এস্টোরিয়া টু ওয়াশিংটন

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৭:৪০:০৫ সকাল



আজ মহিমান্বিত দিন,,,,,, সম্ভবত প্যাগানদের কাছে। কারন খ্রিষ্টীয় যে সাল গননা করা হয় সেটা কিছুটা পরিমার্জিত হয়ে এসেছে,যার সূচনা হয়েছিলো খ্রিষ্টের জন্মে অন্তত ১৬০০ বছর পূর্বে। প্রাচীন সব ক্ষমতাধর ব্যক্তি,দেবদেবীদের নামানুসারে ইংরেজী মাসগুলোর নামকরণ করা। যাইহোক কথা হচ্ছে আজ রবীবার, সেটাও বিষয় না, মূল বিষয় হল পূর্বপরিকল্পনা মাফিক ভ্রমন চুড়ান্ত এবং আসন্ন। উদ্দেশ্য ওরেগনের পশ্চিম প্রান্তের সর্বশেষ পয়েন্ট এসটোরিয়া এবং এটা টপকে ওয়াশিংটনের ভেতর কিছু চরম সুন্দর স্থান দর্শন।

গতকাল রাতে ভারতীয় রেস্টুরেন্টে মাথা পর্যন্ত টানার পর রাতে কিছু না খেয়েই কড়া করে একটা ঘুম দিলাম। সকালে স্বল্প দৈর্ঘ্য আরেকটা ঘুম দিলাম। এরপর আমার ছোট লাগেজটি ,ব্যাকপ্যাক নিয়ে রওনা হলাম হাইওয়ে ৫ ধরে। একটানে পোর্টল্যান্ড আসলাম। সকাল থেকে কেবল ৩টা খেজুর আর এক গ্লাস দুধ খেয়েছি। ইচ্ছা করেই বেশী কিছু খাইনি। কারন খানিক পরেই বুঝবেন।

সওগাত রেস্টুরেন্টের চিন্তা মাথায় চরকির মত ঘোরার কারনে রাস্তা ভুল করলাম। তারপর অনেকদূর ঘুরে যেইনা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম, তখন রেস্টুরেন্ট খুলতে মাত্র ১ মিনিট বাকী। আমার আগে এক জোড়া আদম সন্তান দরজার পাশের বেঞ্চে বসে ছিলো। নি:সন্দেহে আমার চাইতে তারা বেশী ভোজন রসিক,,,,, অথচ লোকে আমাকে খাদক বলতে কমে ছাড়েনা !!

প্রবেশ করেই বসলাম না। আগেই খাবারের চেহারাগুলো পরখ করলাম। মনে হচ্ছে সব জ্যান্ত,নব যৌবনপ্রাপ্ত । চারিদিকের পরিবেশ এক নজর দেখে নিলাম। কারন ছাড়াই ভাতের সাথে অল্প কিছু সব্জী নিলাম,সালাদ নিলাম,,,,এরপর আড়চোখে হালাল গোস্তগুলোর দিকে তাকালাম। কোনো দোষ নেই আমার। আমি নির্দোষ, নিরুপাই, আমি একইসাথে আনন্দে উদ্বেলিত,সন্ত্রস্ত,উৎকন্ঠিত,হিংস্র,বিধ্বস্ত,,,,,আমি আপনার পেষনে নিষ্পেষিত,,আমি হতভম্ব,,,,,,,,,বড় ডেগের গলায় গলায় গালাগলি করে আছে সত্য বিদগ্ধ,দারুন রেসিপীতে রেসিপীত ......চরম মোলায়েম,,,,সবুজ তৃণখোর ছাগলের গোস্ত ! নির্দয়,নির্বিকারভাবে প্লেটে নিলাম ধোয়া ওঠা গোস্ত। পরবর্তী কয়েক মিনিট নিরবে সেবা করে গেলাম নিরিহ ছাগলের। খানিক পর আবারও.......। লোকে বলে খাদক,,,কিন্তু এটা হবে সেবক !

মাথা পর্যন্ত ছাগল টেনে পোর্টল্যান্ডের বুক চিরে হাইওয়ে ৩০ এ আসলাম। বেশ কিছুদূর পর সেন্ট হেলেনস পার হয়ে অতি চমৎকার একটি আইল্যান্ডে আসলাম। এর নাম সোভী আইল্যান্ড। গত বছর এই আইল্যান্ডটা অন্য পাশ দিয়ে খুজতে গিয়ে রাস্তা ভুল করে অনেক সুন্দর সুন্দর এলাকায় গিয়ে পৌছেছিলাম, কিন্তু সোভী আইল্যান্ড খুজে পাইনি। এবার সহযে পেলাম। গেলাম সেখানে। এটা ছোট্ট একটা দ্বীপ কিন্তু খুব দারুন। মাল্টি মিলিয়নিয়াররা এখানে পানির উপর ভাসমান বাড়ি তৈরী করেছে। তাদের এখানে ফার্ম হাউসও আছে। কেউ কেউ দেখলাম অনেক বড় এলাকা নিয়ে সুদৃশ্য বাড়ি তৈরী করেছে। অলামেট নদীর একটি অংশ এখান দিয়ে প্রবেশ করেছে ,তেমন চওড়া নয়। লেকেরা নানান রকমের নৌযান তাদের ভাসমান বাড়ির গ্যারাজে পার্ক করে রেখেছে। এসব গ্যারাজ উপরে ঘরের মত কিন্তু নীচে পানি। অনেকে বড় সাইজের নৌযান বড় বড় তেরপল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এই সময়টাতে তারা এগুলো তেমন ব্যবহার করেনা, তারপরও কেউ কেউ করে। আইল্যান্ডের বুক চিরে সুদৃশ্য রাস্তাসমূহ। আমি চলতে থাকলাম। রাস্তার একপাশে নদী, অন্যপাশে ফার্ম হাউস।

গরুর ফার্মও দেখলাম কিছু। ফলের ও ফসলের ক্ষেত ছিলো অনেক। পুরো এলাকায় মাত্র একটা ছোট গ্রোসারী স্টোর দেখেছি।

প্রায় ১৫ কি:মি: চলার পর দেখলাম একটা পার্ক কিন্তু এটা পানিতে ডুবে আছে, ফলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার পেছনে ফিরলাম এবং হাইওয়ে ৩০ তে আসলাম। নানান সব ছোট বড় শহর পার হয়ে রেইনিয়ার শহরে প্রবেশ করলাম। অসাধারন ! স্রেফ অসাধারন। কলাম্বিয়া নদীর ওপারে কয়েকটা বড় বড় ইন্ডাস্ট্রী রয়েছে। আর এপারে যা রয়েছে তা তো ছবি। স্রেফ সুপার। আমি রেইনিয়ার পার্কে আসলাম। এর কিনার ঘেসে দাড়ালাম। সবুজ ঘাসের পর থেকে নদীর সৌন্দর্য্য শুরু ,,,সত্য সুন্দর। টলটলে স্বচ্ছ পানির চওড়া কলাম্বিয়া নদীর উপর দারুন এক ব্রিজ আছে। এটা সু-উচ্চ করে তৈরী করা,যাতে এর নীচ দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে। বেশ কিছু বড় জাহাজ নোঙ্গড় করা। চলমান লাইটহাউস রয়েছে সেখানে,যা বিভিন্ন স্থানে থেকে সিলন্যাল দিচ্ছে জলযানগুলোকে। গাড়িঘোড়া রাস্তার ডানপাশ দিয়ে চললেও নৌযান চলছে নদীর বাম পাশ ধরে,,,ব্যাপারটা বুঝলাম না। এত বোঝার দরকারও নেই।

এখানে বেশীক্ষন থাকা গেলনা। আজ রৌন্দ্র ঝলমলে সুন্দর দিন। কিন্তু নদীর ধারে প্রবল ঠান্ডা বাতাসে হাড় কেপে গেল। তাপমাত্রা তেমন খারাপ নয় মাত্র ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসটোরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আরও প্রায় ৫০ মাইল পর এসটোরিয়া এসে পৌছলাম। এক অসাধারন স্থান এটি। অসাধারন সুন্দর শহর। পাহাড়ের কোল ঘেষে লম্বা লম্বী কলাম্বিয়া নদীর তীর ধরে এটি অবস্থান করছে। এক দারুন ভালো লাগা কাজ করে এখানে। খুব মুগ্ধ হলাম।

হোটেল রুমে প্রবেশ করে যোহর ও আসর সালাত এক সাথে আদায় করলাম কসর হিসেবে। লাগেজ রেখে বাইরে গেলাম শহরটা একটু দেখতে। প্রথমে এখানকার মিউজিয়ামে গেলাম। নতুন পুরোনো জাহাজের নানান সব জিনিসপত্র রয়েছে। মেরিন মিউজিয়াম এটা। এসব আমার ভালো টানেনা,,,,তবে হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়াম পছন্দ। পাশেই বড় ডক। নদীর তীরে কিছুদূর পরপরই ফ্রেশ মাছ খাওয়ার রেস্টুরেন্ট,,,,যাইহোক ডকে দেখলাম বিশাল সাইজের দুটো কোস্ট গার্ড জাহাজ। এরা নদীতে ও সাগরে টহল দেয় এবং নানান বিষয় লক্ষ্য রাখে, অপরাধ দমনও করে থাকে। বিশেষ করে মাদক চোরাচালন বন্ধে ভূমিকা রাখে। তারপরও বিশাল সব মাদকের চালান নানানভাবে আমেরিকাতে প্রবেশ করে। এখানে খানিক হাটাহাটি করে মজা লাগল। চারিদিকে তাকালেই পুলক লাগছিলো। এমন সুন্দরভাবে রেস্টুরেন্ট,জাহাজের পোতাশ্রয়,শপিংমল,হোটেলসমূহ,অন্যান্য স্থাপনাসমূহ গড়ে উঠেছে যে, তা দেখলেই মন ফুরফুর করে। সেফওয়ে নামক গ্রোসারী স্টোরে গেলাম। দুধ,ভূট্টা,বাকলাভাসহ আরও কিছু জিনিস কিনলাম। বাকলাভা হল তুরষ্কের একটি মিস্টি খাবার। পেটিসের মত, তবে এটি অনেক পরিশ্রমে তৈরী হয়। পাতলা পাতলা স্তরে বিন্যস্ত এটি এবং প্রত্যেক স্তরে বিশেষ বিশেষ মিস্টি ব্যবহৃত হয়। এটা আমি ব্যপক খাই,,,,অবশ্য মিস্টি খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। পণ করেছিলাম কিনে খাবনা,,,,কিন্তু মাঝে মাঝে পণ ভাংলে দোষ নেই,,,অন্তত খাওয়ার ক্ষেত্রে.....।

সেফওয়ের তেলের পাম্পে যখন তেল নিচ্ছিলাম,তখন হঠাৎ কিছু আওয়াজ শুনলাম। স্টেশন এর ছেলেটা বলল এটা সি-লায়ন। সে আমাকে আরও পেছনের দিকে অবস্থিত বিশাল জাহাজগুলো ভেড়ার স্থানে যেতে বলল। আমি গিয়ে দেখী এটা অসাধারন স্থান।রাস্তা থেকে চওড়া বিশাল ব্রিজ চলে গেছে পানির ভেতর। সেখানে দূর্গের প্রাচীরের মত দাড়িয়ে আছে জাহাজ নোঙ্গড়ের স্থানটি। লেখাও আছে এস্টোরিয়া ফোর্ট বা দূর্গ। অনেক বিশাল ও মজবুত বেষ্টনী এটি। আমি সে স্থানে যেতে গিয়ে বিকট সব আওয়াজ পেলাম। বামে চোখ ঘুরিয়ে দেখী ছোট ছোট নৌযান ভেড়ার পন্টুনের উপর হাজারে হাজারে সি-লায়ন। মনে হচ্ছে বস্তা পড়ে রয়েছে একের পর এক। সকলে সমস্বরে ডাকছে। আমি জীবনেও এরকম দৃশ্য দেখিনি।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অনুচ্চ ব্রিজের উপর থেকে। দেখী একটা সিড়ি নেমে গেছে ওই পন্টুনের উপর। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলাম সেটার দুপাশে গেট লাগানো। টপকে পার হতে চাইলাম,, কিন্তু নোটিশ দেখলাম...'খবরদার ! পার হবি তো খেয়ে ফেলব' ধরনের....। জরিমানা করবে এদেরকে কিছু খাওয়ালে। বেশী কাছ থেকে দেখা নিষেধ। আমি অনেকক্ষন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। আল্লাহর এক অসাধারন সৃষ্টি। এরা সূর্য্য ডোবার পর এখানে এসে জড় হয়। আমি বড় বড় জাহাজ ভেড়ার স্থানে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে মরা মানুষের মত ঠান্ডা হয়ে গেলাম। তারপরও মজা পাচ্ছিলাম। আগামী কাল আবার আসব সি লায়ন দেখতে ইনশাআল্লাহ !

বাকলাভা টানছি,,,,,বাকলাভা টানার সময় কথা বলা নিষেধ !! কবি নারাজ হয়।

বিষয়: বিবিধ

৭৬০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384632
০৩ জানুয়ারি ২০১৮ রাত ০১:৫০
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : বাকলাভা টানছেন, আমার ভাগ কই। এনি ওয়ে বাকলাভা সব জায়গায় পাওয়া যায়। আপনার সাথে দেখা করতে হবে। অরগনে। আমার ফার্ম প্রকল্পে , মশুরের ডাল, মাছ, এবং ছাগলের খমার করা ইচ্ছা আছে। Washington, Idaho, Montana, North Dakota, এখানে মুলত্ব মশুরের ডাল হয়। আগামী আপনার সাথে দেখা হবে। যাতে ভাল করে মাংশ টানতে পারেন।
০৫ জানুয়ারি ২০১৮ সকাল ১১:১৭
317254
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে...হবে হবে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ...ছাগলের গোস্ত হবে Happy সত্যিই কি ছাগলের ফার্ম করবেন ???

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File