মাইকীর সাথে কিছুক্ষন

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৯:৩৭:২৩ সকাল



==============

ছুটির দিন। ইচ্ছা ছিলো সানী সাইড পার্কের লেকে গিয়ে সাঁতার দেব,যদিও তাপমাত্রা গোসলের মত নয়,তবে খারাপও নয়। অন্তত চেষ্টা করার ইচ্ছা ছিলো। আশা করেছিলাম মাইকী আসবে ১২টায় কিন্তু পূর্বেই জানালো ১টার সময় আসবে। তারপরও চিন্তা করছিলাম বাইরে যাব। কিন্তু হলনা।

মাইকী আমার সহকর্মী। এরকম রসিক আমেরিকান জীবনেও দেখিনি। খুবই জ্ঞানী মানুষ সে,, আসলে জ্ঞান ছাড়া মানুষকে সঠিক মাত্রায় আনন্দ দেওয়া যায় না। মাইকীর একটা আগ্রহ আছে দুনিয়ার নানান ধর্ম নিয়ে জানার। সে লক্ষ্যে অনেকবার অামার সাথে টুকটাক কথা হয়েছে তার। এরকম রসিক এবং অমায়িক মানুষ আমার খুব পছন্দ। খুব দিলখোলা মানুষ সে। সে আমাকে একদিন মেসেজ এর মাধ্যমে জানালো যে তুমি আমার খুব ভালো সহকর্মী,তোমাকে খুব পছন্দ হয়। তোমার সাথে কাজ করে মজা পাই।......খুব খুশী হলাম। এরপর গত সপ্তাহে বললাম,,,, আমি দারুন রান্না করি, ট্রাই করবা নাকি ? সে স্বানন্দে রাজি হয়ে গেল, যার কারনে আজকের আয়োজন।

গতকাল রাত থেকেই রান্না করছিলাম। আমার রান্নার জীবনে মুরগীর কুরমা বানাইছি অনেকবার কিন্তু একবারও নিজের মন তা পছন্দ করেনি, কিন্তু গত রাতেরটা স্রেফ অসাধারণ। দুনিয়ার কোনো লোক এত চমৎকার কখনও রান্না করেছে বলে ইতিহাসে নেই,,,,,কেউ এমন দাবী করলে বন্দুক ছাড়াই গুলি করে মারব। মুসলমানের এক কথা,মুরগীর কুরমা রান্না করতে ওই একজনই পারে, বাকী সব ভূয়া। গরুর গোস্ত রান্না করলাম চরমভাবে। খুবই সুস্বাদু,নজরকাড়া, বাহারী,অসাধারন,অপূর্ব, অসহ্য এ জিনিস।

সকালে এপল-সাইডার ভিনেগার,লেবুর রস,আর ১ চামুচ অলিভওয়েল ছাড়া কিছুই খাইনি। কারন কি তা পরেই জানতে পারবেন। তবে সবচেয়ে হিংসাত্বক,মারাত্মক কাজটা যা হয়েছে তা প্রকাশ করতে লজ্জা পাচ্ছি,,,,তাও বলি,,,, জীবনে প্রথমবারের মত অনথন বানাইছিলাম। এটা চিকেন অন্থন। ভেতরের পুর আমার, কিন্তু বাইরের পাতলা আবরণ কিনতে পাওয়া যায়। অনেক করে ভাজার পর টেস্ট করে দেখী, এটা দুনিয়ার সর্বসেরা হয়েছে। এত চমৎকার টেস্ট যে খেতেই থাকলাম একের পর এক। এক সময় মনে হল মাইকী কোন ছার ! সকালে জীমকে কিছু দিলাম,, বাকীটা খেয়ে ফর্সা করে ভাবলাম,,,,,, হায় হায় ! এ আমি কি করলাম ! একটা ভদ্রলোককে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার জন্যে তৈরী খাবার সব খেয়ে ফেললাম ! এ কি ভয়াবহ ছোটলোক, এ কি ইতরস্য ইতর !

খানিক পরে নিজেই নিজেকে সান্তনা দিয়ে বললাম, সমস্যা নেই, অারও অনেক খাবার আছে, আর মাইকী কি আর অন্থন পছন্দ করবে নাকি !! সে গরু,মুরগী রেখে এটা খেতনা, তুই খারাপ কিছু করিসনি। নিজের শান্তনায় কাজ হল। স্পিড বেড়ে গেল। লিভিং রমের ফ্লোর পরিষ্কার করলাম ,টেবিলের উপর থেবে জঞ্জাল পরিষ্কার করলাম,কিচেনের স্টোভের উপর ২ মন রান্নার ছাপ ছিলো সেসব পরিষ্কার করলাম,আরও অনেক কাজ করলাম। সেমাই রান্না করলাম পাতলা করে, খুব দারুন হয়েছে। আমার বাগানের টমেটো দিয়ে দেশী স্টাইলে সালাদ বানালাম, স্রেফ অসাধারণ। ডিম ভাজী করলাম। খুব সুন্দর ঝরঝরা করে ভাত রান্না করলাম। পোলাও করার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু এর আগে কয়েকবার লোকে এটা পছন্দ করেনি। গতকাল ৩ মন ওজনের একটা তরমুজ কিনেছিলাম কিন্তু কাটা হয়নি, কারন এই জিনিস পেটে রাখার জায়গা হবেনা নিশ্চিত। তারচেয়ে দুদিন পড়ে থাকুক। পরে দেখা যাবে। ফ্রুটস স্মুথী বানালাম।

সব রান্না দাড়িয়ে থেকে করেছি ,কারন রান্না চাপিয়ে ফেসবুকিং করাতে বহু খাবার,পাতিল পুড়েছে জীবনে। দুপুরে বাদ যোহর পরোটা ভাজতে লাগলাম যাতে তরতাজা খেতে পারে। কেনা পরোটা গাওয়া ঘি দিয়ে ভাজলাম। এক স্টোরে ভারতীয় অর্গানিক ঘি ডিসকাউন্টে পাওয়া যাচ্ছিলো, আমি স্রেফ ঝাপিয়ে পরে সবগুলো বয়েম কিনে নিয়েছি। দারুন জিনিস।

২ নং পরোটা ভাজার সময় মাইকী এসে উপস্থিত। সে বলল-আসসালামুআলাইকুম......এটা সে শিখেছে কিভাবে যেন..। কাফিরকে ওয়া-আলাইকুমুস সালাম বলা নিষেধ,বলতে হয় সালাম তার জন্যে,যে হেদায়াতের পথে রয়েছে। আমি তার সালামের উত্তরে হাসলাম,এপ্রিসিয়েট করলাম ধন্যবাদের সাথে। দুজনে গল্প করতে করতে পরোটা ভাজতে থাকলাম। এটার নাম যে পরোটা তা সে জেনে নিয়ে মুখস্ত করে ফেলল। টেবিলে পরোটা রেখে দুজনে আবার গল্পে মশগুল হলাম। সে খ্রিস্টানদের নানা গ্রুপের নানান রকমের চার্চের কথা বলল। তার স্ত্রী কোনো একটা চার্চে কিছু কাজ করে। পেশায় সে কাউন্সিলর। মানুষের মনোজগত নিয়ে তার উচ্চতর ডিগ্রী রয়েছে। বিভিন্ন রকমের মানসিকভাবে অসুস্থ্য মানুষকে সে সেবা দিয়ে থাকে। বহু রকমের মজার গল্প চলছিলো। আমরা খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু স্মুথীতে এক চুমুক দিয়ে মাইকীর মুখের আকৃতি যা দাড়ালো,তা পরিক্ষা করতে আমি আমার গ্লাসে চুমুক দিয়ে নিজের মুখে কল্পনায় জুতো দিয়ে পরপর ৫ বার বাড়ি দিলাম,শেষেরবার দিলাম নাকের উপর। আমার জীবনে এরকম ফাউল জিনিস কখনও বানাইনি। ফলমূলগুলোর সঠিক কম্বিনেশনের অভাব ছিলো,দোষ আমার না, সব ফলমূলের দোষ। তবে স্বাস্থ্যকর হিসেবে খেয়ে ফেলেছি।

খাওয়ার সময় আমি একটু হাভাতে ধরনের হয়ে যাই, কেন তা জানিনা। দ্রুত না খেলে আমার চলে না। স্পাইসী ফুড মাইকী পছন্দ করে, তবে আমারটা বোধহয় একটু বেশিই স্পাইসী ছিলো। তবে সে খুব পছন্দ করেছে। মাইকীর ২টা মেয়ে। তাদেরকে সে নানানভাবে সেল্ফ ডিফেন্স শেখায়। অপরিচিত মানুষ আসলে বা কথা বলতে চাইলে কিভাবে কথা বলবে,কিভাবে দৌড়াবে,বাড়িতে আগুন লাগলে কি করবে এসব অনেক কিছু। তাদের নিয়ে অনেক গল্প করল। তার কথার ভেতর দিয়েই অনুভব করছিলাম স্ত্রী,কন্যাদের প্রতি তার ভালোবাসার পরিমান। আমি তার সবকথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম,যদিও তার সব কথা আমার ভালো লাগছিলো না, কিন্তু এটাই ভদ্রতা। এটা আমি শিখেছি আমার প্রিয় রাসূল(সাঃ)এর কাছ থেকে- তিনি(সাঃ) কারো সাথে কথা বললে সে সন্তুষ্ট হত, একাধিকের সাথে কথা বললে প্রত্যেকে ভাবত তিনি তাকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। কেউ হ্যান্ডশেক করলে নিজের হাত টেনে নিতেন না, যতক্ষন না সেই লোক হাত ফিরিয়ে নেয়, কারো সাথে কথা বললে পূর্ণ মনোযোগ দিতেন ,এতে উক্ত ব্যক্তি ভাবত তাকে তিনি সম্মান করছেন। এ কারনে বহু লোক ইসলাম গ্রহন না করা সত্ত্বেও তার প্রতি সদয় ছিলেন তার আচরনের কারনে এবং এদের অনেকে মুসলিমদের সংকটময় মুহুর্তে সাহায্য করেছে। দাওয়াহ এমন একটি বিষয়, যার ভেতর থাকে ধৈর্য্য,কৌশল,সততা,নিষ্ঠতা,আমানতদারিত্ব,একাগ্রতা। আর মজার ব্যাপার হল আল্লাহর কাছে সফলতার সংজ্ঞা আমাদের মত নয়। আমরা কোনো টার্গেট পূর্ণ করাকেই সফলতা বলি, কিন্তু আল্লাহর কাছে সফলতা হল, সেই টার্গেট ফুলফিল করতে প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখা। রেজাল্টের দিকে তিনি তাকান না, বরং প্রচেষ্টা আর অন্তরের ইচ্ছার দিকে তাকান। তাই এখানে সফলতা সহজলভ্য। আমি আমার আচরনের মাধ্যমে দাওয়াহ করাটাকেই পছন্দকরি। কারন এদেশে কেবল জিহবার ব্যবহার করলে বেশীরভাগ সময়ই মানুষ বিরক্ত হয়। এ অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে।

মাইকী খেল গলা পর্যন্ত আর আমি বরবরের মত খেলাম মাথা পর্যন্ত। এতক্ষন পর্যন্ত লেসীকে বাইরে আটকে রেখেছিলাম। সে বারবার পা দিয়ে দরজা খোলার আবেদন করছিলো। নতুন মানুষকে দেখে সে পাগল হয়ে যায় পরিচিত হবার জন্যে। মানুষের হাত,পা মুখও চেটে দেয় আনন্দে,,এক বিশ্রী অবস্থা। জিমের এই কুত্তাটা ভদ্র কিন্তু এসব আমি দূরে রাখি। দরজা খুলতেই লেসী ঠিকই মাইকীর পা চেটে দিল এবং মাইকী কুকুর ভালোবাসার কারনে তার সাথে খেলা করল ব্যাকইয়ার্ডে। মাইকীকে আমার গার্ডেন এবং শেড দেখালাম। আরও কিছুক্ষন গল্প করে মাইকী চলে গেল। এত বেশী খাওয়ার পর কোথাও ঘুরতে মন চাইলো না। দুপুরে ঘুমানোর আগে ফেসবুকের এক নতুন ভায়ের সাথে কিছুক্ষন গল্প করলাম, খুব ভালো লাগল, লোকটা ভালো এবং রসিক। দুপুরে ঘুমালাম ঝাড়া ২ ঘন্টা।

বিষয়: বিবিধ

৬৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File