হেদায়াত এক বিষ্ময়কর ব্যাপার !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০১:১০:৪৭ দুপুর
=========================
৫ বছর কুংফু,কারাতে,উশু করে উঁচু ডিগ্রী নিয়ে আমি তায়কোন্দো ফেডারেশনে যুক্ত হই। মার্শাল আর্টের সাথে আছি ২৩/২৪ বছর,,,মানে জীবনের বেশীরভাগ সময়ই এই লাইনে। এখানে অনেক ইতিহাস আছে, আমি কেবল এক প্রিয় বন্ধুর কথা বলব। ফেডারেশনের প্রথম সময় থেকেই এক ছেলেকে খুব পছন্দ হত, তার নাম ছিলো হাসান। দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। মুখভর্তি চাপ দাড়িতে অসাধারণ লাগত।
সে ছিলো বেশ নাদুস-নুদুস। গায়ের রঙ ছিলো ফর্সা। এতটা পরহেজগার ছেলে তেমন চোখে পড়েনি আর। কিছুদিনের ভেতরই আমাদের ভাব হয়ে যায়। মানসিকতায় খুব মিল ছিলো দুজনের। ওর ইসলামিক কনসেপ্ট ছিলো খুবই দারুন। ওর পিতা-মাতাও ছিলো খুবই ধার্মিক।
সম্ভবত ২০০১ সাল হবে, হাসান সেসময় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলো । সে সময় এই সাবজেক্টটা বাংলাদেশে যথেষ্ট নতুন এবং চরম ডিমান্ডেবল। ও ছিলো অত্যন্ত ভালো প্রগ্রামার। আমি হাসানের থেকে প্রগ্রামের জ্ঞান নিতাম কিছুটা, কিন্তু জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে বুঝতাম না তেমন। ওর বাড়িতে যেতাম,খেতাম, অনেক গল্প করতাম। ইসলাম নিয়েও অনেক কথা হত। তার কাজই ছিলো সৃষ্টিশীল। খুবই তুখোড় মেধাবী ছিলো হাসান। ইসলাম সম্পর্কে এমন প্রেক্ষাপটে কথা বলত যে, আমি মুগ্ধ হয়ে ভাবতাম,,,,আরে এভাবে তো ভাবিনি !
এভাবে চলতে থাকে। ২০০১ আমরা একই সাথে ব্লাকবেল্ট পাই। অনেক মজার আবার কষ্টের ছিলো সে সময়গুলো। চলছিলো এভাবে। একদিন শুনলাম "সামহোয়ার ইন ব্লগ" (সামু)নামে একটা ব্লগ পেইজ হাসান ডেভোলপ করেছে,সাথে আরও দুজন। বাংলাদেশে এটাই নাকি প্রথম ব্লগ। ব্লগ জিনিসটা কি সেটাই জানতাম না,যদিও ইন্টারনেট,প্রগ্রামিং,কম্পিউটারের আরও বহু কিছু বুঝতাম। সেই বুঝালো বিষয়টা কেমন। বেশ মজা পেলাম। সে আমাকে একটা আইডি খুলে দিল,কিন্তু আমি তা ব্যবহার করিনি কখনও(অনেক পরে ব্লগিং করেছি)। আগ্রহ ছিলোনা।
এই ব্লগ কোম্পানী সম্ভবত ইউরোপের কোনো একটা বড় কোম্পানীর লেজ ছিলো। হাসান তার দক্ষতার কারনে ওদের মাদার কোম্পানীতে জব করতে থাকে। এক সময় হাসান নরওয়ে অথবা সুইডেন চলে যায় উচ্চতর পড়াশুনা ও জবের কারনে।
২০০৬ সালে হাসান এক বিকেলে আমার অফিসে হাজির। খুব খুশী হলাম। দুজনে অনেক গল্প করলাম। এরপর এক সময় ইসলামের কথা উঠল। আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসান বলল-" আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টা আমার কাছে ধোয়াশা,,,,আসলে স্রষ্টার অত্বিত্ব নেই। " আমি আসমান থেকে পড়লাম ! এ কি সেই হাসান যে আমাকে ইসলামের কথা বলত ! হাসানের মুখের সুন্দর দাড়ির পরিবর্তে এখন ক্লিন শেভড। তার পোষাক আষাকে কেতাদূরস্ত ভাব। শুনলাম ইউরোপে বিশাল বড় কোম্পানীর অন্যতম টপ প্রগ্রামার হিসেবে কাজ করছে,অনেক টাকা বেতন। অনেক সম্মান তার। কিন্তু হাসান আল্লাহ সম্পর্কে উদ্ভট কথা বলতে শুরু করল।
আমি তার কথা মুখ বুজে শুনে একে একে তার যুক্তি খন্ডন করতে থাকলাম এবং হাসান এক সময় চুপ হল। এরপর তাকে কুরআন ও সুন্নাহর কথা বললাম। স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমান নিয়ে কথা বললাম। কিন্তু স্পষ্ট বুঝলাম তার পছন্দ হচ্ছেনা। যুক্তি খাটাতে পারল না কিন্তু হার স্বীকারও করল না। বরং ভিষণ বিরক্ত হল। তাকে বললাম, তুমি তোমার সকল চিন্তা শেয়ার করো, এর সঠিক উত্তর রয়েছে এবং তোমার তা জানা উচিৎ।
কিন্তু হাসান পাত্তা দিলনা। সে তার বিত্ত বৈভব নিয়ে কথা বলতে লাগল। ইউরোপের চাকচিক্য নিয়ে কথা বলল এবং ইসলামকে এড়িয়ে গেল। আমি তার সাথে অন্য এক সময় বসতে চাইলাম। কিন্তু হাসান এর কিছুদিন পর ইউরোপে চলে যায়। তার সাথে আর কখনই আমার দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। আমার ফোনে সে কখনও ফোন করেনি। তার পরিবার বাসা বদল করে চলে যায় অারেক স্থানে। এরপর আর তার বাসায় ফোন করে তার খবর নেওয়া হয়নি।
আজ হঠাৎ হাসানের কথা মনে হল। আহ কি ভীষন সুন্দর এক ছেলে। কি মায়াময় চেহারা ! কি জ্ঞান আর বিচক্ষনতা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জ্ঞানের স্রষ্টাকেই অস্বীকার করল ! হায় ! এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে ! কিভাবে হেদায়াতের পথ থেকে এক অসাধারন ছেলে পথভ্রষ্ট হল !! এর চেয়ে সে বরং খুনী হত এবং আল্লাহর উপর ইমান রাখত,,,তাহলেও আখিরাতে ক্ষমার রাস্তা হতে পারত ,,, কিন্তু সে তো মালিককেই অস্বীকার করল ! কি ভয়াবহ পরিনতি হবে তাদের,,,যারা তার মালিককে প্রত্যাখ্যান করেছে ! সেদিন তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। তাদের জন্যে কোনো সুপারিশকারী থাকবে না। তারা অনন্তকাল জাহান্নামে জ্বলতে থাকবে,,,,, তাদের মৃত্যুও হবেনা। আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহনের তাফিক দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন ! আল্লাহ হাসানকে হেদায়াত দান করুন !!
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্কাবর,ওয়া মিন আযাবিল জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ও মামাতি,,,ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহ আদ দাজ্জাল !
বিষয়: বিবিধ
৮৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন