২১শে ফেব্রুয়ারী !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:৪১:৫৪ সকাল



============

দুনিয়াতে যত ভাষা রয়েছে এবং যত ভাষা আবিষ্কৃত হবে,সকল ভাষাই আল্লাহর তৈরী। তিনিই মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন ,তাকে নানানভাবে সক্ষম করেছেন। মানুষকে এত কিছু দিয়েছেন যে,মানুষ এখনও পুরো উপলব্ধী করতে সক্ষম হয়নি যে তার দ্বারা কি কি সম্ভব। বিজ্ঞানের নব নব সব আবিষ্কারে আমরা অবাক হই, আল্লাহ এই অভিনব ও জটিল জ্ঞান মানুষকে প্রদান করেছেন। এই বিজ্ঞানেরই একটি অতি সুন্দর বিষয় হল ভাষা তত্ত্ব।

দুনিয়ার প্রথম ভাষা কি তা আমরা জানিনা। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অনুমান ছাড়া কোনো তথ্য নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত আদম(আঃ)কে সকল ভাষা শিখিয়েছিলেন,সকল কিছুর নাম শিখিয়েছিলেন। তাকে মহা জ্ঞানীর ছাড়্পত্র দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম দিকে জোড়ায় জোড়ায় সন্তান জন্ম নিতে লাগল এবং এক গর্ভের সন্তানের জন্যে অন্য সময়ে জন্ম নেওয়া বাচ্চার সাথে বিয়ে জায়েজ করলেন আল্লাহ। এভাবে বংশ বিস্তার ঘটতে থাকল। ঠিক কতটা সময় পর সেসব সন্তানগণ দুনিয়ার অন্যদিকে যেতে শুরু করল, সে সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে বাইরে ছড়িয়ে যাবার প্রবনতা অব্যাহত ছিলো। আল্লাহ নানান বর্ণের,আকারের সন্তানসমূহ প্রদান করতে থাকেন এবং পরবর্তীতে বৈচিত্রপূর্ণ সেসব মানুষেরা একে অপরের সাথে পরিচিতহয়েছে এবং নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করেছে।

মানুষের ভাষা সম্পর্কে নৃতত্ত্ববীদরা যা বলেন সেটার প্রায় পুরোটাই ভুল ভ্রান্তিতে পূর্ণ। তারা বিশ্বাস করে প্রথমে মানুষ কোনো ভাষা জানত না, আকারে ইঙ্গিতে কথা বলত। সম্ভবত বিবর্তনবাদ অনুযায়ী এ কল্পনা করা হয়েছে, কারন তারা মনে করে পূর্বে মানুষ বান্দর ছিলো,,আর বান্দর তো কথা বলতে পারেনা ইত্যাদী। কিন্তু আসল বিষয় হল এটা যে, যদি আদী পিতা মাতা আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ)কে মেনে নেই, তাহলে উক্ত বিজ্ঞানীদের কথা বিশ্বাস করার কারন নেই। আর এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আসলে কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য গবেষনা নেই, কেবল অনুমান নির্ভর কথামালা রয়েছে।

আল্লাহ আদম(আঃ)কে ভাষা শিখিয়েছিলেন এবং তিনি সেই ভাষায় আল্লাহর সাথে ,অন্য ফেরেশতার সাথে,মা হাওয়ার সাথে কথা বলতেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি কিতাব পেয়েছিলেন এবং তার সন্তানাদীর মাঝে আল্লাহর বিধান পৌছে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার সন্তানাদীর ভেতরও আল্লাহ নবী প্রেরন করেন এবং কিতাব প্রদান করেন। আর তারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মূল ভাষাটি নানানভাবে পরিমার্জিত,পরিবর্ধিত হয়ে ভিন্ন ভাষায় পরিনত হয়। ভাষা বিজ্ঞানে এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। যেমন বাংলা ভাষা মাগধী প্রাকৃত নামক ভাষা থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। এমনকি হিন্দী ও উর্দূ ভাষাও একই উৎস্য থেকে আসা। হিন্দী ও বাংলায় সাষ্কৃত ভাষার ব্যপক প্রভাব ছিলো। বর্তমানে আরও পরিমার্জিত হয়ে আমাদের মুখের ভাষায় পরিনত হয়েছে। পূর্বে দাপ্তরিক কাজে সাধু ভাষার প্রচলন ছিলো, বর্তমানে সকল স্থানে চলিত ভাষার প্রচলন হয়েছে। প্রতিনিয়ত ভাষার অভিধানে নতুন নতুন শব্দ সংযোজিত হচ্ছে, এটা কেবল বাংলায় নয়, সকল ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কখনও কখনও এই পরিবর্তনের কাজটা এমনভাবে হয় যে মূল ভাষাটা বিলুপ্তও হয়ে যায়। দুনিয়াতে এমন অনেক ভাষা আছে, যেটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে পরিবর্তনের অতি মাত্রার কারনে।

ভাষা বিজ্ঞানীরা বলেন স্থান কাল ভেদে ভাষার মধুরতা নির্ভর করে। যে স্থান খুবই সবুজ,ঝর্ণাধারা,নদী,ফলমূল,ফসল,পাখির গানে ভরপুর সেসব স্থানের ভাষাও সুমধুর হয়। আর যেসব স্থান খুবই রুক্ষ,সেসব স্থানের ভাষার মধ্যে মাধুর্য্য কম থাকে। এর কারন হল ভাষার মূল শব্দে উপাদান হল পারিপাশ্বিকতা। নদী নালা,ঝর্ণাধারা,বনভূমী,পাখ পাখালির নানান সব শব্দ মানুষ নানান সময়ে নানানভাবে রপ্ত করে এবং এসব ভাষার ভেতর সুন্দরভাবে স্থান করে নেয়। নানান সব প্রবাদ প্রবচনও আবহাওয়া জলবায়ু,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়। নানান উদাহরনসমূহ মানুষের মুখ ঘুরে তাদের ভাষা ভান্ডারে স্থান করে নেয়।

বাংলাদেশ তৈরী হয়েছে উজানের পলিতে। খুবই উর্বর ও নরম মাটির দেশ এটি। সুজলা শস্য শ্যামলা বাংলার আসল রূপ বর্তমানের সাথে খাপ না খেলেও, এর প্রকৃতি অসাধারন সুন্দর। প্রবল উর্বর মাটিতে দীর্ঘকাল পর্যন্ত মানুষ কোনো রকম সার প্রদান ছাড়াই চাষাবাদ করত এবং ভালোভাবে টিকে ছিলো। এখানকার মানুষেরা ঐতিহ্যগতভাবেই নরম মনের এবং বন্ধুবৎসল। এরা অতিথীপরায়তার জন্যে বিখ্যাত। অপরের জন্যে উপকারী মনের অধিকারী। এখানে যে ভাষা বিকশিত হয়েছে তা আসলেই শ্রুতিমধুর। মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী দুনিয়ার সকল ভাষার ভেতর বাংলার অবস্থান ৭ম।

সকল মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা প্রিয় হয়। এর কারন হল ছোটবেলা থেকে সেই ভাষায় তার সকল ভাব প্রকাশিত হয়। ধাপে ধাপে সে ওই ভাষার ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে এবং মনের অবস্থা,ভাব অন্যের সাথে সঠিক মাত্রায় ও আবেগে প্রকাশ করতে পারে বা শিখে। ওই ভাষা তার সকল অবস্থা,আবেগ,অনুভূতি,সংষ্কৃতি লালিত হয় বলে এর প্রতি তার গভীর আবেগ গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে সে অন্য যত ভাষাই শিখুক না কেন, মাতৃভাষার মত ভাব সে প্রকাশ করতে পারেনা। তাই মাতৃভাষাই সবচেয়ে সুন্দর ভাষা। আল্লাহ তায়ালা যত নবী,রসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন,তাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় ওহী নাযিল করা হয়েছে,যাতে তা সঠিক মাত্রায় উপলব্ধী করতে পারে এবং অন্যের কাছে সঠিকভাবে প্রচার করতে পারে।

জ্ঞানকে বিকশিত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল মাতৃভাষার লালন করা। সঠিকভাবে জ্ঞান আহরণ ও তা হৃদয়াঙ্গম করতে মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা অপরিহার্য্য। কিন্তু আমাদের বাঙ্গালী সমাজের ভেতর থেকে এমন এক সম্প্রদায়রে আবির্ভাব ঘটেছে,যারা বাংলাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে নিজেদের প্রগতিশীলতার চাদরে। ইংরেজী বা ভিন্ন কোনো ভাষা শেখাকে উন্নত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করেছে,অন্যকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে। নিজেদের সন্তানের বাংলা না জানা, না বোঝাটাকে সামাজিক উচ্চ মর্যাদা লাভের একটি উপলক্ষ হিসেবে গ্রহন করেছে। এমন এক জেনারেশন তৈরীকে বাধ্য করেছে, যারা বাংলাকে ফেলতে গিয়ে ফেলতে পারেনি আবার গিলতেও পারেনি,, ফলে ইংরেজী বাংলার মিশ্রনে এক অশ্রাভ্য ভাষা তৈরী করে তারা সেটাকে সমাজে প্রচলন করেছে। এটাকে তারা উচু শ্রেনীর ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও করেছে।

আবার এরাই বা এদের পরিবারের লোকজনরাই ২১শে ফেব্রুয়ারীর ভাষা দীবসে অধিক ক্রন্দন করে থাকে। এরাই একুশ নিয়ে চরম মাতামাতি করে। এরাই ভাষার লালন,সংরক্ষনের স্থলে ভাষা নিয়ে মূর্তী পূজায় লিপ্ত হয় এবং পুরো জাতিকে তাতে নিবদ্ধ করে। এরাই তারা, যারা ফেব্রুয়ারীতে বাংলা লেখা জামা-কাপুড় পরিধানের স্টাইলকে প্রচলন করেছে, এরাই গাছে গাছে বাংলা বর্ণমালা ঝুলিয়ে ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অভিনয় করেছে। এরা ভাষা শহীদদের শ্মরনে তৈরী স্তম্ভে ফুল দেয় খালি পায়ে, আবার এরাই ভাষাকে কলুষিত করতে সমস্ত রকমের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বাংলা ভাষার প্রচলন সর্বত্র হোক এটাই প্রচারিত হয়, কিন্তু যে শ্রেণীর দ্বারা এটি প্রচলিত হবে,সংরক্ষিত হবে সেই শ্রেনীই নগ্নভাবে ইংরেজী চর্চা করে এবং তাদের সন্তানরা বাংলার আশপাশেও নেই। এই প্রতারক ভাষা প্রেমীদের ভাষা সঠিক মাত্রা ও মান হারিয়েছে নীজ দেশেই এবং তা এমনই হবার ছিলো। বাংলাদেশের কোনো অফিস আদালতে এখন আর দাফতরিকভাবে বাংলা ব্যবহৃত হয়না। কেউ যদি বাংলা ব্যবহার করে তাহলে সে লাঞ্চিত হবে এবং বঞ্চিতও হবে। তাকে অশিক্ষিতও আখ্যায়িত করা হতে পারে। বাংলায় কোনো চাকরী প্রার্থী জীবন বৃত্তান্ত তৈরী করলে বা আবেদন করলে তাকে সর্ব প্রথম অযোগ্য ঘোষণা করে প্রত্যাখ্যান করা হবে, এটাই অলিখিত বিধান।

যাইহাক, আমিও সেই সকল সুশীলদের মত মায়া কান্নারত হয়ে বললাম--সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু হোক, বিশুদ্ধভাবে ভাষা চর্চা করা হোক, ভাষার ঐতিহ্য রক্ষিতহোক,এর সৌন্দর্য্য বিকশিতহোক ! কিন্তু এসব কে বিকশিত করবে,,কাদের দ্বারা প্রচলিত,প্রচারিত হলে তা সত্যিই কার্য্যকরী হবে,,সে আমরা সবাই জানলেও নিরবই থাকব ! নিরব ভাবেই তাই আমাদের বাংলা ভাষার অধিক প্রচলন ও সংক্ষন কামনা করলাম !

বিষয়: বিবিধ

৭৩৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384838
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০৩:৩৩
আবু জারীর লিখেছেন : ভালো লাগলো

ধন্যবাদ
০৫ মার্চ ২০১৮ সকাল ১১:২৬
317417
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File