স্ট্যানলী পার্ক
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০১ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:১১:৩৫ সকাল
========
এক অদ্ভূত সুন্দর জায়গা এটা। ভ্যাঙ্কুভারে প্রশান্ত মহাসাগর বেশকিছু ফাটল ধরিয়ে ঢুকে পড়েছে অনেক ভেতরে। পাহাড় পর্বত ভেদ করে সাগর চলে এসেছে ভেতরে। ভেতরে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সাগরের রূপ এখানে স্বভাবিকতা হারিয়েছে নানান বাধার কারনে। অনেকটা শান্ত সে। ভেতরের নানান অংশে নানান সৌন্দর্য্য তৈরী করেছে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি। কোথাও কোথাও দেখলে মনে হয় যেন নদী বা লেক। সেখানে সৌখিন মানুষেরা তাদের নানান রকমের নৌযান নিয়ে হামলে পড়েছে। অনেক সুন্দর সুন্দর বীচ তৈরী হয়েছে, আর সেখানে পর্যটকদের ভীড় সর্বদা।
ভ্যাঙ্কুভার শহরটা খাবলা খাবলা ধরনের, সেটা এই মহা সাগরের স্থলভাগে বিক্ষিপ্ত প্রবেশের কারনে। ভ্যাঙ্কুভার শহর বেশ বড়। শহরের এক অংশের সাথে অন্য অংশের সংযোগ ঘটিয়েছে অনেক সংখ্যক ব্রিজ। কাপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ পার্ক থেকে বেশ কিছুদূর মেরিন ড্রাইভ ধরে এগিয়ে লায়ন নামক ঝুলন্ত ব্রিজ পার হলাম। এ অংশে এটাই সবচেয়ে বড় ব্রিজ। ওপাশেই স্ট্যানলী পার্ক। এই পার্কের ৩ দিকে সমুদ্র। পার্কটা বিশাল। এর চারিদিকে বিশাল এক প্রাচীর তৈরী করা হয়েছে। এটার নাম সি-ওয়াল। অসাধারন সুন্দর এটা। প্রথমে বড় বড় পাথর খন্ড, এরপর উচু শক্তিশালী পুরু দেওয়াল। এরপর রয়েছে বাইক পাথ, যেখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক সাইকেল চালায়। এর পাশেই হাটার রাস্তা। আর এর উপরে রয়েছে গাড়ি চলাচলের রাস্তা।
এই পার্কের নানান স্পট রয়েছে। একেক স্থানের সৌন্দর্য্য একেক রকম। পার্কের বিভিন্ন স্থানে বিপূল সংখ্যক সাইকেল রাখা আছে। অল্প পয়সার বিনিময়ে তা ভাড়া পাওয়া যায়। তবে মানুষ তাদের গাড়ির পেছনের ক্যারিয়ারেই বেশী সাইকেল বহন করে এখানে চালানোর জন্যে। পার্কটা বেশ উচু, তবে সবদিক সমানভাবে উচু নয়। উপরে নানান স্থান আছে চারিদিকে দেখার জন্যে। এ অংশের সাগরে বিশাল বিশাল জাহাজ নোঙ্গড় করে। অপর পাড়ে বেশ কিছু বিশাল ইন্ডাস্ট্রী রয়েছে, সেখানে বিশাল সাইজের জাহাজ থেকে বিশেষ কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে মালামাল আনলোড করে।
পার্কের একটা স্থানে পার্ক করলাম। এখানে ফ্রি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ঘন্টা অথবা দিন চুক্তিতে পয়সা দিতে হয়। না দিলে জরিমানা আছে। পাশেই টি-হাউস নামে একটা রেস্টুরেন্ট, সেখানে প্রচুর লোক সমাগম দেখলাম। এসব রেস্টুরেন্টে আমি সাধারনত প্রবেশ করিনা। কারন এদের খাবার আমার পছন্দ না। আর চা,কফি খাওয়ার অভ্যাসও নাই, তবে মাঝে মাঝে খাই। এখান থেকে পাকা রাস্তা ঢালু হতে হতে নীচের বাইক চালানো রাস্তায় গিয়ে মিশেছে,,আবার একপাশ থেকে সিড়ি নেমে গেছে সেদিকে। রাস্তা ধরে নীচের দিকে গিয়ে দেখী অনেক মানুষ।
আজ রবীবার,ফলে লোকের সংখ্যা বেশী। বেশী মানুষ আমার দেখতে ভালো লাগে। নানান দেশের নানান মানুষ। হাটছে,সাইকেল চালাচ্ছে,বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে হৈ হুল্লোড় করছে,,,কেউ বীচে নেমে খেলা করছে,কেউ সাতার কাটছে,কেউ কায়াক নামক ছোট নৌকা নিয়ে ঘুরছে বৈঠা বেয়ে বেয়ে,কেউ সূর্য্যের আলোয় চামড়া ট্যান করছে। দামী দামী ইয়ট নিয়ে ঘুরছে কোনো কোনো ধনী, আবার সি প্লেনগুলো পর্যটক নিয়ে উড়ে যাচ্ছে আবার পানিতে ল্যান্ড করছে। নীল তিমি দেখার ব্যবস্থাও আছে । স্থানীয় ট্যুর কোম্পানীগুলো মোটা টাকা নেয় এটার জন্যে। অথচ এস্টোরিয়া থেকে গেলে মাত্র ১০০ ডলারে এটার রফা করা যায়। যেসব সি-প্লেনে চড়তে ৪/৫ শত ডলার নিচ্ছে, আমেরিকাতে ওটা দেড়,দুশো ডলারের মামলা। আমার বাসার পাশে তো এক লোকাল এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৬০ ডলারে আকাশে চক্কর দেওয়া যায়। ভাবছি এবার একদিন তিমি মাছ দেখতে যাব। এই জিনিস দেখার শখ আমার বহু দিনের।
আমি পায়ে চলার পথ ধরে হাটতে থাকলাম। অনেক্ষন পর পানিতে নামলাম। দারুন ব্যাপার এই পানি ঠান্ডা নয়। একই সমুদ্র কিন্তু ওরেগনের কোস্টে বরফ শীতল আর এখানে পানি উষ্ণ। এর কারন এই যে, এা মূল স্রোত নয়, সাগর স্থল ভাগের অনেক ভেতরে প্রবেশ করে থিতু হয়েছে,,,অথবা স্রোতের বৈপ্যরিত্বও হতে পারে।
আমি হাটু পানিতে হেটে বেড়াতে লাগলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা পানিতে হাটলাম। পরে দেখী চামড়া কালো হয়ে গেছে। দুনিয়া বড়ই আজব ! সাদা লোকেরা রোদে চামড়া ব্রাউন করে,,আর কালোরা চামড়া সাদা করতে উঠে পড়ে লাগে। কেউই সন্তুষ্ট না তাদের নিজ অবস্থার বা আল্লাহর নিয়ামতের উপর।
দীর্ঘক্ষন বীচে থেকে প্রচুর পানি উড়ে গেছে শরীর থেকে। বোতল টানলাম(পানির)। এক ঝোপ থেকে ব্লাক বেরী ছিড়ে খেলাম,,এসব পাকতে আরও দিন দশেক লাগবে। পার্কে এক চক্কর দিয়ে গেলাম ডাউনটাউনের এক লেবানিজ হালাল রেস্টুরেন্টে। এখানে বিশেষ ধরনের ল্যাম্ব শর্মা খেলাম। অসাধারন স্বাদ। গলা পর্যন্ত খেলাম। বাসায় ফেরার সময় প্রচুর ফলমূল,বিস্কুট,দুধ,কলা ও অন্যান্য খাবার কিনলাম। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, রান্না করে খেয়ে খরচ বাচাতে চেয়েছিলাম,,কিন্তু এখন খরচ হচ্ছে দ্বিগুন..... রেস্টুরেন্ট এবং রান্না.....বড়ই আজব !
বিষয়: বিবিধ
৬৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন