ঈদ আনন্দ !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ জুলাই, ২০১৭, ০৯:০৯:৪৬ সকাল



ঈদের দিন সকাল ৯টায় আমরা বাড়িতে পৌঁছলাম। মনে হচ্ছিলো গতরাতে বৃষ্টি হয়েছে। এবার দেশের বহু স্থানে ব্যপক বৃষ্টিতে অনেক স্থান তলিয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ যশোর অনেক উঁচু ভূমীতে, ফলে এখানে বন্যা হয়না, যদিও ২০০০ সালে বর্ষায় ভারত তার ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়াতে যশোর বেনাপোলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছিলো। কিন্তু তারপরও আমাদের এলাকায় সমস্যা হয়নি। এত সব নিয়ামতের শুকরিয়া জীবনেও আদায় করতে পারব না। বন্যার ভেতর বসবাস কতটা কষ্টকর সেটা ভুক্তভোগীরা ছাড়া বুঝবে না।

গ্রামে ফিরে কি যে ভালো লাগছিলো। আমার আসলে গ্রামই ভালো লাগে, তবে তা বেশী দিনের জন্যে নয়। কারন কিছুদিন পরই শহরের নানান প্রয়োজন গ্রামের উপর ভর করে, আর গ্রামে তা পাওয়া অনেকটা অসম্ভব, যদিও আমরা মফস্বলের লোক, তারপরও গ্রামের ভাব তো আছেই। যেখানে শৈশব কাটে সেখানটার ব্যাপারে আমাদের আলাদা আবেগ কাজ করে। কখনই ভুলতে পারব না সেসব স্থানকে যেখানটায় হাজার হাজার স্মৃতি স্থায়ীভাবে মনের ভেতর গেথে আছে।

আমার মায়ের ভেতর বেশ কিছু দারুন গুন লক্ষ্য করা যায়, তার একটা হল আবেগের নিয়ন্ত্রন এবং ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ। এতদিন পর তার সাথে দেখা হওয়াতে অবশ্যই সে উচ্ছসিত কিন্তু তা প্রকাশ করতে আবেগের অস্বাভাবিকতার বহি:প্রকাশ ঘটায়নি। আমিও স্বাভাবিক ছিলাম। পরিবারের অন্য সকলের সাথে দেখা হল। অনেক ভালো লাগল । ওদিকে আরেক অকাজ করেছি। এক তো লাগেজ সাথে আসেনি, আবার হাতে করে কিছু মানুষের জন্যে যেসব মূল্যাবান উপহার এনেছিলাম, সেসবও ঢাকায় ফেলে এসেছি। একেবারে খালি হাতে মুলোশাক নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি এসেছি !

দুপুরে বহুদিন পর মায়ের হাতের রান্না খেলাম। এর স্বাদের তুলনা নেই। দেশী মুরগীর সাথে কাঠালের বিচি,সাথে আস্ত আস্ত দেশী রসুন। সে যে কি জিনিস। আরও নানান সব রান্না ছিলো। খাওয়ার পর বাইরে গেলাম হাটতে। কি যে মজা লাগছিলো হাটার সময়। রাস্তার প্রতিটা অংশ যেন আমার নিজেরই অংশ, এমন মনে হল। চারিদিকের মানুষের সাথে কথা হল। জুনিয়র বাহিনীর সাথে হাটাহাটি করলাম। এরা আমাকে সাংঘাতিক ভালোবাসে, আমিও তাদেরকে সাংঘাতিক ভালোবাসি।

বেশ কয়েক বছর পূর্বে আমরা হঠাৎ করেই ঈদের রাতে বিশেষ অনুষ্ঠান চালু করেছিলাম। আমরা কিছু উপহার সামগ্রী কিনে মানুষের মাঝে রটারীর টিকেট বিতরণ করতাম ফ্রি। এরপর রাতে আমরা লটারীর মাধ্যমে পুরষ্কার বিতরণ করতাম আমাদের বাড়ির সামনে। এসময় আমরা টুকটাক মজা করতাম। পরে এসবের পরিধী বাড়তে থাকে। রাতে আমরা আমাদের বৈঠকখানার সামনের অংশে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করলাম। চেয়ার টেবিল সাজানো হল। এখানে আবার ছোটরা ঈদের দিন থেকে স্টল দিয়ে থাকে। নানান পণ্য সামগ্রী বাচ্চাদের মাঝে বিক্রী করে। স্থানটা নিজেদের মত করে সাজায়। বেশ মজার ব্যাপার।

রাত ৯টার পর প্রতিবেশীরা উপস্থিত হল। প্রথমে পুরুষদের বালিশ চালাচালির খেলা হল। মিউজিক বাজলে বালিশ পাছ করতে হয়। মিউজিক থামলে যার হাতে বালিশ থাকবে সে বাদ। মিউজিকের দায়িত্বে ছিলো আমার ভাই। ১০ জনের এই দলে সর্বপ্রথম যে লোকটি বাদ পড়ল, সে হল- আমি। অপরদিকে মহিলাদের এই খেলায় দ্বিতীয় অথবা ৩য় স্থান অধিকার করে আমার বড় বোন।

তবে মজা পেয়েছিলাম মহিলাদের জন্যে পুরুষের শার্ট সুন্দর করে ভাজ করার খেলায় এবং পুরুষদের জন্যে শাড়ী। শার্ট ভাজ করার ক্ষেত্রে ১ মিনিট সময় ছিলো। সবগুলো বোতাম লাগিয়ে সুন্দর করে ভাজ করাই নিয়ম ছিলো। এখানে যে নারীটি প্রথম হয়েছিলো, তার ভাব দেখেই আমরা বুঝতে পারছিলাম যে উনিই প্রথম হবেন। আর পরে জানলাম উনি একজন দর্জী।

এবার এক মাইল লম্বা এক জর্জেটের শাড়ী আনলো। তা এক টেবিলের উপর রাখল। একজন নারী দেখিয়ে দিল ঠিক কিভাবে ভাজ করতে হবে। তা দেখে মনে হল এ আর এমন কি ! কিন্তু এক ছোটভাই এক মাথা ভাজ করতে করতে অন্য মাথায় গিয়ে যে তাল করল, তাতে নিজের উপর প্রায় অর্ধেক আস্থা হারিয়ে ফেললাম। আমার সময় আসলো। আমি শাড়ীর দুই মাথা এক করে ভাজ করতে চাইলাম। দু মাথা খুজেও পেলাম কিন্তু ভাজ করতে গিয়ে দেখী তার মাঝ বরাবর প্যাচ খেয়ে গেছে। এবার সেই প্যাচ ছাড়াতে গিয়ে আরেক প্যাচ দিলাম। এবার দুমাখা ভাজ করলাম বটে কিন্তু আরেক ভাজ করতে গেলে ভেতর থেকে একটি ভাজ নীচে পড়ে গেল। সময় ৪০ সেকেন্ড শেষ। আবার সব খুললাম। এবার একপাশ থেকে ভাজ করতে করতে অগ্রসর হলাম নতুন নিয়মে। কিন্তু ২/৩ বার ভাগ করার পর জজর্জেটের পিছলা শাড়ীর ভাজ নীচে পড়ে গেল। কি আর করা দলামলা করে গোল করে টেবিলের উপর রাখলাম। এই খেলায় যে বিজয়ী হয়েছিলো তার কর্মকান্ড হল এই যে, অন্যদের মত এতটা খারাপ ভাজ সে করেনি। মূলত: কেউ এই শাড়ী ভাজ করতে পারেনি।

চোখ বাঁধা অবস্থায় লাঠি দিয়ে মাটির কলসী ভাঙ্গা। এই খেলাটা ব্যপক উত্তেজনাপূর্ণ। এখানে ১০জনকে সিলেক্ট করা হল খেলার জন্যে। কেউ ভাঙতে পারল না। আমার বড়বোন বারবরই এই খেলায় কলসী ভেঙেছে। কিন্তু আমি তার চোখ বাধার পর নানান সব অজুহাত তৈরী করে খানিকদূর এগিয়ে ফিরে এসে বলল- বাধা ঠিক হয়নি। এরপর এক মেয়েকে দিয়ে বাধালো। আমি সম্ভবত বেশী টাইট করেছিলাম। যাইহোক সেই একমাত্র ব্যক্তি যে কলসী ফাটিয়ে ফেলে।

একটা কলসী খানিক দূরে রেখে তার ভেতর টেনিস বল নিক্ষেপের খেলায় একজন পুরুষের থেকে বেশী দক্ষতা দেখায়, সেই মহিলা হলেন প্রথমের সেই দর্জী মহিলা। তিনি মোট ৩টি প্রথম পুরষ্কার গ্রহন করেন। তবে মারাত্মক ঘটনা ঘটে শেষে। লটারীর মাধ্যমে ২০টি পুরষ্কার প্রদান করা আমদের নিয়ম। যখন ১৯টা পুরষ্কার প্রদান করা হয়ে গেছে এবং প্রথম পুরষ্কারটা বাকী। তখন সকলে বলল এবার টিকেট বাচ্চারা না তুলে মুন্নাভাই তুলবে। আমি চোখ বন্ধ করে পেছনে ফিরে একটা টিকেট তুললাম আর দেখী তাতে আমার ভায়ের নাম। বিষয়টা খুবই মজার ছিলো। মুরব্বীরা বাড়ি ফিরলে বাচ্চারা পরে হৈ হুল্লোড় করে ঈদের রাত্রি উজ্জাপন করেছে। আমাদের জীবন থেকে আনন্দ প্রায় উঠে গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতে, তবে নিজেরা অনেক বেশী আনন্দ পেয়েছি।

বিষয়: বিবিধ

৭৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383639
২৬ জুলাই ২০১৭ দুপুর ০২:৪৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে কতদিন থাকবেন দেশে
০৫ আগস্ট ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
316662
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমি জুলাই এর ২০ তারিখে চলে এসেছি
383641
২৬ জুলাই ২০১৭ রাত ০৮:০৩
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ
০৫ আগস্ট ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
316663
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File