আশুরার রোজা :

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৩:৪০ সকাল



============

আমরা পূর্বে মহররম উপলক্ষ্যে শিয়াদের অনুসরনে এই দিনে লাঠি খেলা,তথাকথিত দুলদুল ঘোড়ার অনুকরনে অন্য ঘোড়াকে দুধ দিয়ে গোসল করানো,শরীর রক্তাক্ত করে মাতম করা, নানান খেলাধুলা ইত্যাদী করে কাটিয়েছি। এখনও শিয়ারা এবং তাদের অনুকরনে আরও কিছু বিভ্রান্ত লোক এসব জাহেলীয়াপূর্ণ আচরণ করে থাকে। সমাজে প্রচার করা হয়েছে যে এই দীবসটি পবিত্র এই কারনে যে, এই দিনে ইমাম হোসেন(রাঃ) স্বপরিবারে শহীদ হয়েছিলেন। এটা হয়ত সত্য(আল্লাহ ইমাম হোসাইন এবং তার পরিবারের উপর রহম করুন, তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সম্মানিত করুন) কিন্তু এ কারনে এদিনটি গুরত্বপূর্ণ তা নয়, বরং পূর্বে এই দিনে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিলো, যেমন মূসা(সাঃ) এদিনে তার ক্কওমসহ লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে নিরাপদ হয়েছিলেন এবং ফেরাউন ডুবে মরেছিলো। ফলে ইহুদীরা এ দিবসটিকে রোজা রাখার মাধ্যমে পালন করত।

মদিনায় হিজরতের পর

যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের এ মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখলেন,

তখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

ইহুদিরা জানালো, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসাকে (আঃ)অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ তারিখে ফেরাউন নীলনদে ডুবে মারা যায়। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) এ দিনটিতে রোজা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন,

আমরাও মুসা (আ.)-এর অনুসরণ করবো।

তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বরং বেশি।

তিনি তখন থেকে মহররমের১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সবাইকে নির্দেশ দিলেন।

-সহিহ বোখারি: ১৮৬৫

তবে প্রথম দিকে এই রোজাটা ওয়াজিবের পর্যায়ভূক্ত হলেও, পরে রমজানের রোজার নির্দেশ আসলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐহ্যিক সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। অর্থাৎ এটি পালন করলে বিশাল সওয়াব রয়েছে কিন্তু পালন না করলে পাপ নেই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন,যে চায় সে এ রোজা রাখতে পারেএবং যে চায় না, সে না রাখলেও ক্ষতি নেই।

(-সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

"রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়। "

-সহিহ মুসলিম: ১৯৮২

আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে

আল্লাহতায়ালা বান্দারবিগত এক বছরের গোনাহসমূহ মাফ করে দেন।

-সহিহ মুসলিম: ১১৬২

মুসলিম শরিফের বর্ণনায় জানা যায়,

ইন্তেকালের আগের বছর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন,যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে

৯ তারিখেও রোজা রাখবো। এ জন্যই আশুরার রোজার সঙ্গে এর আগের দিন রোজা রাখাকে মোস্তাহাব বলেছেন উলামায়ে কেরাম। এছাড়া ইহুদীরা ১০ তারিখে রোজা রাখত এবং তাদের সাথে বৈপ্যরিত্য তৈরী করতে রসূল(সাঃ) ৯ এবং ১০ ,অথবা ১০ এবং ১১তারিখ অথবা ৯,১০,১১ তারিখে রোজা রাখতে বলেন।

প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) হজরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন,

যাতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো।

তবে এতে যেন ইহুদিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হয়ে যায় সেজন্য এর সঙ্গে মিলিয়ে হয় আগের দিন কিংবা পরের দিনসহ রোজা পালন করো।

আমেরিকাতে ১০ই মহররম হবে আগামী বুধবার দিবাগত রাত অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে হবে ১০ মহররমের রোজা। তার মানে আগামী বুধ ওবৃহস্পতিবার অথবা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রোজা রাখতে হবে। দেশের লোকেরা সময় মিলিয়ে নিক। তবে এই সুন্নাহটি ছেড়ে দেওয়া মোটেও ঠিক হবেনা। এমনিতেই আমরা চরম পাপী মানুষ, তারপরও যদি দু এক দিনের জন্যে কষ্ট না করি, তাহলে আল্লাহর সামনে কি নিয়ে দাড়াবো ! লজ্জাজনক হবে বিষয়টি। আসুন আমরা সৎ কাজে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হই !

বিষয়: বিবিধ

৫৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File