ওরে বুদ্ধি আমার ডাক্তারের !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:৩২:০৪ সকাল



-------------------------------

ছুটির দিনে আমার প্রিয় কাজ হল চিৎ হয়ে পড়ে থাকা ঝড়ে পড়া গাছের মত। ছুটির দিনে রান্না ভালো লাগেনা। ফ্রিজে নানান খাদ্য খাবার ছিলো। ডাল,ভাত,গরুর গোস্ত,আলু- ডিমের ভূনা সব একসাথে মাখিয়ে খেয়ে ফেললাম। দুপুরের পর নাপিতকে ফোন দিলাম, এপয়েন্টমেন্ট নিলাম। ব্যাংকে গিয়ে কাজ সারলাম। চুল কাটালাম। শালার নাপিত জীবনে মাত্র একবার সুন্দর করে ছুল কেটে দিয়েছে। কোনোবারই তার কাটা পছন্দ হয়না,তারপরও যাই। বনানী বাজারে একটা দারুন সেলুন আছে, ওখানে এক নাপিত আমার চুল কাটত। অসাধারণভাবে চুল কেটে দিত সময় নিয়ে, ১২০ টাকা নিত। আর এই নাপিত মাত্র ৮/৯ মিনিট টাইম নিয়ে চুল কেটে দিয়ে ২০ ডলার নিয়ে নিল। কেউ যদি আমার মাথার পেছনটা কেটে দিত,,,সামনের অংশ নিজেই কেটে নিতাম,,,,। আজব চুলের গজব কাহিনী ! একবার নাপিতের উপর রাগ করে এই চুল কাটা মেশিন কিনে নিজে ট্রাই করে পেছনে সর্বনাশ করেছিলাম,শেষে আবার নাপিতের কাছে গমন ! নাপিত কেমন করে জানি তাকাচ্ছিলো....।

যাইহোক ফ্রেড মায়ার নামক স্টোর থেকে আঙ্গুর কিনলাম আর ধনে পাতা নিলাম এক তাড়ি, কারন এভোকাডো দিয়ে গুয়াকামলি বানাতে এটা লাগবে। এক কলিগ ডিপজলের মত আলটিমেটাম দিয়েছে। এরপর গেলাম জিমে । খানিক ব্যায়াম করলাম, দেখি আমার ম্যানেজারও ফালাফালি করছে,,,বডি বিল্ডিং করে পুরো কুনো ব্যাঙের মত ফিগার বানিয়েছে। বহু লোক বিশাল মাসল বানিয়ে নিজেকে দ্য রক ভাবে, অথচ মাসলের ঠেলায় ভালো করে মুভ করতে পারেনা। অতিরিক্ত মাসলের কারনে শেষ বয়সে কিছু সমস্যা হয়। প্যাচাল বাদ।

আঙ্গুরগুলো একেবারে তরতাজা যেন সদ্য জবেহ করা ছাগলের সামনের পা। চাবালাম, দারুন স্বাদ। আমি আবার কোনো কিছু ধুয়ে টুয়ে খেতে পছন্দ করিনা। ক্রিকেটের বোলাররা বল যেমন পাছায় মুছে বল করে,,আমি ওই স্টাইলে আপেল মুছে খাই। আঙুর হলে নেক নজরে একবার তাকাই, তারপর ভাব ভালো মনে হলে ওভাবেই খাই। ময়লা মনে হলে হাতে ডলে খেয়ে ফেলী। অন্য ফলের ক্ষেত্রেও তাই। অনেকসময় একটু ধুলো ধুলো স্বাদ লাগে, নতুন ফ্লেভার মনে করে খেয়ে ফেলি। বুনো ব্লাকবেরী খেতে গিয়ে কত পোকা খাইছি, আর এ তো সামান্য ধুলো। অনেক সময় হাত না ধুয়েই ভাত খাই,,,,লেকচার বাদ !! নিজের গলায় পা দিলাম। মূল বক্তবেই যেতে পারছি না,,শুধু লতা পাতা আসছে....।

এরপর গেলাম এক পোষাকের দোকানে। সময় পেলে পোষাকের দোকানের নানান সব মূল্যহ্রাস দেখী, কখনও কিনি। আজও কিনলাম। কি কিনলাম বলব না, লেখা লম্বা হয়ে যাবে।...

শিরোনাকে ফিরে যাচ্ছি। বিকেল ৪টায় ডেন্টিস্টের কাছে এপয়েন্টমেন্ট ছিলো। এটা আমার রেগুলার চেকআপ। বছরে দুবার ফ্রি চেকআপ এবং দাত পরিষ্কার করে দেয়। যে বিষয় নিয়ে লিখতে এতদূর আসলাম, তা হল এই যে- প্রায় ৩ বছর পূর্বে এই ডাক্তার আমার এক মাড়ির দাত দেখিয়ে বলেছিলো ওটায় ক্রাউন লাগাতে হবে, কারন দাতে গর্ত আছে। আসলে ওটায় একটা ফিলিং করা ছিলো। আমার এক ডেন্টিস্ট বন্ধু সস্তায় ভালো মানের ফিলিং করে দিয়েছিলো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর সেই ফিলিং উঠে গিয়েছিলো। এরপর আবার সেই বন্ধুর চেম্বারে গিয়ে দেখী বন্ধুর বৌ বসে আছে, উনিও ডেন্টিস্ট। উনাকে ঘটনা বললাম। উনি আমার দাঁতে এমালগাম ফিলিং দিলেন এবং বললেন এটা সর্বোচ্চ ২৫ বছর টিকে থাকে, আমি তো মহাখুশী। মাত্র ৮০০ টাকা নিয়েছিলো আমার থেকে। কিন্তু মাস খানেকের ভেতর দেখী আমার ফিলিং উধাও, মানে সেটা উঠে পেটে চলে গেছে, হয়ত টাইমলী বেরও হয়ে গেছে আমার অগোচরে ! দুনিয়ায় অগোচরে বহুকিছু ঘটে যায়, আমরা খবর রাখিনা।

তো, পরে আর সেই দোস্তের কাছে যাওয়া হয়নি, কারন ভয় ছিলো যদি আবারও তার চেম্বারে তার বৌকে পাই ! গত বছর বাড়ি যাবার পর ঢাকার ডেন্টিস্টকে দেখালাম, বলল ফিলিং ধরবে না, উঠে যাবে। ক্যাপ করতে হবে, কিন্তু আমার টাইম ছিলোনা। যশোরে ভালো ডেন্টিস্ট হিসেবে খ্যাত একজনের কাছে গেলাম, উনিও বললেন, ক্যাপ লাগাতে হবে,রুট ক্যানেলও করতে হবে। আমি এর পক্ষপাতি না এ কারনে যে, আমার দাঁতে অত ক্ষয় হয়নি কিন্তু ক্যাপ করতে গিয়ে ওরা দাতের চারিপাশ কেটে ছোট করে ফেলবে। মানে মূল দাঁত কেটে ফেলবে অনেক খানি, নইলে ক্যাপ লাগানো যায় না। আমি রাজি হলাম না, আবার আমার সময়ও তেমন ছিলোনা। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, কয়েক বছরের ভেতর হয়ত প্রযুক্তি অনেক দারুন হবে, তখন দাঁতেরও একটা গতি হবে।

আমার ডাক্তার বরাবরই চেকআপের সময় এদাত ,ওদাত দেখিয়ে সেটা মেরামতের কথা বলে, কারন ওতে তার পয়সা আসবে। আমি কয়েকবার ছাড়া বরাবরই বলি আমি ঠিক আছি,,পরে দেখা যাবে। তো ১ বছর আগে আমার ওই দাতে ক্যাপ(ক্রাউন) করবে বলে খরচের হিসাব দিল। দেখলাম মোট খরচ ১৬০০ ডলার, আমার ইন্সুরেন্স দিবে মাত্র ৫০%, মানে পুরো ৮০০ ডলার আমাকে দিতে হবে। অন্য ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স কোম্পানী প্রায় ৭৫-৮০% পে করে। ভাবলাম এক দাতে ৮০০ ডলার খরচ করব ! বিষাক্ত সাপে কামড়ালেও তো একাজ করব না। বললাম, ফিলিং করা যায় না ? ডাক্তার বলল, ফিলিং ওখানে থাকবে না। কারন ওটা তেমন গভীর না, একটা মসৃণ গর্ত। ফিলিং উঠে আসবে। কিন্তু এখনও আমার মনে প্রশ্ন --তবে আমার বন্ধুর করা ফিলিং ওখানে ৬ বছর কিভাবে আটকে ছিলো ! তবে কি আমার বন্ধু এদের চেয়ে বড় ডাক্তার !

এই দাঁতে আমার আসলেই কোনো সমস্যা হচ্ছিলো না বা হচ্ছেনা কিন্তু খাবার আটকে থাকে, জিহবা দিয়ে তা ছাড়াতে হয়, এই হল সমস্যা। আজ ডাক্তার বলছে- তোমার মুখের দাঁত ঠিকই আছে। তবে তুমি যেহেতু বেশী খরচ করতে চাওনা ওই দাতে, আমরা একটা ফিলিং করে দেখতে পারি। কিছু না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভালো, তাতে অন্তত ক্ষয়টা কম হল !

মনে মনে বললাম ওরে তুই তো সেই ডাক্তার,,, বছরের পর বছর তুই এই দাতে ক্রাউন করা নিয়ে জ্বালায় খাচ্ছিস ! আর আজ তোর সুমতি হল, ফিলিং করবি ! আবার খুশীও হলাম। আমার দাত ক্লিন করল। শেষে পলিশ করে দিল সুন্দর করে। সাথে দিল একটা পেস্ট,ব্রাশ আরও কিছু সরঞ্জাম। এবার মাড়ির ওই দাত ফিলিং এর সময় নির্ধারন করল আমার সুবিধামত, দেখী এক দাত ফিলিংয়ে আমার খরচ হবে ১৬৫ ডলার.....মূল খরচ অনেক, কিন্তু ইন্সুরেন্স পে করার পরও আমাকে এতটা খরচ করতে হবে। কিছু করার নেই, ওরা কিছু টাকা কামাবে এই আর কি !

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো নইলে আরেক জায়গায় যেতাম। আজ রাতে সিঙ্গাড়া বানানোর একটা মহড়া নেব। কষে দোয়া করেন যেন সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হয়। বিনিময়ে আপনারাও যখন সিঙ্গাড়া বানাবেন,,আমার খাশ দোয়া থাকবে Happy

বিষয়: বিবিধ

৮৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File