আওয়ালের সাথে হবিবারের বাঁশ বাগানে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ মে, ২০১৮, ০৪:৫৭:৫৮ রাত
=========================
ছোটবেলার পুরোটা সময়ের কথা এটা নয়, তবে শৈশবের বিশাল একটা অংশ জুড়ে আওয়াল আছে। একটা সময় আমরা হবিবারের বাশ বাগানে বিকেলে আড্ড দিতাম। কেন দিতাম তা জানা নেই। তবে আমাদের ভেতর সাবু ছিলো মুরব্বী। সে কিছু বললে আমরা শুনতাম। কোনো কারন ছাড়াই সাবু আমাদেরকে নিয়ে হবিবারের বাশ বাগানে যেত বিকেলে। আমরা মতিয়ারের পুকুর পাড় ধরে ওপাশে গিয়ে ক্ষেতের আইলে অথবা বাশঝাড়ের ভেতর বসতাম। সেখানে বেশ মজমা হত।
বিশ্বাস পাড়ার বাদশা মিয়া ওখানে আরও কিছু মানুষের সাথে নানান গল্প করত, তা শুনতে ভালো লাগত। আমাকে দেখেই বাদশা ভাই বলত " তোর কি হবেরে মুন্না !" এটা বলে হাসত। বহু বছর পর গত বছর দেশে গিয়ে তার সাথে দেখা হল। লোকটা পাগলাটে ধরনের। এখনও বিয়ে করেনি সম্ভবত। গ্রামের মানুষ পাগল বলেই চিনে। রাজপুত্রের মত চেহারা ছিলো বাদশাহর। এ কারনেই তার সম্ভবত বাদশাহ রেখেছিলো। কিন্তু ছোটবেলায় কোনো কারনে ট্রাক থেকে ছিটকে আর লাইনে ঢুকতে পারেনি। সঠিক গাইডলাইন ছিলোনা। কিন্তু লোকটা ভালো ছিলো। খুব রসিক, সাদাসিদে লোক। বয়স হয়ত আমাদের থেকে ১০/১২ বছরের বেশী হবে। অনেক পরে এসে সে বাজারে চৌকিদারের দায়িত্ব পালন করত। এটা সত্যি অবমাননাকর ছিলো। এত সুন্দর একটা লোক জীবনে কিছুই করতে পারল না। আমার খুব দু:খ হত তার জন্যে।
তো বহু বছর পর জরাজীর্ণ সেই বাদশা মিয়া ভাই আমাকে গত বছর দেখে বলল-এই তুমি মুন্না না ? বললাম হ্যা। জিজ্ঞেস করল- আমাকে চিনতে পেরেছো ? বললাম- আপনি বাদশাহ ভাই। তখন বলল-তোমার মনে আছে ওই যে হবিবারের বাঁশ বাগানে ছোটবেলায় আমরা বসতাম ! বললাম হ্যা খুব মনে আছে। ....বাদশা ভাই বলল--তোমাকে বলতাম"তোর কি হবেরে মুন্না ! " এটা মনে আছে ? বললাম অবশ্যই মনে আছে হাহাহাহাহা....। সে বলল-এই ডায়ালগটা ওমুক বাংলা সিনেমার ছিলো তাই তোমার সাথে দেখা হলেই বলতাম।
খুব ভালো লাগল। মানুষ তাকে পাগল ভাবে, অথচ সে সুস্থ্য। জীবনে অনেক সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেলে , স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলে এবং সঠিক মোটিভেশন না থাকলে মানুষ এরকম মরে বেচে থাকে। তারা বোঝেনা কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় এবং সঠিক কনসেপ্ট না থাকলে এভাবে মানুষ অর্ধমৃত হয়ে বেচে থাকে । এরকম মানুষের সংখ্যা অনেক। বাদশাহ ভাইকে দেখে খুব ভালো লাগল, তার জন্যে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে দোয়া রইলো।
যাইহোক সে সময় আমার বয়স সম্ভবত ১০/১১ হবে যখন বাশ বাগানে বসতাম বিকেলে। মাঠের কিছু কৃষক, রাখাল, এলাকার কিছু বাউন্ডুলে লোক খেলাধুলা করত। কেউ তাস খেলত সেখানে। নানান গল্প হত। কিন্তু আসল বিষয় হল এই যে, আমরা ওখানে মারামারি করতে যেতাম। ছোটবেলা থেকেই বিনা কারনে মারামারি করার বাতিক ছিলো আমার। আর আওয়ালের সাথে মারামারির শখ ছিলো ব্যপক। কেন যেন ওকে মারতে ইচ্ছা হত, অবশ্য আরও অনেককে মারতে ইচ্ছা হত।
আওয়াল ছিলো খুব শক্ত পোক্ত শরীরের অধিকারী। সারাদিন মাঠে কাজ করত সে। ওকে লাঠি দিয়ে পেটালেও ব্যাথা পেত না। আমার সাথে ওর বহু মারামারি হয়েছে আর প্রায় সববারই ও জিতে যেত। কিন্তু তারপরও আমি ওর সাথে মারামারি করতাম। সাবুকে বলতাম, আজ কিন্তু আওয়ালের সাথে মারামারি হবে....এভাবে এভাবে হবে। সাবু আমাকে নানান টিপস দিত কিভাবে মারতে হবে, কিভাবে জেতা যায় ইত্যাদী। সে রেফারী হিসেবে থাকত, তবে শত ভাগ আমার পক্ষে।
আমরা মারামারি করে খুব বেশী ব্যাথা পেতাম না। লাথি,ঘুষি,কুস্তি সবই হত। আমি কয়েকবার জিতেছিও,,তবেঅধিকাংশ সময় সেই জিতে যেত। আমি যখন একা থাকতাম তখন জীবনেও আওয়ালের সাথে মারামারিরর সাহস পেতাম না। সাবু উপস্থিত থাকলেই কেবল ওর সাথে মারামারি করতাম। সে সময় ফুফাত ভাই লিটনও মাঝে মাঝে বেড়াতে আসত। কয়েকবার আমি আর লিটন মিলে আওয়ালের সাথে মারামারি করেছি। সে একা দুজনের সাথে লড়তে রাজি হতনা। তখন সাবু নানান পাম পট্টি দিয়ে রাজি করাত। একদিন আমি আর লিটন মিলে আওয়ালকে বেশ মারলাম। এরপর আমার সাহস খুব বেড়ে গেল।
পরের দিন সাবুকে বললাম, আজ কিন্তু আওয়ালের সাথে ফাইট লাগাবি। সেটা সম্ভবত পরের দিনই হবে। বিকেলে সবাই বসলাম বাশবাগানে। আমি বারবার সাবুকে বলছি--ফাইট লাগা ফাইট লাগা....। সাবু বিরক্ত হল, কারন সে গল্প করছিলো একজনের সাথে। আওয়ালও অন্য খেলাধুলা নিয়ে ছিলো। সাবু কয়েকবার তাকে বলল-আমার সাথে মারামারি করার জন্যে। আওয়াল খুব বিরক্ত হল। সে ফাইট করবে না। ওদিকে আমার মনের ভেতর আওয়ালকে পেটানোর খায়েশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আবারও সাবুকে খোচা দিলাম গোপনে। সাবু আওয়ালকে বলল-মারামারি করতে। ...সে কি যেন বলল,,,,আমি বলে উঠলাম ও ভয় পাচ্ছে....
এবার আওয়াল রেগে গেল খুব। সে একটা গালি দিয়ে উঠে দাড়ালো। শুরু হল মারামারি। আমি চরম মাইর খেলাম। পুরো হেরে গেলাম। তবে এরপরও মারামারি হয়েছে। এটা ছিলো আমার নেশা।
হবিবারের সেই বাশ বাগানের বহু স্মৃতি আছে। তবে সেই বিশাল বাশবাগানের স্থানে স্থানে বসবাসরত মানুষেরা এবং পুরো লাইন পাড়ার ম্যাথরেরা মলমূত্র ত্যাগ করত। এসবে কেউ কিছু মনে করত না। ফলে বাশবাগান অতিক্রমকালে আমরা ব্যপক বিপদে থাকতাম। সবসময় সুগন্ধ ছড়াতো। বিকেলে যেখানে বসতাম সেখান থেকে গন্ধ খুব একটা আসত না। সেদিনগুলোকে বড্ড মিস করি।
বিষয়: বিবিধ
৯০০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পাকলে করে ঠাস ঠাস
মন্তব্য করতে লগইন করুন