সিমসন পার্ক
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৮:৪১:২৭ সকাল
=======
ছুটির দিনগুলোতে আমি যা মনে আসে তাই করি। কিন্তু ছুটির দিনগুলোর স্পিড বেশী থাকে। দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ভাবলাম সিমসন পার্কে যাই। আমেরিকার ওরেগন স্টেটের সাইজ বাংলাদেশের প্রায় ডাবল কিন্তু লোক সংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ। ফলে এখানে পার্কে গেলে ভূতুড়ে পরিবেশ পাওয়া যায়।
সিমসন পার্ক দূরে নয়, ভাবলাম গিয়ে ঘুরে আসি। এর আগে ২/৩ বার এসেছি কিন্তু এবার এসে দেখী চিত্র ভিন্ন। আগে দেখেছি সুন্দর স্বচ্ছ পানির লেক। এখানে পাশাপাশি কয়েকটা লেক যা ছোট ছোট। দেখলাম সবুজ নলখাগড়ার জঙ্গল। এটা দেখেই মন ভরে গেল। সাধারন একটা জিনিস এত সুন্দর কিভাবে হতে পারে ! পুরো লেকের পানির উপর ঘন হয়ে সবুজ শাওলা ভাসছে। দেখে মনে হল সমতল মাঠ। এর সাথেই রয়েছে নলখাগড়ার বন। এই লেকে প্রচুর হাস থাকে, এর কারন বোধহয় এর খাবার। এখানে মাছ আছে বেশ।
এই পার্কের সাথেই এ.টি.আই নামক ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এরা হেভী মেটাল তৈরী করে এবং দুনিয়ার অন্যতম সেরা এরা। বহু এলাকায় এদের ফ্যাক্টরী রয়েছে। খুবই উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাপাতিতে এদের মেটাল ব্যবহৃত হয়। মহাকাশ স্টেশন,রকেট,প্লেনের যন্ত্রপাতি,জাহাজের প্রপেলারসহ বিভিন্ন দামী জিনিসে এসব ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখানে প্রত্যেকটা ফ্যাক্টরীকে পরিবেশ সংরক্ষন কাজে অংশ নিতে হয়। অত্যন্ত কঠিনভাবে চেক করা হয়। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার জরিমানা হয়।
আমি লেকের পাশে হাটতে থাকলাম। আমি ছাড়া আর ২/৩জনকে দেখেছি আসতে। পরে আবিষ্কার করলাম পুরো পার্কে আমি একা। এবার আমি নদীর ধার দিয়ে থাকা জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। এটা অনেক বড়। হাটতে থাকলাম আনমনে। খানিক দূর পরপরই বিশাল ঝোপ ঝাড়। এই বনে হরিন রয়েছে অনেক। মাঝে মাঝে হরিনগুলো লোকালয়েও প্রবেশ করে। বনে ছোট সাইজের বাঘ আছে শুনেছি,তবে সেগুলো আসলে আক্রমনাত্মক নয়। এরা সাইজে হয়ত ৩টা বিড়ালের সমান হবে। এরা মানুষকে আক্রমন করেছে এরকমটা শুনিনি। আর ছোট সাইজের ভাল্লুক আছে এমনটাও ফরেস্ট বিভাগ দেখেছে,তবে সেগুলো মানুষের কাছে আসেনা। আমি খালি হাতে বনের ভেতর দিয়ে চললাম। আমার ব্যাগে খুব দারুন একটা নাইফ থাকে। দু একবার পকেটে নিয়ে এরকম স্থানে চলেছি কিন্তু আজ মনে নেই। খালি হাতেই চললাম।
নির্জন বন। একেবারেই নিরব। আশপাশে কোনো লোক নেই। সারাদিন চিল্লালেও কেউ শুনবে না। তবে যেহেতু নদীর সমান্তরালে চলে গেছে বন,তাই পথ হারানোর সম্ভাবনা কম। বনের ভেতর নদীর একটি শাখাও দেখলাম। আমি চলতে থাকলাম নদীর কিনার পর্যন্ত।
নানান পেচালো পথ ধরে নদীর তীরে পৌছালাম। এখানে কয়েক'শ বছরের পুরোনো গাছ আছে বেশ কিছু । এটা হল কালাপোইয়া নদী। অন্য নদীর তুলনায় একটু প্রশস্ত। তবে সৌন্দর্য্য খুবই মনোমুগ্ধকর। মনে হচ্ছে শিল্পী তার তুলিতে এঁকেছে। স্বচ্ছ পানির প্রবাহ,নদীর দুপাশে নূড়ী পাথরের স্তুপ,তার দুপাশে কোথাও সুন্দর পার্ক,জঙ্গল। অদ্ভূত সুন্দর। এসব নদীর তীরে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগে। তবে নির্জন বনে গা ছমছম করার কথা, আমার অবশ্য এরকমটা হয়না। আমি বহু বছর থেকেই অভ্যস্ত। তবে বনের ভেতর চলার সময় দিক ঠিক রাখতে হয়। রাস্তায় চিহ্ন করে রাখতে হয় বা কিছু নিদর্শন মনে রাখতে হয়। নইলে আবেগে কেবল সামনের দিকে যেতে থাকলে মানুষ দিক ভুল করে। আর একবার দিক ভুল করলে ঝামেলা আছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুই ছিলো,ফলে সমস্যা ছিলোনা। এখন জিপিএস অনুযায়ী চলা যায়। তবে বেশীরভাগ পাহাড়ী বনে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করেনা।
একা একা বেশীক্ষন ঘোরা যায় না, কারন কিছুই তো করার নেই। তাই ফিরে আসলাম। কুরবানীর গরুর গোস্ত রান্না করলাম। ভারতীয় ঘি এর উপর মূল্যহ্রাস চলছিলো। এটা অর্গানিক ঘি। আর এই জিনিস আমার পছন্দ। বড় ৪ বোতল কিনলাম । এখন সেটা দিয়ে পরোটা ভেজে গরুর গোস্ত দিয়ে টানাটানি চলছে।
ঘটনা গত পরশু দিনের,,লিখতে দেরী হল। বিকেলে পাকিস্থানী বন্ধু নাদিম আসলো তার ২ সন্তান নিয়ে। তারা লেসীর সাথে খেলা করলো বেশ কিছুক্ষন। ওদেরকে টুকটাক খাওয়ালাম। ওরা কথা বলেনা, খুব লাজুক। তবে জিমের কুকুরটাকে পছন্দ করে। ব্যাক ইয়ার্ডে বেশ খেলতে পছন্দ করে।
বিষয়: বিবিধ
৬৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন