জুম্মাবার
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:১৯:২৭ সকাল
আজ শুক্রবার। পূর্বে থেকেই ইচ্ছা ছিলো আজ একটি উট কুরবানী দেব, সওয়াব নেব। সকালে গোসল করলাম, আমার আগে যাতে কেউ পৌছতে না পারে তাই ১১টার সময় রওনা হলাম। মসজিদের পার্কিয়ে গাড়ি পার্ক না করে একটা বড় স্টোরের পার্কিয়ে পার্ক করলাম যাতে হেটে গেলে প্রতি কদমে কদমে ১ বছরের নফল ইবাদতের নেকী পাওয়া যায়,,,,,,শর্তগুলো ফুলফিল করার চিন্তা মাথায়। গিয়ে দেখী আমার আগেই এক বান্দা উপস্থিত,,কিন্তু মসজিদের দরজা বন্ধ।
ছেলেটার নাম মুমতাজ। গায়ের রং কালো, মাথায় কোকড়ানো চুল, মনে হল আফ্রিকা অথবা আরবের কোনো এলাকার। গল্প জুড়ে দিলাম। ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছে। এর ভেতর আরেক বান্দা উপস্থিত হল। আজ প্রচন্ড ঠান্ডা,,,তাপমাত্রা ২/৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস,,,,এটাই আমার কাছে অনেক। আকাশে সূর্য্য ঝলমল করছে কিন্তু সেটার তাপ অনুভবে আসছে না। তারপরও রোদের ভেতর দাড়ালাম, কারন মসজিদ বন্ধ।
কিছুক্ষন পর সাইদ ভাই আসলো। এই লোক বুড়ো কিন্তু মনে রস প্রবল। সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে আর হাত নিয়ে চুমু খায়, গাল টিপে নিজের হাতে চুমু খায়,,,,,তরুন যুবকদেরকে নিজের সন্তানের মত মনে করে। আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করুক ! উনি মসজিদের দরজা খুললেন,,,আমি ভেতরে ঢুকলাম। আমি যখন তাকে জুতো রাখছি,,তখন উনি ভেতরের কাচের দরজা খুলে প্রবেশ করতে যাবেন,,,,তখন বললাম---ভাই দয়া করেন ! আমাকে আগে যেতে দেন....উনি থামলেন...আমি বললাম আগে প্রবেশের বড় পুরষ্কার নিলাম...! উনি বললেন,,,,পুরষ্কার ! কে দিবে !! বললাম আল্লাহ দিবে....এবার উনি বুঝলেন। ..বললেন,,আচ্ছা তাহলে আরেকটু বেশী করে নাও,,,পাপসটা যথাস্থানে রাখো।....রাখলাম...।।
এবার প্রথম কাতারে গিয়ে ২ রাকাত নামাজ পড়লাম, এটাই সুন্নাহ। মসজিদে প্রবেশ করে ২ রাকাত নামাজ না পড়ে বসার কোনো সিস্টেম নাই। আলহামদুলিল্লাহ এখানে প্রায় সকলে এই সুন্নাহ জানে। মসজিদে বসে সকলে কুরআন তিলাওয়াত করে যতক্ষন ইমাম না আসে। একে একে লোকজন আসতে থাকল এবং একে অপরের সাথে মোলাকাত করতে থাকল। বড়ই মধুর পরিবেশ। কিছু নওমুসলিমও আসল। মসজিদের ভেতর কয়েকটা বুক শেলফ আছে, যেখানে মূল্যবান কিতাবাদী রয়েছে। এছাড়া বাইরে একটি বড় লাইব্রেরী রয়েছে। পশেই দ্বিতল একটি বিল্ডিং তৈরী করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এটা ছাত্রদের জন্যে বানানো। তাদের থেকে পাওয়া ভাড়ায় মসজিদের অনেক কাজ হবে ইনশাআল্লাহ।
আজকের ইমাম আমার কাছে নতুন মনে হল। বয়ষ্ক কিন্ত খুবই হ্যান্ডসাম। আরবী ও বাংলায় খুৎবা দিলেন। ফিলিস্থিন সম্পর্কে তথ্য দিলেন ও দোয়া করলেন, কিন্তু এটা জ্বালাময়ী ভাষন নয়, কারন তাতে হয়ত সমস্যা আছে। ভদ্রভাবে ফিলিস্থিন সম্পর্কে ,,সেখানকার সাথে বহু নবী,রাসূলের নানান সম্পর্ক বর্ণনা করে সেখানকার মুসলিমদের জন্যে দোয়া করা হল....। আমি সামনের কাতারে থেকে মন দিয়ে খুৎবা শুনলাম,,,কারন বিশাল সওয়াবের জন্যে এটাও একটা শর্ত। হাদীসটাতে প্রতি কদমে ১ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াবের শর্তগুলো বলা হয়েছে....গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা, আগে আগে গমন করা, পায়ে হেটে গমন করা, সামনের দিকে থাকা, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা,,,,,,,,,আল্লাহ আমাকে পুরো সওয়াব দান করুক ! এবং সকলকে ক্ষমা করুক ! মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন ! মুসলিমদেরকে বিজয় দান করুন ! দাজ্জালকে ধ্বংস করুন !
নামাজের পর অনেক মুসলিম ভায়ের সাথে দেখা হল,,গল্প হল। ইমামের নাম্বার হারিয়ে ফেলেছিলাম,,,আর তার নামও ভুলে গিয়েছিলাম।...বিষয়টা বলাতে উনি বললেন....ছি:ছি:ছি;.....না এ মানা যায় না.....ইনিই মূল ইমাম,,,বড়ই রসিক। আমাকে খুব পছন্দ করেন। অন্যদের সামনে আমাকে দেখিয়ে বলেন,,,হি ইজ মাই ম্যান ! ....
চলে আসলাম। আজ ফেসবুকে ভারতের একটা ভিডিও দেখলাম, যেখানে নিরপরাধ এক মুসলিমকে একজন হিন্দু যুবক পুরহিত ঠান্ডা মাথায় ধীরে ধীরে জবাই করল নানানভাবে। লোকটির নির্দয় অনুনয় বিনয়ে সে একবারও থামলো না। আঘাতের পর আঘাত করতে থাকল। এরপর সময় নিয়ে বড় দা দিয়ে তার মাথা কেটে আলাদা করল। এরপর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিল। এরপর নিজের করা ভিডিওতে গর্বভরে মুসলিমদেরকে সতর্ক করল লাভ জিহাদের বিষয়ে। তার বিশ্বাস হিন্দুদের মেয়েদের সাথে মুসলিম যুবকরা প্রেম করার কারনে তারা ধর্মান্তরিত হয়। কিন্তু সেটা সত্য নয়, বরং তাদের অসার ধর্মীয় বিধিবিধান তাদেরকে ভাবিত করে, এরপর তারা নিজেদের জ্ঞান ব্যবহার করে ইসলামের দিকে ঝুকে পড়ে। লোকটার ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে কিয়ামত খুব নিকটেই। সে বুঝলোনা কয়েক মিনিটের নিষ্ঠুরতায় সে একজনকে জান্নাতে বিনা বাধায় পৌছে দিল, আর নিজের জন্যে জাহান্নামকে অনন্তকালের জন্যে হয়ত নির্ধারন করে নিল(যদি হেদায়াত না হয়ে থাকে)!
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুক ! মুসলিমদেরকে বিজয় দান করুন ! মজলুমকে কবুল করুন ! জালিমকে ধ্বংস করুন ! সত্যের প্রতিষ্ঠা হবেই ইনশাআল্লাহ ! সময় বেশী দূরে নয়।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার পরিপূর্ন প্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং একে আপনার নাজাতের উসিলা করুন এবং আপনাকে এর নিমিত্তে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন