দিনটা কাটলো দারুন !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:২৭:৫৪ সকাল



আজ শনিবার। পূর্বেই ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা ছিলো। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পোর্টল্যান্ডের আশপাশে কোনো পার্কে যাব আর শপিং করব পেট ভরে। কিন্তু সকালে তাপমাত্রা দেখলাম মাইনাস ৫ সেলসিয়াস। বাইরে দেখী ঘাসের উপর পুরো বরফের আস্তরন আর গড়ির উপর প্রায় আধা সেন্টিমিটার টাইট বরফ। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে।

ফজর পড়ে আবারও মটকা মেরে পড়ে থাকলাম। কারন হাইওয়েতে ব্লাক আইস রয়েছে, এর উপর দিয়ে দ্রুত গাড়ি চালালে পিছলে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। ফলে যাত্রা দেরী হল। খারাপ না ,,আরেকবার হালকা ঘুম দিলাম। ৯টার পর ধীরে সুস্থে রওনা হলাম। কোম্পানী মাসে দুটো পে-চেকে বেতন প্রদান করে। সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে সে টাকা চলে যায়, ফলে ঝামেলা নেই। এটিএম থেকে কিছু ক্যাশ তুললাম, পকেট গরম হল। ওদিকে ওভারকোট নিয়েছি কারন প্রবল ঠান্ডা, কিন্তু আকাশে সূর্য্য দেখা যাচ্ছে।

সকালে নিয়ম মত ৩টি বড় সাইজের খেজুর খাই, সাথে দুধ। এটা ব্যপক এনার্জী তৈরী করে। আর তার আগে লেবুর রস,এপল সাইডার ভিনেগার,অল্প অলিভ অয়েল এবং পানি। সবমিলে এনার্জির কারখানা। যাত্রাপথে সেলাম থেকে গাড়িকেও পেট ভরে তেল খাওয়ালাম। গন্তব্য পোর্টল্যান্ড। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে, কারন এই শীতে পার্কে গেলে শীতে কাপতে থাকব, ফলে শহরে কোথাও যেতে চাইলাম। চলতে চলতে পোর্টল্যান্ডে এসে পৌছলাম। অলামেট নদীর ওপারে গেলাম এবং অমজি বা ওরেগন সাইন্স মিউজিয়ামের পেছনে পোর্টল্যান্ড থিয়েটারের পেছনে গিয়ে থামলাম। এই জায়গাটা এত নিরিবিলি আর সুন্দর যা ভাবা যায় না।

এটা নদীর একেবারে কিনারে। নদী পাশের পার্কে দাড়ালাম। চারিদিকে অনেকগুলো ব্রিজ নদীর উপর দিয়ে চলে গেছে যাতায়াতের সুবিধার্তে। এখানে একটি সুদর্শন ব্রিজ রয়েছে, মূলত এটাই ছিলো গন্তব্য। এই ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দিয়ে বাস ও ট্রাম চলে এবং মানুষ দুপাশ ধরে হাটে,দৌড়ায় ও বাইসাইকেল চালায়। ব্রীজের নীচে কনকনে ঠান্ডায় বসে থাকতে দেখলাম এক যবককে। সে রোদ পোহাচ্ছিলো আর বিয়ার খাচ্ছিলো। সাথে তার স্লিপিং ব্যাগ। ছিন্নমূল যুবক। এরকম অনেক স্থানে দেখা যায়। ওরেগনে অবশ্য এটা কম, অন্য স্টেটে এগুলো বেশী দেখা যায়। এদের একটা বড় অংশই মাদকাসক্ত ও নানান সামাজিক অপরাধে যুক্ত। অনেকে জীবীকা উপার্জনে ব্যর্থ হয়ে ভবঘুরে হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া,নিউইয়র্কে এদের বেশী দেখা যায়। অনেকে অবৈধভাবে আমেরিকা এসে ফেসে গেছে এবং কোথাও কাজ যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করে। বিশেষ করে শীতের সময় এদের অবস্থা হয় করুন। ওরেগনে এসব লোকদের রাতে থাকার জন্যে স্টেটের পক্ষ থেকে কিছু নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। সেখানে তারা রাত কাটাতে পারে কিন্তু দিনের বেলা বের হয়ে আসতে হয়। এরা সারাদিন এটা সেটা,ভিক্ষা ইত্যাদী করে রাতে সেসব আশ্রয়স্থলে চলে যায় ঘুমাতে।

নদীর ধানে খানিকক্ষন হাটলাম,,,ঠান্ডা বাতাসে বরফের মত হয়ে গেলাম। তবুও সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম। হাটতে হাটতে ঝুলন্ত ব্রিজের উপর উঠে আসলাম। খুব সুন্দর করে তৈরী করেছে এটা। শৃঙ্খলার সাথে ট্রাম ও বাস চলাচল করছে আবার সাইকেল ও পথচারীদের জন্যে থামছে। এদিকে বাইসাইকেলের চল আছে। ব্রিজের পাশে অত্যাধুনিক বাইসাইকেল রাখা আছে অন্ত ২০টা। এটার জন্যে রেজিস্ট্রেশন করে একটা কার্ড নিতে হয় নির্ধারিত ফি দিয়ে। সেটা পাঞ্চ করে বাইসাইকেল নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে আন-লক করে নেওয়া যায়। প্রয়োজন মিটিয়ে আবার বাইসাইকেল নির্ধারিত স্থানে লক করে রাখতে হয়। এই সাইকেল চুরি করে ধরা খাওয়া সহজ। কারন এরকম আন কমন সাইকেল বাজারে নেই। এর রং ও ডিজাইন ভিন্ন, সম্ভবত ডিজিটাল কোনো ব্যবস্থা আছে চুরী রোধে। ফলে চুরি করে ধরা খেয়ে জেল জরিমানা দিয়ে কারো পোষাবে না।

ব্রিজের উপর হাটার জন্যে অনেক প্রশস্ত রাস্তা তৈরী করা হয়েছে দুপাশে। সেখানে অনেক জগিং করছে দেখলাম। খানিক পর দেখলাম এক পাল লোক সাইকেল রেসিংয়ে নেমেছে। ট্রামে ও বাসে তেমন লোকজন দেখলাম না। চারিদিকে ফাকা। এখান থেকে নদীর ওপাশের পোর্টল্যান্ডের অপর ভাগটা দেখতে অসাধারন লাগে। বেশীক্ষন থাকতে পারলাম না ঠান্ডার কারনে। আসলে ঠান্ডার জন্যে তেমন যুৎসই পোষাক পরে আসিনি ইচ্ছা করেই। কারন অতি গরম পোষাকে ভাব জমেনা।

ইচ্ছা ছিলো রেস্টুরেন্টে যাব সবশেষে ,কিন্তু বাসা থেকে বের হতে দেরী হওয়াতে ভাবলাম রেস্টুরেন্ট খোলার প্রথম প্রহরে প্রবেশ করাই ভালো, অভিজ্ঞতা তাই বলে। কারন সবার নজর পড়ে ভেড়ার উপর। আমি ভেড়ার জন্যে স্বার্থ ত্যাগ করতে পারি। এখানে বেশীক্ষন না কাটিয়ে এপাশের কিছু এলাকা দেখতে থাকলাম। কিন্তু এদিকে রাস্তা হারিয়ে অন্যদিকে চলে গেলাম। জিপিএস একটু স্লো ইন্সট্রাকশন দেওয়ার কারনে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অনেকদূর ঘুরে সে নদীর অপর পারে ডাউনটাউনে নিয়ে গেল। এর মধ্যে ভুল করে একবার এক ওয়ান ওয়ে রোডের ভেতর ভুল করে উল্টোপথে ঢুকে লজ্জায় পড়লাম। এটাই জীবনে প্রথম এমন ভুল। তাড়াতাড়ি ভুল সুধরে নিয়ে সঠিক পথে সওগাত নামক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে পৌছলাম।

সত্যি অনেক ক্ষুধা ছিলো পেটে ও মাথায়। চারিদিকে তাকালাম। প্লেটটা নিলাম। ভাতের সাথে একটু একটু অন্য তরকারী নিলাম,,নইলে বিষয়টা খারাপ দেখায়। এবার আরেকবার চোরের মত চারিদিকে তাকিয়ে আযান দিয়ে ভেড়ার গোস্ত নিলাম প্লেটে। আল্লাহর নাম নিয়ে টানলাম। দ্রুত উড়িয়ে দিয়ে আবার নিলাম ভেড়া। পাশের টেবিলের এক ভদ্র মহিলা এতটা ভেড়ার গোস্ত নিতে দেখে তাকাচ্ছিলো,,,তাতে আমার লজ্জা লেগেছে,,,,আমি আবার লাজুক মানুষ, তাই লজ্জায় আরও বেশী স্পিডে টেনে পরিষ্কার করে ফেললাম। খেয়াল করলাম গলা পর্যন্ত উঠে গেছে। এবার অন্য মিষ্টান্ন খেয়ে ওটাকে মাথাপর্যন্ত তুললাম। .....এরা যদি ভেবে থাকে আমাকে রেস্টুরেন্টে ঢুকিয়ে কিছু পয়সা লাভ করেছে,,,,,তাহলে লেখার এ পর্যায়ে ব্রাকেডে বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত হাসি দিলাম Happy Happy Happy খাবার বেচে এই লোকের থেকে লাভ করতে পারনি না রে পাগলা !!!

যাইহোক আমি অত খাওয়ার পাগল না। চলে গেলাম ভারতীয় একটা স্টোরে। এটা বিভারটনে। এখান থেকে প্রচুর ফ্রোজেন ভেজিটেবলস কিনলাম। ভারত থেকে সজনে ডাটা আসে প্যাকেট করা। অনেক দাম এটার। পটল আর সজনে ডটাই বেশী কিনলাম। কাচা আম কিনলাম যা ফ্রোজেন। মুড়ি কিনলাম,মুগলাম,মশুর ডাল কাচকলা,ঝিঙ্গা কিনলাম। আরও কি কি কিনলাম মনে নেই। অনেক পয়সা গেল,তাও খুশী,কারন পেট খুশী। এবার আসলাম এশিয়ান স্টোরে। এখানেও ব্যপক কেনাকাটা করলাম। তারপর ফিরতি পথ ধরলাম। দিনটা আসলে ভালই গেল আলহামদুলিল্লাহ !!

ফিরে এসে দুধ আর স্ট্রবেরী ব্লেন্ড করে টানছি। টানাটানির ভেতর আছি রে ভাই !!! বেশ টানাটানি যাচ্ছে !!!

বিষয়: বিবিধ

২৪৮৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384556
১০ ডিসেম্বর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার ভ্রমন। এমন কি আটলান্টায় স্নো ,
(১) আপনার লেখা থেকে, "লেবুর রস,এপল সাইডার ভিনেগার,অল্প অলিভ অয়েল" এই মিশ্রনে ভাল ডিংক হবে, কোন দিন পান করিনি। বানিয়ে দেখবো।
(২) দুধ আর স্ট্রবেরী ব্লেন্ড করে টানছি,এটা পান করেছি।
(৩) এবার আরেকবার চোরের মত চারিদিকে তাকিয়ে আযান দিয়ে ভেড়ার গোস্ত নিলাম প্লেটে। আল্লাহর নাম নিয়ে টানলাম। দ্রুত উড়িয়ে দিয়ে আবার নিলাম ভেড়া। পাশের টেবিলের এক ভদ্র মহিলা এতটা ভেড়ার গোস্ত নিতে দেখে তাকাচ্ছিলো,,,তাতে আমার লজ্জা ।
হূম: সাথে থাকলে আমিও টানতাম। তাছাড়া, এটা ফুফে , যতপারেন খান।
লজ্জার কি আছে।

আপনার ভ্রমনের পথ ধরে,ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়েছিলাম। মাএ এক সপ্তাহ ছিলাম। ওখানে এক বাংলাদেশী বিরানী হাউজে ঢুকে ছিলাম।
সাথে গরুর রেজালা। মোটামুটি ভালই টেনেছিলাম। রাতে আর খেতে হয়নি।
আকবর ভাইকে কল করিনি।


১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সকাল ০৮:১৫
317190
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আকবর ভাইকে কল করলে উনি আপনাকে গরু খাওয়াতেন Happy Happy
384557
১০ ডিসেম্বর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
আকবার১ লিখেছেন :
ভিডিও দিলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File