সিডল লেক পার্ক ===========

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৪৯:৩৫ সকাল



গুগলে ( গু-গুলে নয়) সার্চ দিলাম ভালো কোনো পার্ক কাছাকাছি আছে কি না,,,পেলাম অনেকগুলো। এর ভেতর থেকে সিডল পার্ক সিলেক্ট করলাম। লেক,নদীসহ পার্ক ভালো লাগে। পরিকল্পনা সেট হল যথাযথভাবে।

সকালে জিমে গেলাম। গিয়ে দেখী আমার ২ সুপারভাইজারও জিম করছে, এর একজনের হাটুতে ইনজুরী। আমার সহকর্মীদের অনেকেরই দেখী হাটুতে সমস্যা অথচ অনেকেই বডি-বিল্ডার, একেবারে তাগড়া যুবক। সম্ভবত এর কারন এদের খাদ্যাভ্যাস । এরা প্রচুর প্রক্রিয়াজাত খাবার খায় এবং শুয়োর,মদ খায়। এসবের কারনে সম্ভবত এদের হাড়ের গঠনে সমস্যা হয়,যার কারনে এদের হাড় আমাদের লোকেদের থেকে অপেক্ষাকৃত বেশী ভঙ্গুর। বহু লোক দেখেছি হাড়ের সমস্যায় জর্জরিত এবং অনেকের অনেকবার সার্জারী হয়েছে শরীরের নানান অংশে। যাইহোক মিডিয়াম আচে জিম করলাম কারন আজ অনেক ছুটোছুটি আছে।

তেলের দাম আজ একটু কম দেখলাম, প্রতি গ্যালন ২.৮৬ ডলার। তেল নিয়ে তৈলাক্ত হয়ে ট্যানজেন্ট এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এখানে স্যামুয়েল থাকে, আমার ছোট বন্ধু। ওর সাথে বেশ কিছুক্ষন লাড্ডু গুড্ডু করলাম এরপর স্যামুয়েলের নানীর এস.ইউ.ভি ধার নিয়ে চললাম লেবাননের উদ্দেশ্যে।

আজ ইচ্ছা ছিলো উত্তম স্থানে উত্তম পিকচার তুলব এবং ভিডিও হবে। ওয়ালমার্টে থামলাম সেলফি স্টিক কেনার জন্যে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তাদের কাছে থাকা একটা সেলফি স্ট্যান্ডও কাজ করল না। ফলে টাকা ফেরত নিয়ে চলে আসলাম। সিডল লেক পার্কে ঢোকার সময় ভালো লাগলো, কারন সারি সারি ক্রিস্টমাস ট্রি এবং পাইন গাছ। বিশাল মাঠ এরপর বুনো জঙ্গল। লেকটা ওপাশে।

আমি বুনো ঝোপঝাড় ভেঙ্গে ওপাশে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। বনের ভেতর প্রচুর ব্লাকবেরীর ঝোপ কিন্তু ব্লাকবেরী পেকে শুকিয়ে গেছে এখন,আছে বুনো আপেল। ব্লাকবেরী গাছের কাটা একেবারে কোবরা সাপের দাঁতের মত। আমি বাগান ভেঙ্গে নতুনকে জানার আগ্রহে ছুটলাম, কিন্তু বেশ কিছুদূর যাবার পর কোনো পথ পেলাম না। রাস্তা ছিলো স্যাঁতসেঁতে আর বুনো লতাপাতায় ভরা। মানুষ ভাবে এদেশে সাপখোপ ভরা,আসলে তা নয়। তবে কিছু স্টেটে সাপ আছে বেশ। এখানে আমি একবার এক বাগানে সাপ দেখেছিলাম সাইজে ছোট। কিন্তু সেটা বেশ ভদ্র। এদেশে সাপ খোপ লোকে মারেনা। জেনেটিকভাবে ওই সাপটা বোধহয় এরকম তথ্যই বহন করছিলো,যে মারবে না তাকে,,, ফলে আমাকে দেখে পালালো না। আমি তার চোখে চোখ রাখলাম,,,সে মানুষ হলে আহলাদিত হত। কিন্তু পরক্ষনেই পাশে পড়ে থাকা এক বাঁকা ডাল তুলে নিয়েই সপাং করে দিলাম বাড়ি,,,,,তার সৌভাগ্য যে ডালটা বাকা ছিলো ফলে বাড়িটা সমান্তরালে পড়েনি,,,ওই ফাঁকে পড়েছিলো তার দেহ মোবারক এবং হারামী বেঁচে গেল। এক বাড়ি মিস হওয়ার সাথে সাথেই ওর জেনেটিক সিস্টেম উল্টোপাল্টা হয়ে গেল,,ও তখন প্রবল বেগে কষে দৌড় দিল,,আমিও দিলাম ওর পিছু পিছু দৌড়। ধুমধাম বাড়ি দিতে থাকলাম কিন্তু শালা গাছের ফাঁক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি আর ওপথ মাড়াইনি,,,,, মনে হল ওর পরিবারের সদস্য নেহায়েৎ কম হবেনা,,,দেশী নেতা,নেত্রীদের মত প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠলে আমার যানাজা পড়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ওপথ আর মাড়াইনি।

বাপ এবার থাম,,ক্ষ্যামা দে,,মূল ঘটনায় মন দে। মাঠের এক কোনায় দেখী এক বৃদ্ধ দাড়িয়ে আছে। জানতে চাইলাম লেকটা কোনদিকে ? সে বলল-দক্ষিন দিকে ২০ মাইল দূরে ! আঁৎকে উঠলাম,,,২০ মাইল !! অমি তো দেখলাম সেটা এখানে কোথাও....। লোকটা রসিক, মজা করছিলো,,, বলল ওদিকে রাস্তা আছে...। আমি দিলাম দৌড়....পেছন থেকে লোকটা বলতে লাগল ...গো ডাক গো !! আমেরিকাতে ফুটবল খুব জনপ্রিয়,,,তবে এটা আমাদের ফুটবল না(ফুটবলকে এরা বলে সকার), এটা হল আমেরিকান ফুটবল,অনেকটা রাগবীর মত। পুরো আমেরিকা ক্রেজী এই খেলা নিয়ে। ওরেগনে ২টা দল আছে সাবেক আবাহনী-মহামেডানের মত। এর একটা হল বিভার, অন্যটা ডাক। আমি এই খেলা আসলেই পছন্দ করিনা, কিন্তু এসব টিমগুলো সুন্দর সুন্দর পোষাক তৈরী করে। আমি কখনও কিনি। আমার ডাক ও বিভার উভয় দলেরই পোষাক আছে। আজকের ব্লু পোলো শার্টটা ছিলো ডাক দলের। আর ওই লোকটাও ছিলো ডাকের সমর্থক।

তো....আমি বিশাল মাঠের এক কোনায় দেখলাম চিকন পাকা রাস্তা চলে গেছে। সেদিক দিয়ে ছুটলাম। দেখি দারুন একটা খাল। কিন্তু লেক ছাড়া অন্যকিছু দেখতে মন চাইলো না। ছুটলাম সেই রাস্তায়। রাস্তার দুপাশে বুনো ফুল দেখলাম অনেক সুন্দর। খালে হাস সাঁতার কাটছে দেখলাম,, দেখেই খুব লোভ লাগল। এই হাসগুলো উড়তে পারে দীর্ঘক্ষন,হুবহু দেশী হাসের মত কিন্তু এরা উড়তে পারে এটাই পার্থক্য। মনে হল দেহে কেজী দেড়েক গোস্ত হবে, মনে মনে রান্না করতে করতে দৌড়ালাম।

বায়ে পেলাম আমার কাঙ্খিত লেক,কিন্তু এটা সেরকম সুবিধার না। লেকের ভেতর প্রচুর শ্যাওলা, সম্ভবত প্রচুর মাছ,যার কারনে উড়ন্ত গুচ বা বলা যায় রাজহাস পাখি এসে পড়ছে দলে দলে। চারিদিকে শত শত রাজহাস,,এরা বহুদূর উড়তে পারে। পানিতে এদের ডাইভ দেখলাম। মনের আনন্দে আমার সামনে ৫/৬ কেজী গোস্তের একেকটা রাজহাস ঘুরে বেড়াচ্ছে,,,অথচ আইনের রশিতে আমার হাত বাধা,,,,এ কি সহ্য হয় ! এখানে পাখি শিকারের জন্যে লাইসেন্স করতে হয়। তবে তা করতে হলে বন্দুক কিনতে হবে। এখানে আমি তরি তরকারীর মত সেমী অটোমেটিক রাইফেল কিনতে পারি কিন্তু এর কিছু ঝামেলা আছে। প্রথম ঝামেলা আমি মুসলিম এবং অস্ত্র কিনলে এফ.বি.আই গোপনে আমাকে নজরদারীর ভেতর রাখবে। এছাড়া এসব এখানে প্রয়োজন হয়না। ওরেগন অত্যন্ত সুন্দর এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের স্থান। আর অামার শিকারের ধৈর্য্য নেই। যাইহোক হাসগুলো দেখে কিছু করতে না পারার অসহ্য অনুভূতী সহ্য করলাম। অনেকক্ষন হাসগুলোকে দেখেছি, কারন লেক দেখে আমার পিত্তি জ্বলে গেছে,কিডনী কান্ধে উঠে গেছে। এ আমি কোথায় আসলাম,,,এ তো পচা বিল। আমেরিকাতে জীবনেও এরকম শ্রীহীন লেক দেখিনি। পুরো আয়েজন মাটি হল মনে হল। দৌড়ে ফিরতি পথ ধরলাম।

পেটে ক্ষুধা ডিগবাজি দিচ্ছে, তার পশ্চাৎদেশে লাথি দিয়ে থামালাম। গেলাম এক থাই ঘরোয়া রেস্টুরেন্টে। লেবাননে এক পরিবার আছে তাদের বাড়ি রাস্তার পাশে, সেখানে বাড়ির আঙিনায় তারা ক্ষুদ্র রেস্টুরেন্ট তৈরী করেছে। সেখান থেকে দুপুরের খাবার কিনলাম,,,অসাধারন বানায় এরা...। টানলাম অনেক..।

বিকেলে নাদিম ভাই তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাসায় আসল। তাদেরকে তেমন কিছু খেতে দিতে পারিনি,,আমি গরিব,অসহায় .....তবে কিছু ফ্রুটস ,,ললি পপ দিলাম। এরা খুব লাজুক,কথা বলতে চায়না। তারপরও ললিপপ খেতে খেতে গল্প জমানোর চেষ্টা করলাম। এরপর ১ ঘন্টার একটা ঘুম দিয়ে শপিংয়ে গেলাম। বাদ মাগরিব ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম......।

বিষয়: বিবিধ

৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File