ফুটবলীয় উম্মাত্ত্বতা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ জুন, ২০১৮, ১০:০৮:৫৮ রাত



বুখারী অথবা মুসলিম গ্রন্থে একটা হাদীস পড়েছিলাম ভাষাটা এরকম- রসূল(সাঃ) বলেন- আমার উম্মতের একটা অংশ কাফির মুশরিকদের অনুসরন করবে অন্ধের মত, তারা যদি বেজীর গর্তেও ঢুকে যায়,এরা তার অনুসরনে বেজীর গর্তেও প্রবেশ করবে....

আল্লাহ তায়ালা বলেন-কাফিরদের চাকচিক্য যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে ! তিনি আরও বলেন- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করোনা....তিনি অঅরও বলেন- ইহুদী-নাসারারা তোমাদের বন্ধু নয়,তারা পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু ! আল্লাহ আলকুরআনে আরও বলেন- তারা ততক্ষন পর্যন্ত খুশী হবেনা,যতক্ষন না তুমি পুরোপুরি তাদের মত হয়ে যাও !

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে ভেবেছিলাম কোনো কথাই বলব না। ভেবেছিলাম মন্তব্যই করব না কিন্তু অভূতপূর্ব কিছু বিষয় চোখে পড়ল, আর আমি কিয়ামতের আলামতের সাথে মেলালাম। হুবহু মিলে গেল। ইলম বা জ্ঞান আস্তে আস্তে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যা অবশিষ্ট থাকছে তা হল জ্ঞানকে অকার্যকারী,উদ্ভট ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। মাত্র ৪ বছর পূর্বেও বিশ্বকাপ নিয়ে এবারকার মত মহা উম্মাদনা সৃষ্টি হয়নি। এক অদ্ভূত অবস্থা !

এই উম্মাদনার ভেতর নানান স্তর রয়েছে,আর সেসব স্তরে এমন সব বিজ্ঞজনেরা রয়েঝেন,যারা আমার আজকের লেখার বিষয়টিকে তাদের জ্ঞানপূর্ণ বিপরীতমুখী বিশ্লেষনে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন এবং বিষয়টির পক্ষে নানানসব যুক্তি কপচে এটাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না হোক সুন্নাতে জায়িদাহ পর্যায়ে উন্নিত করতে পারেন। মূলত: এই স্মপ্রদায়ই মহা উম্মাদ শ্রেনীর চাইতে বেশী ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারন তারা নিজেদের অগোচরেই সেই মহা উম্মাদনার প্লাটফর্মটি তৈরী করেন। এরপর কিছু জাহেল অন্ধের মত তার আবেগের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে হতাশার সর্বশেষ পর্যায়ে উপনীত হয়।

একটি জাতি অথর্ব হয়েছে কিনা তা দেখতে ওই জাতির "ইনসাফ ও এহসান " এর ইতিহাস ও তার বাস্তবায়ন দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাঙ্গালী জাতি সারা জীবনে গুরুত্বের সাথে যেসব উপার্জন করেছে তা হল চাপাবাজি,চামচামী,দাসত্ব। এদের বীরত্বের ভেতর রয়েছে চাতুর্জ। সূদুর অতীত কাল থেকেই মহা শক্তিগুলোর পায়ের নীচে থেকে দুবেলা খেয়ে পরে ভাতঘুম দেওয়ায় চিন্তায় বিভোর থেকেছে। এরপর সেটাও যখন হুমকির সম্মুখিন হয়েছে, তখনই তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। এখনও যদি কেউ এই জাতিকে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে নিরাপত্তার সাথে ঘুমানোর সুযোগ করে দেয়, এরা শয়তানকেও পূজো করতে রাজি। বীরত্বের ইতিহাস এরা বেশরভাগই মস্তিষ্ক দিয়ে তৈরী করে। আর অধ:পতনের তলানীতে গিয়েও মুখ দিয়ে সেই বীরত্বের গীত গেয়ে তৃপ্ত থাকে। এরা হঠাৎ রক্ত গরম করা এবং হাড়ি-পাতিল ভাংচুর,বৌ পেটানোকে বীরত্ব মনে করে।

এরা না নিজেদের উপর ইনসাফ করে, আর না অন্যের উপর ইনসাফ করতে বুঝে। এহসান , সে তো বহুদূর। এ জাতির সৌজন্যতাবোধও অস্পষ্ট। সম্রাট বাবুর তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ "তুযুক ই বাবরী"তে ভারতীয়দের চারিত্রিক বৈশিষ্টের কথা লিখেছেন... ভারতীয়দের সৌজন্যতাবোধ নেই...। অন্য যত শক্তি এখানে এসেছে তাদের মূল্যায়নও এমনই। এরা ইতিহাস গড়া বলতে যা বুঝে ,তা ক্ষুদ্র জাতিয়তাবাদী চেতনায় আবদ্ধ। কিছু অসম্ভব ভালো গুন থাকা সত্বেও এরা গুনের চর্চায় লিপ্ত থাকতে পারেনা। এরা অন্যের অনুসরনকেই নিজস্ব স্বকিয়তা মনে করে। ফুটবল নিয়ে যে উম্মাদনা সারা বিশ্বে হয়নি ,সেটা এখানে হচ্ছে। ফুটবল রাঙ্কে যারা প্রথম সারিতে তারা ফুটবল খেলে এবং অন্যকে পরাজিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ দেশের লোকেরা ফুটবল রাঙ্কিংয়ে ২০০ দেশের ভেতর ১৯৪ নং। ফুটবলে এদের দম নেই,,, কিন্তু অন্যের গীবতে,মিথ্যা অপবাদে,অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে মিথ্যা অহংকার প্রকাশে এরা বিশ্বে ১ নং। খেলার যোগ্যতা নেই, কিন্তু খেলা নিয়ে মাতলামী করায় শ্রেষ্ঠ।

যেসব খেলায় শরীর চর্চা হয়, সেসব খেলাধুলা করে শরীর চর্চা করতে ইসলাম উৎসাহিত করে। কিন্তু খেলাধুলা করে পয়সা কামানো বা খেলা নিয়ে উম্মাদনা ইসলাম সমর্থন করেনা। খেলাকেও লক্ষ্য বানাতে বলেনা। বরং আমাদের দ্বীনকে বিশ্বে পৌছানোর জন্যে অনেক কর্মসূচী রয়েছে, আর তার জন্যে শারিরীক যোগ্যতা,সুস্থ্যতা,বীরত্ব প্রয়োজন,সেটার জন্যেই খেলা একটি উপাদান,যার মাধ্যমে আমরা শক্তি অর্জন করি।

স্বাভাবিকভাবে খেলা দেখা এবং কিছু সমর্থন থাকাও অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু সেটার মার্জিত রূপ থাকবে। খেলা যেন আমাদের ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিরোধী না হয়ে ওঠে, সেটা যেন আবেগকে ভুল পথে পরিচালিত না করতে পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। বিনা কারনে ,ভূল পথে বীরত্ব প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই। দুনিয়াতে বহু কাজ রয়েছে,যেখানে মেধা ও দৈহিক শক্তি প্রয়োগ করা যায়।

খেলা নিয়ে যেটা হচ্ছে সেটা স্পষ্ট জাহেলীয়া বা তার চাইতেও জঘন্ন। এই অনর্থক উম্মাদনা থেকে ফিরতে না পারলে দেশের তরুনদের অর্ধেক হবে নেশাখোর,বাকী অর্ধেক হবে উম্মাদ, আর বুড়োরা আফসোস করতে করতে কবরে যাবে ! আল্লাহ শুধু রহমান,রহিম নন, তিনি "কাহ্হার" অর্থাৎ তিনি ভয়ঙ্করভাবে পাকড়াওকারী !!!

না এর বাপ মা, ভাই-বোন কেউ মারা যায়নি। শেয়ার ব্যবসায় ঘটি বাটি বিক্রী করে ইনভেস্ট করার পর সর্বশান্তও হয়নি। কোনো দিল হরনকারিনীও দিল নিয়ে পালায়নি। ইরাক,সিরিয়া,ফিলিস্থিন,বার্মায় তেলাপোকার মত মরতে থাকা মুসলিম ভাই-বোনদের মর্মান্তিকতায়ও সে আহত হয়নি !!

সে আকাশ বাতাশ কাপিয়ে চরম অসহায়ত্বের কান্না কাদছে এই কারনে যে, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে একটা দেশ আছে আর্জেন্টিনা,,তারা ফুটবল খেলতে গিয়ে হেরেছে,,,,সেই দেশের অধিকাংশ লোক এবং খেলতে থাকা ফুটবলারদের বেশীরভাগই বাংলাদেশ নামক একটি দেশ আছে সে খবরও জানেনা।

ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার ভয়াবহ গজবেরহাত থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন ! জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন ! আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন !

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385573
২৩ জুন ২০১৮ সকাল ১০:১১
হতভাগা লিখেছেন :
যেসব খেলায় শরীর চর্চা হয়, সেসব খেলাধুলা করে শরীর চর্চা করতে ইসলাম উৎসাহিত করে।


০ সেক্ষেত্রে বডি বিল্ডিং ১ নং এ থাকার কথা ।
২৪ জুন ২০১৮ সকাল ১০:০৬
317805
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সেরকমটা ছিলো সেকালে যা যুদ্ধের ট্রেনিং হিসেবে ছিলো। তীর চালনা,ঘোড়া,অস্ত্রবাজী,,,এসব তো সাহাবীরা করত। রসূল (সাঃ)নির্দেশও দিয়েছেন
385575
২৩ জুন ২০১৮ সকাল ১০:২৯
হতভাগা লিখেছেন : কয়দিন আগে ব্লগার '' কুয়েত থেকে'' এর একটা পোস্টে জানতে পারলাম যে , রাসূল (সাঃ) ও তার স্ত্রী বিবি আয়েশা (রাঃ) এক সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন '' ।

আর আপনার পোস্টে জানলাম ''যেসব খেলায় শরীর চর্চা হয়, সেসব খেলাধুলা করে শরীর চর্চা করতে ইসলাম উৎসাহিত করে।''

০ তার মানে , নারী ও পুরুষের শরীর চর্চা করা এবং এক সাথে প্রতিযোগিতা করা (যেখানে নারী পুরুষ ইভেন্ট সবসময়ই আলাদা আলাদা হয়ে আসছে প্রথম থেকেই) - ইসলাম সমর্থন করে এবং এটা সুন্নত !!
২৪ জুন ২০১৮ সকাল ১০:০৭
317806
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমার বক্তব্যের আলাদা উদ্দেশ্য আছে। ঢালাও কিছু বলিনি। উপরে কমেন্ট করেছি। জায়েজ,নাজায়েজ সংক্রান্ত শর্ত পালনীয়
385577
২৩ জুন ২০১৮ রাত ০৯:২৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ছোট ভাই। অনেক দিন পর প্রিয় জায়গাটিতে আসার সুযোগ হল।

বর্তমান উন্মাতাল করা সময়ে আপনার লিখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাশাআল্লাহ।
নতুন জীবন চির কল্যাণময় ও আনন্দঘন হোক। হৃদয় উজাড় করা দোয়া রইলো।
২৪ জুন ২০১৮ সকাল ১০:০৮
317807
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি, ফুটবল,ক্রিকেট নিয়ে খেলা যতটুকু না হয়,তার চেয়ে উম্মাদনা হাজার গুন এবং তা অপ্রিতিকর
385581
২৪ জুন ২০১৮ রাত ১২:১০
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : যেখানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতিকে অগ্ররাধিকার দিয়ে প্রাণপনে প্রতিযুগিতায় লিপ্ত সেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় কিছু গরিব দেশ ভিনদেশী খেলায় মাতুয়ারা । ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করে এসব দেশ জাতী কীভাবে উন্নতি আশা করে । আসলে এদের নিয়ে লেখতে ইচ্ছা করছে না । আমি এদের দলে নেই । সুন্দর সময় উপযুগী একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাজাকাল্লাহ ।
২৪ জুন ২০১৮ সকাল ১০:০৯
317808
দ্য স্লেভ লিখেছেন : উপলব্ধীর জন্যে জাজাকাল্লাহ Happy
385590
২৬ জুন ২০১৮ সকাল ০৬:৩০
পfথক লিখেছেন : "কিন্তু অন্যের গীবতে,মিথ্যা অপবাদে,অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে মিথ্যা অহংকার প্রকাশে এরা বিশ্বে ১ নং। খেলার যোগ্যতা নেই, কিন্তু খেলা নিয়ে মাতলামী করায় শ্রেষ্ঠ।" - That's so true and I think there is no difference in character between Bangali and Jews because both nations think they are right and great.
২৬ জুন ২০১৮ সকাল ০৯:৩৩
317817
দ্য স্লেভ লিখেছেন : exactly
385599
২৭ জুন ২০১৮ রাত ১০:০৩
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আমিন -- অসম্ভব ভাল একটি লেখা উপহার দিয়েছেন ---চাল চলনে খ্রিস্টান তুমি, হিন্দু তুমি সভ্যতায়। এই তো সে-ই মুসলিম, যাকে ইহুদিও দেখে লজ্জা পায়। - কবি আল্লামা ইকবাল এই কবিতাটা বর্তমান সমাজের জন্যই
১৭ জুলাই ২০১৮ সকাল ০৯:৩১
317872
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সঠিক বলেছেন,আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুক
385603
২৮ জুন ২০১৮ বিকাল ০৫:৪১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কিয়ামতের আলামতের সাথে অনেক কিছুই হুবহু মিলে যাচ্ছে। ইলম শিক্ষা জ্ঞান আস্তে আস্তে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে কাফেরদের অনুকরণে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
385669
১৭ জুলাই ২০১৮ সকাল ০৯:৩১
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কিয়ামতের আলামতের সাথে অনেক কিছুই হুবহু মিলে যাচ্ছে। ইলম শিক্ষা জ্ঞান আস্তে আস্তে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে কাফেরদের অনুকরণে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একেবারে সঠিক...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File