সি ওয়াল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ আগস্ট, ২০১৮, ১১:১৬:৫৪ সকাল
এবারকার কানাডা ভ্রমনে যে টার্গেটগুলো ছিলো,তা দ্রুত ফুলফিল হল, ফলে এখন প্রশান্তি। আবহাওয়া ছিলো যথেষ্ঠ গরম, তবে তাপমাত্রা দেখাচ্ছিলো সর্বোচ্চ ৮০। অধিক গরম অনুভূত হওয়ার কারন হল বাতাসে অধিক জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। রাতে কষে ঘুম দিলাম, সকালে ফজরের পর আবারও ঘুম, ওরে মজার ঘুম ! আসলে যখন কাজ থাকেনা, অখন্ড অবসর, ঘুমের পরিবেশ,,,,আসলে অনুভব করা যায় এটা একটা বিশাল নিয়ামত। এই নিয়ামত বেশীরভাগ মানুষই পায়না। বহু ধনীর কথা শুনেছি ও দেখেছি, অনেক উচ্চপদস্থ লোক দেখেছি কিন্তু তাদের জীবনের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই ভাগ্যবান মনে হয়েছে। আমার ভেতর আল্লাহ প্রশান্তি দিয়েছেন। আমি ছোট ছোট বিষয়কেও আনন্দপূর্ণভাবে উপভোগ করি এবং এতে মনে অনাবিল প্রশান্তি কাজ করে। যা কিছু করি প্রশান্তি নিয়ে করি।
নাস্তায় গরুর গোস্ত,ভাত,ডাল খেলাম। সাথে পানির বোতল নিলাম অনেক। স্ট্যানলী পার্কের অন্যদিকগুলো দেখব,সি-ওয়াল দেখব,হাটব এটাই পরিকল্পনা। ডাউনটাউনের মহা ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে পার্কে আসলাম। খুব ধীর গতিতে ড্রাইভ করতে থাকলাম। পার্কের চারিপাশে বিশাল শক্তিশালী কংক্রিটের বেষ্টনী তৈরী করা হয়েছে। ধীর ধীরে চলতে চলতে লায়ন্স গেট ব্রীজের কাছে আসলাম। এর নীচের অংশটা বেশ দর্শনীয় করে বানানো হয়েছে। মানুষ সেখানে হাটাচলা করে,গল্পগুজব করে,আন্ডা বাচ্চা নিয়েও সময় কাটায়। ব্রিজটা তৈরী হয় ১৯৩৭ সালে , এটি একটি সাসপেনশন ব্রিজ, এর উচ্চতা ৩৬৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৫৯৮১ ফুট। এতগুলো বছরেও ব্রিজটা নতুনের মত রয়েছে। এদের দেশে মনে হয় শক্তিশালী বাঁশ পাওয়া যায়না, নইলে ব্রিজটাকে আরও শক্তিশালী করতে শক্ত পোক্ত বাঁশ দিত। অবশ্য বাঁশ দেওয়াকে এরা প্রফেশন হিসেবে গ্রহন করতে পারেনি। যাইহোক অগ্রসর হতে থাকলাম।
পার্কের ভেতরে কয়েকটা মরা পুরোনো গাছ দেখলাম। এগুলো অতি বিশাল। গাছগুলো মরে গেছে বহু আগে। দেখে মনে হয় হাজার বছরের মরা বৃক্ষ। গায়ে ছালও নেই, উপরে শাখা প্রশাখা নেই, কেবল কান্ড দাড়িয়ে আছে প্রকান্ড আকার নিয়ে। এসব দৃশ্য আসলেই ভালো লাগে। প্রাচীন যেকোনোকিছুই আমার ভালো লাগে। আর বিশাল বিশাল বৃক্ষ তো অসম্ভব সুন্দর।
পার্কের এক প্রান্তে আসলাম,যেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন ইয়ট স্টেশন রয়েছে। এখানে বহুসংখ্যক বিশাল বিশাল শেড রয়েছে,যেখানে নৌযানসমূহ মেরামত করা হয়,সেগুলো তেল নিতে পারে এবং স্থায়ীভাবে থাকতে পারে। এটি পরিচালিত হয় ব্যক্তিগত এসব বিলাশী নৌযানের মালিকদের ক্লাবের দ্বারা। এরা গৃষ্মে এখানে আরাম করতে আসে।
হেটে হেটে দেখলাম এলাকাটা। পাশেই দেখলাম বিশাল একটা ক্রুজ শিপ দাড়িয়ে আছে। এগুলো এখানে নোঙ্গড় করে যাত্রী নেয়। হাজার হাজার ডলারের বিনিময়ে টিকেট কেটে ১ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাস খানেকের নানান রকমের বিনোদন প্যাকেজ পাওয়া যায়। আমার এক কলিগ কিছুদিন আগে ক্যারিবিয়ান ক্রুজ শিপে ভ্রমন করে আসলো, ১ সপ্তাহে তাকে ৪হাজার ডলার গুনতে হয়েছে। এক সপ্তাহে অবশ্য কিছুই দেখা যায় না, তবে জাহাজেই নানান বিনোদন থাকে। কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হলে মোটামুটি ঘোরা যায়। যাদের মোশন সিকনেস আছে, বা ভ্রমনে বমি হয়, তাদের জন্যে জাহাজ কর্তৃপক্ষ কানের নীচে বিশেষ প্যাচ লাগিয়ে দেয়,এর ফলে বমি হয়না। এই প্যাচ ৩/৪ ঘন্টা পর পর অন্য কানে বদল করতে হয়।
হাটতে থাকলাম। বেশ ভালো লাগল। দেখী বিশাল বিশাল ঘোড়ায় টানা গাড়ি চলছে। মাত্র ২টা ঘোড়া বাসের সমান ভারী একটা গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। পর্যটকরা পেছনে বসে আছে। এটা বেশ মজার ভ্রমন। আরেক স্থানে গেলাম, সেখানে আছে টোটেম পোল। এর মানে হল বড় বড় উচু গাছকে কেটে নানান দেব-দেবী অথবা মানুষের মূর্তিতে রুপান্তরিত করা। বহু প্রাচীন কালে এগুলো শুরু হয়। নিজেদের ভেতর কোনো মহান নেতা,ধর্মগুরু,প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ অথবা কাল্পনীক কোনো মানুষ বা দেব দেবীর প্রতিমূর্তি তৈরী প্রচলন বহুকাল আগে থেকেই ছিলো। টোটেম-পোলও তেমনি একটি মূর্তী স্তম্ভ। তবে এই জিনিস আমার কাছে দেখতে খুব বিশ্রী লাগে। একেবারে বদ-সুরতভাবে এরা তৈরী করেছে মনে হয়। এগুলো নিজেরা তৈরী করে আবার এগুলোকে ক্ষমতাশালী ভাবত তারা। সম্ভবত স্রষ্টাকে বা স্রষ্টাসমূহকে কাছে থেকে ইবাদত করার একটি কৌশল হয়ে থাকতে পারে এটি। ওহীর জ্ঞান ছাড়া উর্বর মস্তিষ্ক নির্ভর চিন্তা চেতনায় ইবাদতের চালচিত্র সাধারনত: এমনই হয়ে থাকে।
সামনে এগিয়ে চললাম। এবার পেলাম একটি লাইট হাউস,বা বাতিঘর। এটা তেমন বড় নয়, তবে বাতিঘরগুলো দেখতে দারুন। এখান থেকে একটা রাস্তা নীচ দিয়ে চলে গেছে,সেটায় বাইক চলে এবং হাটার রাস্তাও আছে। খুব চমৎকার স্থান এটা। অনেক পর্যটক এসেছে। পার্কে সবুজ রঙের গাড়ি নিয়ে কিছু পরিদর্শক ঘুরে বেড়ায়। কেউ পয়সা দিয়ে পার্ক না করলে তার কাছে টিকেট প্রদান করে, কখনও জরিমানাও করে। তবে সাধারনত ভদ্রতার সাথে ঘন্টা অনুযায়ী পয়সা প্রদান করতে বলে। পয়সা দিয়ে পার্কের যেকোনো স্থানে নির্ধারিত পাকিংয়ে গাড়ি পার্ক করা যায়। আমি এক ঘন্টার জন্যে পয়সা দিয়ে ঘন্টা তিমেন ছিলাম। আসলে এত সময় থাকব সেটা নিয়তে ছিলো না। নানান স্থানে থামতে থামতে এত সময় গেল।
সি-বীচে চলে আসলাম। এখানে খানিক হাটলাম। খুব দারুন স্থান। সুন্দর হাওয়া বইতে থাকল। দিনটা একেবারে ঝলমলে। সুন্দর রাস্তায় হাটলাম। এরপর চলে গেলাম ইংলিশ বে-বীচে। পার্ক থেকে বের হলেই কিছুদূর পর হাতের ডানে পড়ে। শহরের রাস্তা ধরে অল্পদূর এগিয়ে গেলেই এটি পাওয়া যায়। এই বীচটি অসম্ভব সুন্দর। প্রশান্ত মহাসাগর এখানে সরু হয়ে ঢুকে মোটামুটি প্রশান্ত হয়েই আছে। এর মাথায় তৈরী বীচে মানুষ মরার মত পড়ে আছে দেখলাম। এসব মরা না দেখে,পাশের রাস্তায় হাটতে থাকলাম। এখানে একটি বিশাল সুইমিংপুল তৈরী করা হয়েছে,যা আসলেই বিশাল। বিভিন্ন রকমের মানুষের জন্যে পুলের ভেতর বিভিন্ন অপশন তৈরী করা হয়েছে। বাচ্চাদের জন্যে রয়েছে কিছু স্লাইড, তারা পিছলে পানিতে গিয়ে পড়ছে। বুড়োরাও তা করছে। এই জিনিস বেশ মজার। ওপাশে নানান স্পিডে সাতার কাটার আলাদা ব্যবস্থা। তবে পুলটার নকশা আর পানির কালার ও পরিবেশ দারুন। একদিকে সমুদ্র,আরেকদিকে পার্ক, মাঝে বিশাল পুল। প্রবেশে তেমন খরচ হয়না, কিন্তু প্রবেশ করলাম না। এখান থেকে চলে আসলাম আরেক এলাকায়।
এখানে সাগরের পাশে সুন্দর একটি সবুজ ঘাসপূর্ণ তিন কোনো আকৃতির স্থানে দেখী প্রাচীন এক জাতির লোকেরা নাচানাচি করছে। একজন লোক উচু লম্বা এক ঢোলে নানান তালের সৃষ্টি করছে, এক বুড়িও গাছ গাছড়ার তৈরী বাদ্য যন্ত্র বাজাচ্ছে যা থেকে খটখট আওয়াজ বের হচ্ছে, আর সেই বাদ্যের তালে নানানভাবে একদল লোক নেচে চলেছে। এদের নাচ দেখে মনে হল পুরো ব্যায়ামের কৌশল। প্রত্যেকের গায়ে শক্তি আছে অনেক মনে হল। কারন লাফালাফি করে এভাবে নাচতে অনেক শক্তি ক্ষয় হয়, অনেকক্ষন নেচেও তেমন ক্লান্ত হলনা দেখলাম। অবশ্য খেয়াল করছিলাম কয়েকজনের দম ফুরিয়ে যাচ্ছিলো,তারা ধীরে ধীরে মুভ করছিলো।
একপাশে পাথরের উপর পাথর দিয়ে একটা আকৃতি দানের চেষ্টা করেছে। মনে হল কোনো দেবতা হবে। নাচার শেষে সেজদা করছিলো তাকে। আজ সম্ভবত এদের কোনো বিশেষ দিন হয়ে থাকবে, কারন নিয়মিত এই কাজ এরা করেনা। লাল আর সাদা রঙের মোটামুটি মার্জিত পোষাক পরে নাচছিলো এরা। নাচ শেষ না হতেই চলে আসলাম, কারন মেইন নামক রোডে একটা আরবী রেস্টুরেন্ট আছে। নিয়ত করেছিলাম লাঞ্চ ওখানেই করব।
খানিক পর চলে গেলাম সেখানে। শিক কাবাব,নান,ভেড়ার গোস্ত,ভাত সবই টানলাম চরম। তবে ভেড়ার গোস্তের কারী মোটেও সুবিধার না। টক এক সস দিয়ে রান্না করেছে,মুখে তোলা যাচ্ছেনা। এক গাদা টাকা দাম,তাই ফেলে না রেখে খেয়ে আসলাম।.......সকাল থেকে কেজী খানেক চেরী খেয়েছি.....খাওয়া দাও জমছে ভালো। এ এক বিরাট নিয়ামত !
বিষয়: বিবিধ
৬৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন