নাইজেল খান
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:২৯:৩০ সন্ধ্যা
=========
বয়সে যুবক হলেও কাজের দিক দিয়ে সে ছিলো অনেক সিনিয়র। নাম নাইজেল খান। খুব অমায়িক মানুষ। মধ্যম সাইজের মধ্যম গড়ন। চেহারায় পাকিস্থানী ভাব। আশাবাদী হয়েছিলাম তাকে দেখে। নাম শুনে ভেবেছিলাম মুসলিমও হতে পারে। কিন্তু হাতে বড় এক ক্রুশের উল্কী দেখে দমে গেলাম।
তাকে নিয়ে ভাবনার জগত তোলপাড় হয়েছে বছরের পর বছর কিন্তু কখনই এমন একটা সুযোগ হয়নি যে তার সাথে একান্তে কথা বলব। কখনও ব্রেক রুমে দেখা হয়েছে। স্বভাবসুলভভাবে এটা ওটা খেতে দিয়েছি,তারপরও ভাব হয়নি। মনে হত আহ যদি সে মুসলিম হত, তাহলে তাকে প্রতিনিয়ত নানানভাবে চার্জ দিয়ে উজ্জিবিত করতাম। হতে পারে সে ভবিষ্যতের নোমান আলী খান !
আমার মাথায় শুধু ঘুরত তার বিষয়টা। তার স্ত্রীও ছিলো আমার কলিগ। একদিন লাঞ্চ ব্রেকে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম--আচ্ছা নাইজেলের নামের শেষের খান শব্দটার রহস্য কি, জানো ? সে বলল-এটা তার পিতার নামের অংশ। এদেশে বেশী গভীরে প্রশ্ন করা চরম অভদ্রতা এবং অন্যের অধিকারের পরিপন্থী মনে করা হয়। আমি কৌশলে বললাম- আমার অনেক পরিচিত লোক আছে পাকিস্থানী, এই খান শব্দটা পাকিস্থানী। আমাদের দেশেও খান আছে অনেক। পাকিস্থান শব্দটা শুনে সে তেমন বেশী উৎসাহী হলনা। আমি এটা ওটা বলে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ধর্মীয় অবস্থাটা কি হতে পারে। নিজেই বললাম, আমাদের কালচারও একই রকম। সে বলল, হ্যা ওর বাপের নাম এটা ছিলো। আমি কখনও দেখিনী তাকে।
এই এক বাক্যেই অনুমান করলাম, তার বাপ পাকিস্থানী এবং যৌবনে সুন্দরী আমেরিকানের প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছে,তারপর কোনো কারনে অমিল হওয়াতে বাচ্চা রেখে চলে গেছে। বাচ্চা তার মায়ের ধর্ম গ্রহন করে বেড়ে উঠেছে। অবশ্য নাইজেলকে মোটেও ধার্মিক মনে হয়নি, তবে খুব সৎ, ব্যক্তিত্ববান,উদার, নীতিবান লোক। এভাবেই চলছিলো। আমি নাইজেলকে বিভিন্ন সময়ে বলেছি আমার দেশের কথা। পাকিস্থানের কথা। উভয়ের কালচার একই রকম তা বলেছি।
এরপর খেয়াল করতাম নাইজেল আমার প্রতি বেশী দরদী ছিলো। সে ছিলো আমার সুপারভাইজার। অনেক কাজ দরদের সাথে শেখাত। দেখা হলেই আগ বাড়িয়ে কুশল বিনিময় করত। ভাবছিলাম দাওয়াত করব, তার পরিবারকে চরম খাওয়াব। কিন্তু হলনা।
একদিন শুনলাম নাইজেল আমাদের কোম্পানীর জবটা ছেড়ে দিয়েছে। এত বিশাল কোম্পানীর এত ভালো জবটা ছেড়ে দিল ! কেমন যেন লাগল !
================================
আসলে আমার আজকের লেখাটা এখান থেকেই শুরু কিন্তু কথা বলতে বলতে অনেক দূর চলে এসেছি। আমি একটা চিত্র তুলে আনতে চেয়েছি নাইজেলের ভেতর দিয়ে। তার স্ত্রীর কাছে অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, চাকুরীটা ছাড়ল কেন সে ? উনি বললেন- নাইজেল গত ৬ মাস আগে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী পায়। এই ৬ মাস তার ট্রেনিং চলছিলো, যা সে এই জবের পাশাপাশি করত। কিছুদিন আগে সে কাজে যুক্ত হয়েছে পুলিশ অফিসার হিসেবে। বাঙ্গালী কৌতুহলী মন,,, জানতে চাইলাম আচ্ছা পুলিশের বেতন কেমন ? উনি বললেন সমস্ত রকমের ট্যাক্স ও নানান খাতের অর্থ,সুবিধা বাবদ পয়সা কাটার পরও প্রতি মাসে ৬৭০০ ডলারের বেশী বেতন হিসেবে আসে, এছাড়া নানান সময়ে রিস্ক ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে,বেতন ও বাড়তে অনেক। একটানা বেশ কিছুদিন কাজ করে লম্বা ছুটিও নেওয়া যায়। অনেক সম্মান রয়েছে। আমি অবাক হলাম। এটা অনেক ভালো জব,জয়েন করল মাত্র মাস দুয়েক হবে এবং বেতন অনেক টাকা। এই টাকায় আমেরিকায় খুব দাপটের সাথে চলা যায়।
আমার ভেতরও লোভ ঢুকল। আমি নাইজেলের সাথে যোগাযোগ করলাম। বললাম- আমি তোমার থেকে গাইড চাই, আমিও পুলিশ অফিসার হতে আগ্রহী। সে বলল, ঠিক আছে আমি তোমাকে বলব। আমি মনে মনে তখন অর্ধেক পুলিশ অফিসার। যেসব যোগ্যতা দরকার হয় তার পুরোটাই আমার আছে। আর অস্ত্র চালনা তো আমার পছন্দের কাজ। এক সহকর্মীর কথা মনে পড়ল। তার প্রায় ৫০টার বেশী সেমী অটোমেটিক রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল রয়েছে। ভাবলাম ওর কাছে গিয়ে এই বিষয়ে একটা মহড়া নেই, যদিও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নতুন কর্মীদের অনেক সময় নিয়েই ভালো করে সব ধরনের অস্ত্র সম্পর্কে ধারনা দেয়। কিন্তু আমার মনের খায়েশ ছিলো আরও চড়া। আমার অনেক সহকর্মী সাবেক আর্মী অফিসার,এরা অামাকে সাংঘাতিক পছন্দ করে। এদের ব্যক্তিগত অনেক অস্ত্র আছে, যেটা দিয়ে মাঝে মাঝে শিকারে যায়। এসব গল্পও করে।.....আমি মনে মনে পুলিশ হয়ে উঠলাম,,,যদিও ছোটবেলায় মানুষ কি হতে চাই, জানতে চাইলে অনেকবার বলেছি ডাকু হতে চাই.....দস্যু বনহুর পড়ার প্রভাব ছিলো।
এভাবেই চলছিলো দিন। একদিন হঠাৎ শুনলাম নাইজেল পুলিশের জব ছেড়ে দিয়েছে। তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলাম এটা কি সত্যি ? সে বলল হ্যা। বললাম- কেন ছাড়ল ? সে বলল- বাচ্চারা তাদের পিতাকে মিস করছিলো। তারা বাবার থেকে আরও সময় চাচ্ছিলো। তাই নাইজেল জব ছেড়ে দিয়েছে, এমনকি এই কোম্পানীতেও আসবে না। সে ছোটখাটো আরেকটা জব করছে।
স্রেফ অবাক হলাম। নাইজেলের মাধ্যমে আমেরিকানদেরকে চিনলাম আরেকভাবে। এত ভালো একটা জব, এত টাকার বেতন। সব ফেলে কেবল স্ত্রী, সন্তানদের জন্যে আত্মত্যাগ করল ! এরকম ঘটনা অনেক আছে। আমরা বাইরে থেকে এদেরকে যা ভাবি, ভেতরে ঠিক তেমন নয়। আমেরিকান কালচার শব্দটা শুনলেই ফ্রি মিক্সিং সংক্রান্ত একটা কালচারের চিন্তা ভেসে ওঠে, আসলে বিষয়টা ঠিক তেমনও না। এদের নীতি নৈতিকতার মান দেখলে অবাক হতে হয়। এদের ব্যক্তিত্ব,মর্যাদাবোধ অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। এদের সততা দেখলে মনে হয় যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করত এবং সুন্দর দিক নির্দেশনা পেত,তাহলে এদের চেহারা কি হত ! অবশ্যই অনেক খারাপ দিক রয়েছে। পারিবারিক বন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক খারাপ কালচার রয়েছে, সমাজে অনেক খারাপ বিষয় রয়েছে, কিন্তু এর ভেতর দিয়ে তাদের বহু বৃহৎ গুন স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।এরা কপট নয়। এমনকি চরম অপরাধী,মাতালও ঘুরপ্যাচে কথা বলেনা ,বোঝেনা। কুটিলতা এদের ভেতর একেবারেই কম। পর নিন্দা,গীবত,অণ্যকে বিপদে ফেলা, অন্যের বিপদে উল্লাস করা এদের চরিত্রে নেই বললেই চলে।
বারবার ভাবতে ইচ্ছা হয়, আল্লাহ ন্যায় বিচারক। তিনি এদের অনেক গুনের কারনেই বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও তা কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের হাতেই দিবেন এক সময়.....। আর সেই আয়াতটার কথা মনে হয়,,,,আল্লাহর আদেশ পালন না করলে আল্লাহ রাগান্বিত হয়ে তাদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন আর কাফিরদেরকে দিয়ে তাদের উপর অত্যাচার করান। এটা আল্লাহর প্রদত্ত একটি দুনিয়াবী শাস্তি। উপদেশ গ্রহন না করলে, আখিরাতে খবর আছে। আর দুনিয়াতেও কাফির-মুশরিকদের পায়ের নীচে থাকতে হবে।
তবে আমি আশাবাদী,,,আল্লাহ তাদের হাতেই ক্ষমতা দেন, যারা তাকে বিশুদ্ধচিত্তে ডাকে এবং বেশী ভয় করে। আল্লাহর বান্দারা যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই সকল ক্ষমতা পেতে চায়। আগে সভ্য হতে হবে, আল্লাহর অনুগত্য করতে হবে, এরপর আল্লাহ ক্ষমতা প্রদান করবেন।
বিষয়: বিবিধ
৭৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগলো ভাইয়া ভালবাসা রেখে গেলাম।
আল্লাহ আপনাকে উওম পুরুস্কার দান করুণ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন