শালীন পোষাক কি ধর্ষন রোধ করে !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০৮:৪৬ দুপুর
=======================
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ধর্ষন ও প্রতিকার নিয়ে এবং এসংক্রান্ত বিষয়ে ধর্মীয় বিধি বিধান নানানভাবে বিশ্লেষনের ভেতর এক ধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ তৈরী করে চড়াও হচ্ছে এক পক্ষ অপর পক্ষের উপর। তবে ইতিবাচক দিক হল এটা যে, প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হলেও সম্মিলিত মানুষের সকলেই এই অনাচারের বিপক্ষে।
আল-কুরআনে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- হে রাসুল ! মুমিন পুরুষদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে,,,মুমিন নারীদেরকে বলুন-তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে......
রাসূল(সাঃ)আমাদেরকে বলেছেন-যদি তোমার লজ্জা না থাকে ,তবে যা খুশী তা করতে পারো.....,,,তিনি আরও বলেছেন রাস্তায় চলার সময় কোনো নারীর দিকে দ্বিতীয়বার তাকাবে না।......এমনকি প্রথমবার তাকিয়ে অপলকনেত্রে অবলোকন করতে বলা হয়নি। এটা হল ইসলামে আমাদের শালীনতা।
ইসলাম আমাদের পুরুষদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে সর্বপ্রথম চোখের হেফাজত করতে। এটি আল্লাহর আদেশ, যা পালন করা ফরজ। এটি বাস্তবায়িত হলে রাস্তায় নারী খোলামেলা চললেও পুরুষ নিরাপদ থাকবে(যদিও তাদেরকে শালীনভাবে চলতে বলা হয়েছে)। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,ফলে সকলে তাদের দৃষ্টি সকল সময়ে হেফাজত করতে সক্ষম হবেনা। সকলের ইসলাম বোঝা ও মানার মাত্রা এক রকম নয়। সকলে আল্লাহকে ভয়ও পাবেনা। কিন্তু দৃষ্টিশক্তির হেফাজত করলে অধিকাংশ বিশ্বাসীরা বেচে যাবে অনেক হারাম থেকে। এরপর নারীও যদি পুরুষের থেকে তার চোখের হেফাজত করে, তাহলে এখানে সেখানে তাদের চোখাচোখি ও দূর থেকে ভাব বিনিময়ের সম্ভাবনা ব্যপক কমে আসে। মানুষের ভেতর ফিতরাত দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবে শালীন নারীর প্রতি মানুষের লোভাতুর দৃষ্টি কম যায়। আর উক্ত নারী যদি তার দৃষ্টিকে দ্রুত সরিয়ে নেয় তবে পুরুষটির ব্যক্তিত্ব জাগ্রত হয়ে ওঠে এবং সেও নিজেকে সরিয়ে নেয়। এই বিষয়টি আল্লাহর প্রদত্ত একটি বিশেষ রক্ষা কবচ। এরসাথে আছে লজ্জা,জড়তা,অপরাধবোধ, যা সরাসরি চরিত্রের রক্ষা কবচ।
পরের স্তর হল লজ্জাস্থানের হেফাজত। যদি আল্লাহর প্রথম আদেশ চোখের হেফাজত সঠিক মাত্রায় কাজ না করে, তাহলে লজ্জাস্থানের হেফাজতের কারনে নারী-পুরুষ উভয়ে বেচে থাকবে। মানুষকে আল্লাহ নানান সব অনুভূতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে নানানভাবে পরিক্ষা করছেন। নিজেকে বিভিন্ন সময়ে বাচিয়ে রাখা কঠিন,তাই তিনি এই বিশেষ নিয়ন্ত্রনের কারনে মহা পুরুষ্কারের ঘোষনাও করেছেন। তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার কথাও বলেছেন। তার ভেতরের বিবেক,তার অহরিত জ্ঞান,আল্লাহর মহা শাস্তির ভয়,লজ্জা,মানুষের সামনে অপদস্ত হওয়ার ভয় সব মিলে তাকে বিপরীতলিঙ্গের সাথে অবাধ মেলামেশায় বাধা দেয়। কিন্তু সকল মানুষ সমান বিবেকবান হবেনা।
কোনো মানুষ জন্মগতভাবে ধর্ষক হয় না। বরং রাসূল(সাঃ) বলেছেন-প্রত্যেক মানক শিশুই ফিতরাতের উপর বা ইসলামের উপর জন্মগ্রহন করে, এরপর তার পিতা-মাতা পরিবেশের কারনে সে ইহুদী,নাসারা ,মুশরিক হয়। ..........মানুষদের ভেতর কিছু মানুষ জীবনের কোনো একটা সময়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের ব্যাপারে অতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে ওঠে এবং একসময় তা মানসিক ব্যাধীতে রুপান্তরিত হয়। তার এই উৎসাহ ধর্মীয় আচরন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় নানান সামাজিক,ব্যক্তিগত,পারিবারিক কারনে। উক্ত ব্যক্তিদের কিছু অংশ সামাজিক বিয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। আর কিছু মানুষ বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক মনের ভেতর সেই বিভৎস্য আক্রোশের বীজটি লালন পালন করে বড় করে তোলে। কখনও যদি সে কোনো অসহায় নারীকে নির্জনে পায়, তবে তার অবচেতন বা সচেতন মনে লালন করা সেই মন্দ বাসনাটি জাগ্রত হয়। এ পর্যায়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটি যত বেশী সুন্দরী ও আকর্ষনীয়া হয় তত বেশী তার কু-চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় উক্ত নারী যদি মযলুম হয়ে পড়ে, বা অন্য মানুষের আগমনের সম্ভাবনা কমে যায়, বা উক্ত ব্যক্তির অভয়ারন্যের ভেতর সে নারী পড়ে যায়, বা সমাজিক,রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যাপারে লোকটি আশাবাদী হয়ে ওঠে অথবা লোকটি যদি ক্ষমতাশালী হয়ে থাকে তাহলে সে উক্ত সময়ে তার ধর্ষন চিন্তার সফল বাস্তবায়ন করে থাকে।
প্রশ্ন হল উক্ত নারী যদি পর্দা করেন বা যদি তিনি ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী চরম পরহেজগার কেউ হন,তাহলে কি তিনি এই ধর্ষকের হাত থেকে নিরাপদ ???
উত্তর হচ্ছে না, তিনি নিরাপদ নন। কারন আমরা ধর্ষন ও যৌনতার বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলার কারনে এরকম চিন্তা করে থাকি যে, ধর্ষকের হাত থেকে পর্দানশীন নারী নিরাপদ। তবে ধর্ষকের ধর্ষন চিন্তা যৌনতারই একটি অতিমাত্রা,যা তাকে মানসিক রোগীতে পরিনত করে এবং তাকে ভয়াবহ করে তোলে মানুষের সমাজে। বিষয়টি মেনাজগতে সুক্ষ্ণভাবে ঘটার কারনে কখনও কখনও ধর্ষক নিজেও বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করেনা। পর্দাপ্রথা,শালীনতা,সামাজিক শৃঙ্খলা,ধর্ম এই বিষয়টিকে এভাবে নিরাপদ রাখে যে- মানুষ শৃঙ্খলিত হয়,অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয়,সমাজের ভয়,আল্লাহর ভয় তাকে নিয়ন্ত্রিত রাখে, এবং তখন শালীন পোষাক তার কাছে শালীন মনে হয় এবং তার ভেতর কু-স্বভাব থাকলেও তা বাড়ার সুযোগ পায়না। আর আইনের শাসন বলবৎ থাকলেও মানুষ শাস্তির ভয়ে বিরত থাকে। তারপরও এটি ঘটে থাকে। যেমন মদীনায় রসূল(সাঃ)এর সময়ে এক নারী ফজরের সময়ে মসজিদে যাবার পথে এক লোক তাকে ধর্ষন করে। মহিলার চিৎকারে কিছু সাহাবী লোকটাকে ধরে ফেলে এবং পরে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়। উক্ত লোক ইসলামে ধর্ষনের শাস্তির বিষয়ে অবগত ছিলো কিন্তু সে পরোয়া করেনি। অর্থাৎ সকল অবস্থা ইসলামের অনুকূলে থাকলেও কিছু অপরাধ ঘটবে,,তবে তা অতি অল্প মাত্রায়।
তুলনামূলকভাবে বললে বলতে হয় যেসব নারী খোলামেলা চলাচল করেন, ধর্ষনের ক্ষেত্রে তাদের ঝুকি বেশী। কারন তার অবয়বের কারনে ধর্ষকের মানসিক ব্যাধী বেড়ে যায় এবং সে উৎসাহিত হয়ে ওঠে। আর কখনও যদি নারীর থেকে কিছুটা উৎসাহ পেয়ে যায় উক্ত কুৎসিত চিন্তার মানুষটি, তাহলে সে ধর্ষনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মানুষেরা ঢালাওভাবে বলছে নারী পর্দা করলে ধর্ষন থাকবে না। এটা পুরো সঠিক নয়। কারন পর্দা করলে অবাধ যৌনতার বিষয়টি রোধ হয়। পর্দার কারনে ব্যাভীচার কমে যেতে পারে আবার ধর্ষনের মাত্রাও কমতে পারে, কিন্তু ধর্ষনের বিষয়টি পুরো আলাদা। একজন ধর্ষক মহা পর্দানশীন মহিলাকে সুযোগমত পেলেও ধর্ষন করবে।
ধর্ষকদের ভেতর উচু স্থরের একটি শ্রেণী আছে, এরা মানসিকভাবে পচনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করে। এরা ধর্ষনের পর হত্যা করে। অন্য ধর্ষকরা কেবল ধর্ষন করেই খ্যান্ত থাকে। ধর্ষন হল একটি বিকৃত নেশা। ব্যক্তি তার নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে পচাতে চায়। নিজেকে এই নেশায় ধ্বংস করতে চায়। বিকৃতির পর বিকৃতিতে সে চরম পুলক অনুভব করে। ব্যক্তি জীবনে ঘটিত নানান অঘটনও কখনও তাকে অন্যের প্রতি প্রতিশোধপরায়ন করে তোলে এবং কোনো একটি পর্যায়ে অপরাধ প্রবন করে তোলে। কিভাবে একজন সুস্থ্য মানুষ ধর্ষক হিসেবে গড়ে ওঠে সেটা বিশাল এক বিশ্লেষণ কিন্তু এর প্রতিকার কঠিন নয়।
শাস্তি কখনও অপরাধ নিয়ন্ত্রন করেনা বরং এটি অপরাধ দমনে একটি নিয়ামক। মানুষকে আখলাকুল মাখলুকাত হিসেবে গ্রহন করে তাকে সঠিক মোটিভেশন প্রদানই হল সকল প্রতিকারের মূল। সঠিক মোটিভেশনই মানুষকে সকল পাপ থেকে বেচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাকে সৎ কাজে প্রতিযোগী করে তোলে। পরিবার যখন এই দায়িত্ব গ্রহন করে, তখন শিশু একটি সফল তরুন হয়ে ওঠে ,আর সমাজ যখন সঠিক মোটিভেশনের আলোকে সজাগ থাকে,তখন সেই তরুনটি সত্যের আলোয় সিক্ত থাকে। সামাজিক শাসন তাকে সঠিক দিকে চলতে বাধ্য করে। তার ভেতর লজ্জা,ভয় সমানভাবে কাজ করে, ফলে অপরাধে সে উৎসাহবোধ করেনা। নিজেকে নিজে সে নিয়ন্ত্রন করতে শিখে। তার ভেতর সুন্দর জীবন দর্শন তৈরী হয়। সে সঠিক বিধান অনুযায়ী জীবন পথে চলতে থাকে। এরপর রাষ্ট্রীয় বিচার ও শাসনের সঠিকতা তাকে হুশিয়ার করে তোলে। আমার কাছে সেই মোটিভেশনের মূলমন্ত্র হল ইসলাম,যা আল্লাহ নামক স্রষ্টার কাছ থেকে এসেছে। আর যেহেতু স্রষ্টাই জানেন কোনটি সঠিক, তাই ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। এটির মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে,পারিবারিক জীবনে, সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগালে মানুষেরা সঠিকভাবে জীবন পরিচালনার শিক্ষা পাবে। পরিবার,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,রাষ্ট্র সকল স্তর থেকে সে উৎসাহিত হতে থাকবে এবং অপরাধের রাস্তা কঠোর হাতে বন্ধ করার কারনে সে সুনিয়ন্ত্রিত হবে। এরপরও যদি অপরাধ ঘটে,তবে সেটার পরিমান এতটাই কম হবে যে, তা নিয়ন্ত্রন করা একেবারে সোজা হবে।
এর বিপরীতমুখী চিত্র যত বেশী প্রকট হবে,ততবেশী সামাজিক অপরাধ বেড়ে যাবে। আর বর্তমানে অত্যন্ত হৃদয়বিদারকভাবে ঘটে চলা হত্যা,ধর্ষনই তার প্রমান। এখান থেকে মুক্তির একটাই রাস্তা আছে, তা হল ইসলামকে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আলু-কুরআনে বলেন- " তবে কি তোমরা এই কিতাবের কিছু অংশ গ্রহন করেব এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করবে ? যদি তাই করো তবে দুনিয়াতে তোমাদের জন্যে রয়েছে চরম লাঞ্চনা এবং আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি.....
বিষয়: বিবিধ
৯৭১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একমাত্র ইসলামই পারে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে। আর সেটাই উত্তম পথ। ধন্যবাদ৷
ফিরে আসচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন