লজিক্যাল ইবাদাহ !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫১:৫০ সকাল





============

একজন নও মুসলিমের সাথে কথা হচ্ছিলো ইবাদত নিয়ে। উনি বললেন, ইসলামের ইবাদতসমূহ উনার কাছে লজিক্যাল এবং সায়েন্টিফিক মনে হয়েছে। বললাম আলহামদুলিল্লাহ বিষয়টি সত্য। কারন, এটি এসেছে সারা জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে,,,যুক্তিপূর্ণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক তো হবেই। তবে প্রত্যেকটি যুক্তিরই পাল্টা যুক্তি থাকে,বা বিপরিতমুখী যুক্তি থাকে। আমরা সায়েন্স ও যুক্তির ইবাদত করিনা,যদিও আমরা যা করি সেটা যুক্তি বুদ্ধিতে সেরা ও বিজ্ঞানসম্মত।

এমনকি আমরা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত তা করাটা যদি বিজ্ঞান বহির্ভূতও হত এবং স্বাভাবিক যুক্তি বিরোধীও হত, তবুও আমরা করতে বাধ্য থাকতাম। কারন আদেশ যিনি দিচ্ছেন বা বিধান যিনি তৈরী করেছেন,তিনি মালিক আর আমরা তার দাস। নি:শর্তভাবে তার আদেশ মানার নামই ইবাদত। আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন---"তারা বলে,আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।" এটাই হল দাসের বৈশিষ্ট্য। তবে আল্লাহ এটাও জানিয়েছেন তিনি কর্মফল নষ্ট করেন না, সর্বোত্তম বিনিময় প্রদান করেন, সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পন করেন না এবং তিনিই যথেষ্ঠ। এটার উপর বিশ্বাস রেখে ইবাদতে রত হওয়াই বান্দার কাজ, সফলতা নিয়ে তার মাথা না ঘামালেও চলে, কারন এটি তার হাতে। তিনি দেখবেন আমরা কতটুকু সাধ্য নিয়োগ করে কাজ করলাম।

যদি এমন হত যে, নামাজ,রোজা বা অন্য ইবাদত পালন করলে মৃত্যু ঘটে যাবে,,,বা মারাত্মক রোগ ব্যাধী গ্রাস করবে,,,তবুও সেটা পালন করতে আমরা বাধ্য থাকতাম,,যদিও এমনটা ঘটেনা,,বরং এসব ইবাদত করলে শরীর ও মন খুবই সুস্থ্য থাকে। হালাল খেলে যদি সকল সম্পদ হারা হয়ে যেতাম,,তাহলেও হালাল খেতে বাধ্য থাকতাম,,যদিও হালাল ভক্ষন করলে শরীর ও মন ভালো থাকে, বরকত আসে সম্পদে। কিন্তু কনসেপ্ট হল এমন।

অপরদিকে শয়তান হল শুধু যুক্তি ও বিজ্ঞানের পুজারী। সে মনকে তর্কে লিপ্ত করায় ,তর্কের মূল বিষয়বস্তু ব্যতিরেকেই। পৃথিবীর প্রথম যুক্তিবাদী সৃষ্ট প্রানী হল আযাজিল,যে অভিশপ্ত হয়ে শয়তানে পরিনত হয়। তাকে যখন আদমকে সম্মানসূচক সেজদা করতে বলা হয়, সে তা উপেক্ষা করে এই যুক্তিতে যে -সে আগুন থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। ফলে সে উত্তম। এই কারনে সে শ্রেষ্ঠ হয়ে আদমকে সেদজা করতে পারেনা। সম্মান কেবল শ্রেষ্ঠদের পাওনা। আল্লাহ তায়ালা এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে বলেননি যে,,,,তোমাকে কে বলল যে আগুন মাটি থেকে শ্রেষ্ঠ ??? তোমার এই যুক্তির ভিত্তি কি ???

আল্লাহ এই প্রশ্ন করেননি এই কারনে যে, আল্লাহ যেটাকে শ্রেষ্ঠ বলে নির্ধারন করেন,সেটিই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ,,, তার বক্তব্যই হল যুক্তি। উভয় প্রকারের সৃষ্টির ভেতর তিনি জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই যুক্তির আদী ও আসল উৎস্য। আল্লাহর বক্তব্যই হল যুক্তির সূচনা এবং ন্যায় পরায়নতা। সকল যুক্তিই ন্যায়পরায়নতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ নয়,কেবল আল্লাহর যুক্তিই প্রকৃত ন্যায়সঙ্গত। আর একমাত্র আল্লাহর বিধানই প্রাপ্তী ও অপ্রাপ্তীর প্রকৃত মানদন্ডে উত্তীর্ণ। তার প্রত্যেকটি বিধান যা যুক্তি,বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ ,তা মানার সাথে সাথে বিশাল প্রাপ্তী রয়েছে অনুগতদের জন্যে। আর এটাই হল ইবাদতকারীর স্বার্থকতা। অন্য যুক্তির অধিকারীদের কোনো স্থায়ী প্রাপ্তী নেই। ফলে একমাত্র আল্লাহ যুক্তিপূর্ণ ইবাদতকারীদের জন্যেই দুনিয়া ও আধিরাতে প্রকৃত প্রশান্তি রয়েছে। কারন যুক্তি,বুদ্ধি,সৃজনশীলতা,বিজ্ঞান,সাবলীলতা,প্রশান্তিময়তায় আল্লাহর বিধানই যৌক্তিকভাবে দুনিয়াতে এগিয়ে থাকবে,,,এবং অনুসরনকারীরা সফল থাকবে,,,আবার আখিরাতে রয়েছে অনন্তকালের সফলতা,প্রাপ্তী। ফলে যৌক্তিকভাবেই শয়তানের অনুসরনে দুনিয়া ও আখিরাতে কোনো ফায়দা নেই। আর অনর্থক যুক্তি-তর্কেরও কোনো মূল্য নেই। শয়তানকে আল্লাহ যৌক্তিকভাবেই পরাভূত রেখেছেন,,,,যা বিশ্বাসীরা ছাড়া কেউ অনুধাবন করেনা।

শয়তান যখন আল্লাহর সাথে তার নিজের যুক্তি নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তাকে তার পরিনতি শ্মরণ করিয়ে সাবধান করেন। কিন্তু সে তার যুক্তিতে অটল থাকে। তার যুক্তি তাকে অহংকারী ও উম্মাদ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সে মহা দয়ার স্রষ্টা আল্লাহর থেকে ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত রেখে নিজের মহা সর্বনাশ করে। সে অভিশপ্ত হয়ে যায়। এরপরও সে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। বরং সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করে তার বান্দাদেরকে নিজের মতের পক্ষে আনতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ হয়। আল্লাহর কাছে এ মর্মে ক্ষমতা চেয়ে নেয়, আল্লাহ তা কবুল করেন এবং তাকে ছলনার যাবতীয় উপকরণ,শক্তিমত্তা,কৌশল দান করেন। সে বলে-আমি আপনার বান্দাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবই,,,,আল্লাহ তাকে বলেন,,,,আর আমি আমার ক্ষমা প্রার্থী বান্দাদেরকে ক্ষমা করতেই থাকব !! আর আমার বান্দারা আমার পথে থাকলে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,,,আমিই তাদের জন্যে যথেষ্ট !!.....

শয়তান ভুল করেছিলো এবং সে তা উপলব্ধীও করেছিলো। কিন্তু সে ভুল স্বীকার করেনি ,আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেনি , বরং সে চ্যালেঞ্জ করে আল্লাহকে। আর আল্লাহ তার সকল নেক আমল বরবাদ করে তাকে অভিশপ্ত করেন। আল্লাহ অবশ্যই তার উপর যুলুম করেননি , বরং সে নিজেই নিজের উপর যুলুম চাপিয়ে নিয়েছে। তার নিশ্চিত পরিনতি জাহান্নাম জেনেও সে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে। সেই লোক শয়তানের অনুসারী নয়, যে ভুল করে বা পাপ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। বরং সেই লোকই শয়তানের অনুসারী যে ভুল করে এবং ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, আত্মসমর্পণ করেনা।

আদম(আঃ)কে আল্লাহ জান্নাতের একটি গাছ থেকে ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। সেই ফলটি খেতে দিলে আল্লাহর কোনো সমস্যা ছিলোনা,,,কিন্তু এটা ছিলো একটি পরিক্ষা,,যেমনটি আল্লাহ চান। বনী ইসরাইলদের জন্যে শনিবারে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিলো,,, ।এই দিনে তাদেরকে মাছ আহরনে অনুমতি দিলে আল্লাহর কোনো সমস্যা ছিলোনা,,,,কিন্তু এটা ছিলো একটি আদেশ, যা পালনের মধ্যেই সফলতা নিহিত ছিলো এবং আদেশ অমান্যের মধ্যেই অকল্যান,শাস্তি নিহিত ছিলো। প্রত্যেকটি আদেশই মূলত এমন,,,,। এখানে নানানভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করা যায় কিন্তু যেহেতু আল্লাহ ওরকম করতে বলেছেন,,তাই ওভাবেই করতে হবে,,,কারন হুকুম মান্য করাটাই ইবাদত। তো, আদম (আঃ) যখন ভুল করে উক্ত ফলটি খেয়ে ফেললেন,তখনই তিনি উপলব্ধী করলেন যে-তিনি ভুল করেছেন এবং আদেশ লঙ্ঘন করেছেন। আর তখনই তিনি নতজানু হয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন কাকুতি মিনতি করে, এবং জানালেন তিনি নিজের উপর মহা যুলুম করে ফেলেছেন,,,আল্লাহ ক্ষমা না করলে উনি ধ্বংস হয়ে যাবেন,,,,। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করলেন, কারন আদম(আঃ) শয়তানের অনুরূপ আচরণ করেননি। উনি পুরোপুরি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন এবং ক্ষমা প্রাপ্ত হলেন।

তবে এই ঘটনার পর আল্লাহ আদম(আঃ)কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত আদম(আঃ)কে তার ভুলের বিষয়টি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন ,তাই আমরা বলতে পারিনা যে, উক্ত নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার শাস্তি হিসেবে তাকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। কারন আল্লাহ কোনো পাপ বা ভুল ক্ষমা করলে তার কারনে শাস্তি প্রদান করেন না। আদম(আঃ) ও মা হাওয়াকে দুনিয়াতে পাঠানো ছিলো আল্লাহর পূর্ব পরিকল্পনা। তাদের থেকে নানান রঙের,অবয়বের বংশ বিস্তার ঘটানো, নানান সময়ে বিধান প্রেরণ,কৃতকর্মের উপর বিচার ফয়সালা ও জান্নাত,জাহান্নাম,,,এসবই আল্লাহর পূর্ব পরিকল্পনা। ঘটনাটি নিষিদ্ধ ফল ভক্ষনের পরপরই ঘটাতে অনেকে চিন্তাগতভাবে দূর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। অনেকে নিজের অজান্তেই আল্লাহর ন্যায় পরায়নতাকে প্রশ্নের সম্মুখিন করেছে। আল্লাহ উভয়কে দুনিয়াতে এক স্থানে না পাঠিয়ে ভিন্ন স্থানে পাঠানোর হেতু কেবল আল্লাহই জানেন। তবে তিনি তাদের মিলনও ঘটান। এটা রহস্যপূর্ণ বিষয় ,যার জ্ঞান আমাদের নেই, জানা প্রয়োজনও নেই।

যাইহোক,,,মূল বিষয় ছিলো এই যে,,, আমরা লজিক ও সায়েন্স এর পূজারী নই,,আমরা আল্লাহর বিধানের অনুসারী,,,তবে সেই বিধানের ভেতর লজিক ও সায়েন্স রয়েছে। আবার লজিক ও সায়েন্স না থাকলেও আমরা বিধান মানতে বাধ্য থাকতাম। এটাই ইমান। সকল ক্ষেত্রে আল্লাহই হলেন সঠিক, আল্লাহর আদেশই হল সঠিক ও কল্যানকর। এটা মেনে নেওয়ার ভেতরই প্রকৃত সফলতা,কল্যান। আর কেউ ভুল করলে বা পাপ করলে শয়তান তার আবেগকে নিজের পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে, তাকে আল্লাহর রহমত,মাগফিরাত থেকে নিরাশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা ভুল করলে শয়তানের অনুরূপ আচরন না করে আদম(আঃ) এর অনুরূপ কাজ করব। আমরা অনুতপ্ত হব এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব,,, বার বার পাপ করলে,,বার বারই ক্ষমা চাইব,,,আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ হব না। তাহলেই আল্লাহ খুশী হবেন,,, আর শয়তান নারাজ হবে। আর শয়তানকে নারাজ করতে পারলে আল্লাহ অবশ্যই খুশী হবেন,,, কারন সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেছিলো,,,,আর আল্লাহও তাকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন...।

আল্লাহ তার অনেক বান্দাকে নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন ! সবকিছু জানা সত্ত্বেও তিনি সেসব বান্দাদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন করে তার বিষয়ে জেনে নেন,,,,এ বিষয়ে ফেরেশতাদেরকে সাক্ষী রাখেন,,,তার প্রতি রহমত,বরকত বা পুরষ্কারের অংক লিখে রাখেন.... !!

আমরা যেন সেই মানের বান্দা হতে পারি,, যাদেরকে আল্লাহ বহু ভুল,পাপ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর প্রতি নতজানু হওয়ার কারনে ও তার রহমতের প্রতি তীব্র আশা পোষন করার কারনে ক্ষমা করে দিবেন এবং জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন ! আল্লাহ কবুল করুন !!

ইয়া আল্লাহ মহা রহমতপ্রাপ্ত,ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের ভেতর আমাদের নামগুলো লিপিবন্ধ করুন ! আপনি "কুন" বললেই তা হয়ে যায়। আমরা আপনার বিধানের বিষয়ে বলি-" শুনলাম এবং মেনে নিলাম"। সাক্ষি হিসেবে আপনিই যথেষ্ট !

বিষয়: বিবিধ

১০০১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384560
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ দুপুর ০৩:২৯
তট রেখা লিখেছেন : আমীন। সুম্মা আমীন।
১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ দুপুর ১২:২৮
317205
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
384564
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ রাত ০৮:২৯
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ , ভালো লাগলো
১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ দুপুর ১২:২৮
317206
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
384782
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাত ০২:১৯
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

মাশাআল্লাহ সুন্দর লিখেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকাল ০৯:৫৫
317376
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। জাজাকাল্লাহ খায়রান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File