কি, কবো নাকি ইসমাইল স্যারের ঘটনা ??
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০১:১৯:২০ দুপুর
---------------------------------
-----------
ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রীটা আত্মহত্যা করার পর থেকেই সারা দেশ জুড়ে নানান আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে শিক্ষক-ছাত্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। বাঙ্গালী সবসময়ই একটু বেশী আবেগী। এরা শিক্ষকের পক্ষে কলম ধরতে গিয়ে ছাত্রকে পুতে ফেলে,আবার ছাত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষককে কবর দেয়। কিন্তু একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করি খুবই কম।
যে সমাজে আইনের শাসন বলবৎ থাকেনা,সেখানে শৃঙ্খলা উঠে যায় এবং স্বেচ্ছাচারিতা জন্ম দেয়। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা চরম স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। এখানে মানুষ দু প্রকার, একপক্ষ যালিম এবং ক্ষমতাশালী,অন্য পক্ষ মুজলুম এবং দূর্বল। শক্তিশালী পক্ষ তাদের যা মনে চায় তাই করে, অন্য পক্ষ কেবল হযম করে। এর ভেতর যারা সমাজ সংষ্কারক অথবা জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত নানান পেশার লোক ,,এরা বেশীরভাগই স্বতন্ত্র চিন্তা করতে পারেনা, বরং শক্তিশালীদের কোনো একটি ব্লকে গিয়ে কথা বলে তৃপ্ত হয়। অল্প কিছু নিষ্ঠাবান লোক রয়েছে যাদের কোনো চারা নেই,থাকলেও কেটে ফেলা হয়েছে।
শিক্ষকরা অবশ্যই অভিভাবকসুলভ আচরণ করবেন কিন্তু পাশাপাশি যদি বন্দুসুলভ আচরণ না করেন তাহলে শিক্ষার্থীগণ তেমন কিছু শিখতে পারবে না। কারন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই নিশঙ্কচিত্তে শিক্ষককে সকল বিষয়ে প্রশ্ন করতে হবে। এরপরই তার জানার দরজা খুলে যাবে। কিন্তু যদি সে ভয় পায়,তাহলে সে প্রশ্ন করতে চাইবে না, কারন তাকে বিব্রত করা হতে পারে,অপমানিত করা হতে পারে অথবা গুরুগম্ভির শিক্ষকের চেহারা দর্শনে তার ভীতি বেড়ে যতে পারে। এসব কারনে সে শিক্ষকের সান্নিধ্য উপভোগ করবে না এবং জ্ঞানের দুয়ারও খুলবে না। তাই শিক্ষককে অনেক বেশী সহজ হতে হবে, শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি আসতে হবে,তাদেরকে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাদের সাথে কখনও পিতা-মাতাসূলভ এবং কখনও বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। কোনোভাবেই তারা ভীতি ধরিয়ে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারবে না।
আমাদের দেশের শিক্ষকরা আবহমান কাল ধরে প্রবল ব্যক্তিত্ব সংরক্ষনের নামে বদ মেজাজ,রুক্ষতা,অসহনশীলতা,অত্যাচারীতা প্রদর্শন করে আসছে। এটার অবসান জরুরী। বহু প্রাচীনকাল থেকে অভিভাবকরা শিক্ষকদের তোষণ করার কারনে তাদের চরিত্রের খারাপ দিকগুলো উপেক্ষা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষক-ছাত্রের বন্ধন মধুর করেনি। শিক্ষকরাও ছাত্রদের উপর অত্যাচারমূলক আচরণ করে নিজেদেরকে মহান ভাবার চেষ্টা করেছে। এর ভেতর দিয়ে অনেকে সুশিক্ষা,উঁচু শিক্ষা পেয়েছে বটে,কিন্তু কতগুলো সন্তান শুরুতে ঝরে গেছে,কতগুলো সন্তান প্রবল মানসিক চাপে উপরে উঠেছে তার হিসেব কেউ রাখেনি।
একটা ঘটনা মনে পড়ছে, আমি যখন ক্লাশ ৩তে পড়ি, তখন এক মা তার পুত্র সন্তানকে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করালেন এবং যে স্যার সবচেয়ে বেশী নির্দয়ভাবে ছাত্রদের পেটাতো তাকে বললেন,,,স্যার আমার ছেলের গোস্ত আপনার,হাড্ডি আমার। এর মানে হল ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলবেন। স্পষ্ট মনে পড়ছে সেই ছাত্রের মুখচ্ছবি। সে ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছিলো। ওই ছাত্র কিভাবে শিক্ষা গ্রহন করবে ? এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে। শিক্ষকের মাইর খেয়ে এবং খারাপ সমালোচনার কারনে ছাত্রের পড়াশুনা হয়নি এরকম বহু ঘটনা আছে।
আবার ছাত্র যদি মনে করে সে যাই করুক না কেন,তার কোনো শাস্তি নেই, তাহলে সে খারাপ আচরণ করবে। এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ মাত্রই অপরাধ প্রবন। সুযোগ পেলে মানুষের কুপ্রবৃত্তি জেগে ওঠে। এ কারনেই আইন কানুনের জন্ম। সেটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই। ছাত্ররা অন্যার করলে তাদেরকে উদ্যমী করা বা মোটিভেট করার ব্যবস্থা থাকবে, প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও থাকবে। কিন্তু বড়রা নিজেদের সমপর্যায়ের ভেবে থাকে ওদেরকে, তাই কখনও চোর ডাকাতের মত অপরাধী ভাবে ওদেরকে এবং সেভাবেই শাস্তির আওতায় আনে। তারা নিজেদের উচু বয়সের অবস্থান থেকে নীচে নেমে ওদের কাতারে এসে বিবেচনা করতে পারেনা। ওদেরকে শাস্তি দেওয়ার আগে অনেক বুঝাতে হবে, সতর্ক করতে হবে এবং অবশেষে ওর ওই বয়সে যে শাস্তি প্রাপ্য হওয়ার যোগ্য শুধু সেটুকুই দিতে হবে। ইনসাফ করতে হবে, অতিরিক্ত করা যাবেনা। এই মাত্রাটা আমাদের শিক্ষকরা বোঝেনি। আধুনিক কালে অনেক শিক্ষক তাদেরকে অতিরিক্ত আদরে যথেচ্চচার করার সুযোগ দিয়েছে আবার অনেকে পিটিয়ে তাকে ধ্বংস করেছে। অথচ তাদের আচরনে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকার কথা ছিলো।
শিশুদেরকে ধমকে নিয়ন্ত্রন করা যায় সাময়িকভাবে, কিন্তু এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী নয়। ওদেরকে ভালোবাসা দিয়ে,মন জয় করে যদি শিক্ষা দেওয়া যায়, ওরা ওদের সর্বোচ্চটা প্রদর্শন করতে শিখবে। বেশীরভাগ বাচ্চা'ই জন্মের সাথে মেধা নিয়ে আসেনা,, ওটা বের করে আনতে হয়। আর একজন ভালো শিক্ষক সেই মেধা বের করে আনতে পারে। তার জন্যে ভালো মানের শিক্ষক তৈরীর অবস্থা,ইচ্ছা থাকতে হবে রাষ্ট্রের,সমাজের। শিক্ষকদেরকে শিক্ষা দিতে হবে কিভাবে তারা বাচ্চাদের শেখাতে পারে। নইলে তারা নিজের স্বেচ্ছাচারী স্বভাব দিয়ে বাচ্চাদেরকে লালন পালন করতে গিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করতে পারে। আর সর্বত্রই,সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। পড়াশুনার পাশাপাশি বেশি জোর দিতে হবে আদর্শ নৈতিক চরিত্র গঠনের দিকে।
ইদানিংকালে ছাত্রদের কোনো অপরাধের কারনে পিতা-মাতাকে দায়ী করে ভৎসনা করা হয়। এর ভালো দিক রয়েছে কিন্তু পুরো বিষয়টা অত্যন্ত সুক্ষ্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এবং মাত্রা বজায় রাখতে হবে। অনেক কিছু প্রকাশ্যে করতে নেই। আর ছাত্রদের সকল অন্যায়ের ব্যাপারেই পিতা-মাতাকে অবহিত করতে নেই। কিছু বিষয় শিক্ষকরা নিজেদের কাধে নিয়ে সমাধান করবেন। কিছু বিষয় কখনও কখনও প্রকাশই করতে নেই। আর কিছু বিষয়ে পিতা-মাতাকে জানিয়ে সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হয়। বাচ্চাদেরও আত্মসম্মানবোধ রয়েছে এবং কারো কারো তা অনেক প্রবল। কাজেই যাচ্ছেতাইভাবে তাদের সাথে আচরণ ঠিক নয়। সকল পরিনতি শেষ পর্যন্ত সমাজকেই ভোগ করতে হয়।
সুস্থ্য শিক্ষার পরিবেশ উপহার দিতে রাষ্ট্র,সমাজের ভূমিকা অনেক বেশী। কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্ব অবহেলা করলেও পরিবার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোটামুটিভাবে ভালো কিছু উপহার দিতে পারে। পরিবার তার সন্তানদেরকে সুন্দর সদুপোদেশের মাধ্যমে,সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে,নানানভাবে উদ্দীপনা জাগিয়ে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাত্রদেরকে নিজ সন্তানের মত শিক্ষা দিবে উজাড় করে। বন্ধুর মত মিশবে, ফলে তারা তাদের মনের কথাগুলা শিক্ষকদেরকে বলতে পারবে। বেশী বেশী প্রশ্ন করতে পারবে নির্ভয়ে, এতে তাদের জ্ঞানের জগত সম্প্রসারিত হবে।
কখনও শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের জন্যে শস্তির ব্যবস্থা থাকবে এবং তা হতে হবে ন্যায়সঙ্গত। তবে শাস্তির বিষয়টি আসবে অনেক পরে। আগে তাদেরকে ভালোবাসতে হবে, নৈতিক চরিত্র সুন্দর করার শিক্ষা দিতে হবে, নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে হবে, ভালো-মন্দের শিক্ষা দিতে হবে, তার অধিকার ও কর্তব্যগুলোকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে তার শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর হবে এবং সে আসলেই সুশিক্ষা গ্রহন করতে উপযোগী হবে।
-----------------------------------------
আমার গৃহ শিক্ষক ছিলেন অনেকগুলো। লজইন মাস্টার ইসমাইল সাহেব, বয়সে যুবক। লোক ভালো কিন্তু মন মেজাজঠিক না থাকলে সেটার ঝাল আমাদের উপর ঝাড়ত। এক রাতে পড়া তৈরী করতে দেরী করেছিলাম। উনি আমাকে মোটা পাটকাঠি দিয়ে চরম পেটালেন এবং দুই আঙ্গুলের ভেতর পাটকাঠি দিয়ে দুহাতে দুপাশে চাপ দিলেন আর পাটকাঠি ঘুরাতে লাগলেন। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর সে শাস্তি। বয়স আমার ৮ বছরের বেশী হবেনা। আমি উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলাম, সহসা কান্নার লোক আমি ছিলাম না। আমার অপরাধ নিশ্চয়ই এত ভয়ানক ছিলোনা,যাতে ওরকম শাস্তি পেতে হয়।
স্বভাবতই বদের হাড্ডি ছিলাম, ফলে রাতে স্যারকে ভাত দেওয়ার সময় তার ভাত-তরকারীর ভেতর পচা কাদা,থুথু দিলাম। আর পানির জগে অনেক করে থুথু দিয়ে ময়লা পাটকাঠি দিয়ে ঘুটিয়ে সুন্দর করে রাখলাম। রাতে বৈঠকখানার জানালা দিয়ে দেখলাম স্যার ভাত খাচ্ছে......আমি দূরে গিয়ে হিহিহিহিি হোহোহোহো করতে থাকলাম। ......এরকম শিক্ষকরা ছাত্রদের মনে এক ধরনের ভীতি তৈরী করে মজা পায়, আর ছাত্ররা অাজীবন তাদেরকে মনে রাখে,,,অবশ্যই সব সময় শ্রদ্ধার সাথে নয়, যদিও মারকুটে শিক্ষকরাই বেশী গর্ব করে থাকে তাদের পাঠদানের বিষয়ে।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছেলেদের সেরকম সৌভাগ্য হয় না। পরিবার , সমাজ ও দেশের প্রতি তার দায় দায়িত্ব অনেক। তাকে সব কিছু মেইনটেইন করে চলতে হয় এবং সবাইকে ভরণ পোষনের ব্যবস্থা করতে হয়। নচেৎ একটা পরিবার তথা সমাজ ধ্বংস হয়ে যেত।
যে কারণে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করে এরকম শত শত কারণ একটা ছেলেরও থাকে। পারে না , কারণ ঐ যে - দায় বদ্ধতা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন