টুমোলো ফলস
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০৫:৩৯ দুপুর
(ছবি আপলোড করা যাচ্ছেনা,তাই দিলাম না)
আজ শনিবার আমার ৩দিনের ছুটির ২য় দিন। গত কয়েকদিন ধরে বেশ ভেবেও ঠিক করতে পারছিলাম না কোথায় ঘুরতে যাব। শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যান্ড নামক সিটির বেশ কিছু পার্কে যাব,কিন্তু প্রধান প্রধান পার্কগুলো এসময় বন্ধ । মে মাস থেকে পরবর্তী ৪/৫মাসের জন্যে এগুলো খোলা থাকবে। তারপরও যেহেতু নতুন স্থান আশপাশে খুজে পেলাম না তাই ব্যান্ড সিটিকেই বেছে নিলাম।
সকাল ৮টার কিছু পরে রেডী হয়ে রওনা হলাম। কোনো এক অজানা কারনে গত রাতে বেশ শীত পড়েছিলো,সকালটাও বেশ ঠান্ডা। জেফারসনের রাস্তা ধরে চলার সময় বেশ কুয়াশা দেখলাম কিন্তু রোদের কারনে দ্রতই সব কুয়াশা উধাউ হয়ে গেল। বেশ ভালো রোদ ঝলমলে দিন আজ। মনের আনন্দে রাস্তা চলতে থাকলাম। জেফারসনের কৃষি খামারের রাস্তা ধরে চলতে খুবই দারুন লাগে। স্টেটন এর ভেতর দিয়ে ওরেগন ২২ হাইওয়ে ধরে চললাম। ব্যান্ডে যাওয়ার আরেকটি রাস্তা হল সুইটহোমের ভেতর দিয়ে কিন্তু সে রাস্তা অতিরিক্ত পেচালো। তবে পেচালো হলেও সাংঘাতিক সুন্দর। সময় বাচাতে আজ এদিক দিয়ে এসেছি।
রাস্তা গাড়িঘোড়া এদিকে তেমন থাকেনা। চলার পথে হঠাৎ হঠাৎ দু একটি গাড়ি দেখা যায়। বনভূমির ভেতরে চলে আসলাম। এটা পার্বত্য অঞ্চল। শীতের শুরুতেই এদিকে প্রবল তুষারপাত হয় আর সেটা চলে বসন্তের ভেতরও। এখনও হঠাৎ হঠাৎ তুষারপাত হচ্ছে। কিন্তু রাস্তা একেবারে পরিষ্কার। রাস্তার দুপাশে বরফের অস্তিত্ব দেখলাম। আশপাশের পাহাড়গুলো পুরো তুষারে ঢাকা। সবুজ গাছগাছালির ভেতর দিয়ে সাদা সাদা বরফে ঢাকা বনভূমী,দৃশ্য সাংঘাতিক সুন্দর। হুডু মাউন্টেন এরিয়াতে এসে দেখলাম পুরো লেক জমে বরফ হয়ে গেছে,তবে বসন্তে লেকের একপাশে কিছুটা বরফ গলবে গলবে ভাব লক্ষ্য করলাম।
এদিকে রাস্তায় চাকা পিছলে যাবার ভয়ে পাথরকুচি ফেলা হয় নিয়মিত। কিন্তু তুষার গলে রাস্তা ভেজা ভেজা হয়ে যায়,এর ভেতর পাথর কুচি,,দ্রুত বেগে ড্রাইভ করলে সামনের গাড়ির চাকা থেকে অনবরত ময়লামাটি উইন্ডশিল্ডে এসে পড়ে। বেশ কয়েকটা গাড়ির কারনে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছিলো। শীতের ভেতর এদিকে আসতে স্পেশাল চাকা লাগাতে হয়,নয়ত চাকায় চেইন লাগিয়ে এই অংশ পার হতে হয়। তবে রাস্তার দুপাশের চিত্র দেখলে পাগল হয়ে যেতে হয়। একস্থানে দাবানলের কারন প্রচুর গাছ পুড়ে মরে গিয়েছিলো,সেসব শুকনো খড়খড়ে গাছের ভেতর এখন তুষার আর তুষার,এ দৃশ্য অহস্য সুন্দর ! বর্ণনার অযোগ্য !
আমার উদ্দেশ্য টুমোলো ফলস,এটি ব্যান্ডের পাশেই। ১৬০কি:মি: দূরে সিস্টার্স সিটিতে পৌছলাম। এই সিটিটা অনেক পুরোনো এবং সৌন্দর্য্যে ভরপূর। আমার কাছে খুব দারুন লাগে। পুরোনো কাঠের দোকানপাট দেখলে খুব ভালো লাগে। এখানে এক ঐতিহ্যবাহী বেকারীতে ঢুকলাম,,দারুন এক কেক কিনলাম এক ভদ্র বুড়োর জন্যে।
ব্যান্ড সিটিকে পাশ কাটিয়ে মাউন্ট ওয়াশিংটনের দিকে এগিয়ে চললাম। খানিক দূরে এসে দেখী একটি জনবসতি। সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি এই পাহাড়ী পরিবেশে। এরা ধনী লোক। অবশ্য এটা মূল শহর থেকে মাত্র ৮/৯কি:মি: দূরে। অবাক হয়ে দেখলাম একপাল হরিন একটি বাড়ির সীমানা বেড়া টপকে ভেতরে গিয়ে ঘাস খাচ্ছে। এরা কুব চালাক,বোধহয় জানে যে এখন হরিন শিকারের মৌসুম নয়,ফলে কেউ তাদেরকে ধরবে না। শিকারের মৗসুমে এদের টিকিটি খুজে পাওয়া দুষ্কর। এরা ঘন বনভূমী ধরে পর্বতের অনেক উঁচুতে উঠে বসবাস করে তখন। প্রতি বছর শিকারীদেরকে লাইসেন্স নিতে হয় হরিন শিকারে। প্রতিটি টিকেটের বিপরীতে একটি করে হরিন শিকার করা যাবে। টিকেটের দাম অনেক। তবে বড় হরিন পেলে পুষিয়ে যায়। এটা সম্বর হরিন,যার বড়গুলো গরুর চাইতেও বড় হয়। তবে শিকারের নিয়ম আছে। গর্ভবতী বা বাচ্চা নিয়ে ঘুরছে এমন হরিন শিকার নিষেধ,বড় পুরুষ হরিন শিকারেও নিয়ম কানুন আছে। মাদী হরিন বেশী মারলে তেমন সমস্যা নয়। তবে শিকারে নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রচুর জরিমানা হয়,লাইসেন্স স্থগিত করে,এমনকি গাড়িও আটকে রাখে।
খানিকদূর পর দেখী রাস্তার পাশে দুই হরিন গল্প গুজব করছে। আমি থামলাম,ছবি তুললাম তারা মাইন্ড করল না। আহ বারবার মনে হচ্ছিলো যদি ধরে জবাই করে এখানেই রান্না করে খেয়ে যেতে পারতাম !! আরও অন্তত ২০/২৫ কি:মি: দূরে টুমোলো ন্যাশনাল পার্কের ভেতর দিয়ে চললাম। খুবই দারুন স্থান এটি। কিন্তু শেষে এসে আহত হলাম। দেখী জলপ্রপাতের স্থানে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করা হয়েছে। এটি মে মাসের ১ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকে। এখান থেকে পায়ে হেটে জলপ্রপাত দেখা যাবে কিন্তু এই পাহাড়ী উচু নীচু রাস্তায় আসা যাওয়া করতে ৮/৯ কি:মি: হাটতে হবে।
যেখানে এসে থামলাম সেখানে টুমোলো ফলস থেকে তৈরী হওয়া নদী বহমান। একটি সুন্দর ছোট্ট সেতুর নীচ দিয়ে এটি শব্দ করে ছুটে চলেছে। দ্রুত বহমান নদীর দুপাশে এখনও তুষারের অস্তিত্ব রয়েছে,আর চারিপাশের পাহাড়ে সাদা বরফের স্তুপ। এ এক অসাধারন অহস্য সুন্দর নদী। গরমকাল হলে এখানে গোসল না করে বোধহয় ফিরতাম না। কি যে দারুন লাগল এই নদীর চারপাশ। আমি নদী তীরে নেমে গেলাম। অবশিষ্ট তুষারের উপর হাটলাম। নতীর তীরের নূয়ে পড়া খড়ের উপর বসলাম,হাটলাম। পাথরের উপর দিয়ে ব্যালান্স করে হাটতে থাকলাম,খুব মজা !
এবার চিন্তা করলাম হেটে টুমোলো ফলসের কাছে যাব। কয়েকজন মানুষ দেখলাম হেটে রওনা হয়েছে। আমি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে হাটতে থাকলাম। এখানটাই যেন বেশী ভালো লাগল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলাম হেটেই ফলসে'র কাছে যাব। হাটতে থাকলাম। কিন্তু প্রায় ২কি:মি: যাবার পর আমার নীম্নচাপ সৃষ্টি হল। ঝড়বৃষ্টির ভয়ে আগে বাড়া সমিচীন মনে করলাম না। ফিরতি পথ ধরলাম এবং রেস্ট এরিয়াতে বিরতী নিলাম। তবে প্রতিজ্ঞা করেছি,এই গরমে এখানে আবার আসব ইনশাআল্লাহ।
এবার ব্যান্ড সিটির এক পরিচিত লোকের সাথে দেখা করতে রওনা হলাম। যাবার পথে খুব দারুন একটা লেকপার্ক দেখলাম কিন্তু সেখানে চেষ্টা করেও পার্ক করার মত স্থান পেলাম না,ফলে সামনে বাড়লাম। এই বুড়ো পাইলট ছিলো,নিজের বিমানও ছিলো। এখন বয়স ৮৪ বছর। নানান সব রোগে কাহিল। গত বছর পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গেছে। তারপরও জোড়া দেওয়া কোমর নিয়ে সচল আছে। কেক নিয়ে দেখা করলাম। বিশাল সাইজের কুত্তা কাছে আসলো। কুত্তার কাছাকাছি থাকলে চরম অস্বস্তি লাগে। লোকটা আমাকে পিজ্জা খাওয়ালো। এই বুড়োকে ইসলামের কনসেপ্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু সারাজীবন ধরে এক ধর্ম পালন করে অন্য ধর্মে আসা এত সহজ নয়। কিন্তু আমি আমার আচরন দ্বারা পুরো মুসলিমদের চরিত্র এমন ,সেটাই প্রমান করার চেষ্টা করি বা মুসলিমদের সম্পর্কে সু-ধারনা প্রদান করার চেষ্টা করি। আল্লাহ যদি হেদায়াত রাখেন,হবে ইনশাআল্লাহ,,,নইলে আখিরাতে জবাবদিহি করবে। আমি এমনও নও মুসলিমকে চিনি,যারা প্রবল প্রতিকূলে থেকেও ইসলামে এসেছে।
ফিরতি পথ ধরলাম। পথে বিশেষ মশলাযুক্ত এমন্ড খেতে থাকলাম। খাবারের বাক্সে অনেক খাবার এনেছিলাম কিন্তু খাওয়া হয়নি। নাহ....আজ খাবার নিয়ে কথা বলব না.....!! লোকে মন্দ কয় !!
বিষয়: বিবিধ
১০৮৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পার্কগুলি কি শিতের জন্য বন্ধ থাকে না অন্য কোন কারনে? যতটুক জানি শিত প্রজনন মৌসুম নয়। এই সময় শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকেনা।
বলার নাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন