সান্তিয়াম নদীর ধারে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:০৩:০৭ সকাল
=============
লেবার ডে'র বন্ধ মিলে এ সপ্তাহে ছুটি ছিলো ৩ দিন, আলহামদুলিল্লাহ। আজ মসজিদে জুম্মাহ শেষে প্রধান ইমাম মুহাম্মদ শায়লা ভাইকে বললাম, ঈদের মাঠে আমার জায়নামাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম, কেউ কি তা পেয়ে ফেরত দিয়েছে ? উনি বললেন,,থাকার কথা এক স্থানে। চলেন দেখী। পাওয়া গেলনা। কিন্তু ইমাম আমাকে সুন্দর একটা জায়নামাজ গিফট করলেন। নিতে চাইনি, উনি জোর করে দিলেন। ভালো লাগল। দেখলাম মসজিদের দরকার পাশেই বিশাল চেস্ট ফ্রিজ রাখা। উপরে লেখা আছে সাদাকাহর গোস্ত। মানে ঈদের সময় থেকে এখনও গোস্ত এর ভেতর আছে। যার প্রয়োজন সে নিয়ে যাবে। ঢাকনা খুলে দেখী অনেকগুলো গোস্তের প্যাকেট। এতদিনেও কেউ নেয়নি তেমন।
এবার গ্রোসারী শপিংয়ে গেলাম। নানানসব জিনিস কিনলাম। প্রচন্ড পিপাসার্ত ছিলাম তাই হাফ গ্যালন চকলেট মিল্ক কিনলাম। এবার লেবাননের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পিপাসায় বড় বোতলটা খালি হতেই থাকল। এর ভেতর টুকটাক আঙ্গুর মুখে পুরে দিচ্ছিলাম। দেখলাম অাঙ্গুরের দাম কমেছে,,,,। ফলের দাম কমলে আমি ঝাপিয়ে পড়তে কুন্ঠিত হইনা।
একটানা ড্রাইভ করে লেবাননে আসলাম। এখানে কি করব বুঝতে পারছিলাম না, তাই ক্রাবট্রির দিকে গেলাম। আজকের উদ্দেশ্য সান্তিয়াম নদীর অপর পাশে যাওয়া। সেদিন ছিলাম ব্রিজের ওপাশে। ব্রীজের কাছাকাছি পার্ক করে বাম পাশ দিয়ে হেটে ব্রীচের নীচ দিয়ে নেমে পড়লাম। বায়ে দেখলাম এক রাস্তা চলে গেছে। এটা আসলে বাঁধ। এর উপর দিয়ে নদীর সেই কাঙ্খিত স্থানে যেতে চাইলাম, কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর দেখী প্রাইভেট প্রপার্টি, শেষে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো। সামনে বিশাল ঝোপঝাড়। ফিরলাম।
এবার ব্রিজের নীচের ঢালু অংশ ধরে নীচে নামলাম। এটা খুবই বিপজ্জনক স্থান। অনেক উপর থেকে খাড়া নামতে হয়। পা পিছলে গেলে আহত হওয়া স্বাভাবিক। এবার নীচে দেখলাম নদীর একটি শাখা এখানে এসে ডুবাতে চাচ্ছে। তবে এর উপর মরা গাছ পড়ে আছে বেশ কয়েকটা। হাতে একটা শুকনো ডাল নিয়ে পার হলাম মরা গাছের উপর দিয়ে। পা পিছলে গেলে গোসল ছিলো অনিবার্য্য।
বাম দিক দিয়ে হাটা শুরু করলাম। দেখী বায়ে বুনো জঙ্গল। প্রবল ছোপঝাড় কাঁটা। পায়ে হাটা একটা রাস্তা পেলাম। ভাবছিলাম রাস্তার শেষে নদীর কিনার। কিন্তু ছমছমে পরিবেশে নির্জনে একা চলতে চলতে জটিল স্থানে এসে পড়লাম। অনেক মরা গাছপালা পড়ে আছে। চারিদিকে ভয় পাওয়ার মত ঝোপ আর কাঁটা। রাস্তা সরু হতে হতে বিলিন হয়ে গেল, কিন্তু নদীর কিনারের দেখা নেই। ফিরলাম আবার।
এবার ব্রিজের ডান পাশে অভিযান চালালাম। এখানে বুনো ঘাস,লতা গুল্ম দিয়ে ভরা। এর ভেতর পাথুরে উচু নীচু রাস্তা। চলতে থাকলাম। নদীর ধারে এসে উপস্থিত হলাম। অসম্ভব রূপবতী এ নদী। যেকোনো বড় নদী একে বিয়ে করতে চাইবে। আমি নদীর তীরে দাড়ালাম। চারিদিকে দেখতে থাকলাম। অগভীর স্বচ্ছ পানির এই নদী আসলেই সুন্দর।
নদীর দুপাশে গাছপালা ভরপুর। পাথুরে তীর। গত কয়েকদিনে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। নদীর তীর ধরে হাটা সম্ভব হলনা, কারন এতে ভিজতে হত এবং ধারালো ,পিচ্ছিল পাথরও রয়েছে। অল্প খানিক হেটে দাড়িয়ে থাকলাম। এখান থেকেই নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। সুবহান্নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী,সুবহানাল্লাহিল আযিম। সত্যিই অনেক সুন্দর নদী। একসাথে কয়েকজন মানুষ থাকলে এখানে গোসল করা যায় আরামছে। একা একা নির্জনে গোসলে কোনো মজা নেই। সম্ভবত শনি-রবীবারে এখানে কিছু লোক আছে। অন্যদের নিদর্শন দেখেছি।
নদী থেকে উঠে, পাড় ধরে হাটলাম। সামনে এক কৃষকের বিশাল মাঠ দেখলাম, সাথে বিশাল শেড। সেখানে তার অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি বিদ্যমান। আর আগালাম না। ভেবেছিলাম এটা নদীর দিকে গেছে, কিন্তু না। প্রাইভেট প্রপার্টিতে যাওয়া নিষেধ, কারন এটা অনেক বড় আইনের লঙ্ঘন। জেল জরিমানা হয় অভিযুক্ত হলে।
এবার ফিরতি পথে এক ফার্ম হাউসে ঢুকলাম। সিজনাল ফল ও সব্জীর সমাহার। আমি কিছু জিনিস কিনলাম। আসলে এসব ফার্ম হাউস যা উৎপন্ন করে, তার স্বাদ অসাধারন। স্টোর থেকে কিনে খেলে স্বাদ এমন হয়না।
শেষ সংবাদ হল: নেহারী রান্না করছি। এটাই জীবনে প্রথম। ইউটিউবে রেসিপী দেখলাম,কিন্তু পছন্দ হয়নি। মনে মনে সিস্টেম করে ফেললাম। এখন কর্মযজ্ঞ চলছে। খারাপ হবেনা ইনশাআল্লাহ। পরোটা দিয়ে টানব।
বিষয়: বিবিধ
৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন