ধৈর্য্যহীনতা ফিৎনার একটি কারন !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৩:৫৩:২৩ রাত
: হুজুর আমি বহু পথ ঘুরে বহু দ্বীনদার মানুষের সাথে কথা বলে অনুভব করেছি যে, আপনি হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আপনার থেকেই আমি কিছু শিখতে চাই। চারিদিকে ফিতনা আর ফিতনা, এর ভেতর সত্য খুজে পাওয়া আমার মত সাধারন মুসলিমের পক্ষে দূরহ। আপনি আমাকে সাহায্য করুন !
আলিম: দেখুন, আপনি আমার সম্পর্কে যেভাবে ধারনা পোষন করেছেন,তা সেভাবে সঠিক নয়। আমি সাধারন মুসলিম, আমি পাপী। আমি পাপ করি, ক্ষমা চাই, ফিরে আসি। আর তাকওয়া কার কেমন, সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা। তবে আমি যতটুকু জেনেছি, তা আপনাকে জানাতে পারি।
: জি হুজুর, আমি জানতেই এসেছি।
: আপনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো মুখাপেক্ষী হবেন না। কখনও আচরন ও কথার মাধ্যমে তার সমক্ষতা দাড় করাবেন না। তার একত্ববাদের ক্ষেত্রে সুক্ষ্ণভাবে কোনো শরিক দাড় করাবেন না। তাকে ভয় করবেন, এবং তাকে ভয় করেই কোনো কাজ করবেন ও কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে আপনার ইবাদত কবুল হতে পারে।
: প্রাকটিস করব কিভাবে ?
:কোনো বিষয় যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়, যা মানুষ দিতে পারে, সেটাও আপনি আল্লাহর কাছে চাইবেন। এরপর মানুষের কাছে সেটার ব্যপারে বলবেন। ধরুন আপনার চাল,ডাল কেনা প্রয়োজন , আপনি পয়সা দিয়ে দোকান থেকেই তা কিনবেন, কিন্তু আপনি সর্বপ্রথম আল্লাহকে বলুন , ইয়া আল্লাহ ! আমার চাল শেষ হয়েছে, আপনি রাজ্জাক, আপনি আমাকে চাল,ডাল দিন। এরপর আপনি বাজারে গিয়ে চাল ক্রয় করবেন।
: এতে কি চাল,ডাল বেড়ে যাবে বরকতের কারনে ?
: বাস্তবে সেটা বেড়ে যাবে কিনা আল্লাহ সেটা দেখবেন। কিন্তু আমরা এ আচরন করার মাধ্যমে আমাদের দাসত্ব প্রকাশ করলাম। এতে সর্ব বিষয়ে আল্লাহকে শ্মরন করা হল। তার কাছেই সবকিছু আশা করা হল। এতে তিনি মারাত্মক খুশী হন। আর এসব বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেই রসূল(সাঃ)বলেছেন- এমনকি জুতার ফিতাটাও আল্লাহর থেকে চেয়ে নাও।......এটা হল ভালো দাসের আচরণ। এতে আমাদের রহমত ও বরকত পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক হয়। আর যেহেতু ব্যক্তি তার প্রত্যেক কাজে আল্লাহকে বাস্তবে শ্মরন করছে, তাই শয়তান ধোকা দেওয়ার চান্স খুব কম পায়। একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের দোয়া কবুল হয়না আল্লাহর উপর আস্থা হীনতার কারনে। তারা আচরনের মাধ্যমে প্রকাশ করে যে তারা আস্থাহীনতায় ভূগছে। আস্থাহীনতার আরেক নাম বিশ্বাস বা আল্লাহর উপর ঈমান হীনতা। .....আমি দোয়া করছি িকন্তু আল্লাহ তো কবুল করল না ! আমার কষ্ট দিয়ে আল্লাহর লাভ কি ! আপনি ভালো থাকেন,, আমার কথা আর বইলেন না,,,,যাচ্ছে চলে,,,এত লোকে এত দোয়া করল,,,আমি কত কাদলাম আল্লাহর কাছে....এটাই আমার কপাল ! ,,,,,, এত কষ্ট কিভাবে সহ্য করব,,, এটা তো সীমা ছাড়া,,,এত বোঝা চাপালো আল্লাহ !...................তুমি এসব কথা বলবে না। মরে যাবে কিন্তু তবুও যেন তোমার মুখ থেকে এসব কথা বের না হয়। কারন এসব কথা শয়তান বের করায়, আর এটির ভেতর আল্লাহর উপর আস্থাহীনতা লুকিয়ে রয়েছে। আর এটা বান্দা প্রকাশ করলে আল্লাহ খুশী হন না। এত কষ্ট করার পরও যদি আখিরাতে কষ্টের বিনিময় না থাকে, তবে তার চেয়ে আফসোসের কিছু নেই। কিছু ক্ষেত্রে নিজের উপর কঠোরতা চাপাবে,,,সেটা ঈমানের দৃঢ়তার ক্ষেত্রে। আর মানুষের অসৎ সমালোচনাকে পাত্তা দিবেনা, তবে সু অচরন করবে তাদের সাথে।
:রহমত পেতে চাই।
:মানুষকে ক্ষমা করবে। আল্লাহও তোমাকে ক্ষমা করবেন। মানুষকে দয়া করবে। ইনসাফ করবে,ইহসান করবে। অন্যের জন্যে ভালো দোয়া করবে। তাহলে সেসব তোমার জন্যে হয়ে যাবে।
: ঈর্শ্বাপরায়তনা,পরশ্রীকাতরতা থেকে রক্ষা পাব কিভাবে ?
: আল্লাহর কাছে সব সময় এই কামনা করবে, ইয়া আল্লাহ আমার জন্যে যা কল্যানকর নয়, তার প্রতি আমার ভেতর যেন আকর্ষণ তৈরী না হয়। আপনিই সর্বোত্ত অভিভাবক হিসেবে আমাকে আপনার পথে সর্বদা পরিচালিত হবার তাওফিক দান করুন ! আর সেই হাদীসটির কথা শ্মরণ করবে,,,,"দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে যদি মাছির ডানার মতও মূল্যবান হত, তাহলে কোনো কাফিরকে তিনি এক গ্লাস পানি পানের সুযোগ দিতেন না....." আবার ওই হাদীসটা,,যেখানে একটি মরা,পচা ও কানকাটা ছাগলকে দেখিয়ে রসূল(সাঃ) সাহাবীদের জিজ্ঞেস করছিলেন,,,এটাকে তোমরা কত দামে ক্রয় করবে ?? তারা বিশ্ময় নিয়ে বলল-এটা আবার কি বিক্রী হয় নাকি !! এটা কে কিনবে !...জবাবে রসূল(সাঃ)বললেন-পুরো দুনিয়া ও এর সকল সম্পদের মূল্য আল্লাহর কাছে এর চাইতেও কম।....অতএব তুমি দুনিয়াকে এভাবে তুচ্ছ জ্ঞান করবে। আল্লাহ অন্যের প্রতি ঈর্শাপরায়নতা থেকে তোমাকে হেফাজত করবেন।
: নিজেকে উন্নত করব কিভাবে ?
: ধৈর্য্যশীল হবে। প্রবল ধৈর্য্য ধারন করবে। অন্যকে গালি দিতে ইচ্ছা হবে,নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা হবে মানুষের আচরন দেখে। আবার কথা বন্ধ করতে ইচ্ছা হবে। তুমি রেগে গেলে-আউযুবিল্লাহিমিনাশ শয়তান হির রাজিম পড়বে। নিজেকে শান্ত রাখবে। অন্যকে রাগের সময় মনে মনেও কটু কথা বলবে না। তাহলে তুমি শ্রেষ্ঠদের শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে আল্লাহর কাছে। মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। ধৈর্য্য এবং ধৈর্য্য।
: হুজুর, আমি আপনার একটা ব্যক্তিগত আমল জানতে চাই যা আপনার কাছেও ভালো লাগে, এবং যে আমলের বিনিময়ে আপনি আল্লাহর সান্নিধ্য বেশী পেতে চান। তেমন একটা গুপ্ত আমল বলুন।
: আমার কোনো গুপ্ত আমল আছে বলে মনে হয়না। আমি সাধারন মুসলিমের মতই আমল করি। তবে একটা ব্যাপার......" আমি টয়লেটে গেলেই ২ রাকাত নামাজ আদায় করি".........ওকি ওকি....কোথায় যাচ্ছ !!.....আরে শুনো দাড়াও....
: শালার হুজুর ! ভেবেছিলাম হক পন্থী। এত কষ্ট করে কাঠখড় পুড়িয়ে তার কাছে বয়ান শুনতে আসলাম,,,আর শালা নাকি টয়লেটে গিয়ে নামাজ পড়ে......। যাচ্ছি এবার আরও বড় আলিমের কাছে.....তার আগে ফেসবুকে স্টাটাস দেই.....
"অমুক হুজুর বলেছে উনি নাকি টয়লেটে ২ রাকাত নামাজ আদায় করেন। আমার নিজ কানে শোনা। আপনার কি বলেন ?? "
কমেন্টস:
১. আবালে আবালে ভরে গেল দেশটা।
২. টয়লেট হুজুর !
৩. মার শালারে,,,জুতা মার !
৪. ভাইজান ঠিকানা দিয়েন উনারে সবক শিখামু !
৫. উক্ত হুজুরের গলায় জুতার মালা ও তার মাথা কুকুরের দেহে ফটোশপে এডিট করে বসিয়ে প্রকাশ।
......আরও এমন কমেন্টস.....
: বড় হুজুর,,,, আপনার কাছে একটা প্রশ্ন আছে।
:জি বলুন।
: অমুক হুজুর বলেছে, উনি টয়লেটে গিয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করেন,, আপনার কি মত ?
: সে তো ভ্রান্ত,,,,,,টয়লেটে গিয়ে টয়লেটের দোয়া ছাড়া অন্য দোয়া পড়াই জায়েজ নেই,,,আর উনি নামাজ পড়েন,,,, কি সর্বনাশ ! এটা কিয়ামতের আলামত ! ভন্ড সব ভন্ড !
এবার ফেসবুকে এই আলেমের বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশিত হল। তার জোরে সোরে প্রকাশিত হল। মানুষেরা নানান মন্তব্য করতে থাকল । উক্ত হুজুরের গুষ্টি উদ্ধার হতে থাকল। একদিন এই বিষয়টি সেই প্রথম হুজুরের দৃষ্টি আকর্ষন করল।
: হুজুর নিজেই একটা ভিডিও তৈরী করে ছাড়লেন।
"অবশ্যই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে....!! তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।"(সূরা আসর)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, 'আল্লাহ বলেন, "যে ব্যক্তি আমার বন্ধু কে কষ্ট দেয়, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দাহ আমার আরোপিত ফরজ কাজের মাধ্যমে, যা আমার নিকট প্রিয় এবং নফল কাজের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এভাবে (এক পর্যায়ে) আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটা-চলা করে। আর যদি সে আমার নিকট কিছু চায়, আমি তাকে দেই এবং যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দান করি।"
(বুখারী)
আমি উক্ত ব্যক্তি যা বলেছিলাম তা হল এই যে, আমি তাকে ধৈর্য্যশীলতার ব্যাপারে উপদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে চরম অধৈর্য্য হয়ে স্থান ত্যাগ করল। আমার অন্য উপদেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করল। আমার কথা বোঝার চেষ্টা না করেই চলে গেল। আমি তাকে ক্ষমা করলাম,আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করেন এবং আল্লাহ যেন আমাকেও ক্ষমা করেন। তবে ব্যাপারটা ছিলো এই যে, আমি তাকে বলেছিলাম, আমি টয়লেটে গেলেই ২ রাকাত নামাজ আদায় করি। আসলে এরপর আমি বলতে চেয়েছিলাম। টয়লেটে গেলেই হাত ধৌত করতে হয় আর তখন ভাবি, হাতই যখন ধুলাম ওজু করতে সমস্যা কি ! এরপর ভাবি ওজুই যখন করলাম...২ রাকাত নামাজ আদায় করলেও তো মস্যা নাই। আমার একান্ত ভালো কোনো আমল থাকলে তা এটাই। কিন্তু লোকটা ধৈর্য্য হারিয়ে চলে গেল এবং কুৎস্যা রটাতে থাকল। আল্লাহ তাকে হেফাজত করুক !
বিষয়: বিবিধ
৭৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন