বলতে হয়। আমার সামনে অনেক মজার সব ঘটনা ঘটেছে টেলিফোন করা নিয়ে। আমি প্রসঙ্গ লম্বা করছি একটা কারনে। একটা সময়কে ইঙ্গিত করে বলতে চাচ্ছি যে, সে সময় বাংলাদেশে প্রযুক্তি কেবল আসতে শুরু করেছে এবং বেশীরভাগ মানুষই সাধারণ প্রযুক্তি সম্পর্কেও তেমন অবগত ছিলোনা। তখন মানুষের হাতে টাকা ছিলো কিন্তু প্রযুক্তির প্রয়োজনয়ীতা তেমন বুঝতো না। এসব প্রযুক্তির সাথে তারা অভ্যস্ত ছিলোনা। এলাকায় অনেক ধনী ছিলো,কিন্তু তাদের বাড়িতে টেলিফোন ছিলোনা।
১৯৯১ সালে বি.এন.পি ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রযুক্তি এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশের প্রযুক্তির ভেতর তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারী টেলিফোন সার্ভিস চালু হয় সিটিসেল নামক কোম্পানীর মাধ্যমে। এর মালিক ছিলো এ.মোর্শেদ খান, যিনি পরবর্তীতে বি.এন.পির মন্ত্রী ছিলেন। ৯০ এর দশকের শুরতে মোবাইল ফোন ছিলো এই সিটিসেল কোম্পানীর। সিডিএমএ টাইপ সে সেট দেখতে ছিলো বড় রেডিওর মত। এর উপর ছিলো বড় এন্টেনা। অল্প কিছু ধনী লোক এটা ব্যবহার করত। এর নেটওয়ার্ক ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিলো,তাও সকল এলাকা কাভার করত না। ধনীরা এরা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, ভাব দেখানো ছাড়া তেমন কাজের ছিলোনা সেটা।
মানুষ মোবাইল ফোন চেনা শুরু করে যখন গ্রামীন ফোন বাংলাদেশে মোবাইল সার্ভিস চালু করে ১৯৯৭ সালে। এর মালিক ড: মুহাম্মদ ইউনুস এবং ইকবাল কাদির, অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এবার যে মোবাইল আসে তা জি.এস.এম ঘরানার এবং সিম নির্ভর। মোবাইলের আকারও সিটিসেলের রেডিও সাইজ হ্যান্ডসেটের চেয়ে অনেক ছোট। আমি ১৯৯৭ সালেই এই মোবাইল ব্যবহার করতাম। মটোরোলার প্রথম মডেলের সেটটি আমার জিন্স প্যান্টের বড় পকেটে রাখলেও কিছু অংশ বের হয়ে থাকত। কিন্তু তখনও মোবাইল যথেষ্ট পরিচিত ছিলোনা। এটা দিয়ে কেবল কল করা ও রিসিভ করা যেত। এর কল রেটও ছিলো ৯ টাকা প্রতি মিনিট। সে সময় এটা অনেক টাকা। একেকটি সিম কার্ড বিক্রী হত ৭হাজার টাকায় এবং সেই সিম কিনতে মানুষ গ্রামীনের কর্মকর্তাদের তেল দিত। এ সময়ের এক ঘটনা, এক বন্ধু এবং তার পরিবার এবং তার বন্ধুরা আমার কাছে মাথা প্রতি ৭ হাজার টাকা দিয়ে সিম কিনে দিতে প্রবল অনুরোধ করেছিলো। কারন গ্রামীনের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আমার বোনের সাথে ব্যবসায়িকভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলো। তারা আমার হাতে পায়ে ধরেছিলো, কারন মোবাইল ফোন ছিলো একটা স্টাটাসের প্রতিক। কিন্তু আমি ছিলাম ছোট মানুষ আর প্রচন্ড লাজুক। আমি তাদের কথা আমার বোনকে লজ্জায় বলিনি। ওদেরকেও কথা দেইনি যে কিনতে সহায়তা করব। অবস্থা এমন ছিলো যে, পত্রিকায় গ্রামীন ফোন সিম বিক্রীর ঘোষনা দিলেও ওদের অফিসের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যেত। অনেকবার ভূয়া সংবাদেও মানুষ লাইন দিয়েছে। এরপর মোবাইলে টেক্স আদান প্রদানের সার্ভিস চালু হয়।
আস্তে আস্তে প্রযুক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকে। মোবাইলের সাইজ ছোট হতে থাকে এবং নানান সব সার্ভিস আসতে শুরু করে। এই বিবর্তন,পরিবর্তনটা স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। বৈশ্বিক উন্নত প্রযুক্তি বাংলাদেশে পরিচিতি পেয়েছে কিছু বেসরকারী কোম্পানীর মাধ্যমে। এব বিষয়ে সরকারের তেমন কোনো ধারনাও ছিলোনা,পরিকল্পনাও ছিলোনা আর সহযোগীতা যা ছিলো তা হল,উক্ত কোম্পানীকে অনুমোদন দেওয়া। সরকারী নীতি নির্ধারকদের প্রযুক্তির জ্ঞান ছিলো হাস্যকর রকমের বিশ্রী। ফলে মোবাইলের মত একটি প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের কোনো সরকার কৃতিত্ব দাবী করবে,এর মত হাস্যকর আর কিছু হতে পারেনা।
আরও ভয়াবহ হল আমাদেরকে যারা শাসন করেছে বা রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেছে, তাদের কাছে জনগনের স্বার্থ যথেষ্ট প্রাধান্য পেয়েছে বিষয়টা প্রমানিত নয়। আমরা দলকানা না হয়ে দলের উর্ধ্বে উঠে বিশ্লেষন করলে দেখব, জনগন সর্বদা উপেক্ষিত ছিলো। কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ ভালো কিছু করেছে, কিন্তু সেটা আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ,যেখানে সরকারগুলো বাস্তবের চেয়ে মুখে মুখে বেশী উন্নয়ন ফলায়। আর মুখের সেসব মিস্টি বুলিগুলো বিক্রী হয়ে যাওয়া সংবাদকর্মী এবং তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ফলে এখানে সংবাদ ও বাস্তবতা দুটোতে বিরাট পার্থক্য।
গত ১ দশকে জনগনের ভেতর নানান ক্ষেত্রে নানান পরিবর্তন এসেছে। তাদের মানসিকতায় ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। চিন্তা চেতনার জগতে আলোড়ন তৈরী হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে পরিচালিত করতে চাওয়া নেতাদের নৈতিকতার মান,শিক্ষা দীক্ষা,গ্রগতির তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফলে নেতা-নেত্রীবৃন্দ এখনও জনগনকে পূর্বের মত আহাম্মক মনে করে বক্তব্য প্রদান করে। এতে তারা মূলত নিজেরাই নিজেদের কাছে অপদস্ত হয়। এমন সব কথা বলে যা হাস্যরস সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনা। অনেকে বলতে পারে হাসি স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো,ফলে অবদান উপেক্ষা করার উপায় নেই। কিন্তু আমি বলব, এটা দু:খজনক হাস্যকর এবং এতে জাতির জন্যে আলো নেই, ফলে হতাশাজনক।
আল্লাহ আমাদের মহান নেতাদেরকে হেদায়াত দান করুন ! তাদেরকে জ্ঞান বুদ্ধী দান করুন ! তাদেরকে জনগনকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যে সঠিক বিধান খুঁজে পাওয়ার তাওফিক দান করুন ! আল্লাহ তাদের নৈতিক চরিত্রের মান অনেক উন্নত করুন ! সততা,ন্যায় নিষ্ঠতা,যোগ্যতার সাথে জনগনকে পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন ! সত্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়টি সামাজিক-রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এরকম শাসন ও শাসক তৈরী হওয়ার সুযোগ যেন তৈরী হতে পারে ! আল্লাহ কবুল করুন !
বিষয়: বিবিধ
৫৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন