রিভার ব্যান্ড পার্ক
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ জুলাই, ২০১৭, ১১:০৭:০৮ সকাল
গতকাল বাসা থেকে ৬৫কি:মি: দূরের রিভার ব্যান্ড পার্কে গেলাম। এটা সুইটহোমসে অবস্থিত। অলামেট নদী বয়ে চলেছে এর ভেতর দিয়ে। এই পার্কটা মূলত: ক্যাম্পিংয়ের জন্যে।
এদিকের রাস্তাগুলো প্রায় ফাকা থাকে, কারন এ অঞ্চলে খুব বেশী লোক বসবাস করেনা। সুইটহোমসের পর থেকে পাহাড়শ্রেণী শুরু আর তার ভেতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। এখান থেকে প্রায় শত মাইল দূরের ব্যান্ড সিটি পর্যন্ত জনবসতি তেমন একটা নেই।
পথিমধ্যে লেবাননের ওয়ালমার্টে ঢু মারলাম। এরপর চলে আসলাম রিভার ব্যান্ড পার্কে। অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশ এটানে। পার্ক বললে যে দৃশ্য ভেসে ওঠে এটা সেটা নয়। এটা আসলে জঙ্গল। এর ভেতর নদীর ধার ঘেষে বেশ কিছু কটেজ তৈরী করা হয়েছে যা বড় বড় কাঠের লগ দিয়ে তৈরী। সেখানে সাধারনত গৃষ্মে মানুষ অবস্থান করে। কারন শীতে এই এলাকা কয়েকফুট তুষারে ঢেকে থাকে। সে দৃশ্যও অবশ্য সুন্দর। নদীর চারিপাশের গাছগাছালিতে সাদা বরফ লেগে থাকে। তা দেখতে দারুন লাগে।
পার্কের গেটের কাছেই নোটিশ দেখলাম যে ক্যাম্প গ্রাউন্ড পুরোপুরি পরিপূর্ণ, ফলে নতুন করে কেউ এখানে অস্থায়ী বসতি তৈরী করতে পারবে না। বেশীরভাগ মানুষই মটরহোম,ট্রেইলার নিয়ে আসে। যারা মটরহোম নিয়ে আসে, তারা বিশাল সাইজের বাসের মত মটরহোমের পেছনে একটা কার/শক্তিশালী পিকআপ বা আমেরিকান ভাষায় ট্রাক বেধে আনে। কারন মটরহোমটা কোথাও পার্ক করে এরা ছোট গাড়িটায় প্রয়োজনে এদিক সেদিক যায়। এতে খরচ বাচে। কারন বড় গাড়িটা চালাতে প্রতি ২ বা আড়াই কি:মিটারে এক লিটার তেল খরচ হয়। সাধারনত অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা মটরহোম কিনে সারাদেশ ঘুরে বেড়ায়। এখানে যারা এসেছে স্বপরিবারেই এসেছে।
বিষয়টি এরকম নয় যে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সকলে যাযাবরদের মত তাবু খাটিয়ে বসবাস করছে। বরং পার্কের ভেতর নির্দিষ্ট কিছু বাকে,স্থানে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের ভেতর ভিন্ন ভিন্ন স্থান তৈরী করা হয়েছে যেখানে তারা তাদের গাড়ি পার্ক করবে এবং তাবু খাটাবে। একজনের স্থান থেকে আরেকজনের স্থান স্পষ্ট দেখা যায় না। আর এদের অন্তত জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়না, বিশাল অঞ্চল।
এখানে অনেকগুলো পার্কিং স্পট ও তার সাথে পর্যাপ্ত টয়লেট,গোসলখানা রয়েছে। অত্যন্ত ঝকঝকে সেসব বাথরুমগুলো। আমি নদীর দিকে এগিয়ে গেলাম। এদিককার লগহাউসগুলো সাংঘাতিক সুন্দর। ভাড়াও তেমন বেশী নয়, মাত্র ৬৫ ডলার প্রতি রাত। এ স্থানটা খুব বেশী বিখ্যাত নয় তাই সস্তা। একটি কটেজে ২টি করে রুম এবং একটি বাড়িতে যা থাকে প্রায় সবটাই আছে। নদীর তীরে গেলাম। এদিকটাতে অত্যন্ত শক্ত পাথরের উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত। এর মানে এই নয় যে নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে নদী বহমান, বরং নীচের অংশে সুবিশাল আকারের পাথরের মসৃণ চাক। তবে কোথাও কোথাও মাটি দেখা যায়,যার উপর নুড়ি পাথর ভরপুর। বিভিন্ন সাইজের পাথ রয়েছে এখানে। আর মজার ব্যপার হল ছোটছোট গাছপালায় ভরপুর নদীর মাঝ বরাবর। অগভীর পানি ,একেবারে স্বচ্ছ। নানানভাবে একে বেকে নদী চলমান। স্রোত প্রবল তবে পানির ঘাটতির কারনে সহনীয় মাত্রা।
রবীবার হওয়াতে অনেক মানুষ এসেছে এখানে সময় কাটাতে। অনেকে টিউব নিয়ে পানিতে ভেসে চলে যাচ্ছে। আমি কেবল হাটতেই থাকলাম। অসাধারন দৃশ্য। এবার নদী থেকে উঠে জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। এই জঙ্গলে কোনো হিংস্র প্রানী নেই। পানিতে কিছু ব্যাঙ আছে,এটাই সবটা। জঙ্গলের ভেতর পায়ে হাটা পথ ধরে অনেকক্ষন চললাম। মজাই পেলাম।
অন্তত ২ ঘন্টা ছিলাম। যোহরের নামাজ পড়ে আরেক পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এই পার্ক হল ব্রায়ান্ট পার্ক। আমার প্রিয় পার্ক। বাসার অনতিদূরে। অতি সুন্দর পার্ক। এখানে সামারে কালাপোয়া নদীতে মানুষ গোসল করে,নৌকা,স্পিডবোট চালায়,নানান ধরনের টিউবে ভেসে বেড়ায়। আমি কেবল হাটলাম। প্রচন্ড গরম আজ। পার্কের নদীর ধার সংলগ্ন শেডে গিয়ে বসে থাকলাম। খানিক পর পর নদীর পানিতে হাটছিলাম। দেশ থেকে কিছু স্যান্ডেল কিনে এনেছি যার দাম ১২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। এগুলোর দাম এখানে ২০ ডলারের উপরে। বেশ কাজের জিনিস।
এই পার্কে ৩ ঘন্টার বেশীক্ষন কাটিয়ে বাসায় চলে আসলাম। নাদীম ভাই রেড রবিন নামক রেস্টুরেন্টে ফিস এন্ড চিপস খাওয়ার নেমতন্ন করেছে। এটা মিস করার লোক আমি না। লোকটা ভালো। বাসা থেকে রেডী হয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেলাম।
এবার রান্নার বয়ান:
আজ বিকেলে সাতার কেটে ফিরলাম। এরপর আলুর তরকারী রান্না করলাম। এরকম আলুর তরকারী দুনিয়াতে খুব বেশী লোক রান্না করতে পারেনা। মারাত্মক সুন্দর হয়েছে। এরপর লুচি বানালাম, আকারে গোল না হলেও মজার। মাথা পর্যন্ত খেলাম। তেতুল মাখিয়েও খেলাম।
বিষয়: বিবিধ
৬৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
When did you return from Bangladesh?
মন্তব্য করতে লগইন করুন