হ্যান্ডশেকে গু
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০০:২০ দুপুর
সাত সকালে হ্যান্ডশেক করার পর দেখী আমার হাতের মুরগীর গু,,,, শালার হ্যান্ডশেক ! বাজার করার কাজ আমার কাছে সবচেয়ে জঘন্ন কাজের একটা, আর মুরগীর বাজারে যতবার গিয়েছি, ততবারই যেন নিহত হয়েছি। ক্যান্টনমেন্টের পাশে কঁচুক্ষেত বাজার, বাসা থেকে বেশী দূরে নয় কিন্তু জীবনে এই প্রথম সেখানে প্রবেশ করলাম। খুব বড় একটা বাজার এখানে। জিনিসপত্র তুলনামূলক সাশ্রয়ী। সকালে মুরগীর বাজারে প্রবেশ করতেই একরাশ আবর্জনা যেন নাক দিয়ে ঢুকে গেল, নাক মুখ বিকৃত করে প্রবেশ করলাম। শুরু হল ধৈর্য্যের পরিক্ষা।
শালা যেদিকে তাকাই সেদিকে গু,, খাব মুরগী তার সাথে গু কেন !!! এদের প্রশিক্ষন দেওয়া দরকার, যাতে মুরগীগুলো নিয়ম মেনে সুচু করে বসে থাকে। মুরগীর দোকানদার দুপাটি দাঁত কেলিয়ে চেয়ারে বসতে দিল। তার জবরদস্তির ঠেলায় বসলাম। খানিক পর খাচায় থাকা মুরগী ডানা ঝাপটে আমার সারা দেহে দুষিত এবং ফ্লেভার্ড ধুলোবালি ঢেলে দিল। কিছুই বলার নেই, ওদের না আছে জ্ঞান বুদ্ধি, আর না আছে মান সলেমান। নিরবে ঝাপটা খেয়ে বসে থাকলাম। তবে দূর্গন্ধ আর নাকে তেমন লাগল না। এর মানে হল সেটা সয়ে গেছে। আমরা ক্রমাগত খারাপ অবস্থার ভেতর থাকতে থাকতে এভাবেই এক সময় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন আর খারাপকে তেমন খারাপ মনে হয়না।
পাশের দোকানদারের দোকানের ভেতর দেখী একটা নীল রঙের বাক্স, তাতে লেখা- বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী(কু:সা:ম: আ: ) ব্রাকেডের ভেতরের অংশের মানে না বুঝলেও এটা বুঝলাম যে, বাবার টাকা দরকার। টাকা ছাড়া এসব বাবাদের ব্যবসা জমেনা, আর মদন ছাড়া টাকা আসেনা। ইদানিং মদনরাও কিছুটা বুঝতে শিখেছে, ফলে ওদের ব্যবসায় খাটিকটা ভাটির টান ধরেছে। আমার বিশ্বাস ভক্তরা গরু,খাসি,মুরগী,লাউ,হাদিয়া,মানত এসব না নিয়ে গেলে মাস খানেকের ভেতরই এসব বাবারা তাদের দরগার সামনের রাস্তায় ভিক্ষের থালা নিয়ে বসে যাবে, কারন এদের বিদ্যায় ওটাই সম্ভব, অথবা বাজারে নানান সব শেকড় বাকড় বিক্রী করতে পারে। প্রতারকরা এসব ভালো পারে।
এক আর্মী হাস কিনতে আসলো,, আহা হাস,রাজহাস সবই আছে কিন্তু আমার এতদিন মনে ছিলোনা খেতে, নইলে এই জিনিস আমি না কিনে ছাড়তাম না। এখন যখন জিনিস পেলাম, তখন আমার হাতে সময় নেই, এটাই নিয়তি। দেখলাম উনি হাসের ডানা মেলে কি যেন দেখছেন। বললাম কি দেখেন ? আমাকেও একটু দেখান। উনি সহাস্যে দেখালেন, ডানার নীচের লোমের অবস্থা দেখে বোঝা যায় এর বয়স কত। বললেন, হাসটার বয়স অানুমানিক ৮ মাস হবে, এটাই পার্ফেক্ট। এর চেয়ে বেশী বয়সী হলে নাকি হাসের ওজন কমতে থাকে, স্বাদও।
মুরগীওয়ালা আবারও সামনের দুপাটি দাঁত কেলালো, এবার আমাকে জোরপূর্বক পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে গেল। দোকানের একপাশে বিশাল মুরগীর দোকান, অন্যপাশে মাছের দোকানসমূহ ,,, মারহাবা ! আজ আমার মরনযাত্রা শুরু হয়েছে ভালোবাসার আতিষয্যে।
মনে মনে নাক চেপে চায়ে চুমুক দিতে থাকলাম। ভাবতে থাকলাম আমি একটি সুন্দর বাংলোর দো-তলায় বসে সামনের চমৎকার সুন্দর প্রকৃতি দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। স্বপ্ন ভঙ্গ হল, সামনে দেখি পঁচা কাদা। এ পর্ব শেষে মাছের বাজের গেলাম। গিয়ে দেখী এক স্থানে বড় বড় প্যাকেট করা ছোট ছোট মাছ। তার ভেতর পাবদা,টেংরাসহ নানান ছোট মাছ। ভাবলাম এ জিনিস না কিনে ফিরে যাওয়া ঘোর অন্যায়। কিন্তু কাছে যেতেই দেখী দোকানদার উচ্চস্বরে দাম হাকাচ্ছে, আর সামনে থাকা লোকেরা নানান দাম বলছে। দোকানদার সবচেয়ে উচ্চ মূল্যটি কয়েকবার তিলাওয়াত করার পরপরই আরেকজন এর উপর আরেক দাম বলছে, এভাবেই চলছে। তওবা পড়ে কেটে পড়লাম, কারন এই মাছ ৫ টাকা কেজী হলেও কেনা যাবেনা, সুস্পষ্ট হারাম এটি। রসূল(সাঃ) বলেন- তোমার ভায়ের উপর দাম করোনা। এভাবে নিলাম ডেকে পণ্য বিক্রী করা সম্পুর্ণ হারাম। তবে নিলামের আরও অনেক পর্যায় রয়েছে, সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে এভাবে মাছ বিক্রী করা কোনোভাবেই হালাল নয়। এখানে যার পয়সা কম সে মনের দু:খে প্রস্তান করবে। সঠিক পদ্ধতি হল, বিক্রেতা তার পণ্যের একটি নায্য মূল্য নির্ধারন করবে এবং মানুষেরা সে অনুযায়ী পরিমানমত ক্রয় করবে। যে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত নয়, সে পণ্যের দাম অন্য ক্রেতা বলার পর, তার চেয়ে বেশী দামে তার সামনে আমি কিনে নিতে পারিনা, এটাই হারাম। এভাবে মাছ কিনে খাওয়ার চেয়ে মুরগীর গু খাওয়া ভালো, আমি আবারও মুরগী ওয়ালার কাছে গেলাম।
মুরগীগুলো বুঝে নিলাম। মুরগীওয়ালা সহাস্যে তার কার্ড এগিয়ে দিল, দেখে নিলাম কার্ডে মুরগীর গু লেগে আছে কি না.....প্রথমবারের হ্যান্ডশেকে যেই চমক পেয়েছি, তাতে সতর্কতার বিকল্প নেই !!
ফেরার পথে রাস্তায় দেখী এক জরাজীর্ণ কুকুর ড্রেনের নোংড়া পানি এমনভাবে পান করছে, যেন সারা জীবনেও কেউ তাকে কিছু খেতে দেয়নি। পেট-পিঠ লেগে গেছে। সেই হাদীসটার কথা মনে পড়ল, যেখানে এরকম তৃষ্ণার্ত এক কুকুরকে পানি পান করিয়ে এক পতিতা তার সারা জীবনের সমস্ত পাপের ক্ষমা করিয়ে নিয়ে জান্নাতের জন্যে মনোনিত হয়েছিলো(বুখারী,মুসলিম)। ভাবতে থাকলাম এর বিপরীত চিত্রটা। প্রায় একই রকম ক্ষুধার্ত,তৃষ্ণার্ত কুকুরগুলোকে আমরা খেতে দেইনা, অথচ এরা জান্নাতের পয়গাম নিয়ে আমাদের চতুর্পাশে অবস্থান করে চলেছে। ওদিকে আমরা জান্নাত খুঁজে হয়রান হয়ে মরছি। হতে পারে আখিরাতে সর্বপ্রথম নামাজের হিসেব গ্রহনের পর আমাদের মূর্খতার হিসেব গ্রহন করা হবে !
কুকুরটার মুখের দিকে তাকাতেই মনে হল একে পেট ভরে খেতে দেই কিন্তু কোনো দোকানপাট তখনও খোলেনি, আমিও গতির উপর ছিলাম গাড়িতে। মনের দু:খ মনে চাপিয়ে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে অগ্রসর হলাম।
বৌকে নিয়ে হাটতে বের হয়ে বনানীর স্টার রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলাম। খাসি,মুরগী দিয়ে স্পেশাল পরোটা টানলাম বেহায়ার মত। সে নিকাব পরে বিশেষ কায়দায় খেল, শৈল্পিক ব্যাপার সাপার। বিল দিতে গিয়ে বুঝলাম ব্যপক খেয়েছি। আজ এ পর্যন্তই থাক.....তবে কুকুরটার চেহারা মনের ভেতর এখনও ভাসছে....,,,,, আল্লাহ ক্ষমা করুক !
বিষয়: বিবিধ
৮৭৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগলো,
আর আপনাদের বিবাহিত যারা তাদের সমস্যাটা কি ভাই হুঁ কত সুন্দর করে মনযোগ দিয়ে লেখাটি পড়ছিলাম, শেষের দিকে বউয়ের কথা উল্লেখ করে কলিজা জ্বালিয়ে দিলেন, বিয়ে করছেন ভাল কথা তাই বলে কি বার বার বউ বউ নাম নিতে হবে? জানি আপনারা বিয়ের লোভ দেখাচ্ছেন আমি এতো লুভি না যে বিয়ে করবো সারাজীবন ব্যচেলার থাকবো তবু্ও বিয়ে করবো না, হুঁ,
মন্তব্য করতে লগইন করুন