ফ্যাক্ট# ৩

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:২৪:৫৩ সকাল



অাপনি একটি কোম্পানীর ম্যানেজার অথবা সুপারভাইজার, অথবা উপরের কোনো দায়িত্বশীল, অাপনার অধীনে কিছু লোক কাজ করছে । আপনি যাদের উপর দায়িত্বশীল, তাদেরকে কিছু একটা করতে নির্দেশ দিলেন,, কিন্তু অন্য একজন ম্যানেজার, বা সুপাভাইজার যার মর্যাদা আপনার সম পর্যায়ের, তিনি ওই অধিনস্ত ব্যক্তিকে আরেক রকম নির্দেশ দিলেন, যা আপনার নির্দেশনার বিপরীত।

হতে পারে আপনি নির্দেশ দিয়েছেন সেটি সে জানেনা। হতে পারে ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার উপর টেক্কা দিচ্ছে আপনাকে পাত্তা না দিয়ে। এমতাবস্থায় দায়িত্বশীল হিসেবে আপনার করনীয় কি ?

অথবা আপনি যদি ওই অধিনস্ত ব্যক্তি হয়ে থাকেন,, এমতাবস্থায় আপনার আচরণ কি হবে ?? কার কথা মান্য করবেন ??

==============

১. আপনি এবং উক্ত লোকটি যিনি আপনার কথার উপর কথা বললেন, উভয়ের মর্যাদা সমান। যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় উভয়ে কাজ করছেন,তাই উভয়ের মধ্যে অবশ্যই কাজের সমন্বয় থাকতে হবে। একে অপরের পরিপূরক, শত্রু নয়। আর উভয়েই কাজের ব্যাপারে দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহী করতে বাধ্য। ফলে একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।

২. নীম্নমানের কাঠামোতে চলা বড় কোম্পানী, অথবা গরিব মিসকিন ধরনের কোম্পানী, অথবা মূর্খ লোকের হঠাৎ টাকা হওয়া কোম্পানীতে সাধারনত কালচারাল সমস্যা হয়। কারন কোম্পানীর মালিক পক্ষ কালচার জানেনা। ফলে কোম্পানীতে বাজে সিস্টিম চলে। এসব ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ভেতর রেষারেষি থাকে। সাউথ এশিযার ভেতর চীন ছাড়া অন্য সবগুলো দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই প্রফেশনালিজম বোঝেনা এবং কোম্পানীর কাঠামোতে সর্বজনবিদীত নীতির বদলে কোম্পানীর মালিকপক্ষের স্বার্থগত নীতি প্রতিষ্ঠিত থাকে। চীন গত ২ দশকে বিশাল উন্নতি করেছে এবং কোম্পানীতে ভালো কালচার ডেভলপ করেছে। প্রথম সারীর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানগুলোই আশানুরূপ ফল করেছে। বিশ্বে একটি অবস্থান করে নিয়েছে। আরবের দেশগুলোর বিশাল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান সুন্দর কালচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। একপেশে নীতির বাস্তবায়ন করেছে। এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ভেতর জাপান,সিংগাপুর,কোরিয়া ভালো করেছে। এদের ভেতর জাপান ইউরোপ,আমেরিকার দেশগুলোর মত এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের চাইতে ভালো করেছে।

কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যক্তি স্বাধীনতা,অধিকারের চর্চাটা বেশী থাকাতে,দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ এতে অভ্যস্ত থাকাতে তাদের অধিকাংশ কোম্পানীতে তারা সুন্দর কালচার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তি-চরিত্র,ব্যক্তিত্ব একটি বড় বিষয়,যা এরা অর্জন করেছে। ফলে কর্মচারীরা এখান থেকে লাভবান হয়। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন ম্যানেজার অপর ম্যানেজারকে ছোট করেনা বা তার নির্দেশের উপর নির্দেশ প্রদান করেনা। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান সঠিক নিয়ম পদ্ধতি অনুসরন করে চলার চেষ্টা করে।

কিন্তু যদি সম মর্যাদাসম্পন্ন কেউ অধিনস্তদেরকে আপনার উপর দিয়ে নির্দেশ প্রদান করে, তখন আপনার আচরণ কি হওয়া উচিৎ ?

অবশ্যই ধৈর্য্যধারন করতে হবে। অবশ্যই রাগ প্রদর্শন করা যাবেনা। অবশ্যই কৌশলে খোচা মারা যাবেনা। অবশ্যই তাকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে, আপনি এটাতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বরং উক্ত অধিনস্তকে ওই কর্মকর্তার কথা মেনে নিতেই নির্দেশ দিতে হবে। এটাই ভদ্রতা এবং আদর্শ। এই পর্যায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলে অধিনস্ত ব্যক্তিটি দ্বীধায় পড়বে এবং নির্দেশটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে এবং কার নির্দেশ পালন করবে সেটা বুঝতে এমন কিছু আচরণ করে ফেলতে পারে, যা উভয় কর্মকর্তাকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে বা বিব্রতকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

তাই এক্ষেত্রে উক্ত অধিনস্তকে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবেনা। এরপর যদি উক্ত কর্মকর্তার ব্যাপারে অভিযোগ থাকে, তাহলে উপরের কোনো কর্মকর্তাকে এটি অবহিত করতে হবে। এটাই শ্রেয়। পুরোটায় গোপনীয়তা থাকবে, কারন কাজের পরিবেশের সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

৩. যদি উক্ত কর্মকর্তা না বুঝেই পূর্বেই নির্দেশ পাওয়া কর্মচারীকে নতুন নির্দেশ প্রদান করে, তাহলে আপনি কর্মকর্তা হিসেবে বিষয়টি উপেক্ষা করুন। কারন যদি তিনি জানতে পারেন যে পূর্বেই লোকটি নির্দেশপ্রাপ্ত,,,,তাহলে তিনি লজ্জা পাবেন। অামেরিকাতে এরকম ক্ষেত্রে তারা দু:খ প্রকাশ করে পূর্বের নির্দেশটিই বলবৎ রাখেন। এবং উনি অন্য কাজে চলে যান। তবে কর্মকর্তা হিসেবে উনাকে সম্মান করা তখন কর্তব্য হয়ে পড়ে। তখন তার নির্দেশটি আরও ভালো,এরকম বলাই শ্রেয়। আর নিজের মতটিতে সেরা মনে করলে, উক্ত কর্মকর্তাকে বলা উচিৎ,, আমি তাকে এরকমটা করতে বলেছি,,,এটা করা কি ঠিক হবে ? আপনার কি মনে হয় ? তখন উনি সহমত পোষন করবেন। এটাই ঘটে থাকে। কারন এখানে উভয়ে উভয়কে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে বিনয়ের সাথে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে।

৪. অধিনস্ত ব্যক্তিটি যদি আপনি হন, তাহলে কি করা উচিৎ ?

এক্ষেত্রে পরবর্তী নিদেশটাকে মাথা পেতে নিয়ে,প্রথম কর্মকর্তাকে বলতে হবে,,, অামি কি এটা করতে পারি ? তখন উনি বলবেন,,হ্যা অবশ্যই...সাধারনত এটাই ঘটে। আর উক্ত কর্মকর্তার যদি মনে হয়,তার নির্দেশটিই করা অধিকতর ভালো, তাহলে তিনি অন্য কর্মকর্তার সাথে আপোষ করবেন,সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করবেন নিজের পরিকল্পনা। ভদ্র মানুষ বিনয়ী হয় এবং তারা এতে নিজেদেরকে ছোট ভাবেনা। আর দাম্ভিক লোক উদ্ধত প্রকাশ করে। কিন্তু ইউরোপ অামেরিকার কোম্পানীগুলােতে দাম্ভিকতা প্রকাশের সুযোগ নেই বললেই চলে। এখানে মাইক্রোসফটের প্রধান বিল-গেটস,অথবা ফেসবুকের কর্ণধর মার্ক জুকারবার্গও তার অধিনস্তদের সাথে বিনয়ী ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে বাধ্য হন।

মূল কথা হল বিনয়ী হওয়া, অন্যের অধিকারের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া,নিজের ক্ষমতা,অধিকার সম্পর্কে সুধারনা রাখা জরুরী। কোম্পানীর স্বার্থ,কালচার বোঝা জরুরী। ন্যায় নিষ্ঠ হওয়া,ইনসাফ করতে পারার এবিলিটি থাকা জরুরী। অন্যকে সম্মান করতে পারার যোগ্যতা থাকা জরুরী। আবার অন্যায়ে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করা,প্রতিকারের চেষ্টা করাও জরুরী। নিজের ব্যক্তিত্ব ঠিক রেখে কতৃত্ব পরায়ন হওয়া ও ন্যায় পরায়ন হওয়া জরুরী। অপরকে খুশী করতে চাওয়া,প্রয়োজনে অাপোষকামীতা,ছাড় দেওয়া জরুরী। সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান দিতে হয়।

মুসলিমদের জন্যে এটা সহজ হওয়ার কথা। কারন তারা অপরকে সম্মান করার বিনিময়ে আখিরাতে মহা পুরষ্কার পাওয়ার শুভ সংবাদ বিশ্বাস করে। আর এটাও বিশ্বাস করে, রসূল(সাঃ)বলেছেন,,সাবধান ! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদেরকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে.......

বিষয়: বিবিধ

৭৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File