সৃষ্টির রহস্য !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ মে, ২০১৮, ০৩:৫২:০৭ রাত
==============
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানবকূল সৃষ্টির মানসে হযরত আদম(আঃ)কে সৃষ্টি করলেন, তাকে জ্ঞান শিক্ষা দিলেন এবং তার থেকে তার সঙ্গী মা হাওয়াকে(আঃ) সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীতে চলার উপযোগী সকল জ্ঞান দান করলেন। হালাল-হারাম,ভালো-মন্দের জ্ঞান ও দিক নির্দেশনা দান করলেন। শত্রু-মিত্র চেনালেন। সকল কাজের পরিনতি জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে অবগত করলেন। এরপর একটি পরিক্ষা নিলেন উভয়কে।
"আমি(আল্লাহ) বললাম, ‘হে আদাম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেখানে যা ইচ্ছে খাও, কিন্তু এই গাছের নিকটেও যেয়ো না, গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের মধ্যে শামিল হবে’।"-(আল-কুরআন, ২:৩৫)
"কিন্তু শয়ত্বান তা থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দু’জন যেখানে ছিল, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল; আমি বললাম, ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে’।" (আল-কুরআন, ২:৩৬)
যখন আদম(আঃ) ও হাওয়া(অাঃ) শয়তানের প্ররোচনায় ভুলে উক্ত নিষিদ্ধ ফল ভক্ষন করেন, তখনই তাদের আল্লাহর সতর্কবানীর কথা মনে পড়ে আর তখন তারা তওবা করেন-
"ইয়া আল্লাহ আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন ও রহমত বর্ষণ না করেন তবে আমরা মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব"
(আল-কুরঅান, ৭:২৩)
"অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী পেল, ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবূলকারী, অতি দয়ালু।" (আল-কুরআন, ২:৩৭)
আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এখান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার নিকট হতে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসবে; তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’। আর যারা কুফরী করবে ও আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
(আল-কুরআন, ২:৩৮-৩৯)
পৃথিবীতে মানুষের বসতি স্থাপন,তাদের কাছে দিক নির্দেশনা প্রেরণ, এবং তাদের কৃতকর্মের বিচারের মাধ্যমে জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা করা আল্লাহর পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো। বিষয়টি সঙ্ঘটনের একটি উপলক্ষ ছিলো আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) কর্তৃক নিষিদ্ধ ফল ভক্ষন, আর যখন তারা ভুল উপলব্ধী করল সঙ্গে সঙ্গে তারা তওবা করল এবং তা কবুল হয়, আল্লাহ তাদের ভুল ক্ষমা করেন। ফলে তাদেরকে পাপের শাস্তি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়নি। বরং এটা আল্লাহর পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো এবং উক্ত ঘটনার পরপরই আল্লাহ তাদেরকে পরবর্তী পরিকল্পনার জন্যে পৃথিবীতে নামিয়ে দেন সঠিক দিক নির্দেশনাসহ। আল্লাহ পৃথিবীকে এর পূর্ব থেকেই মানুষের বসবাসের উপযোগী করে রাখেন ও প্রয়োজনীয় নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ করেন।
পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর ইবাদত করা।
"আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদাত করবে।" (আল-কুরআন, ৫১:৫৬)। মানুষ নামক স্বাধীন জ্ঞান প্রাপ্ত এক সৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ ইবাদত প্রত্যক্ষ করতে চাইলেন, যদিও তিনি কারো ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন, তবে এটি তার একটি চাওয়া ছিলো। তিনি এক স্বয়ংস্বম্পন্ন স্বত্ত্বা। অনাদী,অনন্ত,অক্ষয়,কারো মুখাপেক্ষী নন। "আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আল-হাশর, আয়াত-০১)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত আদম(আঃ)কে বহু সন্তানাদী দান করেন। তারা ছিলো নানান বর্ণের,নানান আকারের,নানান চেহারার এবং পরবর্তীতে তারা পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং বংশ বিস্তার করতে থাকে। তাদের সকল বসতিতে আল্লাহ যুগে যুগে নবী,রসূলদেরকে পাঠিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ সর্বশেষ হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)কে সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে রসূল মনোনিত করলেন। আর তার(সাঃ) মাধ্যমে পৃথিবীতে আমাদের করনীয় কার্যাবলী সবিস্থারে বলে দিলেন।
দুনিয়াতে মানুষের আগমনের মূল উদ্দেশ্য হল একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। এর আরেক অর্থ হল আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ইবাদত না করা। ইবাদতের মূল ভাবার্থ হল- আল্লাহর আদেশকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া,তার প্রতি নতজানু হওয়া , নিজের সকল ইচ্ছার উপর আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া,কথায় ও আচরনে শিরক না করা, আল্লাহর প্রেরিত নবী-রসূলগণকে পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ করা। ইবাদতের ধরন হবে এমন যে- নিজের সকল ভালোবাসার একচ্ছত্র অধিপতি হবেন আল্লাহ ও তার প্রেরিত রসূল(সাঃ)। তবেই একজন সাধারন বিশ্বাসী মানুষ মুমিন হিসেবে গণ্য হবে। ব্যক্তি তার পরিবার,পিতা-মাতা,সন্তানাদী,আত্মীয়-পরিজন,বন্ধু-বান্ধব,ব্যবসা-বানিজ্য,নিজের জীবন,মূল্যবান সম্পদ সকল কিছুর চাইতে আল্লাহ ও তার রসূলকে বেশী ভালোবাসবে। এরপর সে মুমিন হলে প্রকৃতই "আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্যেই শত্রুতা করা" সম্ভব ও সহজ হবে। এটাই পৃথিবীতে একজন মুসলিমের অবস্থা হতে হবে। সে সবকিছুর উর্ধ্বে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানকে রাখবে। জীবনের প্রতিটি অবস্থা আল্লাহর আদেশ দ্বারা বিচার-বিবেচনা করবে। এটাই ইবাদত। তবে তার ভুল হবে কিন্তু সে হতাশ হবেনা, বরং হযরত আদম(আঃ)এর মত নতজানু হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল।
আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষ ভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং সেরা। তাকে অনন্যসাধারণ বৈচিত্রপূর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নানানভাবে পরিক্ষা করার জন্যে তার ভেতর কুপ্রবনতার কেন্দ্রভূমী হিসেবে নফস সৃষ্টি করেছেন, যা তাকে খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে এমন সব বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে তাকে স্বাধীন জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। আবার পাশাপাশি শয়তানকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কিছু মাত্রায় ধোকা দেওয়ার শক্তি প্রদান করা হয়েছে। এসব কিছু আল্লাহ করেছেন মানুষকে পরিক্ষার জন্যে। কারন তিনি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ মানুষকে অকল্পনীয় পুরষ্কারে ভূষিত করতে চান। এতসব উপাদানের পর আল্লাহ মানুষকে সাহায্য করে থাকেন নানানভাবে, যাতে সে সত্যিই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। তাকে ইসলামের উপরই তিনি জন্মগ্রহন করান। তাকে কখনও অলৌকিকভাবে সাহায্য করেন। তার কাছে তিনি হেদায়াতের বাণী পৌছে দেন। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে শয়তানের উপর বিজয়ী করেন। সফল হবার সকল উপায় তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। তাকে সঠিক পথে রাখতে বিফল হবার পরিনতিও শ্মরণ করিয়ে দেন। পুরো জীবন কালে তিনি বারবার মানুষকে সতর্ক করেন এবং মহা পুরষ্কার ও একইসাথে শাস্তির বাণী শুনান, তারপরও যদি কেউ বিফল হয় তবে তার পুরো দায় সেই ব্যক্তির। আল্লাহ চান- সকলে তার কথামত চলুক এবং আখিরাতে মহা পুরষ্কার লাভ করুক।
মানুষ তার নিজের পছন্দে তার ধ্বংস কামনা করে। তারপরও আল্লাহর ক্রোধ তার দয়াকে অতিক্রম করেনা। তিনি অতি দয়ালু ,সুমহান। আল্লাহ চান মহা পাপে লিপ্ত,হতাশাগ্রস্ত,শয়তানের ধোকায় সর্বশান্ত মনে করা মানুষগুলো আল্লাহর দয়ার প্রতি আস্থাশীল হয়ে তার পথে ফিরে আসুক। কারন দুনিয়ার সময় ক্ষনস্থায়ী এবং এই সময় পার হলে ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়ার কোনো সময় থাকবে না। আখিরাতের আফসোসের সেই সময়কে বিবেচনা করাই সুচিন্তাপ্রসূত কাজ এবং জ্ঞানীরাই আল্লাহকে অধিক চিনে থাকে। যার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান পৌঁছেছে, সে যেন তার জন্ম,পৃথিবীতে বিচরনকালীন সময়,মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী সময় নিয়ে চিন্তা করে।
"মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব।" (আল-কুরআন,২০:৫৫)
"নি:সন্দেহে জীবনবিধান হিসেবে আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র গ্রহনযোগ্য ব্যবস্থা" (আল-কুরআন,৩:১৯)
"যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে, তবে তার কাছ থেকে সেই ব্যবস্থা কখনই গ্রহন করা হবেনা, আখিরাতে সে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
(আল-কুরআন, ৩:৮৫)
বিষয়: বিবিধ
১২৫১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন