সাহরীর শেষ সময় কখন !!!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ মে, ২০১৭, ১০:২৩:১৫ রাত



==================

চাঁদ দেখা,এ বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহন করা, রোজা ও ঈদ পালন,সকল স্থানের মানুষের একসাথে তা পালন করা অথবা না করা নিয়ে মুসলিম মনিষীগনের ভেতর কিছু বিতর্ক রয়েছে। উভয় পক্ষেই সহি হাদীসের বুঝগত ব্যাপারে কিছু মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ উভয় পক্ষের উপর রহম করুন,কিন্তু আজকের বিষয় হল সাহরী সংক্রান্ত।

"তোমরা পানাহার করো যতক্ষন না (রাতের)কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা তোমাদের কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হচ্ছে"-(সূরা বাকারা:১৮৭)

এখানে আয়াতটি থেকে বেশ কয়েক রকম বিশ্লেষন এসেছে। সাহরী সংক্রান্ত অনেকগুলো হাদীস রয়েছে এবং সেগুলো নিয়েও ইসলামী চিন্তাবিদগণ যুগে যুগে মতভেদ করেছেন বোঝার ক্ষেত্রে। এবং এসব আয়াত ও হাদীস সমূহ বোঝার ক্ষেত্রে পার্থক্য হওয়াটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারন এখানে সময়ের হিসাবটা চোখে দেখা বা অনুমান সংক্রান্ত। তবে সময়ের হিসাব করার ক্ষেত্রে হাদীস থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়,আর সেটা নিয়েও মত পার্থক্য রয়েছে। অনেকগুলোর ভেতর থেকে একটি হল এই যে-" যায়েদ ইবনে সাবিত(রাঃ)বলেন-আমরা রসূল(সাঃ)এর সাথে সাহরী খাই অত:পর তিনি নামাজে দাড়ালেন। বর্ণনাকারী বলেন-আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- সাহরী খাওয়া থেকে আযান পর্যন্ত কত সময় ছিলো ? তিনি জবাবে বললেন- ৫০ আয়াত তিলাওয়াতের সমপরিমান-(বুখারী- ১২০২)



এই হাদীস থেকে আরেক প্রশ্ন আসবে তা হল ৫০ আয়াত পাঠ করার মত সময় আসলে কতটুকু দীর্ঘ ? আর রসূল(সাঃ)ঠিক কতটার সময় সেদিন সাহরী খাওয়া শুরু করেছিলেন ? এই ৫০ আয়াত কোন কোন সাহাবীর তিলাওয়াতের সময়ের পরিমান(কারন ব্যক্তিভেদে সময়ের ভিন্নতা অনিবার্য্য) ? অর্থাৎ আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করলে নির্দিষ্ট পরিমান সময় বের করতে পারব না বরং একটি আনুমানিক সময় পাব।

আবার রসূল(সাঃ)ইফতার করতে বলেছেন দ্রুত কিন্তু সাহরী করতে বলেছেন দেরী করে। তাহলে আরেকটা বিষয় বোঝা যাচ্ছে যে সাহরীর ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ও আছে। আবার তিনি(সাঃ)বলছেন-আযানের সময়ও যদি কেই পানাহার রত অবস্থায় থাকে,তবে সে খাওয়া পূর্ণ করবে।...

এরপর আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়: সাহরী শেষ করার সঠিক সময় আসলে কোনটি ????

এখানে উল্লেখ্য যে সুবহে সাদীক হল ফজরের ওয়াক্ত শুরুর সময়। কিন্তু সুবহে সাদীক কোনটি ? এটি ঠিক কখন শুরু হয়,,,এটা নিয়ে কথা আছে।

============================

সুবহে সাদীক বা সাহরী শেষ হওয়ার সময় নিয়ে আলেমগণ যে গবেষনা করেছেন তা অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ। শিয়া আলেমগনের মত হল কুরআনের আয়াতে স্পষ্ট ভোরের আলো ফুটে ওঠার সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে,অতএব সেই সময় পর্যন্ত খাওয়া যাবে। কিন্তু তারা এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হাদীসগুলোকে তোয়াক্কা করেনি। কারন সেখানে এতটা দেরী করার ইঙ্গিতদেওয়া হয়নি। ফলে এটি বাতিলযোগ্য হবে।

*****বিশ্বের বেশীরভাগ আলেমগণ(উপমহাদেশের দেওবন্দ,আহলে হাদীস সহ আরও অনেকে) সুবহে সাদীকের বিষয়ে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা হল ১৮ডিগ্রী অক্ষের উপর সূর্য্যের অবস্থান। গভীর অন্ধকারপূর্ণ রাতের এই অংশে আকাশে হঠাৎ এক চিলতে আলোর প্রকাশ ঘটে,কিন্তু এর কারনে ভূমিতে অন্ধকারের কোনো ঘাটতি হয়না। অর্থাৎ এই আলো প্রকাশে অন্ধকার দূরিভূত হয়না বরং এই পূর্বাভাস পাওয়া যায় যে,রাতের গভীরতা কমতে চলেছে। গভীর অন্ধকারের ভেতর এই হঠাৎ আলোর রেখাকে "এ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল টোয়াইলাইট" বলে। যেমন আমার এখানে আজ এ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল টোয়াইলাইট হবে রাত ৩.১৪ তে(বোঝার সুবিধার্তে আমার সময়টি উল্লেখ করলাম)।

এই এক চিলতে আলোর পরশকে সুবহেসাদীক বলেছেন বেশীরভাগ ইসলামী পন্ডিত। কিন্তু তারা এটাকেই কঠিনভাবে সাহরীর শেষ সময় বলেনি। আবার নিয়মিতভাবে সে সময় ফজরের আযানও হয়না কোনো দেশে। এর কারন হল তখনও ভূপৃষ্ঠে এই আলোর কোনো প্রভাব পড়েনি। তাছাড়া গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন কোনো স্থান,যেখানে চারিপাশ থেকে আলোর অনুপ্রবেশ নেই,সেরকম স্থান ছাড়া এই আলোর উপস্থিতি বোঝা প্রায় অসম্ভব। এটি খুবই ক্ষিণ আলো। তবে এটি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে থাকে।

****** কিছু আলেম বলেছেন এটি সুবহে সাদীক নয়,বরং এরপর আরেকটি স্পষ্ট রেখা পূর্ব দীগন্তে ফুটে ওঠে,সেটিই সুবহে সাদীক এবং এটি কুরআনের আয়াতের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এই আলোটি তখন ফুটে ওঠে যখন সূর্য তার অক্ষের উপর ১২ ডিগ্রীতে অবস্থান করে,যার নাম "নটিক্যাল টোয়াইলাইট"। এই আলোর পরও ভূপৃষ্ট অন্ধকার থাকে এবং আকাশে তারকারাজি সুস্পষ্টভাবেই দেখা যায়।এ সময়ে আগুন/বাতি/টর্চ লাইট ছাড়া খালি চোখে চলা,কাজ করা সম্ভব হয়না। যেমন আমার এখানে আজ নটিক্যাল টোয়াইলাইট হবে রাত(ভোর) ৪.১১ টার সময়। ফলে তারা এই সময়কেই সাহরীর শেষ সময় হিসেবে মনে করেন। এভাবেই হাদীস ওকুরআনের আয়াতের সাথে তারা সামঞ্জস্য করেছে।

******অল্প কিছু আলেম বিষয়টিকে আরও দূরে নিয়ে গেছেন। তা হল সূর্যের ৬ডিগ্রী অবস্থান,যা "সিভিল টোয়াইলাইট" নামে পরিচিত। যেমন আমার এখানে এটি ঘটবে ভোর ৪.৫৭ টার সময়। কিন্তু এই সময় চারিদিকে পুরো পরিষ্কার হয়ে যায় এবং খালিচোখেই সব কাজ করা সম্ভব। এটি হল সূর্য্যদ্বয়ের পূর্বের কিছু সময়। যেমন আগামী কাল সূর্য্যদ্বয় সকাল ৫.৩২এ। অর্থাৎ এটি সূর্য্যদ্বয়ের মাত্র ৩৫মিনিট আগের ঘটনা। আর এই সময়টি হাদীস অনুযায়ী গ্রহনযোগ নয়। কারন ফজরের নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়ে,রসূল(সাঃ)দীর্ঘক্ষন বসে তাসবীহ করতেন,অন্যদেরকে তালিম দিতেন এরপর সূর্য্য উঠলে তিনি(সাঃ) ২ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। ফলে সাহরীর শেষ সময় হিসেবে ৬ডিগ্রী "সিভিল টোয়াইলাইট"গ্রহনযোগ্য নয়।

======================

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ব্যপক গবেষনা হয়েছে হাজার বছরের অধিকসময় ব্যপী। আর এর ভেতর বেশীরভাগ আলেম,ইমামগন একটি মধ্যপন্থী সিদ্ধান্তে এসেছেন ,আর তা হল ১৮ ডিগ্রীকে (এ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল টোয়াইলাইট)মূল বিবেচনায় এনে , ১৮ ডিগ্রী এবং ১২ ডিগ্রী সূর্যের অবস্থান(নটিক্যাল টোয়াইলাইট) এর মাঝামাঝি ১৫ ডিগ্রীতে একটি আনুমানিক সময় নির্ধারনে। সে অনুযায়ী বিশ্বের বেশীরভাগ দেশের সাহরীর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।এক্ষেত্রে দেশ ভেদে কিছু পার্থক্যও হয়েছে। যেমন আমার এখানে ১৮ডিগ্রী সময় হল রাত ৩.১৪ আর ১২ ডিগ্রী সময় হল ভোর ৪.১১ ,কিন্তু স্থানীয়ভাবে সাহরীর শেষ সময় হল ৩.৪৬। অর্থাৎ এই দুটি সময়ের মধ্যবর্তী একটি একক তৈরী করা হয়েছে। আর যেহেতু বেশীরভাগ আলেম ও পূর্ববর্তী প্রখ্যাত ইমামগন ঐক্যমত তৈরী করেছেন,তাই এই অনুযায়ী আমাদের চলা উচিৎ। তবে কেউ যদি ১২ ডিগ্রীকে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে গ্রহন করে এবং এর উপর অটল থাকে,তাহলে আমরা কলহ সৃষ্টি করব না,বরং আল্লাহর কাছে প্রত্যেকে জবাবদিহি করবেন,এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখব।

বি:দ্র: রমজান মাস শুরুর আগ থেকে চাঁদ দেখা,রোজার শুরু,ঈদ,তারাবীহ ইত্যাদী নিয়ে নানান রকমের প্রচারনা এবং যুক্তি তর্ক দেখা গেছে বা যায়। সেসব নিয়ে মূলত: এরকম বিভাজনমূলক প্রচারনা অনুচিৎ,কারন এতে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। কারন উভয় পক্ষেই সহি হাদীসের দলীল প্রমান রয়েছে কিন্তু এগুলো বিশ্লেষনে কিছু মত পার্থক্য হয়েছে। আর ইস্তিহাদী এরকম অনেক মতপার্থক্য জায়েজ রয়েছে। ফলে আমাদেরকে ধৈর্যশীলতার সাথে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রমজান আমাদেরকে সেই শিক্ষাই প্রদান করে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383178
৩১ মে ২০১৭ সকাল ০৬:২২
পললব লিখেছেন : বিশ্লেষণ ভালোই লাগলো। আমরা ছোটকালে গ্রামে দেখতাম রাতের শেষ প্রহরে মোরগ বাক দিলে সেহরী খেতে উঠতাম এর দ্বিতীয় বাকে শেষ করতাম। দ্বিতীয় বাকের কিছুক্ষণ পর ফজরের আযান দিত। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে রোজা রাখা, নামাজের সময়, ইফতারির সময়, ঈদের সময় ইত্যাদি নিয়ে ক্যাচাল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধন্যবাদ।
০১ জুন ২০১৭ রাত ১২:৪৪
316457
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ Happy
383179
৩১ মে ২০১৭ দুপুর ১২:৩৮
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : পড়লাম, ভালো লাগল
০১ জুন ২০১৭ রাত ১২:৪৪
316458
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
383181
৩১ মে ২০১৭ রাত ০৯:১২
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
ভালো লাগল অনেক ধন্যবাদ
০১ জুন ২০১৭ রাত ১২:৪৫
316459
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File