ক্ষমা করুন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:৩৬:৪৪ সকাল
আমরা যখন রেগে যাই, বা কেউ যখন আমাদেরকে অনাকাঙ্খিতভাবে রাগিয়ে দেয়, আমরা কি তাদেরকে ক্ষমা করতে পারি ? কখন ক্ষমা করি ? রাগ থাকা অবস্থায়, নাকি রাগ পড়ে গেলে ?
এটা তো সত্য যে, আমরা অন্যকে কষ্ট দিলে তাতে তার হক নষ্ট করা হয়। কষ্টের তারতম্যের কারনে বা পরিমানের উপর হক নষ্টের পরিমান ওঠা নামা করে। আখিরাতে অবশ্যই নিজের নেকী দিয়ে এই হকগুলো পূর্ণ করতে হবে, এটা আমরা জানি। কিন্তু যে লোকটি তার ক্ষতি সত্ত্বেও ক্ষমা করে দিচ্ছে তার কি হবে !
পুরো বিষয়টা নিয়ে ইস্ট লন্ডনের গ্রান্ড মসজিদের ইমাম অাব্দুল কাইয়ুম একটা হাদীসে পড়ছিলেন। একজন আমার ইনবক্সে হাদীসটা শেয়ার করলেন, আল্লাহ তাকে সর্বোত্তম পুরষ্কার দিন এবং জীবন পরিপূর্ণ করে দিন ! অবশ্যই আপনারা এটাসহ আরও অনেক হাদীস জানেন, কিন্তু শেয়ার করছি আমাদের ইমান বৃদ্ধীর আশায়।
হাদীসটা হল-আখিরাতের একটা দৃশ্য রসূল(সাঃ)কে দেখানো হয়েছে। সেখানে এমন একনকে উঠানো হয়,যার কাছে মানুষের পাওনা রয়েছে। সে কাওকে কথার দ্বারা,হাতের দ্বারা কষ্ট দিয়েছে এবং অথনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সকলের পাওনা দিয়ে তার কাছে আর কিছুই থাকল না। লোকটা দু:খে ভারাক্রান্ত এবং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে প্রকম্পিত। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে বলেন- মাথা উঁচু করে দ্যাখোতো...কি দেখতে পাও ??
সে বলল-এটা তো অতি সুন্দর জান্নাত,,অসম্ভব সুন্দর ! আল্লাহ বলেন,,এটা পেতে চাও ? সে বলে ...অবশ্যই ! আল্লাহ বলেন এটা ক্রয় করে নিতে হবে। সে বলে...কিভাবে কিনব ? আমার সকল পুঁজি তো শেষ ! আমার কাছে কিছুই নেই। আল্লাহ তখন বলেন,,,হুমমমম আছে....দাড়াও দেখাচ্ছি। তখন আল্লাহ বলেন, কিছু লোক তো তোমাকেও কষ্ট দিয়েছিলো এবং নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো ,,,তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলে তোমাকে এত বেশী নেকী দেব,,যা দিয়ে এই জান্নাত ক্রয় করতে পারবে ! এই লোক মহা খুশীতে আত্মহারা হয়ে ক্ষমা করে দেয়। আর পুরো বিষয়টা রসূল(সাঃ) আমাদের কাছে লাইভ দেখানোর মত করে বর্ণনা করেছেন। (রহস্য হল এই যে, কিছু কিছু অতি উত্তম কাজের কারনে আল্লাহ কিছু মানুষকে বেশী ভালোবাসেন, আখিরাতেও তাদেরকে বাচিয়ে দেওয়ার একটা উপায় হিসেবে তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে নিবেন)
অবশ্যই কেউ ক্ষতি করলে রাগ লাগে,ক্রোধে আমরা প্রতিশোধপরায়নও হই। অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে রাগ করাই উচিৎ এমনকি প্রতিশোধ নেওয়াই উত্তম। কারন তাতে মজলুমকে সাহায্য করা হয়। কিন্তু এখানে সে বিষয়ে বলা হচ্ছে না। আমরা দৈনন্দিন অনেক ক্ষেত্রে অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হই,কেউ কথার দ্বারা বা আচরনের দ্বারা আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে,হেয় প্রতিপন্ন করে,এরা কাছের লোকও হতে পারে। এর ফলে আমরা খুব রেগে যাই। কিন্তু শ্রেষ্ঠ সে, যে সেসব সময়ে রাগ করেনা এবং ক্ষমা করে দেয়। এরপর সেই শ্রেষ্ঠ- যে রেগে যায় কিন্তু রাগের ভেতরই ক্ষমা করে দেয়। এরপর সে শ্রেষ্ঠ যে রাগ পড়ে গেলে ক্ষমা করে দেয়। এরপর সে শ্রেষ্ঠ যে তার জীবদ্দশার কোনো এক কালে সকলকে ক্ষমা করে দেয়। এরপর সে শ্রেষ্ঠ যে আখিরাতে অন্যকে ক্ষমা করার সুযোগ পেলে জান্নাত লাভের আশায় ক্ষমা করে দেয়, তবে এই পর্যায়টি একটি চান্স ছাড়া কিছু নয়। উত্তম হল দুনিয়াতেই ক্ষমা করা। আর যদি প্রথম অবস্থায় ক্ষমা করা হয়, তাহলে তার নিয়ামত সবচেয়ে বেশী এবং তা অত্যধিক বেশী। আমি নিজে শুনেছি বহুবার,,,সে এমন কিছু করেছে,,,যাতে ক্ষমা করা যাবেনা ! তাদেরকে বলছি,, এসব ক্ষেত্রে ক্ষমা না করলে দুনিয়াতে আপনি কোনোভাবেই লাভবান হন না,নিছক মনের ক্ষেদ মেটানো ছাড়া। কিন্তু ক্ষমা করলে যে পুরষ্কার রয়েছে তা জানলে আমরা ক্ষমা করতেই থাকতাম।
আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। আল্লাহ তার নিজের কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে দিয়েছেন, ফলে আমরা ক্ষমার বৈশিস্ট্য পেয়েছি। আমরা যেন অপরকে বেশী বেশী ক্ষমা করি, তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, প্রশান্তি প্রদান করবেন।
বিষয়: বিবিধ
৭২৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
https://www.facebook.com/mohammadaslam.khan.7146
মন্তব্য করতে লগইন করুন