আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ !!!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:৪২:০২ সকাল



======================

সান্তিয়াম নদী থেকে উঠে ভাবলাম মনটা খুশী খুশী,তাহলে বাসায় ফিরে আবারও বিছানায় চ্যাগায় পড়ে থাকি। কিন্তু আবার মনে হল না,, থাক ! আজ অজানাকে জানব ! সামনে চলতে থাকলাম। তারপর ফিস হ্যাচারী ড্রাইভে চলার সময় ভাবলাম,,,ওই হ্যাচারীটায় ঘুরে আসি। বছর তিনেক আগে একবার গিয়েছিলাম সেখানে। বড়ই চমৎকার ছিলো স্থানটা। একস্থানে বড় বড় স্যামন মাছ দেখে ভেবেছিলাম,,আহ যদি ভেজে খেতে পারতাম ! এখনও মনে আছে সে কথা।

চালতে চালতে...মেরী ইয়ে গান ইয়াদ রাখনা....কাভি আলবিদা না কেহনা......গলায় প্লে করলাম,,চলল ভালো। ফিস হ্যাচারী ড্রাইভে যদি কেউ চলতে থাকে, সে শালা যত বড় বেরসিকই হোক না কেন,,, রসে টইটুম্বুর হয়ে উঠবে। কৈষ্ট লোকও রসগোল্লার মত আচরন করবে। এর কারন হল অমায়িক প্রকৃতি। সবুজের সমারোহ,রৌদ্রজ্জ্বল দিন, ডানে বায়ে একের পর এক ফার্ম হাউস। মাইল কে মাইল দীর্ঘ ঘাসের ক্ষেত থেকে ঘাস কেটে নেওয়া হয়েছে বীজ সংগ্রহ করার জন্যে। দুনিয়ার ৬৫% ঘাসের বীজ এই ওরেগনে উৎপন্ন হয়। উইন্ডোজ এক্সপির ডেস্কটপে যে ঘাসপূর্ণ চিত্র থাকত বাই -ডিফল্ট হিসেবে,ওটা ওরেগনেরই,তবে বাস্তবে ওর চেয়ে অন্তত ১০গুন বেশী সুন্দর এ স্টেট।

ফাঁকা মাঠ। কোথাও ঘাস কাটার পর খড়গুলো বিশেষ মেশিনে বিশাল বিশাল আটি বেধে রেখে দেওয়া হয়েছে। ফার্মের মালিকরা এগুলো কিনে নিয়ে যায় তাদের গরুসহ অন্য গবাদী পশুর জন্যে। ডানে বায়ের বিশাল সব মাঠের কোথাও কোথাও বড় বড় গরুর ফার্ম,ঘোড়ার ফার্ম,ভেড়ার ফার্ম,কৃষকের মিলিয়ন ডলারের সুদৃশ্য বাড়ীসমূহ। আবার এদের ভেতর বেশ কিছু লামা আছে। লামা উটের মত দেখতে কিন্তু সাইজ ছোট,গলা লম্বা। দেখতে বেশ মজার। লামার গোস্ত কেমন তা জানা হয়নি। এখানে এর গোস্ত পাওয়া যায়না।

চরম সুন্দর মসৃণ রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই বললেই চলে। কোথাও কোথাও সুন্দর বনভূমির মত। কোথাও আছে পার্ক। আমি এগিয়ে যেতেই দেখলাম রিভার রিরোরিং পার্ক,,,খুব সুন্দর, কিন্তু আমি পার হয়ে গেলাম। খানিক দূরেই ফিশ হ্যাচারী। হ্যাচারীর চেহারা আমূল বদলে গেছে। এখানে আরও বিশাল সব প্রজেক্ট চালু হয়েছে। এরা স্যামন ও অন্য মাছ রেনু থেকে অনেক বড় করে এবং এরপর বিভিন্ন নদীতে ছেড়ে দেয়।

বললাম আপনারা এটা বিক্রী করেন না ? বলল-না, এটা স্টেটের নিজস্ব প্রজেক্ট জনকল্যানে এটা করা হয়। নদীতে মাছের সরবরাহ লাইন বলবৎ রাখতে সহায়তা করা হয়। এখানে মাছ ধরতে লাইসেন্স লাগে। প্রত্যেক সিজনে এটা কিনতে হয়। অনেক নিয়ম আছে। কোন সাইজের মাঝ ধরা যাবে তার উপর অনেক নিয়ম কানুন আছে। আইন ভঙ্গ করলে মোটা অংকের জরিমানা আছে। অনেক রকমের স্থান দেখলাম ,পুরো মাছের রাজ্য। নানান স্তরে নানান রকমের মাছ। ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় করা হচ্ছে। পুরোটাই অত্যাধুনিক। এদের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে কাজ করে। পরিবেশকে সংরক্ষনে তারা নিরলস কাজ করে। নানান স্তরে নানান রকমের মাছ দেখলাম। একস্থানে দেখলাম অন্তত ৫/৬ কেজী সাইজের স্যামন আছে হাজারে হাজারে। দেখেই লোভ লাগল,এই জন্যেই জিজ্ঞেস করেছিলাম বিক্রী করে কি না।

এবার ফেরার পথে রি-রোরিং রিভার পার্কে প্রবেশ করলাম। শুরুতেই বুঝলাম এ এক দারুন পার্ক। কয়েকটা ক্যাম্প গ্রাউন্ড দেখলাম। মোটর হোম পার্ক করা দেখলাম ২/৩টা। আমি পার্কের ভেতর দিয়ে চলতে শুরু করলাম। এটাকে পার্ক না বলে জঙ্গল বলাই শ্রেয়। পার্কের শেষে গিয়ে দেখী অদ্ভূত সুন্দর এক নদী। অসাধারন এ নদী। এত ভালো লাগল !

স্থানটা জঙ্গলময়। অগভীর নদীটা চওড়ায়ও বেশী নয়। কোথাও চিকন,কোথাও মোটা, এভাবে চলেছে। পাথুরে ভূমীর উপর দিয়ে তীব্র বেগে শব্দ করে বয়ে চলেছে নদীটা। চারিদিকের পরিবেশ আর ধাবমান পানির গতি দেখে পুলক অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিলো পানিতে নেমে পড়ি কিন্তু প্রস্তুতি ছিলোনা। আর এরকম নির্জনে একা গোসল করার মজা নেই।

আমি হাটতে থাকলাম আর আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকলাম। বারবার জান্নাতের কথা মাথায় আসছিলো। আমি নদীর ধারে বেশ কিছুক্ষন বসেছিলাম। নদীর উপর মরা গাছ পড়ে অাছে,সেটাও তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধী করেছে। চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম। চারিদিকের গাছগুলো নদীর দিকে ঝুকে পড়েছে। গাছের গায়ে সবুজ শ্যাঁওলা পেচিয়ে ঝুলে আছে। এ দৃশ্য বরাবরই ভালো লাগে। নদীর একটা পয়েন্টেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করলাম আর তাতেই অসহ্য হয়ে উঠলাম। সহ্য করতে না পেরে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আর আপনাদের জন্যে ক্যামেরায় কিছু দৃশ্য ধারন করলাম।......

বি:দ্র: অনেকদিন পর আজ বিকেলে বাড়ির পাশের পার্কে গেলাম। এখানে যেখানে সেখানে সুন্দর সুন্দর পার্ক। পার্কের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে কিছু কিক প্রাকটিস করলাম। বিরাট ওজনদার মনে হল কিকগুলো। এখনও এক কিকে বলিষ্ঠ তাগড়া যুবক উড়ে যাবে মনে হল। এরপর পাশে বাচ্চাদের জন্যে বানানো কিছু ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করলাম। এক পাইপ ধরে ঝুলে আর্মি কমান্ডোদের মত একটানা অনেকদূর গমন করলাম শরীরে পুরো ভার নিয়ে। বয়স আমার কমছে মনে হচ্ছে ......

বিষয়: বিবিধ

৭২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385839
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রাত ১০:০৬
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : লেখা পরে লোভে পরে গেলাম

আজ গরীব বলে এইসব অসাধারণ জিনিস দেখতে পারলাম না নিজের চোখে
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ০৮:০৩
317927
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে দেখার তাওফিকদিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File