আমিন না লিখে যাবেন না !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৩৯:৫১ রাত
-------------------------------
ক্কাবা শরীফের ইমাম সাহেব স্বপ্নে দেখেছেন যে, ওখানে একটা কবরে শাস্তি হচ্ছে একজনের। পরপর ৩ রাতে তাকে স্বপ্ন দেখানো হলে ইমাম সাহেব লোকজন নিয়ে উক্ত কবর খুড়ে দ্যাখে লাশের গায়ে বিশাল এক অজগর পেচিয়ে রয়েছে। তখন ইমাম সাহেব সকলকে স্বপ্নের কথা বললেন। উক্ত লোকের পরিবার জানালো যে লোকটি নামাজ পড়ত না। ইমাম সাহেব বললেন,এ কারনেই তার শাস্তি হচ্ছে। অতএব আপনারা নামাজ ত্যাগ করবেন না। আর এই তথ্যটি ৭দিনের ভেতর ২০ জনকে পৌছৈ দিন, নইলে আপনার ক্ষতি হবে।
অথবা ক্কাবার ইমাম স্বপ্ন দেখেছেন যে রসূল(সাঃ) তাকে এটা এটা করতে আদেশ করছেন। অতএব আপনারা সেসব আদেশ পালন করুন।..........
যখন ইন্টারনেট ছিলোনা বা ততটা প্রচলিত ছিলোনা, তখন দেখতাম কেউ কেউ কিছু কাগজ ধরিয়ে দিত। সেটা ছিলো ফটোকপি। সেখানেও এরকম কাহিনী লেখা থাকত। আবার কখনও কখনও কিছু ছবিও দেওয়া থাকত। আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্বপ্ন দেখত ক্কাবার ইমামগণ। শেষে লেখা থাকত এটা ফটোকপি করে এত জন লোকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে,তাহলে খুশীর সংবাদ পাওয়া যাবে, নইলে ক্ষতি হবে। একজনের ক্ষতি হয়েছিলো। সে দায় এড়িয়ে যাবার কারনে তার কিডনী মাথায় উঠে গিয়েছিলো ইত্যাদী।
ইন্টারনেটের প্রথম যুগে এরকম অনেক মেইল পেতাম। আর ফেসবুকের সময়কালে এসে কিছু সরলপ্রাণ মুসলিমের থেকে এরকম তথ্য পেতাম,এবং পাই ইনবক্সে।
উল্লেখ্য: পূর্বে এই ঘটনাগুলোতে মাজার,কবরে শিন্নী দেওয়া কথা লেখা থাকত। অথবা কোনো খাজা বাবার স্বপ্ন,পীরের বিশেষ বয়ান লেখা থাকত। এরপর কোনো মাজারে যেতে বলা হত কল্যানের জন্যে। কিন্তু পরবর্তীতে লোকেরা শিক্ষিত হতে থাকলে ঘটনার ধরন পাল্টে যায়। এখনকার স্বপ্নগুলোর কথা শুনলে মনে হয় এটা সত্যই তো !!
---------------------------------------------------
এই বিষয় নিয়ে মূর্খদের দুটো গ্রুপ আছে। দু গ্রুপই নিজেদেরকে পরহেজগার ভাবে এবং জ্ঞানের উঁচু স্তরে নিজেদেরকে উন্নিত করেছে এমন ভাবতে পারে। এক শ্রেনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই কল্যান হাসিলে নেমে পড়ে। অন্যকে মেসেজটি পৌছে দেয়। এই শ্রেনীটি একেবারেই সাধারণ ও অপরিনত,বয়সে নবীন। এদের নিয়ে কথা নেই। কিন্তু অপর শ্রেনীটি ভয়ঙ্কর, কারন তাদের সংখ্যা অনেক এবং এরা সমাজের প্রভাবশালী অংশও বটে।
তাদের বক্তব্য ঠিক এমন : এখানে ক্কাবার ইমাম হোক আর অন্য কেউ স্বপ্ন দেখুক তাতে সমস্যা কি ? এখানে তো নামাজ পড়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে বা পিতামাতার খেদমত করতে বলা হয়েছে, রোজা রাখতে বলা হয়েছে। আর এসব তো কুরআন হাদীসেওও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,,, তাহলে সমস্যা কি ? বরং এরকম ভয় দেখানোর কারনে অনেকে তো নামাজী হতে পারে, ভালো হয়ে উঠতে পারে !
আসলেই কঠিন যুক্তি কিন্তু এর ভেতর একটা মারাত্মক ব্যাপার রয়েছে, যা সহসা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসুন নীচের অংশটি দেখী।
-------------------------------------------
-------------------------------------------
আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেন- " আজ অামি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, আমার নিয়ামতসমূহকে পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনিত করলাম"(সূরা আল মায়েদা: ৫)
রসূল(সাঃ) বলেন- ইসলাম নামক ইমারতটিতে একটি ইটের পরিমান স্থান ফাঁকা ছিলো , আমি মুহাম্মদ(সাঃ) সেই ফাঁকা স্থানটিতে ইট হিসেবে স্থাপিত হলাম, ইসলামের ইমারতটি পরিপূর্ণ হয়ে গেল। সম্ভবত বুখারী বর্ণিত হাদীস।
'
'
'
'
'
রসূল(সাঃ) হলেন সর্বশেষ নবী ও রসূল। তার পর আর কোনো নবী-রসূল আসবেন না। কিন্তু আমরা আমাদের আচরনে নতুন নতুন রসূলের আগমন ঘটাচ্ছি। খেয়াল করুন, ইসলাম পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্যে যেসব আদেশ এসেছে, তা যথেষ্ট। নতুন করে আরও আদেশ আসার প্রয়োজন নেই কিয়ামত পর্যন্ত। কুরআন ও হাদীস পরিপূর্ণ। সেটাকে শক্তভাবে আকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। অতএব সকল আদেশ,নিষেধ হতে হবে কুরআন আর সুন্নাহর অনুযায়ী। কিন্তু আমরা যদি কারো স্বপ্নের বয়ান করে মানুষকে আল্লাহ পথে আনতে চাই,তাহলে কিছু জ্ঞানী ভাববে এটা তো সমস্যা নেই। কিছু লোক তো ভালোর পথে আসছে। কিন্তু মারাত্মক সমস্যা হল এই যে, এখানে এটাও স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, ইসলাম পরিপূর্ণ নয়। আল্লাহ যে আদেশসমূহ তার রসূলের মাধ্যমে জানিয়েছেন তা সম্পুর্ন নয়, তাই সপ্বে আরও অনেক আদেশ দিতে হচ্ছে। এটাই ভয়াবহ মিথ্যাচার, যা ইসলাম বিদ্বেষীরা সুক্ষ্ণভাবে শুরু করেছিলো। শয়তান সবসময় একই রকমভাবে ধোকা দেয়না। সে ধারনার চাইতেও বেশী চালাক।
রসূল(সাঃ) বলেন, আমার নামে কেউ যদি এমন কথা প্রচার করে, যা আমি বলিনি, তাহলে সে যেন জাহান্নামে তার স্থান করে নেয়-(বুখারী)
এই কথা শোনার পর বহু সাহাবী হাদীস প্রচার করতে ভয় পেতেন। কিছু জানতে চাইলে অন্যকে দেখিয়ে দিতেন। আর একেবারে নিশ্চিত হয়েই কিছু প্রকাশ করতেন। অথচ আমরা আল্লাহর রসূলের(সাঃ) নামে এমন সব কথা বলি যা তিনি বলেননি, এবং আমরা জেনেশুনেও অনেকে তা করি এই ভেবে যে, এতে তো খারাপ কিছু নেই। কিছু লোক তো উপকৃত হচ্ছে। তাদেরকে বলছি-ইসলাম আপনার কাছে আল্লাহ ইজারা দেয়নি। আপনি মনগড়াভাবে ইসলাম প্রচার করতে পারেন না। আল্লাহর রসূলের নামে সুন্দর সুন্দর বানী তৈরী করাও স্পষ্ট মিথ্যাচার এবং এর পরিনতি জাহান্নাম। আল্লাহকে ভয় করুন !
মানুষ যখন আত্মবিশ্বাসের সাথে ভুল করে বা পাপ করে, তখন তার পরিনতি হয় ভয়াবহ, কারন সে সওয়াবের কাজ মনে করে ভয়ানক পাপে লিপ্ত। কেউ সপ্নে অনেক কিছু দেখতে পারে, এমনকি স্বপ্নে রসূল(সাঃ)কেও দেখতে পারে। এমনকি তাকে তিনি ভালো কথাও বলতে পারেন, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত। কিন্তু সকলের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে হলে কুরআন সুন্নাহ লাগবে। কারন সেটা সুরক্ষিত ও প্রমানিতভাবে আল্লাহর রসূলের বক্তব্য। আমরা যদি এসব বিষয়ে অন্যের স্বপ্ন বিশ্বাস করতে শুরু করি, তাহলে কুরআন সুন্নাহ তার মর্যাদা হারাবে এবং মানুষেরা গোমরাহ হয়ে যাবে। মারাত্মক ফিতনায় পতিত হবে। কারন এটা এমন একটা উৎস্য যা প্রমান করার উপায় নেই, এবং প্রমান করলেও কিছু এসে যায় না, ওটা মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয় বরং কুরআন ও সুন্নাহ মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
মজার ব্যাপার হল সারা দুনিয়াতে বাঙ্গালী ছাড়া অন্যরা এরকম স্বপ্ন দেখেনা। তারা ক্কাবা শরীফের ইমামের নামে স্বপ্ন তৈরী করেনা। তার প্রয়োজনও হয়না। কারন তারা শিক্ষিত। আর আমরা মূর্খ এমনটা মনে করার কারনেই কিছু ইসলাম বিদ্বেষী আমাদের জ্ঞানের সাথে প্রতারনা করার সুযোগ পেয়েছে।
কখনও কখনও কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায় দুনিয়াতে, এর সঠিক ব্যাখ্যা আমরা জানিনা। কখনও মানব জাতিকে পথে ফেরানোর জন্যে আল্লাহ কিছু নিদর্শন দেখান। কিন্তু সেটা আল্লাহর পরিক্ষাও হয়ে থাকে অনেক সময়। এমনকি অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও এরকম কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে। যদি অলৌকিকত্বকেই আমরা আমাদের আচরনের মাপকাঠি ধরে নেই, তাহলে ইমানহারা হবার সম্ভাবনা আছে। কারন কখনও শয়তান এমন কিছু ঘটনা ঘটায় যা অলৌকিক। তখন তো মুসলিমরা ওদিকে ঝুকে পড়বে। কখনও আল্লাহ নিজেই এরকম কিছু ঘটনা ঘটিয়ে দিয়ে বিশ্বাসীদের আচরণ লক্ষ্য করেন । সে সময়েও কুরআন সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে হবে, তারাই হবে সফলকাম। নইলে সেসব অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী হয়ে অনেক সময় ইমানহারাও হতে হবে।
কিছু বিষয় আছে ,যাতে বিশ্বাসী হওয়া না হওয়াতে কিছু এসে যায় না। যেমন মাছের গায়ে আল্লাহর নাম লেখা। গাছের গঠনে মনে হচ্ছে সেজদা করছে, পাথরের গঠন,আকাশে কিছু দৃশ্যমান হল,,,ইত্যাদী ইত্যাদী। কিন্তু এগুলো নিয়ে বেশী উচ্চবাচ্য করলে কুরআন সুন্নাহর মর্যাদা হানী হতে পারে। আমাদের জ্ঞানের স্তরও প্রশ্নের সম্মুখিন হতে পারে। আল্লাহ যে জ্ঞান প্রদান করেছেন, তার উপর ইনসাফ করতে হবে।
===========================
এরপর থেকে কেউ যখন স্বপ্নে পাওয়া মেসেজ প্রদান করবে, আমরা তাকে নিষেধ করব, বুঝিয়ে বলব, অথবা প্রত্যাখ্যান করব। যেখানে সেখানে আমিন লিখে মূর্খতার পরিচয় দেব না। কোথাও কোনো অলৌকিক ঘটনা দেখলে বা শুনলে আল্লাহর প্রশংসা করব,বিষয়টা ওখানেই সীমাবদ্ধ রাখব। আর অন্যকে উপদেশ প্রদান করতে গিয়ে কুরআন ও সুন্নাহতে ফিরে আসব। কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ীই জীবন পরিচালনা করব ও অন্যকে পরিচালিত হতে সাহায্য করব। আর বিতর্কের চাইতে চুপ থাকা উত্তম, এমনকি তর্কে জিতে যাব এমন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও চুপ থাকলে আল্লাহ আমাদেরকে সফল করবেন, অজস্র নিয়ামতে ধন্য করবেন।
আল্লাহ আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধী করুন ! আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান অনযায়ী সত্যের পথে চলতে সহায়তা করুন !
বিষয়: বিবিধ
৭৫২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন