শিরোনাম নেই

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ০৯:২৮:২৮ সকাল



মুমিনের ব্যপারটা অসাধারণ আর অদ্ভূত ! তার কষ্ট হলেও আল্লাহ নিজ দায়িত্বে পুষিয়ে দেন, আর তার খুশী তো খাটি খুটি,একেবারে নির্ভেজাল, আর তার দুনিয়ার খুশী একেবারেই অমলিন। আর তার আখিরাতের খুশীর কোনো তুলনাই নেই। তার সকল সময়ই লাভের উপর লাভ।

মুমিন হল সে, "যে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাওকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাওকে ঘৃণা করে।" তার চিন্তার এই ভিত্তি তাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যায়, যেখান থেকে সে সত্য,মিথ্যা,ভালো,মন্দ বুঝতে পারে, অন্তত সে নিশ্চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোনো বিষয়ে। কারন তার চিন্তার মূল উৎস্যটি, বিষয়টি অন্তরে সুদৃঢ়ভাবে প্রথিত। এই বিষয়টি তাকে নিশ্চিন্ততা দান করে এবং আরেক বিষয়ে আমল করতে চরমভাবে উৎসাহিত করে...সেটা হল--- "যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর সুদৃঢ় থাকা,আস্থা রাখা,এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট হয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। সে যদি তার কষ্টকে লাঘব করতে পারে তো আলহামদুলিল্লাহ, আর যদি না পারে তবুও আলহামদুলিল্লাহ। তাকদীরের উপর সে প্রবলভাবে ঈমানদার।" তার এই আচরণ তাকে ফুরফুরে মেজারের অধিকারী করে তোলে এবং মহান ও উদার করে।

একজন মানুষ যদি দুনিয়াকে সঠিক মাত্রায় উপভোগ করতে চায়, তাহলে তার ভেতর নিশ্চিন্ততা,উদ্বেগহীনতা দরকার হয়। উদ্বেগ,উৎকন্ঠা,অনিরাপত্তাবোধ তার ভেতর হতাশার জন্ম দেয় , ভেতরে হাহাকার চলতে থাকে এবং এর নাম অসুখ। এটা থাকলে মানুষের ক্ষমতা প্রতিপত্তি,অর্থ,বিত্ত পুরোই অর্থহীন। সে সেগুলো উপভোগ করতে পারেনা। ফলে তার জীবনটাই বিফল হয়ে যায়।

তার অগাধ সম্পদ,সম্মান,প্রতিপত্তির মূল্য হয়ে পড়ে ফুটো পয়সার মত। অপরদিকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য এর বিপরীত। তার ভেতর প্রান প্রাচুর্য্য ভরপুর থাকে। সে থাকে নিশ্চিন্ত এবং সুখের অনুভূতি তার ভেতর সদা জাগ্রত থাকে। সামান্য বিষয়েও সে সুখ খুজে পায়, সে থাকে সদা হাস্যোজ্জ্বল এমনকি মৃত্যুর পরোয়ানা থাকলেও সে হাস্যোজ্জ্বল থাকে। ইতিহাসে এমন বহু প্রমান রয়েছে যে--- মুসলিম মুজাহিদগণ কাফিরদের হাতে ধৃত হয়েছেন; কিন্তু তারা চিন্তিত ছিলেন না। তাদেরকে জবাই করা হয়েছে এবং সেখানে স্বাভাবিক রক্তের প্রবাহ দেখে কাফিরই ভয় পেয়েছে। কারন প্রচন্ড ভয়ে থাকলে সে অবস্থায় জবাই করলে রক্তের প্রবাহ অনেক কমে যায়। মুমিনের এই আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা অত:পর নিশ্চিন্ততা কাফিরের ভেতরও ভয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

যালিম যখন প্রচন্ড বেড়ে যায় এবং তার বিপরীতে মুমিন ধৈর্য্য ধারন করে তার কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে শুরু করে এবং যালিমকে পরোয়া করেনা, তখন যালিম ভেতর থেকে নি:স্ব হয়ে যায়। সে নি:শব্দে নিজের কাজে পরাজিত হতে থাকে। তার দম্ভ শেষ হতে থাকে। তখন সে নিজের ইজ্জত বৃদ্ধির জন্যে অত্যাচার নির্যাতন করতে শুরু করে, এর অর্থ হল তার নিজের উপর আস্থা নেই। আর এটা হয় তার ধ্বংসের শেষ স্তরে।

ইতিহাসে এর বহু নিদর্শন রয়েছে। সাবেক সোভিয়ত ইউনিয়নের প্রবল ক্ষমতাশালী শাসক যোসেফ স্ট্যালিনের ভাগ্যে এমনটা ঘটেছিলো।তার ক্ষমতা,প্রতিপত্তি তৃতীয় বিশ্বের এসব ছেড়া, ফাঁড়া, দরিদ্র শাসকের মত ছিলোনা। সারা বিশ্ব কাঁপত তার ভয়ে।

কিন্তু তার ক্ষমতা প্রতিপত্তি স্থায়ী হবে কি না,,কেউ তাকে হত্যা করতে আসছে কি না, ষঢ়যন্ত্র হচ্ছে কি না, তার ক্ষমতা না থাকলে তার অবস্থা কি হবে,,এসব নিয়ে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আশপাশের বহু বিশ্বস্ত মানুষদেরকেও আমেরিকার গুপ্তচর মনে করতে থাকে। এমন সন্দেহে সে বহুজনকে হত্যা করেছে। তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে মৃত্যু ভয়ও বাড়তে থাকে। স্রষ্টাকে বিশ্বাস না করলেও মৃত্যু যে হবে সে ব্যাপারে তার ইয়াকিন স্পষ্ট ছিলো। ফলে সন্দেহ,ভয় তাকে হতাশ করে ফেলে এবং নিজের কাছেই পরাস্ত হতে শুরু করে।

কাছের ডাক্তারদেরকেও বিশ্বাস করতে পারেনা। ভাবতে থাকে তারা বুঝি খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবে। এই সন্দেহে কিছু ডাক্তারকে হত্যা করে। এক ডাক্তার কাজ কমিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিলে তাকে শত্রুর গোয়েন্দা ভেবে জেলে ভরে রাখে। পার্টির উচ্চপদস্ত নেতাদের সাথে সামান্য মনোমালিন্যে হতাশ হয়ে পড়ে স্টালিন তার ক্ষমতা নিরংকুশ করার জন্য ১৯২৬ সালের পার্টির পঞ্চদশ কংগ্রেসে ট্রটস্কি, কামেনেভ ও জিনোভিয়েভকে নিশ্চিহ্ন করার ব্যবস্থা নেয় এবং পার্টি থেকে বহিষ্কার করে। এরপর তার মানসিক চাপ আরও বেড়ে যায়। কাওকে বিশ্বাস করতে তার ভয়ানক কষ্ট হয়। প্রবল মানসিক ব্যধীতে আক্রান্ত হয় সে। এরপর একদিন সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ৪ দিনের জন্যে কোমায় চলে যায়, বিভৎস্যভাবে নিজের কাছে নিজে পরাজিত হয়ে সে এমন স্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় যেটার উপর তার বিশ্বাস ছিলোনা। যালিমদের কাছ থেকেই যালিমদের শিক্ষা নিতে হবে। সময়ের আগেই শিখতে হবে।

"তোমরা দুনিয়াকে প্রাধান্য দাও অথচ পরকাল'ই (মৃত্যুর পরবর্তী জীবন) উৎকৃষ্ট এবং চিরস্থায়ী।"৷ (সূরা আলা, আয়াত ১৬--১৭)

বিষয়: বিবিধ

৭৬১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385988
১৩ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ১২:২৮
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : বারাকআল্লাহ ফি হায়াতি ভাইজান

মন ছুয়ে গেলো ভালবাসা রইলো আপনার জন্য
০৭ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:২৬
318078
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ভাই। অনেক ধন্যবাদ। দোয়া রইলো
385994
১৩ অক্টোবর ২০১৮ বিকাল ০৫:২০
হতভাগা লিখেছেন : আমেরিকা কিংবা আওয়ামী লীগ এরা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত দাপট চালিয়ে যাবে কারণ এদেরকে টেক্কা দেবে এমন কোন দল আমাদের দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না।

তবে আল্লাহ যদি ইচ্ছে করেন অন্য কিছু সেটার ব্যাপারে আল্লাহই একচ্ছত্র ক্ষমতা রাখেন।
০৭ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:২৭
318079
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তবে আল্লাহ যদি ইচ্ছে করেন অন্য কিছু সেটার ব্যাপারে আল্লাহই একচ্ছত্র ক্ষমতা রাখেন।
385997
১৪ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০১:৩৬
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মহান প্রতাপশালী বিশ্বপরিচালক আমাদের প্রভূ আল্লাহ তায়ালা সকল ক্ষমতার উৎস এবং চিরন্জিব। বাঁকিরা হচ্ছে কয়েকদিনের প্রতাপশালী এবং তাদের ইতিহাস কলংকিত হয়েই থাকে। আপনাকে ধন্যবাদ
০৭ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:২৭
318080
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মহান প্রতাপশালী বিশ্বপরিচালক আমাদের প্রভূ আল্লাহ তায়ালা সকল ক্ষমতার উৎস এবং চিরন্জিব। বাঁকিরা হচ্ছে কয়েকদিনের প্রতাপশালী এবং তাদের ইতিহাস কলংকিত হয়েই থাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File