জাপানীজ গার্ডেন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৬:৫০ সকাল
===========
অনেক বছর আগেই জাপানিজ গার্ডেনের কথা শুনেছিলাম। দেখার আগ্রহও জন্মেছিলো। জাপানিজরা গার্ডেনিংয়ে অসাধারন। যেখানে গার্ডেন তৈরী করে,সেখানে মানুষ গিয়ে বুঝতে পারে তাদের সৃষ্টিশীলতা কতটা অসাধারণ। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্টেটের ভিক্টোরিয়া দ্বীপে বুচার্ট নামক একটি ফুল বাগান অাছে। সৌন্দর্য্যে এটা দুনিয়ায় সুবিখ্যাত। লাখে লাকে মানুষ যায় সেখানে। আমি গিয়ে জান্নাতের কথা ভেবেছি। আজ আবারও ভাবনায় জান্নাতের স্পর্শ পেলাম।
২ বছর আগে পণ করেছিলাম জাপানিজ গার্ডেনে যাবই,,,কিন্তু পোর্টল্যান্ড থেকে পথ হারিয়ে এক প্রত্যন্ত এলাকার ফার্ম হাউসে ঢুকে পড়েছিলাম। ছাগলের সাইজের ঘোড়ার এক খামার দেখে ব্যপক মজা পেয়েছিলাম। ছোটবেলায় আমার একমাত্র প্রিয় বাহন ছিলো ঘোড়া। এই সাইজের পেলে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ঘোড়ার পিঠেই থেকে যেতাম হয়ত। সেবার পথ হারিয়ে আরও দারুন এক এলাকায় চলে গেলেও মনের ভেতর আকুপাকু করা বন্ধ ছিলোনা।
গত বছর জাপানিজ গার্ডেনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে তাকে খুঁজেও পেলাম। কিন্তু পুরো গর্ডেনে মাত্র একটা গাড়ি রাখার মত স্পেস পেলাম না। পাশের ওয়াশিংটন পার্কের পার্কিং লটও পূর্ণ। অন্য মানুষও ঘুরছে একটু পার্ক করার আশায়। পাশের আরেক পার্কেও একই অবস্থা,,,। একই এলাকায় ক্রমাগত ঘুরে ঘুরে শেষে মনের দু:খে ফিরে এসেছিলাম।
আজ সকালে রওনা হলাম। বিশেষ কারনে সকালে নাস্তা করিনি। হাইওয়ে ৫ এবং ২১৭ ধরে এগিয়ে বার্নস রোডে গেলাম। সেটা ধরে এগিয়ে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠতে থাকলাম। আজ আকাশ মেঘলা ধরনের। তবে এর ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্য্যের আলো গড়িয়ে পড়ছে কখনও কখনও। পৌঁছলাম জাপানিজ গার্ডেনে। দেখী পার্কিংলটে একটা কুত্তাও নেই,মানুষ তো দূরের কথা। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলাম,যে এ রাজ্য আমার আজ। মেশিণ থেকে পার্কিং টিকেটও কিনলাম। কিন্তু জানতে পারলাম জাপানিজ গার্ডেন বন্ধ ! আমার মনের উপর কেউ হাতুড়ি চালালো ! কিন্তু পরক্ষনেই চলমান লোকটা বলল,,দুপুর ১২টায় খুলবে। মন নেচে উঠল।
পাশেই আছে রোজ গার্ডেন। সেখানে কিছুক্ষন ঘুরলাম। এখানে পাহাড়ের মাথা থেকে পোর্টল্যান্ড শহরের একটা অংশ দেখা যায়। এরপর ভাবলাম, একটা কাজ করা যাক,,, আগে সওগাত রেস্টুরেন্টে থেকে মাথা ভর্তি করে আসি। মাথায় খাবার না থাকলে আসলে ভ্রমনে মজা নেই। যেই ভাবা সেই কাজ। পার্কিং এর পয়সা মাইর,,,কিন্তু খাওয়ার আনন্দ ভরপূর।
ভারতীয় রেস্টুরেন্টে গিয়ে টানলাম গরম গরম, চরম। ভাত ,নান,গোস্ত,সব্জী,মিস্টান্ন। মাথার চুলে হাত দিয়ে খাবারের স্পর্শ নিলাম, যাক বাবা ভরে গেছে,, এবার ফেরার পালা। ফেরার পথে মিঙ্গালা নামের এক বার্মিজ গ্রোসারী স্টোরে ঢু মারলাম। সেখানে এক ইরাকী তরুন ভায়ের সাথে পরিচয়। সে পড়াশুনার ফাকে ফাকে ফ্রি সার্ভিস দেয় মুসলিম ভাই হিসেবে। ছেলেটা খুব সুন্দর ,অমায়িক আর কথাবাজ। আমার সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক আলাপ করল। আমি বড় বড় ৪ প্যাকেট মুড়ি কিনলাম, বাংলাদেশী। মুড়ি চানাচুর ছাড়া অামার চলেনা। ছোটভাই দেখী এক চেস্ট ফিজের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে গান গাচ্ছে....হাসলাম তার কারবার দেখে। উঠে এসে ক্যাশ রেজিস্টার মেইনটেইন করল।
ফিরে আসলাম আবার জাপানিজ গার্ডেনে। ঘড়িতে সময় সাড়ে ১২ টা,,,,হায় আল্লাহ ! বিশাল পার্কিং লট ভর্তি। একটা জায়গাও খালি নেই। মনে হল এটাই তকদীর,,কিন্তু মেনে নেওয়ার আগে ট্রাই করতে মন চাইলো। অনেক ঘুরেও পেলামনা। শেষে দূরের এক রাস্তার পার্কিয়ে পার্ক করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলাম। সামারে এই পার্কে প্রচুর লোক আসে।
পার্কের দিকে হেটে আসার সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে লাগল। উপরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ইয়া আল্লাহ ! বাসায় থাকতে একটা সিগন্যাল দিলেই তো আসতাম না। এতদূর টেনে এনে বঞ্চিত করবেন ?? চলতে থাকলাম। জাপানিজ গার্ডেনের গেটে দেখী ভীড়। অনেক মানুষ টিকেট কাটছে। ১৮ ডলারে টিকেট কাটলাম। টিকটটা ভদ্র মহিলার হাতে দিলাম,,,উনি কালির দাগ মেরে ফেরৎ দিলেন। আমি সুদৃশ্য গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়েই পেলাম মুষলধারার বৃষ্টি। ওরে সে কি বৃষ্টি ! আবারও উপরের দিকে তাকিয়ে মুখ চুন করে বললাম,,,,, জি, আমি খুশী,,,,আলহামদুলিল্লাহ ! ভদ্র মহিলা বলল,,ইচ্ছা করলে পয়সা ফেরত নিতে পারেন ! কিন্তু আমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ভাব বুঝতে চাইলাম। একে বলে ধৈর্য্যের একটা হালকা পরিক্ষা। আল্লাহ সাধারনত পরিক্ষা সহজই করেন, কিন্তু আমরাই কঠিন করে পেচিয়ে ফেলি আর আল্লাহকে দোষারোপ করি,,,,পুরো ফাউল আমরা !
অল্প কিছুক্ষনের ভেতর বৃষ্টি থেমে গেল। আমি গ্রীন সিগন্যাল নিয়ে পাহাড়ের উপরের দিকে হাটতে থাকলাম। এখন আবহাওয়া চমৎকার,যেন খানিক পূর্বে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। মানুষের জীবনের বিপদাপদগুলো এরকমই। আল্লাহ বলেন নিশ্চয়ই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি,অবশ্যই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি,,,, । কিন্তু মানুষ অকৃতজ্ঞ এবং অজ্ঞ। স্রষ্টার রহস্য বুঝতে পারেনা জলজ্যান্ত ওহী পাওয়ার পরও.....এরাই ডারউইনের চ্যালা,বান্দরের জাত। যাইহোক আমি অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির ভেতর মনোরম রাস্তা ধরে উপরের দিকের গেট দিয়ে বাগানে প্রবেশ করলাম।
এটা আসলে ফুলের বাগান নয়। এটা নানান রকমের ছোট বড় গাছে ভর্তি এক সুন্দর অদ্ভূত বাগান। এসব স্থানের বর্ননায় ভাষার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমার শব্দালঙ্কার ভয়ঙ্কর ! কোন ভাষায় উপস্থাপন করব তাও বুঝিনা। খুব প্রশস্ত এক প্রাঙ্গন পেলাম,যার শেষে স্যুভেনীরের দোকান এবং এদের অফিস ঘর। এরকম ঘর দেখে লোভ হয়। মনে হয় আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি। তাকালেও প্রশান্তি পাওয়া যায়। আরেক গেট দিয়ে বাগানে ঢুকলাম। ভেতরের ছোটছোট গাছপালা খুব দারুন। এখানে একটা ভিউপয়েন্ট আছে যেখান থেকে পোর্টল্যান্ড শহর কিছুটা দেখা যায়। উপর থেকে নীচের শহরকে খুব দারুন লাগে। দেশ বিদেশের লোকেরা এসেছে বাগান দেখতে।
জান্নাত শব্দের অর্থ হল বাগান। কিন্তু কেউ জান্নাত দেখার পর এসব বাগানে মলমূত্র ত্যাগ করতেও আগ্রহী হবেনা,যদিও জান্নাতিরা এরকম কিছু ত্যাগ করবে না। তারা ঢেকুর তুলবে আর তাতেই সব হযম হয়ে উড়ে যাবে। ফলে আবার খাবে.....আবার ঢেকুর....শালা এ কি মজা !! খাব আর খাব....মাথা ছাপিয়ে খাবার কেবল উপরের দিকে উঠতে থাকবে....মৈ নিয়ে আরেকজনকে পাঠাবো মাথার উপরের খাবারের উচ্চতা মাপতে...। এরপর ঢেকুর তুলব,,সব গায়েব...আবার খাব। এর মত মজা আর কি আছে....আর সব হারামকে হালাল করে দেওয়া হবে....কি মজা। এরপরও যদি কেউ সেখানে না যেতে চায়,,, তার শিক কাবাব হওয়াই উচিৎ।
আমি চলতে শুরু করলাম। নীচের রাস্তা খুব দারুন করে তৈরী করা হয়েছে। সে পথে আলোছায়াপূর্ণ পরিবেশে চলার সময় মনে ফুরফুরে একটা ভাব আসে। কত সুন্দর করে যে গাছপালা তৈরী করেছে এরা , না দেখলে বিশ্বাস হয়না। আমি এসব গাছের নাম জানিনা। অল্প কিছু ফলের গাছ ছাড়া অন্য গাছের নাম জানা আমার কাছে বাহুল্য ঠ্যাকে। আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, কোথাও যদি লেখা থাকে প্রবেশ করা নিষেধ,,ছবি তোলা নিষেধ,,,তাহলে আইন ভঙ্গ করতে খুব মজা লাগে। আমি নেপালের রাজ প্রসাদের ভেতরের কিছু ছবি তুলেছিলাম যা নিষিদ্ধ ছিলো, স্বর্ণ মন্দিরেও ঢুকে গোপনে ছবি তুলেছিলাম,,,আরও বহু সময়ে এটা করেছি। আজও যেসব বাউন্ডারীতে যাওয়া নিষেধ সেখানে গিয়েছিলাম। পরে একজন গার্ড নিষেধ করল,আমি সরি বললাম। এরকম সরি আমি বহুবার বলেছি !
গার্ডেনটা উঁচু নীচু,পেচানো ধরনের। নানানভাবে তারা এখানে সৌন্দর্য্য চর্চা করেছে। আছে পানির নহর। আসলে মানুষ ফুল বাগান বানাক আর গাছ বাগান,,,,পানি প্রবাহিত না করলে সৌন্দর্য্য পূর্ণতা পায়না। আল্লাহ এরকম এক উপলব্ধী দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করেছেন,,, আর জান্নাতের বর্ননায় নানান পানির নহরের প্রবাহিতের কথাও বলা হয়েছে। আসলেই সুন্দর। একটা ঝর্ণার পাশে আসলাম। নীচে পানি জমে আছে,সেখানে দেখী বড় বড় রঙিন মাছ। মনে হল এরা মাছকে ভালোবাসতে জানেনা,,,নইলে এসব মাছ আস্ত থাকে ক্যামনে ! মাছের ভূনাহবে,,কালিয়া হবে,,কোপ্তা হবে.....
পুরো পার্কের সৌন্দর্য্য লুটে পুটে খেয়ে ফেললাম। শেষের দিকে কিছু বনসাই দেখলাম। বনসাই হল বিশাল গাছের ছোট ভার্ষন। বড় বড় গাছে যা হয় তা এই ফটোকপি গাছেও হয়,কিন্তু সাইজ ছোট। এখানে সবচেয়ে পুরোনো বনসাইটার বয়স ৩০০ বছর, কম বয়সীটার বয়স ৪০ বছর। মজা পেলাম। এবার ফেরার পালা। এরকম সময়েই আবার বৃষ্টি নামতে শুরু করল। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার ব্যর্থ চেষ্টায় আলহামদুলিল্লাহ বললাম,,,এটাই আমার সাধ্য,,আল্লাহ অল্পতেই সন্তুষ্ট হন,,,বান্দা বোঝেনা,,,,পাগল ছাগল !!
আজ কোনো এক দূর্বোধ্য কারনে রাস্তায় পুলিশ বেশী। খানিক পরপরই তাদের মুখোদর্শন করছিলাম। পুলিশ দেখতে কারো ভালো লাগেনা,,,,এর চেয়ে চোর দেখায় মজা আছে। রাস্তায় স্পিডে চালাতে গিয়ে কয়েকবার পুলিশের গাড়ি দেখলাম। নিয়ন্ত্রিত হলাম। প্রচুর টানার পর এবং হাটার পর ফুকনা শুকিয়ে গেল। অনেক দূরের এক ড্রাইভ থ্রু দোকানে স্ট্রবেরী মিল্কশেক আর এটা সেটা অর্ডার করলাম। হারামীরা অনেক দাম রেখেছে.....আর এমুখো হবনা। তবে দিনটা আসলেই উপভোগ্য ছিলো। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে ভাগ্যবানদের ভেতর অন্তর্ভূক্ত করুন !
বিষয়: বিবিধ
৭৯৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন