রোহিঙ্গা : আশির্বাদ নাকি অভিশাপ !!! ==========================
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৪:৩৪ দুপুর
বার্মা বা মায়ানমারের পশ্চিমে আরাকান বা রাখাইন রাজ্য অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের টেকনাফের অনতিদূরে। এখানকার জনসংখ্যার বেশীরভাগই মুসলিম। অল্প কিছু হিন্দু,বৌদ্ধ ,খ্রিষ্টান আছে। মুসলিমদের সংখ্যা ১৫ লক্ষের বেশী নয়। এই অঞ্চলের লোকেরা হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডেই বসবাস করছে এবং পূর্বে আরাকান ছিলো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ব্রিটিশরা তাদের শাসন,শোষনের সুবিধার্তে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বার্মার এ অংশকে বিভক্ত করে রাখে। কিন্তু চেহারা সুরত,কৃষ্টি কালচারে ভারতীয়দের সাথে বেশী মিল হওয়ার কারনে উভয় অঞ্চলের মানুষের ভেতর ব্যপক যোগাযোগ ছিলো। কিভাবে এই অঞ্চলের মানুষেরা ভারতীয় বা বাংলাদেশীদের মত হল, কোথা থেকে তারা সেখানে গিয়েছিলো সেটা সুদীর্ঘ ইতিহাস। তবে আমরা আজকের আলোচনায় কেবল এটুকু অন্তর্ভূক্ত করা যুক্তিযুক্ত মনে করি যে, তারা হাজার বছর ধরে ওখানেই বসবাস করে আসছিলো। ফলে ওটা তাদের আদীভূমী।
রাখাইন রাজ্যের মানুষেরা বহু শতাব্দীকাল পূর্বেই ইসলামের ছায়াতলে আসে। তারা মুসলিমদের গৌরবময় দীর্ঘ ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরাকান বা রাখাইনের এই মানুষেরা ব্রিটিশদের পক্ষে ছিলো কিন্তু পুরো বার্মা ছিলো জাপানের পক্ষে। যুদ্ধে ব্রিটিশ পক্ষ জিতলেও তারা আরাকানকে বার্মার অধীনে রেখে যায়। যদিও ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্থান স্বাধীন হওয়ার সময় আরাকান পাকিস্থানের সাথে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের এই দাবী মেনে নেয়নি। ফলে তারা নিজ দেশেই এক বৈরী সরকারের অধীনে ভসবাস করতে থাকে। কিন্তু তারপরও তাদের মোটামুটি চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু ১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক শাসন শুরু হলে আরাকানের উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ম্লান করতে আরাকান নাম পরিবর্তন করে রাখাইন রাখা হয়। তাদের জেহারা সুরতের দিকে লক্ষ্য করে তাদেরকে বহিরাগত বলা হতে থাকে। ধাপে ধাপে নির্যাতন করা হয় তাদের উপর।
পৃথিবীতে বর্বরোচিতভাবে এথনিক ক্লিজিংয়ের যত ঘটনা ঘটেছে আরাকান তার মধ্যে অন্যতম প্রধান উদাহরন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বার্মার যে শাসকগোষ্ঠী এ নির্যাতন চালিয়েছে তাদের ইতিহাস প্রায় পুরোটাই কলঙ্কময়। এরা জাতে মগ, পূর্বে এদের বৃহৎ গোষ্ঠীই বাংলায় দস্যুবৃত্তি করে চলত । জলদস্যুতায় এরা শ্রেষ্ঠ ছিলো। এরা যা খুশী তাই করত। অত্যাচার নির্যাতন করা,হত্যা,লুটপাট এদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো। এদের হটকারী কারবারের কারনে বাংলায় একটি প্রবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়- তা হল "মগের মুল্লুক" মানে জোর যার মুল্লুক বা এলাকা তার। বাংলার সুলতানী আমলে এসব দস্যুদের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্যে তখন নদীর তীরে বিশেষ বিশেষ দূর্গ তৈরী করা হয়। বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁ সফলতার সাথে এই মগ দস্যুদেরকে শায়েস্তা করেন।
যাইহোক এরা ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯২ সালে কোনো কারন ছাড়াই আরাকানের মানুষ বিশেষ করে মুসলিমদেরকে ঘরবাড়ি ছাড়া করে। তারা তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য করে। সে সময়ও তারা নির্মমভাবে হত্যা,ধর্ষন করে,বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়। প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম তখন বাংলাদেশে আসে। পরে এদের বেশীরভাগই মধ্যপ্রাচ্য,মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চলে যায়।
১৯৬২ সালে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে রোহিঙ্গাদের নাগরিক্ত্ব বাতিল করে। কোনো রকম সরকারী সহায়তার বাইরে রাখে। সরকারী চাকুরীতে আবেদনের বিষয়টি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার অধিকার বাতিল করা হয়। এরপর নিজ এলাকার বাইরে গমনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, আরো পরে বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সামরিক বাহিনীর সাহায্যে পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত নির্যাতন করা হয়। তাদের পরিবারে কোনো আত্মীয় আগমন করলে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হয়। পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা,ছবি সবই থানায় জমা দিতে হয়। কোনো পরিবারে নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে কোনো লোক অবস্থান করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা হয়। ব্যতিক্রম হলে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। মারাত্মক কঠোর এক পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য করা হয় তাদেরকে। ফলে রাখাইন রাজ্যের রোহীঙ্গা বা মুসলিমদের জীবন দূবিষহ হয়ে ওঠে আর এ বিষয়ে বার্মার সরকার সারা পৃথিবীকে কোনো রকম পরোয়া করেনি।
২০১৭ সালে বার্মার সরকার আবারও একটি ঠুনকো অজুহাতে তাদের উপর চড়াও হয়। তাদের ভাষায়, কিছু সন্ত্রাসী সামরিক বাহিনীর উপর আক্রমন করে ১২ জন সেনাকে হত্যা করে। আর তারা ছিলো রোহিঙ্গা , ফলে সকল দোষ পড়ে সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপর এবং তারা পাইকারীভাবে নারী,শিশু,পুরুষ,বৃদ্ধ সকলকে নির্যাতন ও হত্যা করতে শুরু করে। নৃশংস সেসব অত্যাচারে মানুষ তার সম্পদ ফেলেই জীবন বাচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। শুরুতে বাংলাদেশ আশ্রয় দিতে না চাইলেও পরে ভেতর-বাইরের নানামুখী চাপে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় প্রদানে রাজি হয়। আমাদের আলোচনা এর পর থেকেই শুরু :
বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি জনগনের দেশ। এটি মোটামুটি মধ্যম আয়ের একটি দেশ। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমরা এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলার কুলাঙ্গার হিসেবে পরিচিত সুশীল সমাজ,ভদ্র শ্রেনী(সেক্যুলার মানুষিকতার লোক), বামপন্থী(ভাসমান শ্রেনী),সমাজ সেবক শ্রেনী(সকল সময়ে সুবিধাবাদী ও অধিকাংশই অবৈধ ব্যবসায়ী,চরিত্রহীন), প্রভাবশালী সাংবাদীক(বেশীরভাগই শয়তান), ও মস্তিষ্ক বিকৃত শ্রেনী বুক চাপড়ে মাতম করতে থাকে যে, দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে গেল রোহিঙ্গাদের কারনে, আমরা ফকির হয়ে গেলাম, দেশে সন্ত্রাসের জন্ম হল,আমরা ঝাড়ে বংশে শেষ হয়ে গেলাম ইত্যাদী।
আসুন উপরোক্ত মানুষের নানান সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা সাধারনভাবে আলোচনা শুরু করি:
১. আমরা কেন রোহিঙ্গা মুসলিম বা বহিরাগতদেরকে আশ্রয় দেব ???
: এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটা জানা যে, আমরা কারা ? আমাদের চিন্তার প্রক্রিয়া কি ? জীবন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস কি ?
আমরা যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হই, ধর্মহীন হই, উপরোক্ত নীম্ন শ্রেনীর মানুষ হই, তাহলে উক্ত প্রকারের চিন্তা অবশ্যই শোভনীয় যে, "কেন অন্যকে আশ্রয় দেব,যেখানে আমরা নিজেরাই খেতে পাইনা !" আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, এসব কথা বলা লোকেরা কখনও অন্যকে সাহায্য করেনা। এরাই তারা, যারা অবৈধ পথে অর্থ ইনকামের সুযোগ হাতছাড়া করেনা, আর ফকিরের কাছে মাফ চায়। এরাই কপট,কৃপণ ও প্রতারক। জীবনের প্রতিটি পদে আপনারা এদেরকে অত্যন্ত নীচু স্তরে দেখবেন, যদিও পোষাক পরিচ্ছদ অত্যন্ত চকচকে। এরাই মানবতার কথা বেশী বলে।
কিন্তু অন্যকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে আমাদের চিন্তা কি হবে ? আমরা কারা ?
যদি আমরা মনে করি, আমরা মুসলিম এবং কুরআন সুন্নাহর অনুসারী, তবে শুরুতেই একটি আয়াত পেশ করছি:
""যারা এসব মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই ঈমান এনে দারুল হিজরাতে বসবাস করছিলো; তারা ভালবাসে সেই সব লোকদের যারা হিজরাত করে তাদের কাছে এসেছে৷ যা কিছুই তাদের দেয়া হোক না কেন এরা নিজেদের মনে তার কোন প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করে না এবং যত অভাবগ্রস্তই হোক না কেন নিজেদের চেয়ে অন্যদের অগ্রাধিকার দান করে৷ মূলত যেসব লোককে তাদের মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম৷" [আল-কুরআন ৫৯: ৯]
মক্কায় নির্যাতিত হয়ে যেসব মুসলিম মদীনাতে হিজরত করেছিলো, তারা হল মুহাজির। মদীনাতে যেসব মুসলিম তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলো, তারা আনসার। এই আনসারগণ তাদের মক্কার মুসলিম ভাইদেরকে নিজেদের চাইতে বেশী প্রাধান্য দিয়েছিলো। তারা তাদের সম্পত্তি,ক্ষেত,খামার,ব্যবসা-বানিজ্য,বাসস্থান সকল ক্ষেত্রে সমান ভাগ দিয়েছিলো এবং অনেক ক্ষেত্রে বেশী দিয়েছিলো। তারা নতুন রূপে সম্পর্ক নবায়ন করেছিলো। আপন ভায়ের থেকেও আপন হয়েছিলো। তাদের সেই সু- আচরনের প্রশংসা করে স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন।
আয়াতটির শেষ অংশই আমাদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর:
"মূলত: যেসব লোককে তাদের মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম৷" আমরা অবশ্যই এমন সফল হতে চাই।
ঠিক এর বিপরীতমুখী আচরন,কথা,চিন্তাধারা আমরা আমাদের সমাজে প্রকাশিত হতে দেখেছি। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বলছেন,,, এরাই নীম্ন শ্রেনীর নীচু লোক,হীন প্রকৃতির ছোটলোক।
আমরা মুসলিম। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। আমরা আল্লাহর থেকই প্রতিদান নিতে চাই। আমরা আমাদের রোহিঙ্গা মুহাজির ভাই,বোনদেরকে হাজারবার আশ্রয় দেব,পাশে থাকব, নিজের খাবার শেয়ার করব,নিরাপ্ত্তা দেব। নিজেকে যেমন ভালোবাসি তেমনই ভালোবাসব। শক্তি থাকলে ও প্রয়োজন হলে তাদের কাধে কাধ মিলিয়ে শত্রুর মুকাবিলা করব। তাদের শত্রু আমাদের শত্রু, তাদের বন্ধু আমাদের বন্ধু। আমরা মদীনার আনসারদের মতই আচরণ করব। আমাদের কাছে এক বেলার খাবার অবশিষ্ট থাকলেও সেটার ভাগ দেব তাদেরকে। এই প্রশ্নের উত্তর এখানেই ফাইনাল।
২. রোহিঙ্গারা আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করছে !!!
এ কথা যারা বলছে,তারা বেশীরভাগই অর্থনীতি বোঝেনা, অথবা অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে মনের ভেতর। অথবা রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়াতে নির্বিচারে ওদের মরে যাওয়াকেই উৎকৃষ্ট মনে করছে হিংসাত্বক মনোভাব থেকে। তারা বলছে রোহিঙ্গারা শিক্ষা দিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তারা স্রেফ আমাদের জন্যে বোঝা। এমনকি তাদের চারিত্রে নানাভাবে কল্ঙ্ক লেপনের চেষ্টায় রত এরা।
আমরা যদি পুরো বাংলাদেশ চষে বিশ্লেষন করি,তাহলে দেখতে পাব যে, এখানে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা এখনও অক্ষরজ্ঞানধারীদের থেকে বেশী। কয়েক ক্লাশ পড়েছে এমন লোককে বিবেচনায় আনলে বলব, রোহিঙ্গারা আমাদের চাইতে বেশী শিক্ষিত। কারন তারা অন্তত মাদ্রাসায় কিছুদূর পড়াশুনা করেছে। আর তারা সেখানে উন্নত মানবিকতাই শিখেছে। আমাদের অর্থনীতিতে শিক্ষার ভূমিকা কতটুকু ?? এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে ??
ইউরোপ ,আমেরিকার অর্থনীতির সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আমাদের মোট অর্থনীতি তাদের বহু নীচে থাকলেও স্থায়ীত্ব বা টেকসই বিচারে আমাদের অর্থনীতির প্রকৃতি শক্তিশালী। এখানে ব্যক্তি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারের মুখাপেক্ষী নয়। বেশীরভাগ লোকই ব্যবসা করে স্বল্প পরিসরে। নিজ এলাকার মানুষই তার গ্রাহক, নিজ এলাকার উৎপাদনই তার সম্পদ। বিশ্ব যুদ্ধ বাধলে ইউরোপ আমেরিকার কোটি কোটি লোক রাতারাতি পথে বসবে, কিন্তু বাংলাদেশের বেশীরভাগ লোকই মোটামুটি খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে। আমাদের রয়েছে গ্রাম্য আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি। খুব ভালো না থাকলেও টিকে থাকার অর্থনীতি এটি। আর মোটামুটি বা কোনো রকম খেয়ে পরে বেচে থাকা জনগনই বাংলাদেশের মূল জনগন। এদের সংখ্যা ১৭ কোটির ভেতর কমপক্ষে ১৫ কোটি। আর রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের এই আম জনতার শ্রেনীতে এসে মিশেছে। আর তাদের সংখ্যা এই ১৫ কোটির ভেতর মাত্র ৩ লাখের কিছু বেশী। ১৯৭৮ সালে যেসব রোহিঙ্গা এসেছিলো, তাদের বেশীরভাগই মধ্যপ্রাচ্য,মালেশিয়াতে বসবাস করছে। সেটার পরিমান ৫ লাখের বেশী। ১ লাখের বেশী রয়েছে পাকিস্থানে। আরও বিভিন্ন দেশে তারা ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনতার বিশাল এক লোকাল অর্থনীতির ভেতর ৩ লাখ জনতা এসে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, কথাটা পুরো ফাউল।
এই জনতার ভেতর নারী,শিশুর পরিমান বেশী। আমরা সর্বপ্রথম এদেরকে অর্থনীতির আওতায় আনব না। এদেরকে মানবিক দৃষ্টিতেই বিচার করব। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে এদের অবদান রয়েছে। কারন এরা সচল মানুষ। এরা শ্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও সচল করবে। রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার কারনে গত কয়েক মাসে বিদেশ থেকে তাদের জন্যে প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার সাহায্য পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও সাহায্য করেছে। তাদের অবস্থানের কারনে পুরো পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের নানান ব্যবসা এখন তুঙ্গে। ফলে বলতে হচ্ছে রোহিঙ্গারা অর্থনীনি চাঙ্গা করেছে। আর এসব অর্থ উপরিউক্ত নিম্ন শ্রেণীর পকেট থেকে আসেনি। তারা ওদেরকে কোনো সাহয্য করেনি। সাহায্য করেছে এ দেশের হৃদয়বান মানুষ বা মুসলিম জনতা, যারা ইসলামকে ভালোবাসার কারনে তাদের রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই,বোনদেরকে সাহায্য করেছে। ফলে এ বিষয়ে আমরা সুশীল,হলুদ সাংবাদীক,নিম্ন মানুষিকতার লোক,দালাল,সেক্যুলারদের কোনো থিওরী বিশ্বাস করব না। ওদের মুখে থুথু।
রোহিঙ্গারা সুশিক্ষার অধিকার পেলে আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিকতায় ভালো অবদান রাখবে। নির্যাতনের ভেতরই বীরের জন্ম হয়। হতে পারে তাদের সন্তানদের ভেতরই এমন কেউ জন্ম নিবে, যিনি/যারা হবেন সত্যিকার অর্থেই হযরত ওমর(রাঃ),হামযা(রাঃ),আলী(রাঃ),মুহাম্মদ বিন কাসিম,সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর উত্তরসূরী।
৩. রোহিঙ্গাদের কারনে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিস্তৃতি ঘটবে !!
আহারে কানার দল !! জন্মাদ্ধ ! অবশ্য জন্মান্ধের অন্তর্দৃষ্টি থাকে। এদের সেটা নেই। রোহিঙ্গার মুসলিমরাই তো সন্ত্রাসের শিকার ! স্বয়ং রাষ্ট্র সন্ত্রাস করেছে। ইতিহাসে এরকম বর্বরোচিত ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। এদেরকেই তো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে ! ধর্ষন করে বিকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে ! কেবল নিরাপদে একটু নি:শ্বাস নেওয়ার খোজে তারা বাংলাদেশে এসেছে এক কাপড়ে। বেশীরভাগই অসহায় নারী,শিশু,বৃদ্ধ.....এরা নাকি সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাবে। কোনো মুসলিমের বাচ্চা ঈমানের অস্তিত্ব নিয়ে এমন জঘন্ন অপবাদ দিতে পারে ! এমন মানুষিক বিকারগ্রস্তের মত ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে ! কোনো কীট পতঙ্গও তো এসব বলতে পারে না !
আরে এই সন্ত্রাসের শিকার মানুষেরা যখন বাংলার সীমান্তে এসেছে , তখন তাদের শেষ সম্বল লুন্ঠন করা হয়েছে, তাদের নারীদের অনেককে পূণরায় ধর্ষণ করা হয়েছে, তাদের অনেককে পতিতালয়ে বিক্রী করে দিয়েছে এই মহা পবিত্র জনতার কেউ কেউ। আর এদেরকে বলছে, এরা নাকি সন্ত্রাসের জন্ম দিবে !
৪. বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে যুদ্ধে পারবে ???
বিশ্বাস করুন, সুশীল সমাজ উচ্চস্বরে বলছে বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে যুদ্ধে জিতবে না। এদের কাছে শয়তানে ওহী নাযিল করেছে, এরা স্রেফ হারামখোর। এরা আসলেই দেশের শত্রু এবং গুপ্তচর। এরা বাংলার মুসলিমদের মনোবল পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। এরা বার্মা এবং বাংলাদেশের সামরিক অস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখ করে এসব কথা বলছে যা পুরো অবাস্তব কথা।
সমরাস্ত্রের বিবেচনায় যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ভর করেনা। এর ভেতর বহু বিষয় আছে। পৃথিবীতে বাস্তবে বেশী সংখ্যক বার আপাত মহা শক্তিশালীদেরকে যুদ্ধে নাস্তানাবুদ হতে দেখা গেছে। মনোবল,অস্ত্র,প্রশিক্ষন,সমর কৌশল,স্থানগত কৌশল,সময়,ক্ষিপ্রতা,কূটনীতি,বুদ্ধিমত্তা এসবই যুদ্ধের অংশ। এতগুলো বিষয়ের ভেতর বার্মা অস্ত্রের দিক দিয়ে সামান্য এগিয়ে রয়েছে। তাও অল্প কিছু সেকেলে এ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে যা বাংলাদেশে নেই, আর সৈন্য,ট্যাঙ্ক এগুলোর পরিমান কিছু বেশী। কিন্তু তাদের সৈনিকরা মান বিচারে বাংলাদেশের সৈনিকদের হাটুর নীচে। ওদের অর্থনীতি আমাদের থেকে ৩ গুন ছোট।
বাংলাদেশের সৈনিকরা যে মানে বাস্তবিকভাবে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ তাতে বার্মার সাথে যুদ্ধ বাধলে ওদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এর প্রমান নিকট অতীতে দেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালে নাফ যুদ্ধে মাত্র ৩ দিনে তাদের ৬০০ সৈন্য মারা গিয়েছিলো এবং বিপরীতে একজন বাংলাদেশীও সৈন্যও মারা যায়নি। তারা ভয় পেয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ধী করে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আরও বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে পরাস্ত করা হয়েছে। আর মুসলিম আর্মীর স্বরূপ তো পুরো দুনিয়াই দ্যাখেনি। বাংলাদেশে যে অস্ত্র আছে, তার সাথে যদি ঈমানী চেতনা যুক্ত হয় বার্মা রাতারাতি তছনছ হয়ে যাবে। আমাদের যে অস্ত্র আছে তার অর্ধেক থাকলেও ওরা আমাদের কাছে তুচ্ছ। মুসলিমরা প্রতিপক্ষকে জীবনেও পরোয়া করেনা আর মৃত্যুকে ভয় পায়না, আর এটাই শত্রুকে সবচেয়ে বেশী চাপে রাখে।
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের(রাঃ) একটি ডায়ালগ মনে পড়ছে....প্রতিপক্ষ শাসক/জেনারেলকে তিনি হুমকি দিয়ে বলতেন "আমি এমন এক বাহিনীর আগমন বার্তা শুনাতে এসেছি, যারা মৃত্যুকে ঠিক সেইভাবে ভালোবাসে, যেভাবে তোমরা জীবনকে ভালোবাসো।"
হেই ব্রাদার !! ইতিহাস সাক্ষী , মুসলিমদেরকে যুদ্ধে কখনও পরাজিত করা যায়নি,,, যতক্ষন না নিজেদের ভেতর গাদ্দার পয়দা করে কঠিন কূটকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে !
শেষ কথা হল, রোহিঙ্গা নিয়ে বার্মা যা করেছে তা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সার্ববৌমত্বের উপর আঘাত। তারা চাপ প্রয়োগে সফল হয়েছে। কিছুদিন পর আবারও কোনো অজুহাত তৈরী করে বাকী মুসলিমদেরকেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু বাংলাদেশের কূটনীতি এখানে চোখে পড়েনি। প্রথম প্রহরেই সামরিকভাবে চাপ প্রয়োগের কোনো কৌশল অবলম্বন করলে তারা এতটা স্পর্ধা হয়ত দেখাতে পারত না। অন্তত বঙ্গোপসাগরে সামরিক মহড়ার আয়োজন করলে তারা ভয় পেত। মুসলিম দেশগুলোর সাথে তারা যৌথমহড়া দিতে পারত। আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে পারত। সরকারের কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকা চোখে পড়ার মত হয়নি। সম্পুর্ণ নিরবতার মাধ্যমে যুলুম মেনে নিয়েছে। মুখে হুঙ্কার দিলেও চলত। মুসলিম দেশগুলোও আশানুরূপ আচরণ করেনি।
যাইহোক আমরা রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদেরকে আশ্রয় দিয়ে খুশী। আমরা তাদের ভাই। আমাদের নিজেদের মতই তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। রসূল(সাঃ)বলেন-মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মত, দেহের কোথাও আঘাত লাগলে সারা দেহেই ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে।...
বিষয়: বিবিধ
১০০৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন