হিজামাহ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৪৮:৪৯ রাত
---------
একদিন বিকেলে সাঁতার কাটতে গিয়ে স্থানীয় এক সেরা সাতারুর ঘাড়ে দেখলাম কয়েকটা হিজামার চিহ্ন। হিজামাহ সম্পর্কে প্রায় ১৩৯টা হাদীস রয়েছে। বহু আগে থেকে শব্দটা শুনলেও বুঝতাম না। হিজামাহ শব্দের অর্থ হল সাকিং বা চোষা। শরীরের কিছু দুষিত রক্ত বিশেষ উপায়ে চুষে বা টেনে বের করে ফেলার চিকিৎস্যাকে হিজামা বা কাপিং বলে বা সিঙ্গা লাগানো বলে। এটা হাজার হাজার বছরের পুরোনো একটি চিকিৎস্যা পদ্ধতি, যা পরবর্তীতে রসূল(সাঃ)এর যুগেও প্রচলিত ছিলো চিকিৎস্যার একটি দারুন পদ্ধতি হিসেবে। পরবর্তীতে এটা করার ইচ্ছা জেগেছিলো এ কারনে যে, যেহেতু রসূল(সাঃ) এটা করেছেন এবং করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং মেরাজের সময় ফেরেশতারা পর্যন্ত উম্মতের অারোগ্যের ক্ষেত্রে হিজামাহর পরামর্শ দিয়েছেন, তাই এর ভেতর নিশ্চয়ই কোনো কল্যান রয়েছে বলে বিশ্বাস করতাম।
আমেরিকাতে আমি হিজামা কোথায় করে তা খুঁজতে লাগলাম কিন্তু এর স্থানগুলো আমার থেকে খুব দূর হয়, যার কারনে সেটা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তারা অনেক পয়সা নেয়, সেটাও একটা কারন। এমতাবস্থায় ফেসবুকে কয়েকজন ছেলে-মেয়েকে হিজামাহর ব্যাপারে নানান সব পোস্ট দিতে দেখে উৎসাহিত হলাম। ভাবলাম এবার দেশে গিয়ে সময় পেলে হিজামাহ করাবো। তাসনিম হিজামা কেয়ারের সাকিব ভায়ের সাথে কথা হল। দেশে ফিরে বিয়ে করলাম এবং প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এর ভেতর একদিন সময় করে সাকিব ভাইকে ফোন দিয়ে গুলশান লিংক রোডের নূর মজীদ আয়ুর্বেদীক হাসপাতালে চলে গেলাম। আমাকে উনি খালি পেটে আসতে বলেছিলেন কিন্তু শ্বসুর বাড়ীতে আমি মাথা পর্যন্ত খেয়ে বসে ছিলাম। উনি ইবনে মাজাহ শরীফের একটি হাদীস পাঠিয়ে বললেন, রসূল(সাঃ) খালি পেটে হিজামা করাতে বলেছেন। খালি পেটে করলে নাকি বেশী লাভবান হওয়া যায়। আমি দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে মাথায় ওঠা খাবারের বোঝা হালকা করতে থাকলাম।
দুপুরে সাকিব ভায়ের সাথে দেখা হল ওই হাসপাতালে। মুখভর্তি লম্বা দাড়ী, মাথা নেড়া করা ভদ্রলোক। বয়সে যুবক। দেখেই প্রিত হলাম। আচরনে মুগ্ধ হলাম। তিনি একটা হাদীসের উদ্বৃতি দিয়ে বললেন, হিজামা করালে মেরুদন্ড শক্ত হয় এবং চোখের জ্যোতী বৃদ্ধী পায়। আমি যা জানলাম তা হল এই যে, আমাদের রক্তের ভেতরকার অনেক দুষিত পদার্থ দুষিত রক্ত হিসেবে চামড়ার নীচে অবস্থান করতে থাকে এবং এটা শরীরের নানান অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সমস্যা তৈরী করে। শরীরের স্বাভাবিকতা নষ্টে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট কিছু অংশে চামড়ার উপর বিশেষ কাপ বসিয়ে পাম্প করে দুষিত রক্ত বের করে ফেলা হয়। বিষয়টা ভালো লাগল। জানলাম বিভিন্ন রোগের জন্যে বিভিন্ন রকমের হিজামাহ রয়েছে। তবে কোনো রোগ না থাকলেও এটা শরীরের সামগ্রিক উন্নতির জন্যেও করানো যায়।
আমি কোনো বিশেষ কারনে হিজামা করাচ্ছি না, বরং শরীর থেকে কিছু দুষিত পদার্থ বের করতে চাচ্ছি এবং সামগ্রিকভাবে উপকৃত হতে চাচ্ছি। আমাকে হাফ লিটার ওরস্যালাইন খেতে দিল। এরপর একটা বেডে উপুড় করে শোয়ালো। পিঠের উপরের অংশে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত ১৪টা কাপ বসালো একাধিক সেটে। কাপ বসিয়ে পাম্প করলো,এতে চামড়া একটু ফুলে উঠলো। এবার কাপটা সরিয়ে নিয়ে চামড়ার ওই অংশে সুক্ষ্ণভাবে কিছু ফুটো করে। এটা করার সময় ভাবছিলাম সে কলম দিয়ে চিত্র অঙ্কন করছে, বেশ সুড়সুড়ি মত লাগছিলো। পরে বুঝলাম সেখানে খুবই সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ন ছিদ্র করছিলো। এরপর সেখানে আবার কাপ লাগিয়ে পাম্প করল, তখন প্রবল টানে কাপের ভেতর দূষিত রক্ত ও সাথে সাথে কিছু ভালো রক্তও চলে যেতে থাকলো। এরপর রক্তগুলো পরিষ্কার করলো, এভাবে পায়ে ৮টা কাপ বসালো এবং ড্রাকুলা স্টাইলে রক্ত চুষে নিল। পুরো প্রক্রিয়ায় আমার মোটেও খারাপ লাগেনি। বলেছিলো ১দিন বিশ্রাম নিতে, কিন্তু বিশ্রামের টাইম আমি পাইনি, তাতে সমস্যাও হয়নি। পায়ের দাগগুলো একদিনেই উঠে গেছে আর পিঠের দাগগুলো এখন অর্ধেকও নেই, আরেক সপ্তাহ পর চলে যাবে মনে হচ্ছে। হিজামাহ নিয়ে কিছু হাদীস শেয়ার করলাম।
হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ)থেকে বর্ণিত, রসূল(সাঃ)বলেন- আরোগ্য রয়েছে ৩টি বিষয়ের ভেতর: মধুপান, হিজামা এবং আগুনের ছেকা দেওয়া। (বুখারী ১০/১৩৬)
বুখারীর ১০/১৩৯ নং হাদীসে একই হাদীসের কিছু বর্ধিত অংশ রয়েছে, সেখানে রসূল(সাঃ) আরোগ্যের জন্যে মধুপান , হিজামা এবং আগুনের ছ্যাকা দেওয়ার কথা বলার পর বলেন- কিন্তু আমি আগুনের ছেকা দেওয়াকে পছন্দ করিনা।"
ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রসূল(সাঃ) নিজে হিজামা করিয়েছেন এবং তিনি এর জন্যে পারিশ্রমিকও প্রদান করেছেন।" (বুখারী ১০/১২৪, মুসলিম ১২০২)
"উর্ধ্বাকাশে মেরাজের সময় রসূল(সাঃ)প্রত্যেক দল ফেরেশতাদের অতিক্রম করার সময় তারা সকলে বলেছে-ও মুহাম্মদ(সাঃ)আপনার উম্মতকে হিজামাহ করতে বলবেন" (ইবনে মাজাহ)(বি:দ্র: হাদীসটি ইংরেজী থেকে অনুবাদের সময় ভাষাটা সহজ করে লিখলাম)
হযরত আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্নিত,,,,,,, একটি হাদীসের শেষ লাইন-- রসূল(সাঃ) বলেছেন-হিজামাহ হল সেরা চিকিৎস্যা। " (বুখারী ১০/১২৬, মুসলিম ১৫৭৭)
আমি আসলেই প্রথম কয়েকদিন এর কোনো উপকারীতা অনুভব করিনি। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি,তা হল আমার গভীর ঘুম হয়। আগে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যেত এবং বেশ কয়েক বছর এরকম ছিলো। তবে মাঝে মাঝে গভীর ঘুমও হত। আর এখন প্রতি রাতে খুব আরামের ঘুম হয়। আর এখন মনে হচ্ছে শরীরটা বেশ ঝরঝরা। ভালো ফলাফল পেতে বছরে এক দু বার হিজামা করতে হয়। শুনেছি নারীদের জন্যে নারীরা রয়েছে হিজামা করার, আর পুরুষদের জন্যে পুরুষ লোক। আমি হিজামাহ করিয়েছি রসূল(সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় এবং বিশ্বাস করেছি যে, এর ভেতর অবশ্যই কল্যান রয়েছে, কারন আল্লাহ তার রসূল ও ফেরেশতাদের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসব ঔষধ ব্যবহার করলে ব্যথা যে ফিজিও থেরাপিতেই কমেছে সেটা বুঝবো কি করে ?
ফিজিওথেরাপির অন্যতম একটা অংশ হিজামা - এটা পড়েই মন্তব্য করলাম।
ফিজিক্যাল মেডিসিন এর ডাক্তারদের ব্যাপার আলাদা তারা এমবিবিএস ডাক্তার, ফিজিক্যাল মেডিসিন এর উপর তারা এফসিপিএস করে। তারা তো আর ফিজিওথেরাপিস্ট না। আমি আর আমার এক ফ্রেন্ডের প্ল্যান আছে ফিজিওথেরাপি চেম্বারের আমাদের তো ইচ্ছা ফুলি ম্যানুয়াল থেরাপি introduce করানো যেটা শাহাদাৎ স্যার অলরেডি শুরু করেছেন।
বাইরের দেশগুলোতে ডেন্টালের চিকিৎসার খরচও গগনচুম্বি । বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকায় থাকা বাংলাদেশীদের ম্যাক্সিমামই বাংলাদেশে এসে ডেন্টালওয়ার্ক করিয়ে যায়।
গুলশান ছাড়াও আরেকটি হিজামাহগার আছে পান্থপথে - Life Spring 89/2 Haque Chamber(12th floor), Panthapath (Beside Square Hospital).
পান্থপথ চিনেন তো কোথায় ? এক সময়ের নামকরা (এখনও আছে) হাসপাতাল শমরিতা সেখানে অবস্থিত। একই লাইনে খুব কাছাকাছি আছে বিআরবি হাসপাতাল (আগে নাম ছিল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল)। পশ্চিমে রাসেল স্কয়ার থেকে (ধানমন্ডি ৩২ সংলগ্ন) পূর্বে সার্ক ফোয়ারা(হোটেল সোনার গা ও একুশে টেলিভিশন এর সাথে) পর্যন্ত এই রাস্তাটাই পান্থপথের দিকে আপনাকে নিয়ে যাবে। এই রাস্তাটার সবচেয়ে বিখ্যাত ও কাঙ্খিত যে স্থানটি সেটা হল বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স (তোমাকে আসতেই হবে , যেখানেই থাক যতদূরে - বিয়ে যখন করেছেন)।
চট্রগ্রামে কোথাও আছে?লোকজনকে পরামর্শ দিতাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন