যেভাবে আমরা কষ্ট থেকে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ মে, ২০১৭, ১১:১৮:৫২ রাত
আমি ক্ষুদ্র জীবনের বিভিন্ন সময়ে খেয়াল করে দেখেছি ,প্রত্যেকটি মানুষ যখন বিপদে নিপতিত হয়,তখন সেই বিপদকেই সর্বাপেক্ষা কঠিন মনে করে এবং অন্যদের চাইতে বেশী ভারী মনে করে। মানুষ শারিরীক,মানুষিক,আর্থিকভাবে বিপদে পড়লে প্রথম ধাক্কায় মুষড়ে পড়ে। এই মুষড়ে পড়ার গতি,প্রবলতা নির্ভর করে তার নিজস্বতা,ধৈর্যশীলতার উপর। কখনও প্রিয়জনের আঘাতে,কখনও প্রিয়জনের বিয়োগে,কখনও পারিবারিক কলহে,কখনও আর্থিক সমস্যায়,কখনও রোগগ্রস্ততার কারনে,কখনও হঠাৎ কোনো দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে,হতাশ হয়ে পড়ে,খেই হারিয়ে ফেলে,জীবনের ক্ষেত্রে বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় তার আচরনে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে যা তার মানুষিক অবস্থার বহি:প্রকাশ। বেশীরভাগ মানুষের অভিব্যক্তি'ই হতাশাময়,অস্থির। এই পর্যায়ে মানুষের আচরন নির্ভর করে তার জীবন সস্পর্কিত ধারনা,জ্ঞান ও উপলব্ধীর উপর। যদি সে প্রকৃতই জ্ঞানী হয় এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়,তাহলে সে অনুধাবন করে প্রত্যেকটি মুহুর্তেই আল্লাহ তাকে প্রত্যক্ষ করছেন এবং উক্ত বিপদটি আল্লাহ তাকে প্রদান করে পরিক্ষা করছেন এবং তাকে বিশুদ্ধ করছেন এর ভেতর দিয়ে। কারন তিনি তাকে উন্নত করতে চান ও আরও কাছের বান্দা হিসেবে গ্রহন করতে চান। ফলে উক্ত বিপদকে এই জ্ঞানী বান্দা একটি দারুন সুযোগ হিসেবে গ্রহন করে। আর যখনই সে এটি উপলব্ধী করতে পারে,তখন তার আচরন আমূল বদলে যায়। সে হতাশার বদলে আশাবাদী হয়ে ওঠে ,,কারন আল্লাহ বলেন-"নিশ্চয়ই কষ্টের পরে আছে স্বস্তী,অবশ্যই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি"।
সে প্রবল বিপদেও স্বাভাবিক থাকে। বিপদমুক্ত হওয়ার জন্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা তাকে আশ্বস্ত রাখে,সন্তুষ্ট রাখে। সে সকল অবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ বলে মন থেকে। আর সে জানে যে,আল্লাহ কাওকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পন করেন না। আর এই পরিক্ষায় তার অবস্থা যত করূনই হয়ে পড়ুক না কেন,এর প্রতিদান এতটাই বিশাল যার হিসাব কেবল আল্লাহর কাছেই আছে। আর এরকম ধৈর্যশীল ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীল বান্দার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে এতটাই উচ্চ মর্যাদা প্রদানের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে যে, সেই বান্দা তার দৃষ্টিকে পৃথিবী ছাড়িয়ে জান্নাতুল ফিরদাউসে নিক্ষেপ করে। আর তখন তার কাছে দুনিয়ার পুরো চিত্রই তুচ্ছ মনে হয়,আর তার উপর আপতিত দু:খ,কষ্টও তুচ্ছ এবং ক্ষুদ্র মনে হয়।তার কাছে জাহান্নামকে বিশাল কষ্টের মনে হয় এবং এই কষ্টকে তুচ্ছ মনে হয়। সে অনেক উপর থেকে পুরো পৃথিবীর সকল চিত্র অবলোকনের যোগ্যতা অর্জন করে। আর পুরো পৃথিবীকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে আল্লাহর উপর পুরোপুরি নির্ভরতার দিকে এগিয়ে যায়। এই নির্ভরতার পরিমান যত বেশী হয়,তার দুনিয়ার জীবনের দু:খ কষ্টের পরিমান ততই হালকা অনুভূত হয়। কারন সে তখন ঘটনার কার্য-কারন বুঝতে পারে। এ কারনেই নবী-রসূলগণ সর্বাপেক্ষা বেশী ধৈর্যশীল হন,অত:পর তাদের সঙ্গীসাথীরা,,তারপর তাকওয়া অনুযায়ী অন্য মানুষেরা।
আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা বিষয়টি ব্যপক অর্থবহ একটি বিষয়। এটিই ইবাদতের মূল অংশ। এটির আরেক অর্থ হল ভালবাসার প্রধান মাপকাঠি আল্লাহ। এর আরেক অর্থ হল-আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যেই ঘৃণা। সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তার রসূল(সাঃ)কে সকল বিষয়ে বিচারক হিসেবে মেনে নেওয়া এবং অবশ্যই সন্তুষ্টচিত্তে। বিষয়টি আত্মউপলব্ধীগত। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে তার কাছে দুনিয়ার বহু বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠবে। তার আচরন বদলে যাবে। চিন্তার ধরন বদলে যাবে। এই একটি চিন্তার ভেতর যাবতীয় সফলতা নিহিত। এই একটি চিন্তাই মানুষকে ইহজাগতিক সকল রকমের দু:খ কষ্ট থেকে মুক্ত করতে পারে। যদি তা না পারে,তবে বুঝতে হবে চিন্তার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তখন জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে আল্লাহকে জানার জন্যে।
নীচে দু একটি বিষয় উপস্থাপন করব আমাদের আত্মোপলব্ধীর জন্যেঃ
১. আমি কয়েক মাস পূর্বে একজন লোককে দেখী,যার সারা অঙ্গের ভেতর একটি অকেজো হাতের ১টা আঙ্গুল সচল। আর তার জন্যে একটি উপযোগী মেশিন বানানো হয়েছে,যেখানে বসে সে ১টি আঙ্গুলের মাধ্যমে ইলেকট্রকি হুইল চেয়ার চালায়,ট্যাবের বিশেষ এ্যাপের মাধ্যমে কিছু কথাও লিখে প্রকাশ করতে পারে। লোকটির দিকে তাকালাম এবং আমার নিজের দিকে তাকালাম....আল্লাহুআকবার...। এই লোকটিকে যদি বলা হত তর সকল সম্পদের বিনিময়ে একটি হাত সচল হবে,তকে সে সকল সম্পদ প্রদান করতে রাজি হত।
২. আরেক লোককে দেখলাম যার ২টি হাত ও দুটি পা জন্মগতভাবেই নেই। কিছুদূর হাতপা গজিয়ে থেকে গেছে। সেও একটি বিশেষ হুইলচেয়ারে চড়ছে এবং কেবল থুতনী দিয়ে সেটি বিশেষ কায়দায় নিয়ন্ত্রন করছে। এই লোকটি যদি দুনিয়ার সেরা ধনীও হয়ে থাকে,তবে তার অঙ্গগুলো সচল করতে সকল সম্পদ ব্যয় করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তা হবার নয়।
৩. বহু লোক কোমাগ্রস্ত। অর্থাৎ তাদের কেবল মস্তিষ্ক সচল কিন্তু পুরো শরীর অবশ। এরা জিবীত থেকেও মৃত।
৪. অন্ধ মানুষ এবং শারিরীকভাবে পুরো অচল। এমন মানুষের কথা তো কল্পনাতেও আনা যায় না। কারন অচল আবার অন্ধ। যে সারা দুনিয়ার কিছুই দেখেনি তার কষ্টের সাথে আমাদের কোন কষ্ট মেলাবো ! আর এরপর যদি তার ৪ হাত পায়ের কোনোটিও না থাকে,তাহলে বিষয়টি কেমন হল !!
আলকুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একাধিকবার যা বলেছেন তা হল এই যে,,তোমরা কি দ্যাখোনা ! তোমারা কি চিন্তা করোনা ! অনুধাবন করোনা !.....
আমরা যদি সত্যিই অনুধাবন করতাম চারিপাশটা,তবে আমাদের দু:খ কষ্টকে ছাড়িয়ে অন্যের দু:খ কষ্ট অনুধাবন করতাম এবং নিজেরটিকেই হালকা মনে করতাম আর অন্যের উপকারে নিজেকে ব্যাপৃত রাখতাম। তবে মানুষ স্বার্থপর,এভাবেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কাজ করা তা অনুধাবন সে বিনা স্বার্থে করবে না,এ কারনেই আল্লাহ মহা পুরষ্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। আর তা এতটাই বিশাল যা কখনও শেষ হবেনা। মানুষের রহ'কে নতুন শরীর দেওয়া হবে,সেটা হবে অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং চীরস্থায়ী। আর নেয়ামতসমূহও হবে চীরস্থায়ী। সেই চীরস্থায়ী বিষয়সমূহের কারনে মানুষের উচিৎ পুরো দুনিয়াকে ঠিক সেভাবেই গ্রহন করা,যেভাবে আল্লাহ এটাকে গ্রহন করতে বলেছেন তার রসূলের(সাঃ) মাধ্যমে।
আল্লাহ আমাদের উপলব্ধীতে বরকত দান করুন ! আমাদের প্রকৃত ও উপকারী জ্ঞান দান করুন ! এই রামজানে যেন আমরা সেই জ্ঞান ও উপলব্ধী অর্জন করতে পারি ! রাব্বী যিদনী ইলমা !
বিষয়: বিবিধ
১০০১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জানলাম অনেক কিছু । আরো লিখুন । আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
আলকুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একাধিকবার যা বলেছেন তা হল এই যে,,তোমরা কি দ্যাখোনা ! তোমারা কি চিন্তা করোনা ! অনুধাবন করোনা !
অনেক ধন্যবাদ ,
মন্তব্য করতে লগইন করুন