যে দুই ব্যক্তির কাজে আল্লাহ হাসেন !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:০৮:১৩ সকাল
----------------------------------------
শীত আসব আসব করছে এবং বহু স্থানে ইতিমধ্যে চলে এসেছে। যারা গ্রামে থাকেন বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন ,শীতের রাত ব্যাপারটা কি তা তারা খুব ভালো জানেন, তবে শহরবাসীরও ভালো ধারনা আছে। মনে আছে শীতে লেপ,কম্বলের নীচে ঢুকে অনেকক্ষন টাইট হয়ে থাকতাম,কারন পুরো লেপই ঠান্ডা থাকত। খানিক পর শরীরের তাপে লেপ গরম হতে শুরু করত। যথসম্ভব নড়াচড়া না করে ওই গরমে ঘুমানোর চেষ্টা করা হত। আর ঘুমও হত চরম। শীতের রাতে কম্বলের ওমের থেকে পরম কিছু নেই। শীতের রাতের গভীর ঘুমের চেয়ে উত্তম কি আর হতে পারে ! এই শীতে মাঝ রাতে যদি টয়লেটে যেতে হয়,তাহলে তার মত দু:খের ঘটনা আর নেই। অনেকে পানি কম খেয়ে ঘুমায়,যাতে বেগ কম থাকে।
এরপর প্রথম সারীর ইমানদাররা এই শীতে মূল্যবান, আরামের কম্বল ও ঘুম ত্যাগ করে তাহাজ্জুদের জন্যে উঠে দাড়ায়। ঠান্ডা পানি দিয়ে ওজু করে। এরপর তাদের কেউ কেউ আরেকটু ঘুমিয়ে পরে ফজর পড়ে, আবার অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে নামাজরত থাকে। ধীরে রুকু,সেজদাহ করে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করে। আল্লাহর প্রতি ভয় ও তীব্র ভালোবাসা তাদেরকে ওই শীতের রাতে উঠতে সহায়তা করে। আরামের ঘুমের চাইতে আল্লাহর সান্নিধ্য তাদের কাছে প্রিয়। সহি হাদীসে এসেছে, সে সময় আল্লাহ নিকটতম আসমানে এসে মানুষদেরকে ডাকেন এবং ক্ষমা চাইতে বলেন।
কিন্তু আজকের বক্তব্য হল আল্লাহর হাসি নিয়ে। তাবারানী কিতাবে সহি সূত্যে বর্ণিত একটি হাদীস এসেছে,যা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ)থেকে বর্ণিত-রসূল(সাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা ২ ব্যক্তিকে দেখে হাসেন । এদের একজন হল ওই ব্যক্তি যে শীতের রাতে আরামের বিছানা ছেড়ে উঠে ওজু করে নামাজ আদায় করেন। এই লোকটির অবস্থা দেখে আল্লাহ তায়ালা হাসেন এবং সবকিছু জানা সত্ত্বেও তিনি ফেরেশতাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, আমার এই বান্দা কিসের আশায় এই কষ্ট স্বীকার করল ? ফেরেশতারা বলেন-ইয়া আল্লাহ , আপনার কাছে যে জান্নাত বা মহা নিয়ামত রয়েছে তার আশায় এবং আপনার কাছে জাহান্নামের যে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে তার ভয়ে সে শীতকে উপেক্ষা করে নামাজ আদায় করছে। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন- তোমরা লিখে রাখো , সে আমার কাছে যা পাওয়ার জন্যে নামাজ আদায় করছে, তাকে আমি তা প্রদান করলাম, আর যা থেকে সে আমার কাছে অাশ্রয় চায় বা যে শাস্তির ভয় করে, তা থেকে তাকে নিষ্কৃতি দিলাম।
হাদীসে উল্লেখিত এই নামাজের ব্যাপারে মুহাদ্দীসগনের অনেকে বলেছেন, এখানে ফজরের সালাতের কথা বলা হয়েছে। তবে বেশরিভাগ মুহাদ্দীসগণ বলেছেন এটা দ্বারা তাহাজ্জুদের সালাতকেই বুঝানো হয়েছে।
আরেকজনকে দেখে বা তার আচরণ দেখে আল্লাহ তায়ালা খুশীতে হাসেন, সেই বক্তি হল ওই লোক, যে আল্লাহর রাহে জিহাদের জন্যে বের হয় এবং আল্লাহর ভয়ে ও আল্লাহর নিয়ামতের আশায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়। এই ব্যক্তির ব্যাপারেও আল্লাহ তায়ালা তার ফেরেশতাদের সাথে উপরোক্ত অংশের মত কথোপকখন করে থাকেন।
মুসনাদে আহমদ নামক হাদীস গ্রন্থে সহি সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীস মোতাবেক, দুনিয়াতে কারো কোনো আচরনে যদি আল্লাহ হাসেন, তাহলে আখিরাতে ওই ব্যক্তির থেকে হিসাব গ্রহন করা হবেনা। এর মানে হল আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। অর্থাৎ বিনা হিসেবে জান্নাতে যাওয়া লোকদের ভেতর এরাও পড়বে....।
আমাদের হাতে এখনও সময় আছে। আসুন আমরা সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করি। আসলেই এটা কঠিন কিছু নয়। আমাদের একটা তুচ্ছ উদ্যোগই আমাদের সৌভাগ্যের জন্যে যথেষ্ট হতে পারে। হাতে সময় বেশী নেই। এটা হোক আজই। কিয়ামত আসলেই সন্নিকটে ! বহু হাদীসে কিয়ামতের আলামত হিসেবে এমন একটা সময়ের কথা বলা হয়েছে,যখন মেয়েরা কাপুড় পরিধান করবে কিন্তু তাদেরকে উল্ঙ্গ দেখাবে,,সেটা এখন ঘটছে। বলা হয়েছে মসজিদ এর সৌন্দর্য্য নিয়ে মানুষ বড়াই করবে,দলাদলি করবে,,সেটা ঘটছে। কে কত সুন্দর মসজিদ নির্মান করতে পারে তার প্রতিযোগীতা চলছে। হাদীসে এসেছে মানুষ সু-উচ্চ অট্টালিকা তৈরী করবে গর্বের কারনে,,সেটাও ঘটছে। রসূল(সাঃ) বহু হাদীসে বলেছেন সমাজের নিকৃষ্ট মানুষগুলো, অযোগ্য মানুষগুলো, আস্থা রাখা যায়না, নীচু,হীন,চরমভাবে চরিত্রহীন মানুষেরা সমাজের নেতা হবে ,শাসক হবে,ক্ষমতাশালী হয়ে মানুষের ভালো-মন্দ দেখাশুনা করবে.....। এটা হচ্ছে,ঘটছে,চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন ! এখনও সময় আছে আমাদের হাতে। আল্লাহর সান্নিধ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু আর কি হতে পারে !
বিষয়: বিবিধ
৮৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন