ইয়াসিন !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:০৯:০১ সকাল



অল্প কিছু ভুট্টা,আটা,চিনি,কেরোসিন তেল নিয়ে ইয়াসিনের ইহজাগতিক ব্যবসা। জগতের খবরা খবর কিছুটা জানলেও সে পাত্তা দেয়না। দুনিয়ার কোনোকিছুতেই যেন তার কিছু এসে যায় না। কাজ পাগল লোকটা পুরো জীবনটাই অন্যের জন্যে বিলিয়ে দিল,, কিন্তু কোনো কারনে তার কোনো আক্ষেপও নেই। তার কথা ভেবে অন্যে আফসোস করলেও তার কোনো আগ্রহ নেই। নির্লিপ্ত এই লোকটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেবল এই যে সে একজন শতবর্ষী মানুষ ! এটাই তার যেন একমাত্র যোগ্যতা !

ইয়াসিনের চেহারা পূর্বে এমন ছিলোনা। বিলাশবহুল বাড়ি,গাড়ি,সন্তানাদী,স্ত্রী,নাতি নাতনী সবই ছিলো....কিন্তু ঈদে যখন তারা পরিবারের সকলে মিলে আনন্দ করছিলো,তখনই বহুজাতিক বাহিনীর বিশাল বোমা তাদের বাড়িতে এসে পড়ে। বিশাল এক পরিবারের প্রায় কেউ'ই আর বেচে রইলো না। বৃদ্ধা স্ত্রী দু'পা হারিয়ে কোনো মতে বেচে রইলো। নিজেও আহত হয়েছিলো। কিন্তু তারপরও চলে যাচ্ছিলো তার দিনকাল। স্বজন হারানোর দু:খ নিয়ে বেচে ছিলো। কিন্তু সিরিয়ার যুদ্ধের ব্যপকতা তাকে নিজ জন্মস্থান থেকে বিতাড়িত করল। ব্যবসা বানিজ্য যা ছিলো সবই শেষ হল, এমনকি জমানো টাকাও।

সবকিছু হারালেও সে তার উন্নত নৈতিক চরিত্র হারায়নি,তার শিক্ষা থেকে এক চুল সরে দাড়ায়নি। যৌবনের শক্তিমত্তা নিয়ে সে আল্লাহর পথে নিজেকে উৎস্বর্গ করেছিলো, আদর্শ মানুষের সেবায়,আদর্শের প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছিলো। ইলম অর্জন করে তা মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছে ইয়াসিন। হক কথা বলতে কখনই শাসকের কঠোরতাকে পাত্তা দেয়নি। জীবনের বড় একটা সময় সে শাসকের জেলেই কাটিয়েছে, কিন্তু নীতির প্রশ্নে আপোষ করেনি।

বৃদ্ধ বয়সেও যুদ্ধক্ষেত্রে মহাবীরদেরকে সহায়তা করেছে। শতবর্ষ পেরিয়েও সে কাফির ও কুফরের বিরুদ্ধে সমান স্বোচ্চার। আল্লাহ ছাড়া কোনো কিছুকে সে পরোয়া করেনা। বরাবর যালিমের শয়তানী পরিকল্পনা মানুষের কাছে প্রকাশ করে জনমত গঠন করে। বহুবার তার জীবন ও জীবিকার উপর আঘাত এসেছে, কিন্তু পরোয়া করা লোক সে নয়।

বয়সের ভারে ইয়াসিন ন্যূজ,কিন্তু এখনও হকের বক্তব্যে,প্রতিবাদে কঠিন,মানুষের সাথে আচরনে কোমল। তকদীরের উপর প্রবল বিশ্বাসী ইয়াসিন অল্প কিছু পণ্যকে সম্বল করে জীবিকা নির্বাহ করে। জীবন তার থেকে আভিজ্ত্য কেড়ে নিয়েছে, তাকে প্রদান করেছে মলিনতা, কিন্তু লোকটি ভেতর থেকে উৎফুল্ল সর্বদা, যেন দুনিয়াতে দেহ আর জান্নাতে তার মন ! নিজের অবস্থায় সর্বদা আলহামদুলিল্লাহ বলে সে। কখনও খরিদ্দার আসলে হাসিমুখে সালাম প্রদান করে তাদের সময় থাকলে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনায়। দু একটা উপদেশ দেয়। এরপর পন্যের সঠিক তথ্য প্রদান করে নাজ্য মূল্যে বিক্রী করে। তার নৈতিকতার মান এতটাই উপরে যে, একজনের কাছে বেশী পণ্য বিক্রী করেনা। কারন যুদ্ধের কারনে বেশী মালামাল সে কিনতে পারেনা, অবশ্য তার বেশী কেনার সামর্থও নেই, তবে পণ্যের সরবরাহও অনেক কম। ফলে অনেকে ভাবতে পারে তার টাকা দিয়ে পণ্য কিনে বাসায় মজুদ করবে,সেটা যৌক্তিকও। কিন্তু ইয়াসিনের কথা হল- অল্প লোক যদি এসময় সব পণ্য কিনে নেয়, তবে অন্য লোকের কি হবে ? তারা তো পণ্য কিনতে পারবে না। তাই সে একসাথে বেশী পণ্য বিক্রী করেনা একজনের কাছে। আর পণ্য যত দুষ্প্রাপ্যই হোক না কেন, সে পন্যের দাম বাড়ায় না, বরং কিছু কমই রাখে। বিপদের দিনের সেবাই আসল সেবা। অবশ্য মানুষেরাও অন্যের ব্যাপারে দরদী।

তালিযুক্ত ময়লা পোষাক,ছেড়া পাজামা। গৃহে অসুস্থ্য স্ত্রী, পরবর্তী ওয়াক্তের খাবারের অনিশ্চয়তা,,,এরপরও মুখে হাসি নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারা লোকেরাই সৌভাগ্যবান হয়। সিরিয়া যুদ্ধে সব হারিয়ে সে এখন ঘুতায়। তার ইচ্ছা এখানেই হক পন্থীরা সমবেত হবে এবং এখান থেকেই বীজয়ের সূচনা হবে। তাই সে মৃত্যু ছাড়া এইস্থান ত্যাগ করবে না। বৃদ্ধের এ এক কঠিন পণ ! ইসলামের বীজয় দেখতে পারুক আর না পারুক লোকটা আল্লাহর সাথে যে বন্ধন তৈরী করেছে, তাতে আশা করা যায়, তার মালিক তাকে উচ্চ মর্যাদাই প্রদান করবেন। তিনি এমন এক মালিক, যার গোলামী করলে ইহকাল ও পরকাল দুটোই মিলে। আর যদি মাকিক কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ইহকালে কম দেন, তাহলে এর অর্থ আখিরাতে অপেক্ষমান রয়েছে এক মহা প্রতিদান ! তার পরিমান পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

বি:দ্র: ছবিটা দেখে গল্পটা লিখলাম এইমাত্র Happy নামটাও আমার দেওয়া। টাইম থাকলে আরও লম্বা করতে পারতাম।

বিষয়: বিবিধ

৬৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File