দিনকাল চলছে ভালো
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৩৮:৪৫ দুপুর
গত কয়েকদিনে এত সব ঘটনা ঘটেছে যে এখন লিখতে বসে সবটাই ভুলে গেছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে অামার একান্ত বন্ধুদের ভেতরও অল্প কিছু লোককে দাওয়াত দিয়েছিলাম, অধিকাংশকেই দাওয়াত দিতে পারিনি, সে কারনে অান্তরিকভাবে দু:খিত। সে রাতে ফেসবুকে পরিচিত হওয়া কিছু পবিত্র আত্মার সাথে দেখা হয়েছিলো। এর ভেতর ছিলো ভাই আব্দুল মাজেদ,ওহিদুল ইসলাম,নজরুল ইসলাম টিপুভাই এবং তার পরিবার। অনেক খুশী হয়েছিলাম প্রথমবারের মত সরাসরি সাক্ষাতে। আরও কিছু বন্ধু ছিলো যারা তসরিফ এনে ধন্য করেছিলেন। বেশ কয়েকজন বন্ধু অনিবার্য কারন বশত: আসতে পারেননি বলে দু:খ প্রকাশ করেছেন, এর ভেতর মেরাজ ভাই অন্যতম। ওহিদুল ইসলাম ভাই একটু অসুস্থ্য ছিলেন তা সত্ত্বেও ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন এবং তিনি মহা ব্যস্ত ছিলেন কারন রাত ৯.৩০ এ উনার ফিরতি ট্রেন ছিলো। খাবারের অর্ডার দেওয়ার ৩০ মিনিট পরও যখন খাবার সরবরাহ করা হলনা, তখন অগত্যা তাকে একটি সাধারণ খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে বিদায় করা ছাড়া উপাই ছিলোনা, তবে ভদ্রলোক একটা দারুন জিনিস উপহার দিয়েছে সেটা হল কারাওকে মাইক। বলল-বৌকে গান শুনাবেন ...। অনুষ্ঠানে সকল বন্ধুর উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। সজিব,আসাদ,মুবারক ভাই সকলের উপস্থিতিতে ভালো লেগেছিলো।
অনুষ্ঠানে দুই প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যান ছিলো এদের একজনের কাছে ভিডিও অন্যজনের কাছে স্টিল ক্যামেরা। পুরো অনুষ্ঠানে এরা অামাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিয়েছে। হাজার রকমের পোজ দিয়ে আমাকে ভাজা ভাজা করে ফেলেছে। যতই উঠতে চাই,,ততই বলে আর মাত্র ১ মিনিট ! বেশী ভালো ভালোনা। অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত ১১ টা বেজে গেল। শেষে আমরা কয়েকজন খেতে বসলাম আর সয়লাব করে ফেললাম। পেটে বেশী ক্ষুধা নিয়ে খেলে খাবার খুব মজার মনে হয়।
রাতে ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েই ভোরে ট্রেন স্টেশনে গেলাম আমরা গুষ্টিসুদ্ধ মানুষ। মাত্র একটা কেবিন পাওয়া গিয়েছিলো,বাকী গুলো এসি চেয়ার। আমাদের ভেতর নরমগুলো কেবিনে থাকলো বাকীগুলো সিটে। পুরো রাস্তা নানানসব আজে বাজে খাবার খেলাম গলা পর্যন্ত। ট্রেনে ২০ বছর আগে যেরকম খাবার পাওয়া যেত,,হুবহু একই খাবার এখনও সরবরাহ করছে তবে দাম অনেক। একগাদা খাবার কিনে খেতে পারলাম না তেমন। গল্প,তন্দ্রাচ্ছন্নতা,খাওয়া এসব মিলেই ৮ ঘন্টা পার করে যশোর পৌছলাম। শুরু হল চরম খাওয়া দাওয়া। আমার ভাবীর রান্না মারাত্মক ভয়ঙ্কর ! তবে সে সবকিছু রান্না করতে পারলেও সবকিছু খায়না। বিশেষ করে ইলিশ মাছ ছাড়া অন্য মাছ খায়না। অন্য মাছের তরকারী খায়না, অন্য মাছের তরকারীতে যে চামুছ থাকে সেই চামুছের স্পর্শযুক্ত খাবারও খায়না, অন্য মাছ কাটা হয়েছে যেই বটিতে সেই বটিতেও কিছু কেটে রান্না করলেও সে তরকারী খায়না,সেসব পাতিলের রান্নাও খায়না। ফলে তার বটি,চামুছ,পাত্র,হাড়ি পাতিল সবই আলাদা। তবে সকলের জন্যে ওইসব খাবার বেশ ভালো করেই রান্না করে।
বাড়ির সামনের বৈঠক খানার সামনে দুটো বড় কামিনী ফুলগাছ দেখলাম পুরো সাদা হয়ে আছে ফুলে ফুলে। সন্ধ্যায় অদ্ভূত সুগন্ধ ছড়ায় এগুলো। বাড়িতে পৌঁছে দেখী আমার ভাই,ভাবী মূল রাস্তা থেকে শুরু করে ঘর পর্যন্ত নানান ফুল ছড়িয়ে রেখেছে। ঘরে গিয়ে দেখী বাসর ঘর সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। ভালো লাগল। আশপাশের লোকেরা,প্রতিবেশীরা দলে দলে জামাতের সাথে বৌ দেখতে আসলো। সকলে বৌ দেখে খুশী।
বাড়ির কাছাকাছি কপোতাক্ষ নদী। এককালে চরম যৌবনা এই নদীতে ডেজিং না হওয়াতে মন্থর স্রোত থাকে বর্ষায়। অন্য সময় প্রায় স্থির থাকে। তবে সৌন্দর্য্য বেশ আছে। বিশাল শান বাধানো ঘাটে বসলে যে কোনো লোকেরই ভালো লাগবে।
২২তারিখে অনুষ্ঠান হল। কিছু আত্মীয় স্বজন,প্রতিবেশী,বন্ধুবান্ধব ঝাপিয়ে পড়ল খাবারের টেবিলে। মামুকে দেখলাম অনেক দিন পর। মামুর বয়স ৮৭ চলছে কিন্তু এখনও পুরো জওয়ান। এখনও দিনে অন্তত ৭/৮ কি:মি: সাইকেল চালায়। কখনও কখনও ৩০ কি:মি:ও চালায়। ছোটবেলার কিছু খেলার সাথীকে দেখলাম। সেই কালে বদের হাড্ডি ছিলাম সবগুলো। এর পূর্বের দিন আমার বন্ধু সালাহউদ্দীন বড় বড় সাইজের রুই মাছ পাঠিয়েছিলো যার পরিমান এক মনের বেশী। এই মাছ কাটার জন্যে লোক ভাড়া করা হয়েছিলো কিন্তু মাছ পৌছানোর পর আমার ভাই,বোন,আত্মীয়রা অনেকগুলো বটি নিয়ে নিজেরাই কেটে শেষ করল উৎসাহের সাথে। দৃশ্যটা ছিলো যুৎসই, কারন একগাদা আনাড়ী লোক একসাথে দেখা ভাগ্যের ব্যাপার !
এলাকায় আমার এক পাল ছোটভাই আছে, এরা আমাকে ভালোবাসে,আমিও তাদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। এদের দেখলেই অন্তর প্রশান্ত হয়। স্বভাবে,আচরনে এরা বড়ই অমায়িক। প্রতি সন্ধ্যায় এদের সাথে সুন্দর,কল্যানকর আড্ডা হত। আড্ডার ভেতর দিয়েই এদেরকে ইসলামের নানান দিক বলি,ওরাও শেয়ার করে। এদের বড় বৈশিষ্ট্য হল এদের বেশীরভাগই মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে। নতুন এই জেনারেশন নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। এরা আমার প্রানের মানুষ। এই প্রানের মানুষরা গতকাল সন্ধ্যায় আমাকে যা খাইয়েছে তার ধকল সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এমনেই ওল আর মুরগীর কম্বিনেশনে বিশেষ রান্না খেয়ে পেট কিঞ্চিত দূর্বল হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা নানান সব খাবার খেতাম সম্মিলিতভাবে।
আজ ঢাকায় ফিরলাম। বড় বোনের জন্মদিন আজ। রান্নাবান্না চলছে। আমার বৌকে দেখলাম চরম আনন্দিত,উত্তেজিত এটা নিয়ে। সে বিশেষ কেক তৈরী করছে এ উপলক্ষ্যে। পেটে ভালো সার্ভিস না দিলেও খাওয়া বাদ দেব এমন লোক আমি না। প্রয়োজনে টয়লেটে বসে খাব, কিন্তু খাবই ইনশাআল্লাহ ! আমার পেটের জন্যে দোয়ার দরখাস্ত রইলো, ওর কোনো দোষ নেই,কেবল পরিস্থিতির শিকার !
বিষয়: বিবিধ
৮০১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবার বিয়ে করে অবিবাহিত যারা তাদের লুভ দেখাচ্ছেন বাহ মশাই বাহ।
চৌধুরি সাহেব একদিন আমারও হবে একটা বউ
দোয়া রইলো পেটে জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন