ইসলামে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের অর্থ সবসময় জীবন উৎস্বর্গ'ই নয় !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:৪৫:৪৭ রাত
এক নওমুসলিমাকে চিনি, যিনি গীর্জার একনিষ্ঠ খাদেম ছিলেন এবং বাইবেল ভালো বুঝতেন। খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারে সহায়তা করতেন। বাইবেল স্ট্যাডীর সময়ই তার ভেতর নানান প্রশ্নের জন্ম হয়। কিন্তু তিনি সদুত্তর না পেয়ে নিজেই নানান বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত ইসলাম পেয়ে যান এবং তা গ্রহন করেন।
এরপর শুরু হয় আসল পরিক্ষা। বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার বন্ধু মহল তাকে পরিত্যাগ করে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত গীর্যার লোকেরা বুঝিয়েও ম্যানেজ করতে পারেনা। খুব দ্রুত সে ইসলাম প্রাকটিস করতে থাকে। পুরো নিকাবসহ বোরখা পরিধান করতে থাকে,যেটা আমেরিকাতে বহু নওমুসলিমাই করেনা।
এরপর তার পরবারের লোকেরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। কেউ কেউ মুখে মোটামুটি খাতির করলেও আচরনে ভিন্নতা প্রকাশ করে। তার সন্তানরা দূরে সরে যায়। তার কন্যা সন্তানটি প্রচন্ড ক্ষেপে যায় এবং সর্বপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। বিষয়টা আমি যেভাবে লিখে যাচ্ছি সেটা পাঠকের মনের ভেতর যাচ্ছেনা নিশ্চিত। কিন্তু আমার এখানে লেখা একেকটি লাইন উক্ত মহিলার জীবনের বছরের পর বছরে ঘটে যাওয়া করুন ঘটনা। আমরা কি ভাবতে পারি নিজের পরিচিত পরিবার,পরিবেশ এক মুহুর্তে চরম বৈরী হয়ে উঠবে। অথবা আমরা কি আমাদের সকল পরিচিত লোকদের থেকে বিচ্ছিন্নতা কামনা করি !
একজন মানুষ যখন বয়ষ্ক হতে থাকে,তখন তার অন্যের সহযোগীতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। কিন্তু সেটা জানা সত্ত্বেও সে ইসলামকে আকড়ে অন্য সবকিছুকে উপেক্ষা করেছে। তারপরও সে প্রতিনিয়ত তার সন্তানদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে। বিশেষ করে তার মেয়েকে সে অনেক বেশী ভালোবাসে কিন্তু তার মেয়ে সেটা মানেনা। গতকাল মহিলার সাথে আমার দেখা হল। তিনি শোকাহত, কারন তার মেয়ের প্রথম সন্তান হয়েছে গতকাল কিন্তু তার মেয়ে তাকে সে খবর পর্যন্ত জানায়নি। তার মেয়ে চায়না সে তাকে দেখতে যাক, অথচ তার মায়ের মন ছটফট করছিলো তার মেয়ে ও নাতনীকে এক নজর দেখবার জন্যে। একজন মায়ের এই কষ্ট উপলব্ধী করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা অনেক ভাগ্যবান,যারা মুসলিমদের ঘরে ভালো পরিবেশে জন্ম নিয়েছি। এটার মূল্য আমরা বুঝিনি। কিন্তু এদের কড়া মূল্য দিতে দেখে কিছুটা অনুমান করতে পারি আমরা কতটা রহমতপ্রাপ্ত।
আমি উনাকে যখন ইসলামের কথা বলি, উনার দুচোখ ভেসে যায় অশ্রুতে সাধারন একটি হাদীসের কথায় অথবা কুরআনের কোনো আয়াতে, অথচ সেসব কথা আমরা প্রতিনিয়তই শুনি কিন্তু তা আমাদের ভেতর রেখাপাত করেনা। আমি তাকে বলেছি , আপনার এই নানান কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতার প্রতিদান এতই বেশী যা আমার পক্ষে বর্ণনা সম্ভব নয় কিন্তু আপনার জন্যে আল্লাই যথেষ্ট। উনি বললেন, কিন্তু সেটা তো আখিরাতে !
বুঝলাম উনি উদগ্রীব উনার কন্যার সাথে দেখা করতে। বললাম , পিতা-মাতাকে অসস্মান করে দুনিয়াতে কেউ সুখী হয়না। আমার বিশ্বাস সে খুব শিঘ্রই অনুতপ্ত হয়ে আপনার পায়ের কাছে এসে পড়বে। ...এই বাক্যে সে খুব খুশী হল। আল্লাহ যেন এটাই করেন। মূলত: সে জানার চেষ্টা করছিলো দুনিয়াতে তার জন্যে ভালো কি আছে । কারন সে প্রচন্ড আহত।
আল্লাহ এই ভদ্র মহিলাকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করুন ! তাকে ক্ষমা করে দিক এবং দুনিয়া আখিরাতে সর্বোচ্চ সম্মানিতদের অন্তর্ভূক্ত করুক ! আমাদেরকেও ক্ষমা করুন !
বিষয়: বিবিধ
৯১৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Allah can make her life easy.
মন্তব্য করতে লগইন করুন