আমাদের রাজহংস হান্টিং

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৩৫:১৪ রাত



------------------------------

মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম ,ছিলাম নদীরো চরে......। এই শালার গান ছোটবেলায় শুনেছিলাম,কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাথায় ঘোরে। বিষয়টা এমন নয় যে,গানটা পছন্দ, বরং একেবারেই অপছন্দ এর কথা। খেয়াল করেছি, যেসব গানের কথায় ব্যপক সমস্যা রয়েছে,সেসব গানই গাইতে মজা লাগে বা মনের ভেতর গুনগুন করে। "মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম ,ছিলাম নদীরো চরে"....এখানে মারাত্মক একটা সমস্যা আছে যা সাধারণ জনতার মাথার উপর দিয়ে যাবে। এই গানের কথাগুলো সৃষ্টির প্রথম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। আমি পড়েছিলাম সনাতনীরা বিশ্বাস করে সৃষ্টির শুরুর দিকে হাস এবং হাসী ছিলো,,,,সেখান থেকে পরে অনেক কিছু এসেছে। এসব নিয়ে গান,গল্প রয়েছে। যাইহোক রাজহংশ নিয়ে আজ আমার বয়ান...

আমি তখন কোন ক্লাশে পড়ি সঠিক মনে করতে পারছি না, সম্ভবত ক্লাশ ৮ হবে। আমাদের বাড়ির পার্মানেন্ট শিক্ষক ছিলেন ,,,,হায়রে এত প্রিয় শিক্ষকের নাম মনে পড়ছে না....ভিটামিনের অভাব হল নাকি ! আচ্ছা মনে পড়েছে,,জাহাঙ্গীর স্যার। উনি আমাদের সাথে ফুটবল,ক্রিকেট,ব্যাডমিন্টন,দাবা সবই খেলতেন। বন্ধুর মত আচরণ করতেন। সুশিক্ষা দিতেন। আমাদের বাড়ির সামনে মতলেব চাচার মেয়েক লিপিকে বিয়ে করেছিলো এলাকার মাস্টার হিসেবে খুবই পরিচিত রুস্তম ভাই। লিপি ছিলো আমার ক্লাশমেট। এলাকার জামাই হয়ে যান রুস্তম ভাই। খুবই মিশুক ও অমায়িক ,হাস্যরসপ্রিয় মানুষ।

একদিন ঠিক হল রাজহাস খেতে হবে,,কোথায় খাওয়া যায় !! রুস্তমভাই বলল লিপির এক আত্মীয় আছে এক গ্রামে, প্রায় ৯/১০ কি:মি: দূর হবে। সেখানে তারা নাকি রাজহাস খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে রেখেছে। আমরা সকলে মিলে পরিকল্পনা করলাম সেই গ্রামে সাইকেল চালিয়ে যাব। একদিন সকালে আমি,সাবু,জাহাঙ্গীর স্যার,রুস্তমভাই এবং লিপি সকলে নিজ নিজ সাইকেলে রওনা হলাম সেই গ্রামের উদ্দেশ্যে। মাঠ,ঘাট,রাস্তা পার হলাম। অনেক সময় লাগল। আমরা ধীরে চলছিলাম কারন রুস্তম ভায়ের সাইকেলে লিপি ছিলো।

অবশেষে দুপুরের আগে সেখানে পৌছলাম। গ্রামটা দারুন। তাদের বাড়ি ভালো লেগেছিলো। আমাদেরকে সাদরে সম্ভাষন করা হল। তাদের বিশাল ক্ষেত খামার ছিলো, আমরা তা দেখতে গেলাম। তাদের বড় হলদী বাগানে আমরা পুরুষরা জামাতবদ্ধ হয়ে মহান ত্যাগে ব্রত হলাম। সে সময় ওটা ছিলো একটা স্টাইল, বলা যায় ভারতীয় স্টাইল। আমরা ছোটবেলায় ক্ষেত্রের আইলে,ধান-পাট ক্ষেতে,বাগানে এসব ত্যাগ করে বড়ই তৃপ্ত হতাম। আমরা গল্প করতে করতে মহান কর্ম সম্পাদন করতে থাকলাম।

দুপুরের আগে আরও কিছু খেলাম কিন্তু সকলের চিন্তা ছিলো রাজহাস কেন্দ্রীক। সেই হাস রান্না করতে তারা অনেক সময় নিল। অন্য খাবারে আমাদের মন ছিলোনা। অবশেষে সেই হাস রান্না অবস্থায় আসলো। সে কি মজারে আব্বা ! সেই সময় মুরগী কমন খাবারের ভেতর পড়লেও রাজহাস কালে ভদ্রে খাওয়া হত। এটাকে ঘিরে আমার রোমাঞ্চকর অনুভূতি ছিলো। দুপুরে ভাতের সাথে টানলাম যমের মত। ব্যপক মজা।

বিকেলে আমরা আবার জামাতবদ্ধ হয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। এখন ভাবছি শুধু খাওয়ার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা ভাঙ্গাচোরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে এতদূর গিয়েছিলাম। লোকটা পারেও....! সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। আমাদের দিনগুলো ছিলো নির্মল সুন্দর। তবে অকপটে বলতে পারি, আমরা সম্মিলিতভাবে খাদকই ছিলাম

বিষয়: বিবিধ

৭৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File