খুব দারুন দৃশ্য উপভোগ করলাম !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ জুন, ২০১৮, ০৯:৩১:৪৭ সকাল
======================
আমার এক বন্ধুর সাথে তার আমেরিকান স্ত্রীর ঝামেলা চলছিলো। আজ কোর্টে হিয়ারিং ছিলো। এক মাস পূর্বে দুজন হাতাহাতি করে এবং স্ত্রী পুলিশে কল করে। পুলিশ তাকে এরেস্ট করে কিন্তু শর্ত স্বাপেক্ষ্যে ছেড়ে দেয়। ১ মাসের জন্যে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ নিষদ্ধ করে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পর থেকেই স্ত্রী তার সাথে স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করতে শুরু করে এবং নিজের ভুল বুঝতে পারে।
মোটামুটি নিয়মিত যোগাযোগ করছিলো তারা। আজ কোর্টে আমিও গেলাম তাদের সাথে। গিয়ে দেখী আমার এক কলিগ এখানে উকালতি করছে,,,,,লোকজনের সামনে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে সে সকলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। ভালো লাগল। অনেকক্ষন অপেক্ষার পর আমাদের ডাক আসল। ভেতরে প্রবেশ করলাম।
পিন পতন নিরবতার ভেতর অনেক লোক বসা। এখানে ১০ জন জুরি বসে এক পাশে। সামনে উচু আসনে বিচারক বসল। ভদ্র মহিলার মাথায় হাফ ইঞ্চি চুল,পুরুষদের মত। কালো বর্ণের মহিলা বিচারকের কথায় বোঝা যাচ্ছিলো ব্যপক জ্ঞান আছে ভেতরে। কালোদের জন্যে এরকম অতি সম্মানজনক পদ পাওয়া অনেক কষ্টের। মেধার ১৫০% শো করেই হয়ত আসতে হয়েছে।
বন্ধুকে সামনে দাড় করানো হল এবং তাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হল। সে বিনয়ের সাথে দোষ স্বীকার করল। তখন বিচারক তাকে অপশন দিল রাগ নিয়ন্ত্রনের কোর্স পছন্দ করে কিনা,,সে তা গ্রহন করল। পুরো প্রক্রিয়ায় স্টেটের এটর্নীগন যেভাবে সহযোগীতা করছিলো তা দেখার মত। খুব দরদের সাথে কথা বলছিলো।
এবার অন্য এটর্নী বিচারককে বললেন, সম্মানিত বিচারক,,আার মনে হয় এই ব্যক্তি খুব লজ্জিতও অনুতপ্ত এবং তার স্ত্রীও তাকে সহযোগীতা করতে প্রস্তুত,,আপনি কি উনাকে কিছু বলতে অনুমতি দিবেন ? বিচারক বললেন, অবশ্যই উনি কথা বলতে পারেন।
এরপর তার স্ত্রী ক্যাথলিন দাড়ালো সামনাসামনি এবং তার স্বামীর পাশাপাশি। এদেশে কোর্টে ব্রিটিশ স্টাইলে কাঠগড়া নেই এবং নিয়ম কানুনে কিছু পার্থক্য আছে। ব্রিটিশ স্টাইলে বিচারককে মাই লর্ড সম্বোধন করা হয়, কিন্তু এখানে সাধারনভাবে স্মান করা হয়। বিচারক বললেন, আপনি ক্যাথলিন ? উনি বললেন, জি না, আসলে আমি আপনাকে সংশোধন করতে চাই,, আমি নাম পরিবর্তন করেছি,,, আমি মারিয়াম । বন্ধুর স্ত্রী নিজের মুসলিম পরিচয় সকলের সামনে অত্যন্ত গর্বের সাথে প্রদান করাতে আমার অসম্ভব ভালো লাগল। বিচারক বললেন, আচ্ছা আমি নিজেকে সংশোধন করছি,,,এরপর মারিয়াম নামেই কথা বলা শুরু করল। উনি বললেন, আবেগের বশে পুলিশে কল করেছিলাম,আমি তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করছি না। তবে তার কিছু রাগ আছে, সেটা নিরাময়ের কিছু ক্লাশ করুক এটাই পছন্দ করি।
এরপর বিচারক তাদের অবস্থা এবং তাদের দুটো ছোট বাচ্চা আছে, সেটা উল্লেখ করে বললেন, তাকে জরিমানা অথবা জেল কোনেটাতেই দেওয়া হলনা, বরং তাকে ৫ দিনের একটা কোর্সে অংশ নিতে হবে, আর সে তার স্ত্রী,সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে,কারন স্ত্রীর ভাস্যমতে সে তাদের নিরাপত্তায় হুমকী নয়। কোর্টের পুরো কার্যক্রম ছিলো অসাধারন ! খুবই সহজভাবে ,বিচক্ষনতার সাথে ও সততার সাথে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছিলো। আমার কেবলই ইসলামের সেই সময়ের কথা মনে পড়ছিলো,যখন মুসলিম বিচারকরা সততার সাথে বিচার করতেন আল্লাহর ভয়ে। আর বিচারক আল্লাহ ছাড়া আর কাওকে পরোয়া করতেন না।
কোর্ট শেষে তার স্ত্রী বলল- আমি এই মুহুর্তে তাকে বাসায় নিতে প্রস্তুত নই,আগে ওই কোর্স শেষকরুক তারপর। অতএব সে অন্তত ২সপ্তাহ আমার বাসায় থাকবে।
সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পাদিত হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর। শয়তানের কাছে যতগুলো পছন্দনীয় কাজ আছে, তার ভেতর উপরের দিকে আছে স্বামী-স্ত্রীর ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করা। আর যারা এই সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টায় রত, আল্লাহর রহমত তাদের উপর, শয়তানের বদ নজর তাদের উপর। যার উপর শয়তানের বদ নজর নেই, তার সর্বনাশ হয়ে গেছে !
এরপর ৪০০ কি:মি: ড্রাইভ করলাম আপ-ডাউন। রোজবার্গ নামের এক স্থানে একটা মোটরহোম দেখতে গিয়েছিলাম, কিন্তু পছন্দ হয়নি, ফেরৎ আসলাম। পুরো রাস্তা খেয়েছি ,,,,,নানান জিনিস....
বিষয়: বিবিধ
৯৮০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন