ফ্যাক্ট # ১ "গোপনীয়তা বা সিক্রেসী"
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:২১:০৬ দুপুর
================
নার্গিস বিবাহিতা। একটি বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। একদিন তার কলিগ তাকে একগুচ্ছ ফুল উপহার দিল। নার্গিসের স্বামী এবং সে উভয়েই খুব ধার্মিক। এমতাবস্থায় কলিগের সাথে নার্গিসের আচরণ কি হওয়া উচিৎ ? আর যদি সে ফুল গ্রহন করে ,তাহলে তার স্বামীকে সে কিভাবে বিষয়টি অবগত করবে ?
একজন মানুষের জীবনে গোপনীয়তার মূল্য অপরিসীম। এর ভালো মন্দ দুটি দিকই আছে কিন্তু এর পজিটিভ দিকটিই আলোচনা করব। আমরা জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের সাথে নানানভাবে লেনদেন করি,সম্পর্ক তৈরী করি বা বহু মানুষের সংস্পর্শে আসি। কখনও কখনও মানুষ তার নিজের একান্ত কথা, অথবা অন্যের ব্যাপারে কিছু কথা বলে থাকে। সেসব কথার প্রত্যেকটিই আমানত। উক্ত ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া এই কথাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করা উচিৎ নয়। কেউ বিশ্বাস করে গোপনীয় কথা বললে সে কথার গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরী, নইলে আমানত খিয়ানত সংক্রান্ত পাপের ভাগিদার হতে হবে। এভাবে বহু কথা গীবত হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে। ফলে গোপনীয়তা রক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফিস কর্তৃপক্ষেরও যদি এমন কোনো কর্ম সংক্রান্ত গোপনীয়তা থেকে থাকে, তবে তা নিজের স্বামী/স্ত্রীর সাথেও শেয়ার করা উচিৎ নয়। কারন এটি উক্ত কোম্পানীর একান্ত বিষয়। এটি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এবার আমি উপরোক্ত ঘটনায়:
এখানে নার্গিসের স্বামী ধার্মিক এবং অবশ্যই সে কোনো পর পুরুষের থেকে স্ত্রীর ফুল গ্রহন করা সমর্থন করবে না। এটা সাধারন বাঙ্গালী প্রবনতা। ইসলামিকভাবেও এটি আপত্তিকর, অবশ্য স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এটির চিত্র ভিন্ন হতে পারে। অফিসে বস তার কাজের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে ফুল দিলে ,সেটা একটা পুরষ্কার হিসেবে গন্য হবে। এরকম আরও কিছু বিষয় আছে যা হতে পারে। কিন্তু এখানে নার্গিসকে ফুল দিয়েছে তার পুরুষ সহকর্মী। এখন নার্গিস যদি বাড়ি ফিরে তার স্বামীকে বলে মি: গাজী আমাকে আজ এই সুন্দর ফুলগুলো দিয়েছে,লোকটা ভালো...। তাহলে তার ধার্মিক স্বামী মনে মনে ক্ষেপে যাবে, রগচটা হলে উচ্চবাচ্চও করবে এবং এখান থেকে অপ্রিতিকর ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। কিছু না বললেও কিছুটা মানসিক যন্ত্রনার সৃষ্টি হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় যাবনা যে, যদি তারা ধার্মিকই হয়,তাহলে স্ত্রী বাইরে জব করে কেন !
তো এরকম পরিস্থিতিতে নার্গিসের আচরন কি হওয়া উচিৎ ? :
১. ধন্যবাদের সাথে ফুলগুলো গ্রহন করা। কারন সে তার সহকর্মী। তার ফুল ফিরিয়ে দেওয়া মানে অপমান করা। আর ফুল প্রদানে তার বোকামী হতে পারে কিন্তু নার্গিস ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী। ফলে সে তা গ্রহন করবে এবং ফুলগুলো বাড়িতে নিয়ে আসবে না, বরং তা অন্যকে উপহার দিয়ে দিবে।
২. সে যদি মনে করে তার স্বামী এটি পছন্দ করবে না, তাহলে বৃহত্তর কল্যানের জন্যে ফুলগুলো গ্রহন করে, সকলে অগোচরে ডাস্টেবিনে ফেলে দিবে। এটিও নিরাপদ, যদিও কারো উপহার ফেলে দেওয়া বাজে কাজ।
৩. সে ফুলগুলো গ্রহন করে উক্ত কলিগকে বলতে পারে--আমি এটি ধন্যবাদের সাথে গ্রহন করলাম এবং আপনাকেই উপহার দিলাম। অথবা ফুলের তোড়া খুলে একটা একটা করে ফুল অন্য কলিগদেরকেও প্রদান করতে পারে খুশী মনে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৪. ফুলগুলো নিয়ে বাড়িতে এসে স্বামীকে বলবে- তোমার জন্যে কিনে এনেছি। স্বামী খুশী হবে। যদিও এটি মিথ্যা, কিন্তু কখনও কখনও মিথ্যা জায়েজ হতে পারে। অন্তত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রক্ষায় এরকম নির্দোষ মিথ্যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন। তবে তাকে মনে মনে মাফ চাইতে হবে। শয়তান সবচেয়ে বেশী খুশী হয় স্বামী-স্ত্রীর ভেতর বিভেদ ঘটাতে পারলে। ফলে একটি মিথ্যা বলে সেই সম্পর্ক জোড়া দেওয়া জায়েজ হবে বলেই কিছু ফতোয়া আছে।
৫. নার্গিস বাড়িতে ফিরে বলবে যে, তার মেয়ে বন্ধু এটা দিয়েছে,অথবা অফিস থেকে সকলকে ফুল দিয়েছে। এটাও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে একটি মিথ্যা।
৬. সে বলবে, আমাদের একজন ছেলে কলিগ তার প্রমোশনের কারনে, সন্তান লাভ করার কারনে বা অন্য কোনো খুশীর কারনে সকলকে ফুল দিয়েছে।
৭. নার্গিস বলবে, আমার একজন ছেলে কলিগ এই ফুলগুলো দিয়েছে,,,। আমি কখনই এটা গ্রহন করিনি ,আমি অভ্যস্তও নই। কিন্তু একজন মানুষ হঠাৎ ফুলগুলো দিয়ে দিল,,,আমি ঠিক বুঝতে পারিনি কি করা উচিৎ ,,তবে তাকে ফুলগুলো ফিরিয়ে দিলে অপমান করা হয়, তাই ফুলগুলো গ্রহন করেছি আর এখন এটা তোমাকে দিলাম। তুমি খুশী ? অথবা আমার আর কি করার ছিলো ?
উক্ত ঘটনা একেক দম্পতির ক্ষেত্রে একেক রমকের প্রভাব পড়তে পারে। আমি আমার মত বিশ্লেষণ করেছি। আমার ভুল হতে পারে। তবে আমার মনে হয়েছে যদি স্বামী-স্ত্রীর ভেতর ভালো বোঝাবুঝি থাকে, তাহলে ৭ নং পয়েন্টের মত সত্য বলাই উত্তম। অন্যগুলোও জায়েজ হবে পরিস্থিতি বিবেচনায়। তবে যদি স্বামী বা স্ত্রী ক্ষ্যাপাটে ধরনের হয়, তবে কৌশলে চলাই উত্তম। মনে রাখতে হবে সত্য প্রকাশ করতে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন হয় আর এর ভেতর আমানত সংক্রান্ত বিষয়ও থাকতে পারে, যা সরাসরি অন্যের অধিকার।
জীবনে চলার পথে আমরা নানান মানুষের নানান কথা শুনে থাকি, এর কোনটা অন্যের সাথে কিভাবে শেয়ার করা যায়, তা বুঝতে অবশ্যই জ্ঞান ও বিবেক খাটাতে হবে। বিষয়ের গুরুত্ব সঠিক মাত্রায় উপলব্ধী করতে হবে। এরপর সে অনুসারে আচরণ করতে হবে। ইসলামের সঠিক জ্ঞানই পারে আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগীতা করতে। ফলে জ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নেই। আর যদি জ্ঞান না থাকে,,তবে অন্তত ধৈর্য্যশীলতার সাথে মুখটা বন্ধ রাখতে হবে। এটাই সিক্রেসী। এই একটি ইবাদত যদি ঠিকভাবে সমাজে চালু থাকে বা এই বৈশিষ্ট্য যদি সমাজের লোকেরা অত্মস্থ করতে পারে, তবে সমাজের বহু সমস্যা তৈরীই হবেনা।
আল্লাহ আমাদেরকে ধৈর্য্যশীলতার মাধ্যমে অামানত রক্ষা করার তাফিক দান করুন ! আমরা যেন পরষ্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ভালোবাসতে ও ঘৃণা করতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
৮০৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহিলাদের অতীব প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে যাওয়া ঠিক নয় এবং চাকরি এমন জায়গায় করা উচিত না যেখানে সবসময়েই পুরুষদের সংষ্পর্শে আসা লাগে । এখানে তো একজন পুরুষসহকর্মী ফুলই উপহার দিয়ে বসেছে।
একজন খুব ধার্মিক মহিলা এধরনের জবে ঢোকার আগে নিশ্চয়ই এধরনের কাজে পুরুষদের সংষ্পর্শে আসা লাগবে সেটা মাথায় এনেছে , তার স্বামীর সাথে কথা বলেছে, স্বামীর অনুমতি আদায় করে নিয়েছে।
এখন কথা হল - তার কর্তব্য ছিল তার স্বামীর সংসারের হেফাজত করা (আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে) স্বামীর অবর্তমানে। চাকুরী করার ফলে সেই দায়িত্ব সে পালন করছে না। এখানেই সে শরিয়তকে অবজ্ঞা করেছে এবং স্বামীকে দিয়েও করিয়েছে - কারণ যেখানে সে কাজ করে সেখানে কাজের জন্য মহিলাদের লাগবেই - এরকম কোন সিচুয়েশন ছিল না ।
আমারও মত হল ৭ নং অপশনটা - তবে তার সাথে এড করতে চাই যেটা সেটা হল- সে যদি সত্যিই ধার্মিক হয়ে থাকে তাহলে সে পরের দিন হতে আর অফিসে যাবে না , চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেবে। কারণ সংসারের আয়ের দায়িত্বটা তো তার স্বামীই করছে। চাকরী করে সে স্ত্রী হিসেবে তার স্বামীর সংসারে ফাঁকি মেরেছে এই কয়দিন আর এসবের ফল যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে নড়বড়ে করে দেয় সেই পরিস্থিতিরই সৃষ্টি করিয়েছে। নিজে ও তার স্বামীকে শরিয়তের বিপরীতে নিয়ে যাবার জন্য তার উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং স্বামীর সংসারের হেফাজতের দিকে পরিপূর্ণভাবে মনোযোগ দেওয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন