তোরাই ব্যাকডেটেড খ্যাত !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:২৩:০১ দুপুর
=================
(১)
আমার সহকর্মী জেরী, বয়স ৬২। আমার সাথে খাতির ব্যপক। অনেক গল্প করেছি কাজের ফাকে। প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে মার্কেটিংয়ে,,, অমায়িকভাবে নিজের নানান সব আইডিয়া শেয়ার করে এবং অন্যকে সামান্য কারনেই অতি প্রশংসা করে। একবার জানতে চাইলাম, তোমার সন্তান আছে ? সে বলল- হ্যা ২টা। বিশাল এক ফার্ম হাউস কিনেছে। অবসর নেওয়ার পর প্রচুর টাকা হবে তার, সেসবও বলল। জানতে পারলাম তার বৌ চলে গেছে ২ সন্তান নিয়ে অনেক আগেই। বললাম, আর বিয়ে করোনি ? জেরী বলল-হ্যা জুলাই,২০১৮ সালে পার্টনারকে বিয়ে করব।
ভাবলাম এটা খুব স্বাভাবিক এখানে। আগে লিভটুগেদার তারপর বিয়ে। অনেকে সারাজীবনই লিভটুগেদার করে একের পর এক। কয়েকদিন পর দেখলাম অফিসের এমপ্লয়ী নোটিশ বোর্ডে তার পক্ষ থেকে বিয়ের নিমন্ত্রনপত্র ঝুলছে। সকল সহকর্মীকে আমন্ত্রন জানিয়েছে এবং যারা আগ্রহী তারা যেন নাম এন্ট্রি করে। আমি থ হয়ে গেলাম। আমন্ত্রনপত্রের ছবিতে দেখলাম জেরী বিয়ে করতে যাচ্ছে এক যুবককে।
জেরীকে জিজ্ঞস করলাম, কি হে...যুবককে বিয়ে করছ ? সে বলল হ্যা, সে খুব ভালো, আমাদের জীবন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। আরও পরিষ্কার করে বললাম,,,তার মানে তুমি গে ? সে বলল-হ্যা ঠিক। কি ভয়াবহ ! !! আমাকে বলল- তা তুমি আসছো তো ? বললাম,,দেখা যাক,,,আমার কাজ আছে আসলে..(মনে মনে বললাম মুততেও যাবনা)।
(২)
স্টিফেনী হল মওরীনের মেয়ে। মওরীন বয়ষ্কা মহিলা, আমার সহকর্মী। তার মেয়ে স্টিফেনী আয়ারল্যান্ডে ছিলো ১৫ বছর। সেখানে আইরিশ এক লোকের সাথে বিয়ে হয়। সন্তান ২ টা। আমেরিকা ফিরে এসে দুজনই জব করে। কিন্তু সেই আইরিশ এর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর স্টিফেনী বিয়ে করে এক মেয়েকে এবং নিজের সন্তানসহ একসাথেই থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে অনেকগুলো মেয়ের সাথে থাকার পর হাফিয়ে উঠেছে। এখন নাকি কোনো এক ছেলের প্রেমে পড়েছে। বুঝলাম স্টিফেনী হল সব্যসাচী।
(৩)
আমার মহিলা কলিগ রিচেল বিয়ে করেছে আরেক মহিলাকে। বিশাল জাকজমক করে বিয়ে হয়েছিলো তাদের। গীর্জায় পাদ্রীর উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। উপরের দুটি ঘটনাতেও পাদ্রীরা বিয়ে পড়িয়েছে গীর্জায়। এদের গীর্জাগুলোও সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বাইবেল সংশোধন করে চলে দেখেছি। বাইবেল জনগণ বোঝেনা,পাদ্রীরাই সবকিছু।
একদিন দেখী রিচেল আর তার বৌ, সাথে ২টা বাচ্চা ! অবাক হলাম,,,,রিচেলের তো বাচ্চা ছিলোনা। পরে শুনলাম ওগুলো দত্তক নেওয়া। উভয়ের ভেতরই স্বাভাবিক মাতৃত্বের অনুভূতি রয়েছে কিন্তু আচরনে নফসের অনুসারী। আমি নিজে যেটা দখেছি,বুঝেছি,শুনেছি ও মনোবিজ্ঞানীরা যা বলেছেন, তা হল এই যে, এটা নিজের উপর কোনো কারনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনকে প্রভাবিত করতে করতে সমকামী করে ফেলা। এটা স্রেফ মানব প্রকৃতির বিরোধী এবং নানানভাবে মন প্রভাবিত হতে হতে একসময় অভ্যাসে পরিনত হওয়া এবং সেই অভ্যাসের দাসে পরিনত হয়ে এটাকে ন্যাচারাল বা মানবীয় সহজাত অনুভূতী,ইন্সটিংক্ট হিসেবে প্রচার করা ছাড়া আর কিছু নয়। মানুষের ব্যাপারে নানান খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেই নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টায় এই বিকৃত চিন্তার উৎপত্তি ও কসরত।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ইউরোপ-আমেরিকার অনুকরণ করছে আজ থেকে নয়। একটা জাতিকে মূল্যায়ন করার অনেকগুলো মাপকাঠি আছে কিন্তু আমরা অর্থনীতিতে আটকে যাই। এর মাধ্যমেই উন্নয়ন-অনুন্নয়নের মাত্রা পরিমাপ করি। এই অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হওয়া দেশগুলোর অন্য বহু আচরন,অভ্যাস,সাংষ্কৃতি আমরা গ্রহন করি এই ভেবে যে এটা অনুসরন করলে আমরাও তাদের মত উন্নত হব ,উৎকৃষ্ট হব,শক্তিশালী হব।
অবশ্যই অন্যদেরকে যুক্তিসাপেক্ষে, নীতির সাপেক্ষে অনুসরন করা যায়। কিন্তু আমাদের আচরনে অন্ধত্ব প্রমানিত। আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা,ডাক্তাররা ৭০ এর দশকের শুরুতেও সমকামীতাকে বলত-"এটি একটি মানসিক ব্যাধী, যা সঠিক চিকিৎস্যার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়"। কিন্তু ৮০ এর শুরুতে এসে মনোবিজ্ঞানীরা প্রচার করতে শুরু করে- এটি একটি স্বাভাবিক কিন্তু ভিন্ন ধরনের জীবনযাপন পদ্ধতি। এরপর কিভাবে যেন এটি নানানসব সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ব্যপক প্রচারিত হতে থাকে। একসময় সমকামীতার অধিকারের চরম দাবী ওঠে। দলে দলে মানুষ এদিকে ধাবিত হয়। প্রশাসনও তটস্থ হয়ে ওঠে। সমকামীদের ভোট নেওয়ার জন্যে রাজনৈতিক নেতারা তাদের পক্ষ নেয়। একসময় সমকামীতা আমেরিকান সমাজের মূলস্রোতে মিশে যায়।
আর আজকের দিনের বাস্তবতা হল এই যে, আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যে গে'রা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের বিশাল শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে,লবিস্ট গ্রুপ আছে, সরকারী সকল দফতরে গে বা লেসবিয়ান রয়েছে ব্যপক হারে। আমেরিকার প্রায় সবগুলো অঙ্গরাজ্যে সমকামীদেরকে বিয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনো ফর্ম পূরণ করতে গেলে অপশন থাকে, স্বামী,স্ত্রী,ডমেসটিক পার্টনার(যারা লিভটুগেদার করে, নারী পুরুষ উভয়েই হতে পারে)। বর বা বৌ মানেই স্বামী স্ত্রী নয় এখানে। এদের ভাষায় এটাই আধুনিক লিঙ্গ বৈচিত্র ! উদার গণতন্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে কোনো বিষয়ই আইনে পরিনত হতে পারে। সত্য-মিথ্যা,ভালো,মন্দের মাপকাঠি হল মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ফলে পূর্বে যেটা ছিলো অবাঞ্চিত, এখন সেটাই সমাদৃত, বাইবেল কোন ছার ! এটাই আধুনিকতা ! (?)
সম্প্রতি ভারতে সমকামীতাকে আইনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। লাখে লাখে মানুষ সেখানে সমকামী। নানানসব দেশী,বিদেশী সংগঠন দুনিয়ার সব কাজ বাদ দিয়ে সমকামীতাকে বৈধতা প্রদানে উঠে পড়ে লাগে। শেষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাথা উঁচু করতে সমকামীতাকে আইনীভাবে বৈধতা প্রদান করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রীয় শ্লোগান জয় হিন্দ থেকে এখন হল- গে হিন্দ !
বাংলাদেশের সমকামীরা প্রকাশ্যে মিছিল করেছে। নানান সময়ে নানান পরিসংখ্যানে আৎকে ওঠার মত হারে সমকামীতা বৃদ্ধী পাচ্ছে দেখা গেছে। রঙধনু মার্কা নিয়ে পুরুষেরা হাতে হাত ধরে রাজপথে মিছিল করেছে। এখনও নারীরা সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি, তবে অদূর ভবিষ্যতে তারা তাদের গোপন খোলস থেকে বেরিয়ে আসবে। সুশীলরা সফলতার মিস্টি বিতরণ করবে।। দেশের সুশীল ও বিদেশী কর্তারা অনেক দৌড়ঝাপ করছে। ভারতে আইন পাশ হয়েছে,মানে হল- এখন তারা চোখে আলো দেখছে। হয়ত তাবেদার রাষ্ট্রটি উন্নত থেকে উন্নততর হতে ভারতের পথেই অগ্রসর হবে।
এবার আসুন দেখী এই সমকামীতা কতটা অাধুনিক। আজ থেকে আনুমানিক ৩৫০০ থেকে ৪০০০ বছর পূর্বে আল্লাহ হযরত লুত(আঃ)কে পাঠিয়েছিলেন মানুষের হেদায়াতের জন্যে। হযরত লূতের(আঃ) কওমই সর্বপ্রথম সমকামীতা শুরু করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-তোমাদের পূর্বে আর কেউ এটি করেনি।
"সৃষ্টিকুলের মধ্যে তোমরা কি কেবল পুরুষদের সাথে উপগত হও’? এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে ত্যাগ কর? রবং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। তারা বলল, ‘হে লূত, তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই বহিস্কৃতদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।লূত বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কাজকে ঘৃণা করি’। হে আমার রব, তারা যা করছে, তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে তুমি রক্ষা কর’। অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবার-পরিজন সবাইকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধা ছাড়া। সে ছিল পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর অন্যদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম। আর আমি তাদের উপর শিলাবৃষ্টি বর্ষণ করলাম। সুতরাং সেই বৃষ্টি ভয় প্রদর্শিতদের জন্য কতইনা মন্দ ছিল! নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশই বিশ্বাস করে না। " (সূরা আশশুয়ারা, আয়াত ১৬৫-১৭৪)
৪ হাজার বছর পূর্বের গযবপ্রাপ্ত এক আহাম্মক জাতির নিকৃষ্ট আচরণকে অনুসরণ করে আজকের দিনে সভ্যতা মারানো জাতিরা প্রচার করছে তারা আধুনিক ও সুসভ্য !! কি বিচিত্র !! কি ভয়াবহ !! কি আহাম্মকী !! কি অসভ্যতা !!!
বিষয়: বিবিধ
৯৫৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে জেরী কে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন