অবশ্যই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে....!!(সূরা আসর, আয়াত ২)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৫:৫১ রাত
আয়াতটির দিকে লক্ষ করলে অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাওয়ার কথা। কারন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করছেন পুরো মানুষ জাতি ক্ষতির ভেতর রয়েছে। পরের আয়াতে তিঁনি বলছেন-" তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।"
উপরোক্ত প্রত্যেকটি বিষয় ঈমান,সৎকাজ,সৎ কাজে উপদেশ,আদেশ, অসৎ কাজে বাধা,ধৈর্য্যধারন ইত্যাদী বিষয়ে যারা অবগত আছে বলে মনে করে তারাও মহা ক্ষতির ভেতর নিপতিত রয়েছে। যারা এর ভেতর নেই, তারা ধ্বংস হয়েছে। আর যারা এর ভেতর রয়েছে বলে মনে করে তাদের অধিকাংশই ভ্রান্ত চিন্তায় ডুবে রয়েছে। অধিকাংশ মানুষই ইসলাম নিয়ে ভুল ধারনার উপর প্রতিষ্ঠিত, যার সাক্ষী বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ।
সমাজের সাধারন ও প্রতিষ্ঠিত চিত্র হল এই যে, মানুষ সূদের সাথে যুক্ত হয়ে জীবন নির্বাহ করবে, নানানভাবে অন্যের হক নষ্ট করবে, হালালের সাথে হারামের মিশ্রন ঘটিয়ে জিবীকা নির্বাহ করবে। কথায় ,আচরনে শিরকের প্রকাশ ঘটাবে,যা মনের গহিনে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি অজ্ঞতা। মিথ্যা বলবে,গল্পচ্ছলে গীবত চর্চা করবে, পরশ্রীকাতর হবে এবং নিজের ভেতরের হিংসা বিদ্বেষকে চরিতার্থ করতে উদগ্রীব হবে, অশ্লীলতাকে প্রস্রয় দিবে, বাইরে সুন্দর উপদেশমালার ফুলঝুরিতে পরিবেশ মুখরিত করে নিজেই নিজের উপদেশ লঙ্ঘন করবে গোপনে। আচরনে যেখানে নম্রতা প্রয়োজন সেখানে রুক্ষতা এনে,যেখানে রুক্ষতা,প্রতিবাদ প্রয়োজন সেখানে নম্রতা আনয়ন করবে। আবার একইসাথে মসজিদে সামনের কাতারে নামাজ আদায় করবে মসৃন পাঞ্জাবী,টুপি,আতর নিয়ে জান্নাতি পরিবেশ সৃষ্টিতে চরম উদ্যোগী হবে। আবার সমাজে,সামাজিক প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব আদায়ে সামনের সারিতে থেকে নিজের যোগ্যতা প্রমানে আপ্রান চেষ্টা চালাবে। এটাই হল সমাজের বর্তমান চিত্র, বিশেষ করে পয়সাওয়ালা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
এরা কখনও কখনও টাকা দিয়ে জান্নাত কিনে নিতে চায়। এরা ধরেই নেয় যে এরা ৮০ বছরের পূর্বে মরবে না, ফলে তাদের জীবনের একটা ছক কষে ফেলে। যেমন: বয়স ৫০ হলে দাড়ি রাখবে, কাপালে একটা কালো দাগ ফেলবে, এরপর হজ্জ করে আসবে। এবং হজ্জ করার পর তারা পূর্বের মতই চলাচল করবে এবং অনুভব করবে আল্লাহ তার সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন।
এটা ঠিক যে আল্লাহ অতি দয়ালু এবং ক্ষমাশীল। তিনি আসমান পরিমান পাপকেও ক্ষমা করেন এক মুহুর্তেই আবার তিনিই দুনিয়া পরিমান ভালো কাজকেই এক নিমিষে ভষ্ম করে দেন । বহু অহংকারী আলিমকে জাহান্নামে প্রবেশ করান। আবার তিনি তওবাকারী মহা পাপীকেও ক্ষমা করেন। কিন্তু তিনি বান্দার হক নষ্টকারীকে ততক্ষন পর্যন্ত ক্ষমা করেন না, যতক্ষন না উক্ত বান্দা ক্ষমা করে। তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি এভাবে ক্ষমা করবেন না বলেই নিজের জন্যে বিধান তৈরী করেছেন, এবং তিনি তা ব্যতিক্রম করেন না। এমনকি শহীদদেরকেও তিনি অন্যের হক নষ্ট করার পাপ ক্ষমা করবেন না। তবে আখিরাতে তাদের অতিরিক্ত নেকী থাকার কারনে তারা আল্লাহর বিশেষ রহমতের কারনে সেসব পাওনা পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন।
আমরা বান্দার হক নষ্ট করার বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধী করিনা। এটি কেবল অর্থ সংক্রান্ত লেনদেন নয়, বরং এটি হল নানান আচরনের মাধ্যমে অন্যের হক বা অধিকার নষ্ট করা।
যেমন:
১. কেউ মসজিদে অথবা কোনো মজলিসে বসে আছে , এমতাবস্থায় একজন সম্মানিত লোক উপস্থিত হলেন, তখন অন্যরা তাকে একটু সরে বসতে বাধ্য করলেন এবং উক্ত সম্মানিত লোকটি তা মেনে নিলেন। এবং তিনি ওই লোকটির স্থানে আসন গ্রহন করলেন। এতে সেই লোকটির মনে কষ্ট লাগল। আল্লাহর বিবেচনায় উক্ত স্মানিত লোকটি এই লোকটির হক নষ্ট করেছে।
২. কোনো মুসলিম তার সামনে আসল অথচ সে সালাম দিলনা, এটাও হক নষ্ট করা।
৩. যারা আমার সম্পদে বৈধ হকদার, তাদেরকে পাওনা পরিশোধ না করা হল হক নষ্ট করা।
৪. কাওকে আচরন,ভাবভঙ্গী ও কথার মাধ্যমে(গালি দেওয়া) আঘাত করাও হক নষ্ট করা। কারন সে উত্তম আচরনের হকদার।
৫. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়াও তাদের হক নষ্ট করা। শিরকের পরেই এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাপ।
৬. শিরক করা মানে হল সরাসরি আল্লাহর হক নষ্ট করা। এটা সর্বোচ্চ পাপ। শিরকের বহু প্রকারভেদ আছে। পরে একদিন আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. ওজনে কম দেওয়া হক নষ্ট করা।
এভাবে আমরা যদি গভীরভাবে অবলোকন করি, শত শত হক নষ্টের পাপ খুজে পাব আমাদের দৈনন্দিন আচরনে। আর এসব পাপ উক্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। তবে যারা এসব পাপ করে ফেলেছে এবং তওবা করেছেন, আল্লাহ তাদেরকে একটি রাস্তা তৈরী করে দিবেন ক্ষমা পাবার জন্যে। যত বড় পাপই হোকনা কেন, আশাহত হওয়া যাবেনা, কারন শয়তান আশাহত করে মানুষকে জাহান্নামী করে।
অনেক দোয়া রয়েছে,রসূল(সাঃ)বলেন- যেমন কেউ যদি প্রতিদিন "সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি" ১০০ বার পড়ে তাহলে সাগরের ঢেউ বা ফেনাসম পাপ থাকলেও আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু এটার অর্থ এই নয় যে, কবিরা গুনাহ এবং অন্যের হক নষ্টের পাপ এতে ক্ষমা হয়ে যায়। বরং এটি সগিরা গুনাহ ক্ষমা হয়। আমরা প্রতিনিয়ত পাপ করি, তাই প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যার জ্ঞান যত বেশী, সে তত বেশী নিজের ভেতর ভুল খুজে পাবে। কেবল মূর্খরাই নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "নিশ্চয় শয়তান বলেছে, 'আপনার ইয্যতের কসম হে রব! আমি তোমার বান্দাদিগকে অবিরামভাবে ভ্রষ্ট করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহের মধ্যে প্রাণ অবশিষ্ট থাকবে।' রব বলেছেন, 'আর আমার ইয্যত ও প্রতাপের কসম! আমি অবিরামভাবে তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।"
--[আহমাদ ১১২৩৭, হাকেম ৭৬৭২]
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুক ! তবে অন্যের হক নষ্টের ব্যাপারে সাবধান !
বিষয়: বিবিধ
৬৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন