শবে বারাত !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০১:৩৮:৫২ দুপুর



=========

শবে বারাত নিয়ে দেশে তিনটে পক্ষ আছে, এদের দুটো পক্ষ পরষ্পর মারমুখী, অন্য পক্ষ কাওকে পাত্তা দেয়না,তারা সাধারন উৎসব পন্থী। সহি আকীদা পন্থী বা আহলে হাদীস নামক একদল লোক শবে বরাত নামক বিষয়টি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। তারা বলেন- লাইলাতুল বারাত,বা শবে বারাত বা মধ্য শাবানের বিষয়ে কোনো হাদীস নেই অথবা থাকলেও জাল,যঈফ। অপরদিকে হানাফী মাযহাব এর অনুসারী আলেমগণ বলেন-এটার অস্তিত্ব আছে, তবে সেভাবে নয়, যেভাবে প্রচলিত। এরা হল দুটো পক্ষ।

অপর যে পক্ষ আছে তারা এসবের ধার ধারেনা, তারা কেবল একটি উৎসবের উৎস্য পেলেই খুশী। যেই উৎসবই পাক না কেন তারা সেটাকে মোটামুটিভাবে ভ্যালেনটাইন্স ডে বানিয়ে নেয়। এরা হল বাঙ্গালী বিনোদন কাঙ্গাল পক্ষ। এছাড়া আরও এক শ্রেণী আছে কিন্তু তারা শিরক নিয়ে মহা ব্যস্ত। তাদের সিস্টেম আলাদা। তারা মাজার,কবর নিয়ে জীবীকার নেশায় মত্ত। তারা আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। আজ প্রথমোক্ত দুটি দল নিয়ে কথা বলব আমার কাছে আসা তথ্যের ভিত্তিতে। তবে আমার বক্তব্য ভুল হতে পারে, ফলে দ্বিমত পোষন করা যাবে। আল্লাহ ক্ষমা করুক।

শবে বারাত শব্দটি আরবী নয়, এটি হল ফার্সী শব্দ, যার অর্থ মুক্তির রজনী,অনেকের মতে ভাগ্য রজনী(তবে ভাগ্য রজনী হল লাইলাতুল ক্কদর,যা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করতে হয়)। বহুকাল পূর্ব থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইরানের শিয়াদের প্রভাব ছিলো। এ অঞ্চলে ইরানের ফার্সী ভাষা ব্যপকভাবে প্রচলিত ছিলো। সে ভাষার বহু কিতাব বাংলায় অনুবাদ হয়ে মানুষের মুখে মুখে ঘুরত। বেশীরভাগ লোক অশিক্ষিত হওয়ার কারনে লোকমুখে শোনা ইসলামের নামে নানান কেচ্ছা কাহিনীকে সত্য বলে গ্রহন করত। বৃটিশদের নানান ফন্দীর কারনে কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত শিক্ষা নেওয়া কষ্টকর ছিলো। এখানকার সকল মানুষ হিন্দু থেকে ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহন করার কারনে এবং হিন্দুদের সংস্পর্শে থাকার কারনে তাওহীদের জ্ঞান লাভ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলো ব্যপকভাবে। মানুষেরা ইসলামের নামে যা কিছু করত, তার সবটাই ইসলাম ছিলোনা। নানামুখী কুসংষ্কার,বিদাত,শির্কে লিপ্ত ছিলো মানুষ। এখানকার মানুষেরা ইসলামের বিষয়সমূহ অনুধাবনের যোগ্যতাও রাখত না। অফিস আদালতে ফার্সির প্রচলন ছিলো ফলে অনেক ইসলামিক বিষয় আরবীতে না বুঝে ফার্সিতে বুঝত এখানকার মানুষেরা, যেমন- সাওমের বদলে রোজা, সালাতের বদলে নামাজ ইদ্যাদী....।

যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি: শবে বারাত নামক শব্দের অস্তিত্ব কুরআন-সুন্নাহতে থাকা সম্ভব নয়, কারন এটি আরবী শব্দ নয়, তবে মধ্য সাবানের ফজিলত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা রয়েছে। আমরা মূলত মধ্য শাবানের বিষয়েই কথা বলব।

রসূল(সাঃ) রমজান ছাড়া বাকী ১১ মাসের ভেতর শাবান মাসেই সবচেয়ে বেশী ইবাদত করতেন। শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। এ মাসে রসূল(সাঃ) সবচেয়ে বেশী নফল সিয়াম পালন করতেন। এটাকে রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস বলা হয়। কিন্তু আমরা কথা বলছিলাম মধ্য শাবান নিয়ে, যা শবে বারাত নামে পরিচিত। চলুন এ সম্পর্কে আমরা কিছু হাদীস জেনে নেই:................

হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শা‘বানের রাতে (শা‘বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত শবে বারাআতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।”

(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫/ সুনানে বাইহাকী--শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৩/ মু‘জামে তাবরানী, কাবীর, হাদীস নং ৩৫৪৩)

উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান (রহ.) তার ‘কিতাবুস সহীহ’ গ্রন্থে (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামে প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসটির সনদ সহীহ বলেই তিনি একে তাঁর কিতাবুস সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ বা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। তাই ইমাম মুনযিরী, আল্লামা ইবনে রজব, আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে গ্রহণীয় ও আমলযোগ্য বলেছেন।

(বিস্তারিত দেখুন : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২য় খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ, ৮ম খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা/ শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা, ১০ম খণ্ড, ৫৬১ পৃষ্ঠা)

শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ হাদীসকে সহীহ বলে গণ্য করে তার “সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা” গ্রন্থের ৩য় খণ্ড-১৩৫ পৃষ্ঠায় এ হাদীসকে স্থান দিয়েছেন এবং এর সমর্থনে আরো ৮টি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন--

“সারকথা হলো, এ হাদীসটি এ সকল রিওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে সহীহ। আর কোন হাদীস সহীহ হওয়া তো এর চেয়ে কমসংখ্যক রিওয়ায়াতের সমষ্টিতেই হয়ে যায় যখন তা প্রচণ্ড দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে--যেমন অবস্থা এ হাদীসের ক্ষেত্রে।”

(সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা)

অধিকন্তু আলবানী সাহেব সেখানে ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করে শক্ত প্রতিবাদ করেছেন, যারা কোন ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বারাআতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।

(সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)

========================

হাদীসটি সহী কোনো সন্দহ নেই, কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন এবং তখন যারা ক্ষমা প্রর্থনা করে বা ইবাদত করে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন বা ইবাদত কবুল করেন। তবে শর্ত এই যে, তারা শির্কপন্থী হতে পারবে না , তাওহীদের পথে ইবাদত হতে হবে। আর অন্য মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করতে পারবে না, তাহলে আল্লাহর রহমতের ভেতর সে থাকতে পারবে না। এই হাদীসটি সহি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, শবে বারাত উপলক্ষে এখানে যা সংঘটিত হয় তা বৈধ। বরং এখানে কেবল উক্ত রাতে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের কথা বলা হয়েছে।

-------------------

------------------------------

চলুন আরও কিছু হাদীস জেনে নেই:

হযরত আয়িশা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)নামাযে দাঁড়ালেন। তখন তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম--তাঁর প্রাণবিয়োগ হয়েছে। যখন আমি তা ভাবলাম, তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাতে তা নড়ে ওঠলো। তখন আমি ফিরে এলাম। এরপর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম--না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনার প্রাণবিয়োগ হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন রাত ? আমি বললাম--আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-- “এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত শবে বারাআত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শাবানের রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি মনোনিবেশ করেন। অতঃপর তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদেরকে ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদেরকে অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের বদকর্মের কারণে ফিরিয়ে দেন।”

(বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা)

এ হাদীসটিও নির্ভরযোগ্য। ইমাম বাইহাকী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেন-- এই হাদীসটি উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।”

(বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো, শবে বারাআতে নফল নামায পড়া এবং তাকে এভাবে দীর্ঘ করা, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে--এটা মাসনূন আমল। কিন্তু এসব ইবাদত অবশ্যই ব্যক্তিগত ইবাদত। শবে বারাতের বিষয়ে দলবদ্ধ ইবাদতের কানো জাল হাদীসও নেই। আর এদিনকে উৎসবের দিন বানানো বা এ রাতে মিলাদ মাহফিল(এটা এমনেই বিদাত) করা বা মসজিদে সকলে গিয়ে ইবাদতের অনুষ্ঠান বানানো, বা এদিনটিকে মূল্যবান মনে করে হালুয়া রুটির উৎসব করা কোনো জাল হাদীস দ্বারাও প্রমানিত নয়। রসূল(সাঃ) এ রাতে দীর্ঘ তিলাওয়াতের সাথে সালাত আদায় করেছেন, আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে প্রার্থনা করেছেন এটাই হাদীস দ্বারা প্রমানিত হচ্ছে। কিন্তু এ দিবসকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মকান্ড ভারতীয় উপমহাদেশে হয়, সেটা সাহাবীরা করেননি, তাবেঈনরা করেননি,তাদের পরবর্তী যুগের আলেমগন বা তাবে-তাবেঈনরা করেননি, বা তাদের পরবর্তীরাও করেননি,,,,এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য দেশে এর অস্তিত্বও চোখে পড়েনা।

==================================

এ বিষয়ে একটি যইফ হাদীস বর্ণনা করা হল। সুনানে ইবনে মাজাহ'র এক হাদীসে রাতে নফল নামায পড়া ও নফল ইবাদত করার সাথে পরদিন রোযা রাখার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো--

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--“মধ্য-শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। কেউ আছে কি আপদগ্রস্ত? তাকে আমি নিষ্কৃতি দান করব।আছে কি এমুক, আছে কি ওমুক--এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আহবান সুবহে সাদিক পর্যন্ত ।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪)

এ হাদীসটি জয়ীফ। তবে এর সমর্থনে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীসের কিছু মিল আছে। মূলত: আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যহ রাতেই প্রথম আসমানে এসে বান্দাদেরকে ঐরূপে আহবান করার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। । এ ছাড়াও শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং ১লা শা‘বান থেকে ২৭ শা‘বান পর্যন্ত সবগুলো দিনই রোযা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ফজীলতময়। শুধু কেবল রামাজানের ২/১ দিন আগে রোযা রেখে রামাজানকে এগিয়ে না এনে শেষবিরতি দিয়ে রামাজানের রোযা সুন্দরভাবে রাখার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। তবে যাদের প্রতিমাসে এদিন রোযা রাখার অভ্যাস তাদের কথা ভিন্ন। অপরদিকে আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ হিসেবে যাদের ইচ্ছা হয়, শবে বারাআতের দু’দিন আগের থেকে রোযা রেখে শবে বারাআতের রোযা সহকারে মোট তিনদিন রোযা রাখতে পারেন।

কিন্তু এই রাতে বিশেষভাবে গোসল করে বিশেষ পবিত্রতা অর্জন করার নিয়ত করা, এটাকে ভাগ্য রজনী মনে করা, দলবদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা,এদিনে রোজা রাখাকে বিশেষ ফজিলত মনে করে বাধ্যতামূলক করে নেওয়া বিদাত হবে। কারন ভাগ্য রজনী হল লাইলাতুল কদর, যা রমজানের শেষ ১০ দিনের একটি বেজড় রাতে রয়েছে।

মুফতী তাকী উসমানী(রহঃ) এ বিষয়ে বলেন- অত্যন্ত দুর্বল একটি হাদীসে এসেছে রোযার কথা। এজন্য এই রাতে রোযা রাখা সুন্নাত নয়। শবে বরাতের কোনো রোযা নেই। তবে যেহেতু রাসূল সা. শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে সিয়াম (রোযা) রাখতেন সেহেতু এই মাসে সিয়াম রাখা যাবে যেকোনো দিন। আর প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ সিয়াম রাখা তো সুন্নাত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সিয়াম রাখলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই নিয়ত রাখা যাবে না যে, এটি শবে বরাতের রোযা। তিনি তার অন্য লেকচারে এই রাতে হালুয়া-রুটি খাওয়ার উৎসব করা,হইহুল্লোড় করা,আতশবাজি,মসজিদে দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়াকে বাজে প্রথা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং সুন্নাহ মনে করে এই রাতে গোসল করাকে বিদাত বলেছেন।

========================

শেষ কথা হল এই যে- মধ্য শাবান মানে শবে বারাত নয়। কারন শবে বারাত শব্দটা ভিন্ন কিছু বুঝায়। শবে বারাত বলতে আমরা বুঝি এই রাতে রিজিক বিতরন করা হয়, ভাগ্য লেখা হয় ইত্যাদী। মূলত: এটা বানোয়াট কথা, এটি কোনো জাল হাদীস দ্বারাও প্রমানিত নয়। কাজেই মধ্য শাবানকে আমরা মধ্য শাবানই বলব। আর এই রাতের ফজিলত সহি হাদীস দ্বারা প্রমানিত এবং যতটুকু প্রমানিত ততটুকু্ই করতে হবে, বেশী নয়। যারা এই রাতে বরকত হাসিল করতে চায় তাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করতে হবে, নইলে তা পুরেপুরি পরিতাজ্য হবে। আর সেই সুন্নাহ হল রাতে নফল নামাজ ধীর স্থিরভাবে আদায় করা, সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করা। রোজা রাখার বিষয়টি যেহেতু যঈফ হাদীসে এসেছে তাই এই দিন বিশেষ নিয়তে রোজা না রাখাই ভালো হবে। কিন্তু যেহেতু প্রতি মাসেই ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোজা রাখা সহিহ হাদীস দ্বারা সুন্নাহ প্রমানিত, তাই সেই ধারাবাহিকতায় কেউ তা রাখতে পারে। আর এ বিষয়ে মুফতী তাকী উসমানী(রহঃ)এর অভিমত আনা হয়েছে,কারন হানাফী , বিশেষ করে দেওবন্দী সিলসিলার আলেমগন উনাকে অনুসরণ করেন। সেসব আলেমদের প্রভাবই ভারতীয় উপমহাদেশে বেশী, তাই বেশী সংখ্যক মানুষ গোড়ামী বাদ দিয়ে সঠিক পথ ধরবেন বলে মনে করি। সুন্নাহ অনুসরনের ভেতরই কল্যান রয়েছে। বিদাত অনুসরনের ভেতরই ধ্বংস রয়েছে।

আর যারা বলছেন মধ্য শাবানে কোনো আমলই নেই, তাদের বক্তব্যও সত্য নয়। কারন একটি সহি হাদীসে এটার বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে, আর সেটা আলবানী(রহঃ) তার সহি কিতাবে সংকলন করেছেন। উনার উদাহরন আনা হয়েছে যাতে আহলে হাদীস বা সহি আক্কীদার অনুসারী হিসেবে দাবীদার মানুষেরা বিষয়টি নিয়ে অযথা কথা না বলেন। কারন আহলে হাদীসগণ উনার গবেষণায় আস্থা রাখেন।

আমার উদ্দেশ্য হল এই যে- শবে বারাত বা মধ্য শাবানের বিষয়ে যতটুকু সঠিক তা মানুষকে জানানো। মানুষ যাতে উপকৃত হতে পারে। সঠিক সুন্নাহ চিনতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বারাত নিয়ে যেসব বেদাতী সাংষ্কৃতি চালু আছে তা থেকে যেন আমরা বের হয়ে আসতে পারি। অযথা এ দিনটিতে অতিরঞ্জিত করে যেন আমরা বিদাতে লিপ্ত না হাই।

বি:দ্র: আমি যেসব সূত্রের আলোকে লিখলাম, সেসব সূত্র অনলাইনে কিছু ভায়ের থেকে পেয়েছি। একজন আমাকে ইনবক্সে তথ্য দিয়েছেন,আরেকজনের পোস্ট থেকে তথ্য নিয়েছি। আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন এবং সম্মান বৃদ্ধী করুন !

রসূল(সাঃ)বলেন- প্রত্যেক বিদাত হল গোমরাহী আর গোমরাহীর পরিনাম হল জাহান্নাম- (বুখারী)

বিষয়: বিবিধ

১২২৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385175
২৭ এপ্রিল ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : হজরত আয়েশার রাঃ রসুলকে নিয়ে সন্দেহ না হলে হয়ত তিনি সহ আমরা কেউই এ খবরটি জানতে পারতাম না। এমনকি তার মুহূর্ত আগে হজরত আয়েশা রাঃ ও জানতেন না। অতএব এইবাদত আর কেউ করতেন কি না তাও আমরা জানিনা। কিন্তু কি ভাবে টা আমাদের মাঝে জেঁকে বসল তার সন্ধান জানালে খুশী হব। আমি শুনেছি অবিভক্ত ভারতে মুসলীম ছেলেমেয়েদের হিন্দু বন্ধুদের সাথে শীবরাত্রী পালনকে বন্ধ করার জন্য হুজুররা এ রাতকে ঠিক তাদের আদলে পালন করার সুযোগ করে দেন। আমরা ছোট বেলায় বাড়ি কবরস্থান সজিদে মোমবাতী জ্বালাতাম আর ধুমসে বাজী ফোটাতাম। উদ্দেশ্য ছিল সকলকে জাগিয়ে রাখা। অবশ্য আমরা ইবাদত হালুয়া রুটিও দেখেছি। সত্যটি আল্লাহই জানেন।
০৯ মে ২০১৮ সকাল ০৫:১৪
317652
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মধ্য সাবানে যে ইবাদত তা ব্যক্তিগত, আর এর শিক্ষা হল এই যে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ না রাখা,শিরক না করা....দেশে যা হয় সবই বিদাত
385195
২৯ এপ্রিল ২০১৮ দুপুর ০১:০৪
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : মুট কথা হলো শবে বরাত নামে কোনো বাড়াবাড়ি করা যাবে না, ভাল লাগলো খুবই মূল্যবান জিনিস তুলে ধরেছেন
০৯ মে ২০১৮ সকাল ০৫:১৪
317653
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সঠিক ধরেছেন। এটা ব্যক্তিগত ইবাদত,,আমরা এর নামে বিদাত করি
০৯ মে ২০১৮ সকাল ১১:২৬
317660
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : এই নিয়ে আমি বাসায় কথা বলেছিলাম বাসায় আম্মু পড়ে সবাই আমাকে জামাতি এইসব না কি শুধু জামাতিরা বলে
১০ মে ২০১৮ সকাল ১১:২৫
317669
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সঠিক কথা বললে এসব শুনতেই হবে,,যত গালি খাবেন আল্লাহ তত মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন
১০ মে ২০১৮ দুপুর ০১:০২
317670
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File