কুত্তা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:২৪:২১ দুপুর
----
সহকর্মী টেইলরের মুখে দেখী বিশাল বড় একটা কাটার দাগ। পুরো গালের এপাশ ওপাশ হয়ে আছে। জানতে চাইলাম কিভাবে হল ? বলল- ছোট কুত্তার বাচ্চাটাকে আদর করে চুমু দিতে গেলে সে নখ নিয়ে হাচড়ে এমন করেছে। মুখে চুকচুক করতে থাকা অবস্থায় মনে মনে বললাম,,, এবার বোঝো ঠেলা !
জিম আগে আমাকে পছন্দ করত না। এত ভালো আচরণ করতাম,তারপরও তার ভেতরে এক ধরনের বাঁধা ছিলো কোথায় জানি। এরপর ওর কুত্তা লেসীর সাথে সুআচরণ শুরু করলাম,,,জিম আমাকে ভালোবাসতে শুরু করল। লে হালুয়া !
আমেরিকার লোকসংখ্যা প্রায় ৩৪ কোটি, আর পোষা প্রানী,বিশেষ করে কুকুরের সংখ্যা অন্তত ২০ কোটি। অন্য প্রানীর সংখ্যাও কম না। এত বিশাল সংখ্যক প্রানীর জন্যে বিশাল বিশাল খাবারের কোম্পানী,ওষুধের কোম্পানী গড়ে উঠেছে। নি:ষঙ্গ মানুষেরা একটু সঙ্গের জন্যে নানান সব প্রানী পুষতে থাকে, এর বেশীরভাগই কুকুর। নানান জাতের কুকুর। ইঁদুরের সাইজ থেকে শুরু করে বাঘের সাইজ পর্যন্ত নানান রকমের কুকুর রয়েছে। কাওকে কাওকে দেখা যায় নেকড়ে বাঘ পোষে। বিশেষ প্রশিক্ষনে তাদেরকে একেবারে ভদ্র বানানো হয়েছে। এদেশের বেশীরভাগ কুকুরই ঘরোয়া এবং কেবল আদর করার জন্যেই । খুব অল্প সংখ্যক কুকুরই শিকার করার কাজে,ভেড়ার পালের জন্যে, বা কোনো ফার্মের জন্যে ব্যবহৃত হয়। কিছু সংখ্যক ব্যবহৃত হয় বাড়ি ঘর পাহারা দেওয়ার কাজে।
কুকুর নিয়ে এদের আদিক্ষেতার সীমা নেই। আদর করতে করতে পাগল হয়ে যায়। বিশেষ বিশেষ দিনে কুকুরের জন্যে নানান সব উপহার,খাবার কেনা হয়। কুকুরের জন্যে আছে নানান সব খেলনা। এসব খাবার,খেলনা,ওষুধের দাম মানুষের বাচ্চার খেলনা,খাবার,উপহার সামগ্রীর মতই দামী। আমি নিশ্চিত পুঁজিবাদী ঘাঘু লোকেরা স্রেফ ব্যবসার ক্ষেত্র বাড়ানোর জন্যে নিত্য নতুন পণ্যের প্রচলন করেছে, আর এ কারনেই কুকুর,বিড়ালসহ পোষা প্রানীগুলো বাগান থেকে কোলে এসে উঠেছে, এসব তাদের শেখানো। আর তাদের প্রতি ভালোবাসার প্রচলনে নানান সব পণ্য সামগ্রীর বেচাকেনা রকরমা। আবারও লে হালুয়া।
সহকর্মী ব্রেন্ট জানালো তার কুকুরের বড্ড অসুখ। বড় সার্জারী করতে হবে। অনেক টাকা খরচ করে সার্জারী হল। কি যে দু:খ তার ! কুকুরটা ভালো খেতে পারছে না। দিনদিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে,,তার সে কি দু:খ। তার দু:খে আমি দেশের পথশিশু,বুড়ো হাবড়াদের হতাশাযুক্ত চেহারা দেখতে থাকলাম। আহা কি অবহেলায় মানুষগুলো বেঁচে থাকে ! এদের অবস্থাও অনেকটা এরকম। একটা পর্যায়ে এসে লোকেরা সন্তানাদী অথবা পিতা-মাতাকে দেখাশুনা করেনা। সকলে স্বাধীন মুক্ত,,কেউ কারো দ্যাখেনা,খোজ তেমন নেয়না। আর দাদা-দাদী,নানা-নানীদের তো আরও করুন অবস্থা। তারাও যৌবনে একই নিয়ম অনুসরণ করেছিলো। আজ অসহায় হয়ে কুত্তার সান্নিধ্য নিতে হয়। এদের পরবর্তী প্রজন্মও এমন হবে,,কারন এরা এই সাংষ্কৃতি চালু করেছে। তবে কুত্তাগুলোর হয়েছে মজা। তারা রাজার হালে থাকে। তাদের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। এরা পোষা প্রাণীর প্রতি খুবই যত্নশীল , এটা ভালো।
ব্রেন্টের কুকুরটা মারা গেল। আহারে তার কি আহাজারী। এরপর সে এক জঙ্গলের ভেতর তাকে পুতে আসল। সেসময় সেই জঙ্গলে হাটুর উপরে তুষার ছিলো। সে পুরো ২ মাইল বিশেষ জুতো পরে কুকুরটাকে বিশেষ বক্সে ভরে টানতে টানতে পথ চলেছিলো। অনেক কষ্ট স্বীকার করেছিলো। বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে পয়সা দিলে তারা মরা কুকুরকে ইলেকট্রিক চুল্লীতে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়। ব্রেন্ট সেটা চায়নি। স্মৃতির একটা অস্তিত্ব রাখতে চেয়েছিলো। তাকে পুতে নিশানা রেখে এসেছিলো। ঘটনা অনেক আগের। একবার সে জানালো যে, কুকুরের কবর দেখতে গিয়েছিলো সে মৃত্যু বার্ষিকীতে। অবাক হলাম তার গভীর ভালোবাসায়। এদের ভেতর ভালোবাসা আছে কিন্তু তার সঠিক মাত্রা বেশীরভাগ মানুষ বুঝতে পারেনা । এই নিখাঁদ ভালোবাসা এরা মানুষের জন্যে রাখলে মানব জাতি এদেরকে মাথায় তুলে রাখত !
আমি কুকুর অপছন্দ করি কিন্তু তার নির্ধারিত ক্ষেত্র থাকতে হবে। আমার পছন্দ অনেক বড় সাইজের জার্মান শেফার্ড অথবা অরিজিন্যাল নেকড়ে বাঘ। রসূল(সাঃ) আমাদেরকে কুকুর পোষার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন, তবে সেটি হতে হবে শিকারের কাজে সাহায্যকারী হিসেবে অথবা বাড়ি,ঘর পাহারা দেওয়ার কাজে। কুকুরকে ঘরে নেওয়া যাবেনা। স্রেফ আদরের জন্যে কুকুর পোষা যাবেনা। এর সঠিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে। তবে অত্যন্ত সুআচরণ করতে হবে। কারন একবার বনী ইসরাইলের এক মহিলা একটি বিড়ালকে বেধে রাখে, বিড়ালটি শেষে না খেয়ে মারা যায়। এই অপরাধের কারনে ওই মহিলাকে অাল্লাহ জাহান্নামে দিয়েছিলেন বা জাহান্নামের জন্যে মনোনিত করেছিলেন-(বুখারী)।
একটা জীবন্ত প্রানী পোষা মানে তার পুরো দায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া। আর এর কারনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে। আমি আমার ঘরের ভেতর কুকুর পছন্দ করিনা। লেসীর গায়ে হাত না দিয়েই আচরনে প্রকাশ করি যে,তাকে আমি পছন্দ করি। গরমের দিনে তাকে বিমেষ এসির ভেতর রাখা হয়। শীতে থাকে অতিরিক্ত যত্ন। অনেক দামী বেড আছে তার দুটো। ....অবশ কুত্তা তো কুত্তাই,,সুযোগ পেলে কমোডের পানি খেয়ে আসে....! আমার রুমে আসার অনুমতি কুকুরটার নেই। যে ঘরে কুকুর থাকে,সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেনা। এই রিস্ক নেওয়া যাবেনা।
বিষয়: বিবিধ
৯৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একবার এক আমেরিকানের সাথে কাজ করতে হয়েছিল কয়েক দিন। দিনের শেষে তার হা-হুতাশ শুধু কুত্তাকে নিয়ে, সে কি খাচ্ছে, কি করছে এসব নিয়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন