কাপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ পার্ক

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১০:১৮:০২ রাত



বাউন্ডারী রোড ধরে হাইওয়ে ১ এ উঠে চলতে শুরু করলাম। এরপর কাপিলানো রোডে প্রবেশ করলাম এবং অল্প সময়েই কাপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ পার্কে পৌছলাম। হিজিবিজি পার্কিং প্লেসে পার্ক করতে হল ৬ ডলারে। আমি সাধারনত ফ্রি পার্কিংয়ে অভ্যস্ত। হাটে মাঠে যেখাে যাই একটা সিস্টেম বের করার চেষ্টা করি। কখনও কোনো কোনা কাঞ্চির ভেতর পার্ক করে হেটে মূল স্থানে আসি। কিন্তু এখানে ফাকি দেওয়ার সিস্টেম পেলাম না।

হাজার হাজার লোক এই সকালে হাজির। দুনিয়ার বহু দেশ থেকে লোক এসেছে এই দর্শনীয় পার্কে। এটা এখানকার অন্যতম সেরা আকর্ষণ। ৪৭ ডলারে টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম। পার্ক কর্তৃপক্ষ একদিনে কত লাখ ডলার ইনকাম করে তা ভেবে অবাক হলাম ! তেমন কোনো খরচ নেই এদের, আর প্রতিদিন হাজারে হাজারে মানুষ আসছে পার্কে। আমার আসলে মানুষ দেখতে ভালো লাগে। দুনিয়ায় কত রকমের মানুষ যে আছে রে.....। চারিপাশে নানান ভাষায় লোকেরা কথা বলছে। নানান সব আচরন করছে বাচ্চারা, সেসব দেখতে দারুন লাগে। ব্রিজের মুখে আসতেই টিকেট দেখে পার্কের লোকেরা হাতের তালুর উল্টোপাশে একটা ছাপ দিয়ে দিল,যাতে লেখা আছে কাপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ। এই ছাপ নিয়ে একদিন পুরো এখানে অবস্থান করা যায়।

এখানে মূল আকর্ষণ হল সাসপেনশন ব্রিজ, যা দুটো পাহাড়ের চূড়াকে একিভূত করেছে। কাঠ ও স্টিল ক্যাবলের সমন্বয়ে ব্রিজটি তৈরী। এখানে প্রবেশের জন্যে অপেক্ষা করতে হয় ১৫ মিনিট, কারন ব্রিজে লোকে লোকারন্য। এক গ্রুপ পার হলে অন্য গ্রুপ অপেক্ষা করে। ব্রিজটার কাপুনী রোগ ভয়াবহ। ব্যপক কাপতে থাকে। মোবাইলে ছবি তোলার সময় ভাবছিলাম মোবাইল না আবার পড়ে যায় ছিটকে ! কিছু মানুষকে দেখলাম খুব ভয় পাচ্ছে। দু একজনকে দেখলাম ভয়ে চিৎকার করছে আর তাদের বন্ধুরা হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রীজের নীচ দিয়ে একটি খরস্রোতা নদী/ঝর্ণা প্রবাহিত । গরমে পানির স্রোত তেমন নেই। চারিদিকে পাহাড়ী উচু উচু গাছ দাড়িয়ে আছে। কাপতে কাপতে ওপারে গেলাম। আমি অবশ্য কোনো কিছু না ধরেই ব্যালান্স করে হেটে পার হলাম। বুড়ো হলেও ব্যালান্স আছে।

ওপারে তো বিরাট কারবার। শুরুতেই ম্যাপ নিয়েছিলাম , এখন পালা ম্যাপ দেখে দেখে নানান গন্তব্যে যাওয়া। এপাশে প্রচুর বড় বড় গাছ, তবে সবচেয়ে পুরোনো গাছগুলোর বয়স ৮০০ থেকে ১ হাজার বছর। বড় বড় এসব গাছের একটার সাথে আরেকটার সংযোগ ঘটানো হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ ও কাঠের ব্রিজের মাধ্যমে। এপাশের বনের ভেতর পুরো জংরী একটি পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। নীচে আছে জলাধর এবং বুনো উদ্ভীদসমূহ। কাঠের বাড়িঘর। কাঠের সুদর্শন সিড়ি নানানভাবে উপরে উঠে গেছে এবং তা চক্রাকারে পুরো বনে বিরাজ করছে। সেদিক দিয়ে চলতে চলতে নানান পয়েন্টে এসে নানান রকমের রূপ দর্শন করতে হয়। বুনো ও গা ছমছমে পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। কেউ চাইলে সারাদিন এসব দৃশ্য দেখে সময় কাটিয়ে দিতে পারবে, সম্ভবত বিরক্তি আসবে না।

উচু গাছের উপর তৈরী হওয়া নানান স্টেজ ও সেতু ধরে হাটার মজাই আলাদা। চারিদিকে কাঠের কারুকাজ। কোথাও সিড়ি দিয়ে উঠছি,কোথাও নেমে যাচ্ছি। নানান স্থান থেকে বন,পাথুরে পাহাড় দেখার আকর্ষন রয়েছে। একস্থানে দেখলাম শিকারী বাজপাখি,ভুতুম পেচা নিয়ে বসে আছে দুজন লোক। লোকজনকে আনন্দ দিচ্ছে। একটা গাছ দেখলাম সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ভেতরটা ক্ষয়ে পুরো ফাকা হয়ে গেছে। বাইরে থেকে বড় একটা গর্ত বা হোল দেখা যায়। একটা ঘটনা মনে পড়ল। আমেরিকার বিখ্যাত মুসলিম স্কলার ইউসুফ এস্তেজ বেশ রসিক লোক। উনি ফেসবুকে নিজের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন, শিরোনাম ছিলো হোলি ট্রি বা পবিত্র গাছ। ভাবলাম হয়ত প্রাচীন কোনো জাতির কোনো পবিত্র গাছের সন্ধান উনি পেয়েছেন। ভিডিও দেখতে থাকলাম,,,উনি ক্যামেরা নিয়ে হাটতে হাটতে একটা গাছের কাছে আসলেন এবং দেখালেন গাছে একটা হোল বা গর্ত তৈরী হয়েছে,,,অতএব এটা হোলি ট্রি.....হোল থেকে হোলি Happy

হাটতে হাটতে এক স্থানে এসে দেখী একটা পাথরের স্তম্ভ। তাকিয়ে দেখী প্রচুর পয়সা পড়ে আছে। সর্বনীম্ন ১ সেন্ট থেকে ২ ডলারের কয়েন, হাজার হাজার কয়েন। বহু ডলার নীচের দিকেও গড়িয়ে পড়ে আছে। প্রচুর টাকা। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, এখানে এভাবে পয়সা ফেললে সেটা তাদের জন্যে শুভ সংবাদ নিয়ে আসে, বা উপার্জনে বরকত হয়, বা বিপদ মুক্ত হয়, অর্থাৎ তকদীর বদলের চেষ্টায় ডলার নিক্ষেপ। এদের জ্ঞান থাকলে এরা এসব টাকা গরিবকে দিত। বহু উন্নত দেশের বহু লোক এমন আচরণ করে, যা দেখে বিশ্বাস করার কারন নেই যে এরা শিক্ষিত ! আমি অবশ্য ভাবছিলাম কাঠের ব্যারিকেড টপকে ওপাশে যেতে পারলে ভালো একটা ইনকাম হত !

যত ভাল দৃশ্যই হোক আমার বেশীক্ষন ভালো লাগেনা। মোটামুটি সবটা দেখতে পারলেই চলে। অনেক সময় পুরোটা দেখিনা। মূল জিনিস দেখেই চলে আসি। খানিক্ষন পর বের হয়ে আসলাম। মেরিন ড্রাইভ ধরে স্ট্যানলি পার্কের দিকে ছুটলাম..............

বিষয়: বিবিধ

৬৯৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385715
০১ আগস্ট ২০১৮ রাত ০২:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : বাকীটা পরের ট্যিপে। তাইতো? ধন্যবাদ
১৪ আগস্ট ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
317912
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি চাচাভাই Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File