আল্লাহু আকবার ! মুসলিমরা একটা চার্চ কিনলো !! ================================
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:১৯:১৩ সকাল
ইটসমূহের ভেতর ভালো ইটগুলো বাছাই করে বক্সে ভরলাম। উদ্দেশ্য ফারিসকে তা দেব। কিন্তু রেডী হয়ে ভাত খাওয়ার পর স্যামুয়েলের কথা ভাবতে ভাবতে সব ভুলে গেলাম। অর্ধেক পথে গিয়ে মনে হল আহ মিস্টির বক্সটা ফেলে আসলাম। সম্ভবত আল্লাহ চায়নি ওই ইট রসগোল্লা তাকে খাওয়াই। একবার ভাবলাম পেছনে ফিরি,কিন্তু তখন আমি ফ্রি-ওয়েতে, ফিরতে হলে অনেকদূর ঘুরতে হবে। ভাবলাম স্যামুয়েলের সাথে সাক্ষাৎ শেষে বাসায় আবার এসে তারপর মসজিদে যাব। গেলাম স্যামুয়েলদের বাসায়। আমাকে দেখে সে চিনতে পারল। দ্রুত হেটে আসলো আমার দিকে। মজে গেলাম। স্যামুলের সাথে খেলতে খেলতে ভাবলাম বাসায় ফিরে যাবনা,,,তার চেয়ে ফারিসের কাছে মাফ চেয়ে নেব,সেই ভালো। এতে ইজ্জতও বাঁচবে,,পরের শুক্রবার ভালো কিছু তৈরী করতে পারব।
এক বক্স দামী চকলেট উপহার পেয়েছি। ভেবেছিলাম ওটা নিয়ে যাব ফারিসের জন্যে, কিন্তু নিতে খেয়াল ছিলোনা। পরে দেব ইনশাআল্লাহ। ফেরার সময় স্যামুয়েল বার বার কাছে আসছিলো। আশা করছিলো বেশিক্ষন থাকি কিন্তু আমার উট নেওয়ার ধান্দা তাই দ্রুত মসজিদে গেলাম। উট পাইনি,,তবে ছাগল পাইছি আলহামদুলিল্লাহ।
মসজিদের কালচারটা খুব দারুন। বহু লোক আগে ভাগে এসে কুরআন তিলাওয়াত করে মনোযোগ দিয়ে। সামনের তাকে অন্তত শ'খানেক কুরআন রাখা থাকে। বাচ্চারা আসে ,তাদের দেখতে ভালো লাগে। তবে বেশীরভাগ বাচ্চারাই তাদের মায়েদের সাথে থাকে উপরের তলায়। আজ খুৎবা দিলেন পোর্টল্যান্ড থেকে আগত ইমাম তাওয়াব। উনি মূলত আফগান আমেরিকান। উনার পিতা একজন বড় স্কলার ছিলেন এবং মানুষের জন্যে অনেক কিছু করেছেন। অসহায় মানুষকে পূণবার্সিত করতে বড় একটা চ্যারিটি ফান্ড তৈরী করেছিলেন। এখন তার যোগ্য সন্তান সেটা পরিচালনা করেন। বহু অসহায় মানুষকে তারা পূনবার্সিত করেছেন এবং নিয়মিতভাবেও অনেক পরিবারকে সাহায্য করেন।
খতিব সাহেব আজ এক হাদীস বলছিলেন তা আমার মুখস্ত, কিন্তু মনে হল আজই নতুন শুনছি। উনি এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করলেন ! জাহান্নাম থেকে বের হওয়া সর্ব শেষ ব্যক্তির ব্যাপারে রসূল (সাঃ)বলছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ)থেকে এটি বর্ণিত। সেই ব্যক্তি এক টুকরো কয়লায় রুপান্তরিত হয়। আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে বের হবার ব্যবস্থা করেন। সে লোক কোনো রকমে গড়াগড়ি দিয়ে বাইরে এসে আল্লাহর প্রশংসা করে। সে এত খুশী হয় যা বলার মত না। এরপর আল্লাহ তার সামনে একটি সুন্দর সবুজ গাছ রাখেন যা সে দূর থেকে দেখতে পায়। সে খুবই উদগ্রীব হয়ে আল্লাহকে বলে, আমাকে একটু ওই গাছের নীচে যেতে দেন, অামি আপনার কসম করে বলছি আর কিচ্ছু চাইব না। আল্লাহ বলেন ঠিক অাছে ,,তবে মনে রেখো তুমি বলেছো আর কিছু চাইবে না। ....এরপর ওই গাছের নীচে গিয়ে সে শীতলতা পায় এবং উৎকৃষ্ট পানি পান করে। এবার আল্লাহ তাকে জান্নাতের গাছগাছালি দেখতে পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সে দূর থেকে সেটা দেখে বলেন,,ইয়া আল্লাহ ওখানে আমাকে একটু যেতে দেন। আল্লাহ বলেন তুমি ওয়াদা ভেঙেছো,,,,লোকটা বলে আর কিছুই চাইবো না,,আপনি একবার যেতে দেন,,,আল্লাহ বলেন ঠিক আছে,তবে আমার মনে হয় তুমি আবারও চাইবে.....লোকটা বলে,,,না চাইবো না। লোকটা সেখানে যাওয়ার পর আল্লাহ জান্নাতের সামনের অংশ তার দৃষ্টিগোচর করেন,,,। এবার লোকটা কাছ থেকে জান্নাত দেখার আবদার করে। আল্লাহ তাকে তার ওয়াদার কথা শ্মরণ করিয়ে তাকে জান্নাতের কাছে রাখেন।তখন সে ভেতরের শব্দ(সম্ভবত মিউজিক)শুনতে পায় এবং কিছু নিয়ামত দেখতে পায়। এরপর সে বলে ইয়া আল্লাহ আমাকে ভেতরে যাবার অনুমতি দেন,আপনি তো মহান....। আল্লাহ তখন তাকে বলে এসব কিছুই তোমার ,এমনকি যা কিছু তোমাকে দিলাম তারও দ্বিগুন দেওয়া হল। উল্লেখ্য: জান্নাতে সর্বনীম্ন স্তরে থাকা মানুষেরা এই পৃথিবীর মত ১০টা পৃথিবী পরিমান স্থান প্রাপ্ত হবে। ..তো সেই লোকটা এতসব নিয়ামতের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আল্লাহকে বলে ...ইয়া আল্লাহ আপনি সারা জাহানের স্রষ্টা,বর....আপনি কি আমার সাথে রসিকতা করছেন ???
এ পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন,যা তার সহজাত নয়। তিনি থেমে গিয়ে হাদীস শ্রবন করতে আসা লোকদেরকে বললেন , তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো, কেন আমি হাসলাম ? তারা জানতে চাইলো হাসির কারন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ)বলেন- এ পর্যায়ে এসে আমি রসূল(সাঃ)কে ঠিক এভাবে হাসতে দেখেছি। তোমরা জিজ্ঞেস করো, কেন রসূল(সাঃ) হেসেছিলেন ? অন্যরা তা জানতে চাইলো। তখন তিনি(রাঃ) বললেন যে, রসূল(সাঃ) বলেছেন, যখন ওই জাহান্নাম থেকে সদ্য বের হওয়া লোকটি আল্লাহর থেকে জান্নাতের বিষয়টি শুনলো,,তখন সে হতভম্ব হয়ে আল্লাহকে জিজ্ঞেন করে, ইয়া আল্লাহ আপনি কি রসিকতা করছেন আমার সাথে ? তখন মহা পরাক্রমশালী ও অসিম দয়ালু আল্লাহ হেসে ওঠেন তার কথায়। এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। সেই হল সবচেয়ে শেষে জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি।.....এই হাদীসটি বুখারী,মুসলিমসহ অনেক গ্রন্থে এসেছে।
হাদীসটা শোনার সময় আমি যেন বাস্তবে সেই দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। চরম বঞ্চিত এক লোক,যার কোনো আশা ছিলোনা, যার কোনো সহায় ছিলোনা, কোনো উদ্ধারকারী ছিলোনা। তাকে আল্লাহ শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করলেন,উদ্ধর করলেন এবং বিশাল নিয়ামত প্রদানে ধন্য করলেন। আল্লাহু আকবার !
সালমানের সাথে দেখা হল। কথাও হল। ভাবছিলাম ফারিসের সাথে যেন দেখা না হয়। কিন্তু দেখা হয়ে গেল। বললাম ভাই মিস্টি রেডী, কিন্তু ভুলে রেখে এসেছি। সে বলল,,,জাজাকাল্লাহ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড,মাই ব্রাদার......ভাবলাম,,বেঁচে গেছি ! কিন্তু পরক্ষনেই বলল,,সমস্যা নেই,,আজ বিকেলে তোমার এলাকায় যাব,,তোমার বাসা থেকে মিস্টির বাক্স নেব.....। ওরে এ যে আমার চেয়ে দুকাঠি উপরের খাদক !! মানুষ ছাই দিয়ে ধরে,,অার ও আমাকে সিরিষ কাগজ দিয়ে ধরেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে আসলাম। দেখী ইমাম শায়লা। উনিই এখানকার প্রধান খতিব,মুরব্বী মানুষ। মাই ব্রাদার বলে জড়ায় ধরলেন। বলে কি খবর ? বললাম,বিয়ে করেছি,,,,ওরে সে কি আনন্দ ! আনন্দে আবার জড়িয়ে ধরল,,,,অনেক দোয়া করল। আরেক ভাই ছিলো পাশে ,খুব অমায়িক ভাই। কম্পিউটার সায়েন্সে পোস্ট ডক্টরেট করেছেন ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, সম্ভবত ওখানে পড়াচ্ছেন। তিনি জড়িয়ে ধরলেন,,নানান সব উপদেশ দিলেন। আমি অসহ্য হয়ে বের হয়ে আসলাম। ওই ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মাহফুজ স্যারের মা মারা গেছে শুনলাম। এই লোকটিকে সকলে ভাই বললেও আমি স্যার বলি সম্মানের কারনে। উনি আমাকে প্রচন্ড স্নেহ করেন,দাওয়াত করে খাওয়ান আর সর্বোত্তম পরামর্শ দেন। অনেক উপকৃত হয়েছি উনার দ্বারা। আল্লাহ উনার আম্মাকে যেন ক্ষমা করেন,সকল নেক আমলকে গ্রহন করেন এবং জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন !
গেটে দেখী ফয়সাল ভাই ২ ঝুড়ি পার্সেমান নামক দারুন এক ফল বিতরণ করছে। এটা ওর ক্ষেতের জিনিস। খুব দারুন তরতাজা,মিস্টি। টমেটার মত দেখতে কিন্তু খেতে দারুন।
অনেকদিন থেকে এক আরবী মহিয়সী নারী নানান খাবার রান্না করে প্যাকেট করে এবং মসজিদে পাঠায়,যাতে মানুষ সেলামের মসজিদের জন্যে ডোনেশন দিয়ে সেইসব প্যাকেট গ্রহন করে। আমি কিছু পয়সা দিয়ে ১ বক্স গ্রহন করলাম।
ওরেগন স্টেটের রাজধানী হল সেলাম। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্চটি অবস্থিত। বেশ বড় চার্চ। কিন্তু ভোগবাদী মানুষেরা চার্চমুখী না হওয়াতে চার্চ কর্তৃপক্ষ এটা বিক্রী করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। মুসলিম কমিউনিটির চোখে বিষয়টা পড়লে তারা তাদের সম্মিলিত ফান্ডের মাধ্যমে চার্চটি ক্রয় করে মসজিদে রুপান্তরিত করে। ১২ লক্ষ ডলারে এটি ক্রয় করা হয়েছে। মসজিদের মত দেখানোর জন্যে বেশ কিছু কাজ করতে হবে,যা এখনও বাকী আছে। আপাতত নামাজের উপযোগী করা হয়েছে। আজই ছিলো সেখানে প্রথম জুম্মাহর নামাজ। গত সপ্তাহে শুনেছিলাম কিন্তু গুগল করেও মসজিদের অস্তিত্ব পেলাম না,কারন ওটা এখনও চার্চ নামেই আছে। হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই গুগল তাদের তথ্য সংযোজন করবে।
এটা আমার কাছে যে কতাটা খুশীর সংবাদ তা প্রকাশ করতে পারছি না। শালা সেলিব্রেট করব ব্যাপারটা। আরও রান্না হবে,,খাওয়া হবে,,পান করা হবে....। আপেলের জুস পান করতে থাকা অবস্থায় লোকজন বলুক,,,আরও পান করুন ! আরও....
মসজিদে যাবার সময় একটা প্রার্থনা করেছিলাম আল্লাহর কাছে। মসজিদের কাছাকাছি একটা ভারতীয় হালাল রেস্টুরেন্ট আছে। পূর্বে ওরা প্রত্যেকদিন ভেড়ার গোস্ত রান্না করত,কিন্তু বাফেতে অনেক লোক রাক্ষসের মত খাওয়ার কারনে ওরা আইটেমটা সরিয়ে নেয়। পরে ওরা সপ্তাহে একদিন রান্না করবে বলে পণ করে এবং সেদিন মাটন বিরিয়ানীও রান্না করবে। কিন্তু সেটা কোনদিন তা প্রকাশ করবে না বলল। আমি আশা করছিলাম,সেটা যেন আজই হয়।
নামাজের পর রেস্টুরেন্টে গেলাম। গিয়ে দেখী আজই সেই দিন,মাটন বিরিয়ানী আর ভেড়ার গোস্তের কারী। বাকী খাবার আমি তেমন খাইনা। টানলাম একেবারে হাড় হাভাতের মত। ব্যারোমিটারের পারদের মত উপরে উঠাতে থাকলাম। মাথার খুলীতে চাপ অনুভব করার পর বুঝলাম পূর্ণ হয়েছে,থামলাম।
এরপর ব্রাউন্সভিল গেলাম ঘুরতে। অসাধারন কিছু জিনিস দেখলাম। সে গল্প কাল করব ইনশাআল্লাহ। বাসায় ফিরে প্রতিবেশী গিয়ারীকে মসজিদ থেকে নেওয়া খাবারের বাক্সটা দিলাম,তারা খুশী হল। বললাম আরও রান্না করে খাওয়াবো। তারা বিগলিত হয়ে উঠলো।
বিষয়: বিবিধ
৭২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন